শীত আসতে এখনো ৩/৪ মাস বাকী। এ শীত মৌসুমে বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরতে যাওয়ার জন্য বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জের জেলে পল্লীগুলোতে নতুন ট্রলার তৈরি ও মেরামতের ধুম পড়েছে। দিনরাত কাজ আর ব্যস্ততায় মৎস্যপাড়ায় উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে এখন।
মোরেলগঞ্জ উপজেলার বারইখালী, সোনাখালী, বহরবুনিয়া, বলইবুনিয়া, খাউলিয়া, হোগলাবুনিয়া সহ কয়েকটি ইউনিয়নের জেলে পল্লীতে নতুন ও পুরোনো ট্রলার তৈরির কাজে ধুম পড়েছে। নৌকা তৈরিতে কাঠমিস্ত্রীরা এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন। দিনরাত কাঠ, তক্তা ও গুঁড়ি বানানো, কাঠ মসৃণ করা, তক্তা জোড়া লাগানোর কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা। মিস্ত্রীদের যন্ত্রপাতির আওয়াজে মুখরিত এখন জেলেপাড়া।
শনিবার (১২আগস্ট) উপজেলার বারইখালী এলাকা ঘুরে দেখা যায়, নতুন ট্রলার তৈরি আর পুরাতন গুলো মেরামত করার কাজ চলছে পুরোদমে। মিস্ত্রীরা দিনরাত ট্রলার তৈরির কাজে নিয়োজিত রয়েছেন। ট্রলার তৈরি করতে বিভিন্ন স্থান থেকে মিস্ত্রী আনতে হচ্ছে তাদের। মিস্ত্রীদের থাকা-খাওয়া বাদে প্রতিটি নতুন ট্রলার তৈরি বাবদ মজুরি খরচ ১ লাখ থেকে ১ লাখ ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত । ৫০-৬০ ফুট লম্বা ১৭ ফুট চওড়া একটি ট্রলার তৈরি করতে প্রায় ৫শ' সেফটি কাঠ লাগছে। সব কাঠ দিয়ে ট্রলার তৈরি হয় না। এলাকায় পাওয়া যায় এমন চাম্বল, মেহগনি, কাঠ দিয়ে তারা ট্রলার তৈরি করছে। নতুন ট্রলার তৈরির পর তাতে প্রায় ২শ' কেজি আলকাতরা লাগে। পুরোনো ট্রলার মেরামত করতে ৩০-৭০ হাজার টাকা খরচ হচ্ছে। একটি নতুন ট্রলারে প্রায় ৩ মণ পেরেক, ১শ কেজি পাতাম সুতা প্রয়োজন হয়। ট্রলার তৈরি পর ইঞ্জিন বসাতে প্রায় ১ লাখ টাকা খরচ হচ্ছে। পানগুছি নদীর দুপাশে এভাবে ট্রলার তৈরি ও মেরামতের কাজ করতে দেখা যাচ্ছে এখন।
বারইখালী ইউনিয়নের একজন মৎসজীবী বলেন, সমুদ্রে মাছ ধরতে যেতে ১টি ট্রলার তৈরি করছি। নতুন ট্রলার তৈরি করতে সর্বমোট খরচ পড়ছে ৩ থেকে ৪ লাখ টাকা। মহাজনের কাছ থেকে চড়া সুদে টাকা নিয়েছি, সাগরে মাছ ধরে তা বিক্রি করে টাকা শোধ করতে হবে।
মোরেলগঞ্জের প্রান্তিক জেলেদের জীবনবাজি রেখে মাছ ধরার জন্য গভীর সমুদ্রে ভয়ঙ্কর, বিক্ষুব্ধ উত্তাল ঢেউয়ের সঙ্গে যুদ্ধ করে জাল ফেলে মাছ ধরতে হয়। এই উপজেলার কয়েকশ' পরিবারের আয়ের উৎস সমুদ্রে মাছ ধরা। শত বিপদের সঙ্গে লড়াই করে তাদের জীবিকা নির্বাহ করতে হয়। অথচ এত কষ্ট আর ঝুঁকি নিয়ে আহরিত মৎস্য বিক্রি করে ঋণের আসল ও চড়াসুদ দিয়ে তাদের অবশিষ্ট যৎসামান্যই থাকে বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কতিপয় মৎস্যজীবী জানান। তারা আরও জানান, যদি এই মৌসুমে সরকারের তরফ থেকে স্বল্প সুদে ঋণ পাওয়া যেত তবে তারা পরিবার নিয়ে মোটামুটি খেয়ে পড়ে বাঁচতে পারতেন । অনেক সময় মাছ ধরার ক্ষেত্রে সুবিধা করতে না পারলে তারা ঋণের জালে আটকে পড়েন। এভাবে অনেকেই সর্বস্বান্ত হয়েছেন বলেও তারা জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে মোরেলগঞ্জ উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা বিণয় কুমার রায় বলেন, উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নের মৎসজীবীদের মূল আয়ের উৎস গভীর সমুদ্র হতে মৎস্য আহরণ করা। সে লক্ষ্যে তারা প্রতিবছর জীবনের ঝুঁকি নিয়ে গভীর সমুদ্রে মৎস্য আহরণ করতে যায়। সমুদ্রে মাছ ধরতে যাওয়া এসব জেলেরা যদি সরকারের পক্ষ থেকে কোন সুবিধা নিতে চায় তাহলে তারা লিখিত অবেদন করলে আমি সেটা উর্ব্ধতন কতৃপক্ষকে অবহিত করবো। '
৮ ঘন্টা ১১ মিনিট আগে
১ দিন ১৭ ঘন্টা ৪ মিনিট আগে
২ দিন ৮ ঘন্টা ০ মিনিট আগে
৩ দিন ৮ ঘন্টা ১ মিনিট আগে
৩ দিন ১০ ঘন্টা ৩৯ মিনিট আগে
৩ দিন ১৯ ঘন্টা ১১ মিনিট আগে
৭ দিন ১১ ঘন্টা ২৯ মিনিট আগে
৯ দিন ৫ ঘন্টা ৫৭ মিনিট আগে