হিন্দু স¤প্রদায়ের দেল পূজা বা নীল পূজা উৎসব আয়োজনের মধ্য দিয়ে পালন করবে চৈত্র সংক্রান্তি উৎসব শুক্রবার। দেল বা নীল পূজাকে ঘিরে গ্রাম বাংলায় মেলাও অনুষ্ঠিত হয়। আর দেল বা নীল মেলা আবহমান বাংলার ঐতিহ্যবাহী উৎসব । নীল উৎসবকে ঘিরে গ্রাম গঞ্জের গৃহস্থের উঠান জুড়ে পুরো চৈত্র মাস জুড়ে দেল বা নীল নাচের আসর বসতো। হাটবাজারেও নীল নাচ উপভোগ করতো গ্রাম গঞ্চের মানুষ। বাঙালীর চিরায়ত উৎসব ঘিরে গ্রামে গঞ্জে চলছে এখন বিশেষ উৎসবের উদ্দীপনা। নীল নাচের দল বর্ণিল দেবদেবীর সাজে নানা বাদ্যযন্ত্রের অনুসঙ্গে নাচ গান করে মানুষের মনোরঞ্জন করে চলে। সেই সাথে চৈত্র সংক্রান্তির নীল পূজা ও মেলার আমন্ত্রণ জানায়। চৈত্র সংক্রান্তি মেলায় সকল ধর্মবর্ণের মানুষ স্বতস্ফূর্তভাবে সমবেত হয়ে মেলাকে মুখর করে তোলে। তবে কালের আবর্তে হারিয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্যের এ উৎসব।আশাশুনির নওয়াপাড়া,শে^তপুর,কুন্দুডিয়া,কাদাকাঠি সাতক্ষীরার হাবাসপুর,ফিংড়ী,কুলতিয়ায় চৈত্র সংক্রান্তি দিনে শতবছর বছর ধরে এ দেল বা নীল পূজা ও মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। আশাশুনির নওয়া পাড়া গ্রামের বিকাশ চন্দ্র বাছাড় বলেন,প্রতিটি দেল বা নীল নাচের দলে ১০/১২জনের রাধা,কৃষ্ণ,শিব,পার্বতী,নারদসহ সাধু পাগল(ভাংরা)সেজে সকাল থেকে মধ্য রাত অবধি নাচ গান পরিবেশন করেন। গ্রাম বাংলার সকল মানুষের কাছে দারুন উপভোগ্য এই নাচ। চৈত্র সংক্রান্তির মেলার দিনে নীল পূজা শেষে, শেষ হবে এ নীল নাচ। নীল পূজার জন্য নীল নাচের দল বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে চাল,ডাল আর নগদ অর্থ সংগ্রহ করে। নীল পূজা মূলত হিন্দু ধর্মীয় উৎসব হলেও চৈত্র সংক্রান্তির উৎসবে মিলে তা সার্বজননীন এক উৎসবে পরিনত হয়। আশাশুনির বুধহাটা গ্রামের বিশিষ্ট পূজারি গৌতম ব্যানার্জী বলেন,পুরো চৈত্র মাস ধরে ১২থেকে ২০ সদস্যের দেল বা নীল দল জনপদে নাচ গান করে । চৈত্র মাসের শেষ দিনে আশাশুনির বুধহাটা,শে^তপুর,কুন্দুড়িয়া গ্রামে ঐতিহ্যবাহী এ নীল পূজা অনুষ্ঠিত হয়। প্রায় শতবছর বছর ধরে এ নীল পূজা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। দিনব্যাপী এ অনুষ্ঠান ঘিরে এখানে চৈত্র সংক্রান্তির মেলা বসে। এ বিষয়ে বুধহাটা দ্বাদশ শিবকালী মন্দিরের পুরোহিত বিকাশ ব্যানার্জী বলেন,নীল পূজা ও চৈত্র সংক্রান্তি মেলা হিন্দু স¤প্রদায়ের উৎসব হলেও তা বাঙালীর চিরায়ত উৎসব। এটি আসলে কালের আবর্তের উৎসব। নীল পূজা মানে শিব দেবতার গাজন (শিব পূজা)। হিন্দু ধর্মের পৌরনিক ধর্ম মতে,দেবতা শিব সমুদ্র মন্থনে বিষপান করে নীল কণ্ঠ ধারন করেছিল। আবার বৈদিক হিন্দু ধর্ম মতে,সূর্য অস্ত গেলে চারিধার গাঢ় অন্ধকার হয়ে আসে। গাঢ় অন্ধকার নীল বর্ণের হয়। এখানে বছরের আয়ুষ্কাল শেষ হওয়ার প্রতীকি হল এই নীল। কালের আবর্ত শেষ হয়ে আসে নতুন ভোর,নতুন কাল। পুরানো কালকে বিদায় দিয়ে নতুন বছরে সংকট কেটে সুখ ও সমৃদ্ধির আশায় শিবের আরাধনা বা শিবের গাজন অনুষ্ঠিত হয়। চৈত্র শেষে শিবের গাজন উৎসবই হল নীল পূজা। আশাশুনির সংস্কৃতিজন অসিম কুমার দত্ত বলেন, নীল পূজা বাংলা শেষ চৈত্রর উৎসব। আবহমান কাল ধরে চলে আসছে এই উৎসব। ঐতিহ্যের এ উৎসব দিয়ে বাংলার পুরাতন বছরকে বিদায় দিয়ে শুরু হয় বাংলা নববর্ষ বরণ। তবে নানা সংকটে এ নীল উৎসবের প্রধান অনুসঙ্গ নীল দলের নাচ ক্রমশ বিলুপ্তির পথে। ঠিক আগের মত নীল নাচ তেমন আর চৈত্রদিনে দেখা মেলেনা।
১ দিন ৫ ঘন্টা ৪১ মিনিট আগে
১ দিন ২৩ ঘন্টা ২৬ মিনিট আগে
৩ দিন ০ মিনিট আগে
৩ দিন ২ মিনিট আগে
৩ দিন ৪ ঘন্টা ৩৭ মিনিট আগে
৮ দিন ১ ঘন্টা ২৬ মিনিট আগে
১০ দিন ১০ মিনিট আগে