◾ জাহেদ কায়সার : দুয়ারে কড়া নাড়ছে ঈদ। আর একদিন পর উদযাপিত হবে মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতর। প্রিয়জনদের সাথে ঈদ খুশি ভাগাভাগি করতে মানুষ নিজ কর্মস্থল থেকে ছুটে যাবে নিজ নিজ বাড়িতে। প্রতি বছর ঈদ আসলে এ দৃশ্য দেখা যায়।
বিগত বছরগুলোতে ঈদযাত্রা খুব একটা সুখকর ছিল না। করোনাভাইরাসের কারণে সরকার ঈদযাত্রাকে পুরোপুরি নিরুৎসাহিত করেছিলেন এবং ঈদের সময় কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করেছিল। কিন্তু মানুষকে রুখে রাখা যায়নি। ‘নাড়ির টান’কে রুখে দেওয়ার সাধ্য করোনাভাইরাসেরও নেই , তাই কঠোর বিধিনিষেধের মধ্যে সমস্ত গণপরিবহন বন্ধ রাখার পরও লাখ লাখ মানুষ শহর ছেড়ে ‘ গ্রামের বাড়িতে’ ঈদ করেছে। বিশেষ করে নিম্ন আয়ের, নিম্নবিত্তের এবং শ্রমজীবী মানুষ সীমাহীন কষ্ট করে ‘ নাড়িরটানে বাড়িতে’ ফিরে গেছে ঈদ করতে।
ঈদ মানে আনন্দ বা খুশি। মুসলমানদের সবচেয়ে বড় আনন্দ উৎসব হলো বছরে দুটি ঈদ, ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা। দীর্ঘ একমাস সিয়াম সাধনার পর হাজির হয় ঈদুল ফিতর। দিনটি ভ্রাতৃত্ব, সহমর্মিতা ও ধনী-গরিব নির্বিশেষে সবাইকে এককাতারে শামিল করার চেতনায় উজ্জীবিত করে। ঈদকে কেন্দ্র করে পোশাক, অলঙ্কার, জুতাসহ অন্যান্য সামগ্রী ক্রয়-বিক্রয়ে সর্বত্র বাড়ছে ব্যস্ততার পরিধি। শহর থেকে কেনাকাটা করে গ্রামের বাড়ি ফেরার প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেছে ইতোমধ্যে। শ্রেণি-ধর্ম-বর্ণ-ধনী-গরিব নির্বিশেষে সব মানুষ ভাগাভাগি করে নেয় ঈদের আনন্দ। দারিদ্র্যের কারণে যাতে কেউ ঈদের আনন্দঘন পরিবেশ থেকে বঞ্চিত না হয় তার জন্য ইসলামে রয়েছে ফিতরা প্রদানের ব্যবস্থা। এ ছাড়া মুসলিমরা তাদের সম্পদের পরিমাণের ওপর ভিত্তি করে গরিবদের জাকাত প্রদান করে থাকে।
এবার যেহেতু করোনার চোখ রাঙানি নেই, কঠোর বিধিনিষেধ নেই এবং খানিকটা রুদ্ধশ্বাসমুক্ত স্বাভাবিক অবস্থা বিরাজ করছে, সেহেতু এবার প্রচুর মানুষ গ্রামের বাড়িতে, ঈদ করতে যাবে, সেটাই স্বাভাবিক। গত দুুইবার যারা যেতে পারেনি, তারাও যাবে ‘দেশের বাড়িতে’ বাবা-মা আর পরিবার-পরিজনের সঙ্গে ঈদ করতে। বিশেষ করে শহুরে মধ্যবিত্ত শ্রেণি করোনার ভয়ে এবং যাত্রা-কষ্টের আতঙ্কে গত দুই বছর নগরে ঈদ পালন করলেও এবার কোনোভাবেই নিজেকে নগরে আটকে রাখবে না। নিজের সন্তান-সন্ততিকে নিয়ে যাবে নিজের গ্রামের বাড়িতে বাস করা বাবা-মার সঙ্গে ঈদ করার জন্য। দাদা-দাদি বা নানা-নানির সঙ্গে নাতি-নাতনির ঈদ যেন ভালোবাসা আর আবেগের এক স্বর্গীয় অপূর্ব মিলনমেলা। ফলে, এবার ঈদযাত্রায় যে মানুষের ঢল নামবে সেটা সহজেই অনুমেয়।
ঈদ আসলে প্রতিবছর দেখা যায়
জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অনেকে বাস বা ট্রেনের ছাদে যাতায়াত করেন। কিন্তু নিরাপদে বাড়ি ফেরার নেই কোনো নিশ্চয়তা। বিভিন্ন ফিটনেসবিহীন গাড়ি ও লঞ্চ রং করে নতুনের মতো করে তোলা হচ্ছে। যার ফলে প্রায় দুর্ঘটনার কবলে পড়ে প্রাণহানি ঘটে । যানবাহনজুড়েই এখন রয়েছে বাড়ি ফেরার উপচেপড়া ভিড়। ঈদ উপলক্ষে বিশেষ ট্রেন ও বাড়তি বগি সংযোজন করার পরও অনেককে ট্রেনের ছাদে চড়ে বাড়ি ফিরতে দেখা যায়। এ ছাড়া অগ্রীম টিকেট বিক্রি শুরু হলেই বেড়ে যায় কালোবাজারিদের তৎপরতা। যার ফলে সাধারণ যাত্রীদের গুণতে হয় তিন-চারগুণ বেশি ভাড়া। তার ওপর সহ্য করতে হয় যানজটের তীব্র যন্ত্রণা। এতকষ্টের পরও মানুষ বাড়ি ফিরে। তাই যাত্রা পথে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকবেন যাতে কোনো দুর্ঘটনা না ঘটে। এ ছাড়া অনেক চক্র আছে যারা জাল টিকেট বিক্রি করে, ভালো সিটের কথা বলে অনেক টাকা নেয় কিন্তু শেষে উঠিয়ে দেয় লক্কর-ছক্কর গাড়িতে। তাই এসব প্রতারণা থেকে সাবধান থাকবেন। যাত্রাপথে অপরিচিত কারও দেয়া খাবার থেকে বিরত থাকুন।
যতো কষ্টি হোক পরিবার পরিজন নিয়ে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে মানুষ বাড়ি ফেরে, এটাই তার আনন্দ। এই আনন্দকে আরও পূর্ণতা দিতে এবং দুর্ভোগ কমানোর জন্য টিকেট কেনাবেচা ও যাত্রী পরিবহনের ক্ষেত্রে শৃঙ্খলা ও ব্যবস্থাপনা আরও উন্নত করতে হবে। ফিটনেসবিহীন গাড়ি ও লঞ্চ সড়ক ও নৌ-পথ থেকে সরানো জরুরি। এ ছাড়া যানজট ও দুর্ঘটনা নিরসনে কর্তৃপক্ষকে বাড়তি নজরদারি করতে হবে। পরিশেষে, ঈদে সবার জীবন হয়ে উঠুক আনন্দময় ও নিরাপদ, এটাই প্রত্যাশা।
১০ দিন ১৬ ঘন্টা ২৩ মিনিট আগে
১৩ দিন ১৬ ঘন্টা ২৩ মিনিট আগে
৬৬ দিন ২০ ঘন্টা ৪৩ মিনিট আগে
৬৯ দিন ১ ঘন্টা ১৫ মিনিট আগে
৭১ দিন ১৯ ঘন্টা ১৪ মিনিট আগে
৭১ দিন ২০ ঘন্টা ২৮ মিনিট আগে
৯৩ দিন ১৭ ঘন্টা ৪৯ মিনিট আগে
৯৪ দিন ১৮ ঘন্টা ৫৫ মিনিট আগে