উপজেলা নির্বাহী অফিসারের এর আয়োজনে রাজকীয় আপ্যায়ন, অতিথি এক ঝাঁক পথ শিশু ।
খাবার টেবিলে পেলেটে পেলেটে সাজানো নানা প্রকার ফল খেঁজুর, আঙুর, বেদেনা, কমলা, আপেল, মাল্টা,কলা, তরমুজ, বাঙ্গী, কাজু বাদাম। গ্লাসে রাখা ফলের জুস ও গুরের শরবত। রয়েছে বিশুদ্ধ পানি’র বোতল। এই শেষ নয় পাশে রাখা পদ্মা নদীর ছোট মাছ দিয়ে উস্তা ভাজি। লাল শাঁক। ইলিশ মাছ ভাজা, বড় রুই মাছ ভোনা। মুরগীর মাংস এবং চিকন চাউলের ভাত। সাথে রয়েছে মুরগী মাংস খিচুরী।
খাবারের তালিকার যেন শেষ নেই। তালিকা দেখলে মনে হবে রাজকীয় আপ্যায়ন। বিশেষ এই আয়োজনে অতিথি হবে উপজেলার বড় অফিসার, জনপ্রতিনিধি, মেয়র, চেয়ারম্যান ও রাজনীতিবিদ। না, এমন কেউ অতিথির তালিকায় নেই। অতিথির তালিকায় রয়েছে উপজেলার এক ঝাঁক পথ শিশু। যাদের অনেকের বাবা নেই, মা নেই। আশ্রয় হিসেবে রয়েছে সামাজিক সংগঠন “পায়াক্ট বাংলাদেশ”। সরকারি-বেসরকারি কোন অর্থে নয় “পায়াক্ট বাংলাদেশ” নামের এই সামাজিক সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা আবু ইউসুফ চৌধুরী থাকা-খাওয়া এবং পড়ালেখার খরচ বহন করে থাকেন টানা ২৪ বছর। এই শিশুরা আজ বিশেষ অতিথি ছিলেন গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী অফিসারের বাসভবনে। জ্যোতি বিকাশ চন্দ্র-¯স্নিগ্ধা রায় দম্পতি আমন্ত্রনে পথশিশুরা এসেছিলেন।
অতিথি বাসায় আসবেন। তাই সকালে নিজ হাতে বাজার করেছেন ¯স্নিগ্ধা রায়। একজন মৌলভীর নিকট থেকে পরামর্শ নিয়ে ইফতারীর আয়োজন। আবার এত গুলো বাবা-মা হারা শিশু। কে কি পছন্দ করেন, কোন খাবার পছন্দ করেন। না, জানার কারণে সব কিছু পর্যাপ্ত পরিমান খাবারের তালিকায় রাখা হয়েছে। নিজের হাতে মাতৃ স্নেহে এই খাবার গুলো তৈরি করা হয়েছে।
বিকেল ৪টায় এই সকল পথশিশুদের নিয়ে যাওয়ার জন্য নিজস্ব গাড়ি দেওয়া হয়। গেটে দাঁড়িয়ে বরন করে জ্যোতি বিকাশ চন্দ্র-স্নিগ্ধা রায় দম্পতি। নিজের হাতে সেবা করেন এই দম্পতি। অবশেষে এই সকল পথশিশুদের সকলের জন্য নতুন নতুন জামা-কাপড় এবং গামছা দেওয়া হয়।
জ্যোতি বিকাশ চন্দ্র-¯স্নিগ্ধা রায় দম্পতি মানবতার ফেরিওয়ালা। জ্যোতি বিকাশ চন্দ্র রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী অফিসার হিসেবে কর্মরত। স্ত্রী ¯স্নিগ্ধা রায় গৃহীনি। একটি মাত্র কন্যা সন্তান সেঁজুতি রায় তিন থেকে চার বছরে পা রেখেছে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পূর্বে গোয়ালন্দ উপজেলায় এসে যোগ দিয়েছেন। অল্প দিনেই জ্যোতি বিকাশ চন্দ্র-¯স্নিগ্ধা রায় দম্পতি এবং এই দম্পতি একমাত্র কন্যা সন্তান সেঁজুতি’র নাম উপজেলা বাসীর কাছে অতিপরিচিত হয়েছে।
জ্যোতি বিকাশ চন্দ্র কর্মের কারণে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে উপজেলার প্রতিটি গ্রামে পায়ে হেঁটে ঘুরেছেন। খোঁজ নিয়েছেন কোন গ্রামে কতজন মানুষ ও কত পরিবার কিভাবে জীবন-যাপন করছেন। সন্ধ্যা রাত থেকে মধ্য রাত পর্যন্ত একমাত্র তিন বছরের কন্যা সেঁজুতিকে নিয়ে কখনও স্ত্রী ¯স্নিগ্ধাকে সাথে নিয়ে অসহায় পরিবারের বাড়ীতে বাড়ীতে ঘুরেছেন। লোকচক্ষুর আড়ালে সামর্থ মত সহযোগিতা করেছেন এবং করেন। সরকারি ও নিজস্ব বেতনের আয় থেকে এই সহযোগিতা করেছেন। এখনো করছেন। শুরু থেকে এই দম্পতি মিডিয়ার আড়ালে থাকতে পছন্দ করেন।
জ্যোতি বিকাশ চন্দ্র-¯স্নিগ্ধা রায় দম্পতি কাঁন্না জরীত কণ্ঠে বলেন, এই দিন যেন প্রতিবছর আসে। আমরা যেন ওদের পাশে সবসময় থাকতে পারি। তারা বলেন, শিক্ষা ও কর্ম জীবনে অনেক আনন্দ উপভোগ করেছি। কিন্ত আজকের আনন্দ অনন্তকাল আমাদের অঙ্গেঁ অঙ্গেঁ মিশে থাকবে। আমি ও আমার পরিবার যেখানে থাকবো ওদের কখনও ভুলবো না। ওদের ভালবাসার আনন্দ নিয়ে আমার কর্মজীবনে এগিয়ে যেতে চাই।
পায়াক্ট বাংলাদেশ এর ম্যানেজার মজিবুর রহমান জুলেয় জানান, “পায়াক্ট বাংলাদেশ” ২০০০ সাল থেকে পথ শিশুদের নিয়ে কাজ করে। ২০০৭ সাল থেকে এই প্রতিষ্ঠানের কোন দাতা বা ডোনার নাই। এই প্রতিষ্ঠানে নির্বাহী পরিচালক স্যার আবু ইউসুফ চৌধুরী নিজ অর্থায়নে সেফ হোম পরিচালিত হয়। কিন্ত এই প্রথম কোন সরকারি পদস্ত কর্মকর্তার আমন্ত্রনে ওরা অনেক আনন্দিত ও নিজেকে ভাগ্যবান মনে করছে। ইউএনও স্যার ও ম্যাডামের ¯স্নেহের স্পর্শে ওরা যেন বাবা-মায়ের স্পর্শ খুজে পেয়েছে।
বিদায় বেলায় পথশিশুরা জ্যোতি বিকাশ চন্দ্র-¯স্নিগ্ধা রায় দম্পতিকে আব্বু,আব্বু-আম্মু আম্মু বলে জরীয়ে ধরেন। এক কণ্ঠে সবাই বলেন, জম্মের পর আজ বাবা-মায়ের আদরের পরশ পেয়েছি। এর পূর্বে কখনও এমন হাতের ছোঁয়া, এমন আদর, এমন ভালবাসা কখনও পায়নি। এই বলে বিদায় নেয় শিশুরা সবাই। আবার দেখা হবে এই প্রত্যাশায়।