রাজবাড়ীতে পায়াকট সেফ হোমের মেয়েদের অন্য রকম এক নাইওরির গল্প।
অনেকদিন পর বাবা-মেয়েদের দেখা। একে অপরকে জড়িয়ে ধরে আবেগী কান্না। মেয়েরা বাবার মুখের পানে চেয়ে বলছেন, আব্বা আপনি অনেকটা শুঁকিয়ে গেছেন। নিজের প্রতি ঠিকমতো খেয়াল রাখছেন না মনে হয়। এমন সোহাগ মাখা কথাবার্তার সঙ্গে ছিল জামাই,নাতি-নাতনিদেরও ভালবাসা।
উপরোক্ত বাবা-মেয়েদের মধ্যে কিন্তু কোন রক্তের সম্পর্ক নেই। তারপর তাদের সম্পর্কের গভীরতা ও মধুরতা অনেক নিবিড়।
গল্পের বাবার নাম আবু ইউসুফ চৌধুরী। তিনি পায়াকট বাংলাদেশ নামক একটি বেসরকারী উন্নয়ম সংস্হার প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী ।
তার প্রতিষ্ঠানের দৌলতদিয়া শাখায় রয়েছে একটি সেফ হোম। যেখানে বিগত ২০০০ সাল হতে দৌলতদিয়া যৌনপল্লীর অসহায় শিশু ও এতিম সন্তানদের লালন পালন করা হয়।
এই সেফ হোমের প্রাক্তন ও বর্তমান শিশুদের নিয়ে আয়োজন করা হয় ঈদ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানের। সেখানেই ঘটে বাবা-মেয়েদের মধুর মিলন।
অনুষ্ঠানে আসা বন্যা আক্তার জানান, তিনি এই হোমে থেকে বড় হয়েছেন। বিয়ে হয়েছে বরিশালে। আমার দুই মেয়ে। স্বামী গাড়ি চালক। কিন্তু এই হোমই আমার বাবার বাড়ি বলে জানি। আবু ইউসুফ চৌধুরী স্যার আমার জন্মদাতা বাবা না হলেও তিনিই আমার বাবা তিনিই আমার মা। তাই সুযোগ পেলেই এখানে ছুটে আসি। এটাই আমাদের নাইওরিতে আসা।
মানিকগঞ্জ হতে স্বামী সন্তান নিয়ে আসা মৌসুমির স্বামী লিটন শেখ জানান, মৌসুমী খুব ভালো মেয়ে। ওকে স্ত্রী হিসেবে পেয়ে আমি ধন্য। ওকে যারা গড়ে তুলেছেন সেই পায়াকট সেফহোমের সকলকে ধন্যবাদ জানাই।
গোপালগঞ্জ হতে শিশু ছেলেকে নিয়ে আসা প্রিয়াংকা জিজ্ঞেস করলে বলেন, বাবার বাড়িতে নাইওরিতে এসেছি। এখানে আসলে মনটা জুড়িয়ে যায়।
২য় শ্রেনীতে পড়ুয়া ছোট্ট শিশু আবির জানায়, সে নানার বাড়িতে বেড়াতে এসেছে।এটাই (সেফ হোম) আমার নানা ভাই। আবু ইউসুফ আমার নানা।
পায়াকট বাংলাদেশ এর প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক আবু ইউসুফ চৌধুরী বলেন, পায়াকট বাংলাদেশ ২০০০ সালে এখানে ১২০ জন ছেলে মেয়ে নিয়ে সেফ হোমের যাত্রা শুরু করে।
এই সকল বাচ্চারা অনেকে লেখাপড়া শিখে আজ সুপ্রতিষ্ঠিত। তারা সমাজের মূল ধারায় মিশে সুন্দর জীবন যাপন করছে। মেয়েদের বাবার বাড়ি না থাকায় এই হোমই ওদের বাবার বাড়ি এবং আমাকেই ওরা বাবার সম্মান দিয়ে ভালবাসে। আমিও ওদের খুব ভালবাসি।
ওদের জন্যই প্রতি বছর ঈদের পর এই হোমে নাইওরির আয়োজন করি। আজকের আয়োজনটা তেমনই ছিল।
পায়াক্ট বাংলাদেশ এর দৌলতদিয়া শাখার ব্যাবস্থাপক মজিবুর রহমান জুয়েল জানান, ২০০৭ সাল থেকে এই সংস্থাটিতে কোন প্রকার ডোনার নেই। সংস্থার পরিচালক আবু ইউসুফ চৌধুরী স্যার নিজস্ব অর্থায়নে ছোট্ট পরিসরে মাত্র ১১ জন বাচ্চা নিয়ে এর কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। এখান থেকে একটি মেয়ে ইঞ্জিনিয়ার হয়েছে ও একটি ছেলে কুরআনের হাফেজ হয়েছে।
এখানে আমাদের ১০০ জনের অধিক শিশু রাখার ব্যবস্থা আছে এবং এখানে অনেক শিশু থাকতে চায় কিন্তু আমাদের আর্থিক সীমাবদ্ধতার কারনে রাখতে পারছি না। এখানকার বাচ্চাদের ভবিষ্যত চিন্তা করে আমরা সরকারী ও বেসরকারী সহযোগীতা কামনা করছি।
পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন সরকারের অবসরপ্রাপ্ত উপসচিব নজরুল ইসলাম চৌধুরী, গ্রামীণ ব্যাংকের অবসরপ্রাপ্ত জিএম মির আখতার হোসেন, গোয়ালন্দ পৌরসভার মেয়র মো. নজরুল ইসলাম মন্ডল, গোয়ালন্দ প্রেসক্লাবের সাধারন সম্পাদক শামীম শেখ, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ব্যাবস্থাপক মো. জুলফিকার আলী প্রমূখ।
৮ ঘন্টা ৩৫ মিনিট আগে
৮ ঘন্টা ৫১ মিনিট আগে
১০ ঘন্টা ৪৪ মিনিট আগে
১ দিন ১১ ঘন্টা ৩৭ মিনিট আগে
৩ দিন ৪ ঘন্টা ৩৯ মিনিট আগে
৩ দিন ১১ ঘন্টা ২ মিনিট আগে
৩ দিন ১২ ঘন্টা ১২ মিনিট আগে
৪ দিন ৭ ঘন্টা ১৬ মিনিট আগে