জামালপুরের ইসলামপুর উপজেলার চরপুটিমারী ইউনিয়নে অতিদরিদ্রদের জন্য গৃহীত কর্মসংস্থান কর্মসূচি (ইজিপিপি) প্রকল্পের মেয়াদ প্রায় আড়াই মাস আগে শেষ হলেও এখনো শেষ করা হয়নি কোনো প্রকল্পের কাজ। নির্ধারিত কর্মদিবসে প্রকল্পে কাজ শেষ না করায় প্রকল্পের বাস্তবায়ন নিয়ে নানা মহলে নানাবিধ প্রশ্নের দানাবাঁধছে। গত ৩১ জানুয়ারি প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়েছে। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন (পিআইও) কার্যালয় থেকে শতভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে মর্মে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে মাস্টাররোলে বিল দাখিল করা হয়। কিন্তু বাস্তবে প্রকল্পের বরাদ্দের অর্থ সিকিভাগও ব্যয় করা হয়নি। তবে, ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান জানিয়েছেন, 'প্রকল্পের কাজ কার্যাদেশ অনুযায়ী শেষ হয়েছে। কাজ শেষ না হওয়া তথ্যটি সঠিক নয়।'
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০২২-২৩ অর্থ বছরে ইজিপিপি প্রকল্পের আওতায় স্বাভাবিকভাবে কায়িক পরিশ্রম অক্ষম অতিদরিদ্র শ্রমিকদের মাথাপিছু ৪০০ টাকা দৈনিক মজুরিতে গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কারে মাটি কাটার কাজ করানোর কথা প্রকল্পের কার্যাদেশে রয়েছে।
৪০ কর্মদিবসের এ প্রকল্পে প্রথম পর্যায়ে গত ২৬ নভেম্বর একযোগে প্রকল্পের কাজ শুরু করার সরকারিভাবে নির্দেশনা দেয়া হয়। প্রকল্প তত্বাবধায়নে রয়েছেন ইউপি চেয়ারম্যান। প্রকল্পের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন ইউপি সদস্যরা। ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় ৫টি প্রকল্পে ৩০৫ জন শ্রমিকের ৪৮ লাখ ৮০ হাজার টাকা বরাদ্দ দিয়েছে সরকার।
গত ২৮ জানুয়ারি প্রতিটি প্রকল্পের ২০ দিনের এবং ৫ এপ্রিল ২০ দিনের টাকা উত্তোলন করেছে প্রকল্পের সভাপতিরা।
স্থানীয় বাসিন্দা কৃষক সুলতান, স্কুল শিক্ষক সুমন মিয়া, কলেজছাত্র আবেদ আলী, যুবলীগ কর্মী তালেব মিয়া, হেলাল উদ্দিন, জহিরসহ অনেকেই বলেন, 'প্রকল্পগুলোতে নামমাত্র কাজ করে ভুয়া মাস্টাররোলে সরকারি অর্থ উত্তোলন করে আত্মসাৎ করা হয়েছে।'
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ৪৮ নম্বর প্রকল্প দেওয়া হয়েছে ১৬ লাখ টাকা ব্যয়ে চিনারচর নামাপাড়া আব্দুল ছালামের বাড়ির পাশে ব্রিজ থেকে লতিফ মুন্সির ডোবা পর্যন্ত রাস্তা মেরামত। এতে ১০০ শ্রমিকের ৪০ দিন রাস্তায় মাটি কাটার কথা। কিন্তু প্রকল্পটির সুবিধাভোগী শ্রমিকের পরিবর্তে চুক্তিমূলে ভ্যাকু মেশিনে নামমাত্র কাজ করা হয়েছে।
প্রকল্পের সভাপতি ইউপি মেম্বার আলাউদ্দিন আল আজাদ বলেন, '১ লাখ ৮০ হাজার টাকা ব্যয়ে ভ্যাকু মেশিন বসিয়ে রাস্তা মেরামতের কিছু কাজ করেছি। বাকি কাজের বিষয়ে চেয়ারম্যান সাহেব জানেন।'
৪৯ নম্বর প্রকল্প ৮০ শ্রমিকের বিপরীতে ১২ লাখ ৮০ হাজার টাকা ব্যয়ে বেনুয়ারচর মধ্যপাড়া ইমরানের বাগান থেকে ইদ্রিসের জমি পর্যন্ত রাস্তা মেরামত প্রকল্পেও কাজ করা হয়েছে নামমাত্র।
এ প্রকল্পের সভাপতি ইউপির সংরক্ষিত আসনের মহিলা মেম্বার মোছা. হাসনা খাতুন বলেন, 'কেউ অভিযোগ করতেই পারে। তবে রাস্তা মেরামতের কাজ সঠিক ভাবেই করেছি।'
৫০ নম্বর প্রকল্প ১০০ শ্রমিকের বিপরীতে ১৬ লাখ টাকা ব্যয়ে চার নম্বরচর নতুনপাড়া বাজার থেকে শহিদুল্লাহর বাড়ি হয়ে দছর ফারাজির বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা মেরামত প্রকল্পের বরাদ্দের সিকিভাগ কাজ হওয়ায় রাস্তা দিয়ে হেঁটেও চলাচল করা যায় না।'
এ প্রকল্পের সভাপতি ইউপি সদস্য আনিছুর রহমান বলেন, 'উপজেলার সেরা রাস্তা করেছি। ২ থেকে আড়াই লাখ টাকার মাটি কেটেছি।'
৫১ নম্বর প্রকল্প ২৫ শ্রমিকের বিপরীতে ৪ লাখ টাকা ব্যয়ে বেনুয়ারচর এম. এইচ উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে মাটি ভরাট। এ প্রকল্পে নামমাত্র কাজ করায় বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা খেলাধুলা করতে পারছে না।
এ প্রকল্পের সভাপতি ইউপি মেম্বার আব্দুল মোতালেব বলেন, 'আমি ওই প্রকল্পের সভাপতি নয়। কে-বা কারা আমার নাম সভাপতি হিসেবে দিয়েছে, সেটা জানি না।'
চরপুটিমারী ইউপি চেয়ারম্যান সামছুজ্জামান সুরুজ মাস্টার বলেন, 'বেনুয়ারচর এম. এইচ উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে মাটি ভরাট প্রকল্পে আমি ২৬ হাজার টাকার মাটি কেটেছি। ইতিমধ্যে প্রকল্পগুলোর বাকি কাজ শুরু করা হয়েছে। কয়েক দিনের মধ্যেই কাজ শেষ হয়ে যাবে। প্রয়োজন হলে আরও কাজ করবো।'
প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মেহেদী হাসান টিটু বলেন, 'নিয়মানুযায়ী প্রতিটি প্রকল্পের কাজ শেষ করতে তাগিদ দেওয়া হয়েছে।'
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) মু. তানভীর হাসান রুমান বলেন, 'প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হলেও কাজ সম্পন্ন না হওয়ার বিষয়টি আমার জানা নেই। এখন খোঁজখবর নিবো।'
উপজেলা চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট এসএম জামাল আব্দুন নাছের বাবুল বলেন, 'প্রকল্পের কাজ নিয়ে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ আসছে। আইনগত পদক্ষেপগ্রহণ করতে সংশ্লিষ্টদের অবগত করেছি।'
৬ ঘন্টা ৪৩ মিনিট আগে
১৩ ঘন্টা ৪৯ মিনিট আগে
১ দিন ৫ ঘন্টা ৪৩ মিনিট আগে
৫ দিন ৭ ঘন্টা ৫৭ মিনিট আগে
৫ দিন ১০ ঘন্টা ৫১ মিনিট আগে
৮ দিন ৫ ঘন্টা ২১ মিনিট আগে
১২ দিন ১১ ঘন্টা ২ মিনিট আগে