আমরা বড় আশা করে ইউপি (ইউনিয়ন পরিষদ) নির্বাচনে ভোট দিয়ে তাঁকে মেম্বার (সাধারণ আসনের সদস্য) নির্বাচিত করেছি। এখন ওই ইউপি মেম্বার নিজেই যখন ধর্ষণের চেষ্টার করে, তখন আমরা যাবো কোথায়? এ লজ্জা কোথায় রাখি। আমরা চরম ভাবে লজ্জিত।
জামালপুরের ইসলামপুর উপজেলায় এক ইউপি মেম্বার কর্তৃক ধর্ষণের চেষ্টার শিকার হয়ে বিচার চেয়ে মানববন্ধনে দাঁড়িয়ে উপরোক্ত কথাগুলো বলছিলো এক ভুক্তভোগী স্ত্রী দুই সন্তানের জননী। ভুক্তভোগী ওই নারী একই এলাকার এক দিনমজুরের স্ত্রী।
চরিত্রহীন উল্লেখ করে ওই ইউপি মেম্বারের বিচার দাবিতে গত শুক্রবার (২৮ এপ্রিল) উপজেলার চরপুটিমারি ইউনিয়নের ডিগ্রিরচর সকাল বাজার এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করেন ভুক্তভোগী ওই নারীসহ এলাকাবাসী। এ সময় ইউপি মেম্বারকে তার পদ থেকে বরখাস্তসহ গ্রেপ্তারের দাবি জানানো হয়। পরে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বরাবরসহ ময়মনসিংহ বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক, জেলা এবং উপজেলা প্রেসক্লাবে স্মারকলিপি দেন তাঁরা। তবে অভিযুক্ত মেম্বারের দাবি, 'আনীত অভিযোগ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং ষড়যন্ত্র।'
অভিযুক্ত ইউপি মেম্বারের নাম আসাদুল্লাহ ইসলাম আশা (২৮)। তিনি চরপুটিমারী ইউপির ৭ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার এবং আগ্রাখালী গ্রামের বাসিন্দা একই ওয়ার্ডের সাবেক মেম্বার এবং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আমির আলীর ছেলে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ইউপি মেম্বার আসাদুল্লাহ আশা পূর্ব পরিচিত হওয়ার সুবাদে ওই নারীর ঘরে আসা-যাওয়া করতো। এ সুযোগে মাঝে-মধ্যে ওই নারীকে কুপ্রস্তাব দিতো আসাদুল্লাহ আশা। ইউপি মেম্বার এবং এলাকায় প্রভাবশালী হওয়ায় তাঁর বিরুদ্ধে কোনো ধরণের পদক্ষেপ গ্রহণ করার সাহস পায়নি ভুক্তভোগী পরিবার।
এক পর্যায়ে গত সোমবার ৯টার দিকে স্বামীর বাড়ি থেকে পাশের গ্রামে বাবার বাড়িতে যাওয়ার সময় আগ্রাখালী নামক এলাকায় পৌঁছামাত্রই ইউপি মেম্বার আসাদুল্লাহ ইসলাম আশা রাস্তায় একা পেয়ে ওই নারীর মুখে কাপড় পেচিয়ে পাশের একটি ভুট্টা ক্ষেতে নিয়ে যায় এবং সেখানে জোরপূর্বক ধর্ষণের চেষ্টা করে। ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে ওই নারীর ডাক-চিৎকারে স্থানীয় লোকজন এসে ভুট্টাক্ষেত থেকে ওই নারীকে উদ্ধার করে।
এ ঘটনায় গত বৃহস্পতিবার (২৭ এপ্রিল) ভুক্তভোগী ওই নারীর স্বামী বাদি হয়ে ইউপি মেম্বার আশাদুল ইসলাম আশার বিরুদ্ধে ধর্ষণের চেষ্টার অভিযোগে জামালপুরে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল (১) আদালতে মামলা দায়ের করলে শুনানি শেষে মামলাটি আমলে নিয়ে ইসলামপুর থানার অফিসার ইনচার্জকে (ওসি) আইনগত ব্যবস্থাগ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞ বিচারক।
ইউএনও বরাবর দেওয়া স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়, আসাদুল্লাহ ইসলাম আশা ইউপির মেম্বার পদে নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে এলাকায় বিভিন্ন অপকর্মসহ মাদক ও জুয়া খেলার আসর বসিয়ে দেহ ব্যবসা করে আসছে। এলাকাবাসী কোনো প্রতিবাদ করলে রাজনৈতিক ক্ষমতার অপব্যবহারে হয়রানি করে আসছে।
ভুক্তভোগী ওই নারীর স্বামী বলেন, 'আমার স্ত্রীকে আসাদুল্লাহ মেম্বার ধর্ষণের চেষ্টা চালানোর ঘটনায় লোক সমাজে মুখ পাচ্ছি না। মানসিকভাবে বিপর্যয়ে আছি। আমরা নিরাপত্তা হীনতায় রয়েছি। অভিযুক্ত আসাদুল্লাহ মেম্বার আওয়ামী লীগের রাজনীতি করে। আওয়ামী লীগের প্রভাব দেখায়ে সে অপরাধ করে যাচ্ছে। আমরা তার হীন কাজের শাস্তি চাই।'
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত ইউপি মেম্বার আসাদুল্লাহ ইসলাম আশার সঙ্গে মোবাইলফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, 'আমি নির্দোষ। উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে এবং ষড়যন্ত্র করে আমার বিরুদ্ধে ধর্ষণের ঘটনা সাজানো হয়েছে। ঘটনাটি শোনে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ও ইসলামপুর আসনের এমপি ফরিদুল হক খান দুলাল সাহেব আমাকে দেখা করতে বলেছেন। আমি ধর্ম প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করবো। দেখি তিনি কী ব্যবস্থা নেন।'
চরপুটিমারী ইউপি চেয়ারম্যান সামছুজ্জামান সুরুজ মাস্টার বলেন, 'লোক মুখে ঘটনাটি শুনেছি। তবে আমার কাছে কেউ অভিযোগ করেনি। সরজমিনে খোঁজখবর নিবো।'
ইসলামপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মুহাম্মদ মাজেদুর রহমান বলেন, 'আদালত থেকে এখনো কোনো কাগজপত্র পাইনি। আদালতের আদেশ পেলে আইনানুসারে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।'
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মু. তানভীর হাসান রুমান বলেন, 'ঘটনাটি আমাকে জানানো হয়নি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থাগ্রহণ করবো।'
৬ ঘন্টা ৩২ মিনিট আগে
১৩ ঘন্টা ৩৭ মিনিট আগে
১ দিন ৫ ঘন্টা ৩২ মিনিট আগে
৫ দিন ৭ ঘন্টা ৪৫ মিনিট আগে
৫ দিন ১০ ঘন্টা ৩৯ মিনিট আগে
৮ দিন ৫ ঘন্টা ৯ মিনিট আগে
১২ দিন ১০ ঘন্টা ৫০ মিনিট আগে