জামালপুরের ইসলামপুর উপজেলায় এস.এস.সি. ও সমমানের পরীক্ষা কেন্দ্রগুলোতে নকল নিরুৎসাহিত করার উদ্দেশ্যে সাঁটিয়ে দেওয়া সতর্কীকরণ ব্যানারের লেখাগুলো ভুলে ভরা দেখা গেছে।
রোববার (৩০ এপ্রিল) সকাল ১০টায় সারা দেশের ন্যায়
উপজেলার বিভিন্ন স্থানে ১০টি কেন্দ্রে একযোগে শুরু হয়েছে এস.এস.সি. ও সমমানের পরীক্ষা।
পরীক্ষার্থীদের মধ্যে নকলের প্রবণতা দূর করতে স্ব-স্ব কেন্দ্র কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন ধরনের সতর্কমূলক দিকনির্দেশনা লেখা সংবলিত ব্যানার কেন্দ্রের প্রধান ফটকসহ আশে-পাশের জনসমাগম স্থানে সাঁটিয়ে দেওয়া হয়েছে। নকল প্রতিরোধে সতর্কমূলক দিকনির্দেশনা প্রচারণার ব্যানারে ভুলের ছড়াছড়ি লক্ষণীয়। ব্যানারে এসব ভুলে ভরা দেখে পরীক্ষার্থীরাসহ শিশু-কিশোরেরা ভুল বানান শিখছে বলে জানিয়েছেন সচেতন মহল। মনোবিদরা বলছেন, এ ধরনের ভুল বানান যাত্রাপথে শিশুদের সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত করে। বানান ভুল ও ভাষা বিকৃতির বিষয়ে সংশ্লিষ্টদেন উদাসীনতাকে দায়ী করে অনেকে এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি তুলেছেন।'
সরেজমিনে দেখা যায়, ইসলামপুর সরকারি নেকজাহান পাইলট মডেল হাইস্কুল এবং শহীদ মেজর জেনারেল খালেদ মোশারফ বীর উত্তম গালর্স স্কুল অ্যান্ড কলেজ পরীক্ষা কেন্দ্রে নকল নিরুৎসাহিত করতে সাঁটিয়ে দেওয়া বিভিন্ন ব্যানারে বানানসহ বাক্য ও ব্যাকরণগত নানাবিধ ভুলের ছড়াছড়ি। ব্যানারে খোদ 'পরীক্ষা' শব্দ ভুল করে লেখা হয়েছে 'পরিক্ষা'। বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম বাক্যে 'রাহিম' শব্দটি লেখা হয়েছে 'রাহীম'। অপরদিকে, এস.এস.সি. ও নকলমুক্ত শব্দ দু'টিও ভুল করে লেখা হয়েছে 'এস.এস.সি' এবং 'নকল মুক্ত'।
এছাড়া 'মোবাইল, ঘড়ি বা যে কোনো ধরনের ইলেকট্রনিক ডিভাইস নিয়ে প্রবেশ নিষেধ' বাক্যটি অর্থ ও ব্যাকরণসিদ্ধ নয়।' এ বাক্যটিতে 'ইলেকট্রনিক' শব্দের স্থলে 'ইলেকট্রনিক্স', 'কোনো' শব্দের স্থলে 'কোন'
লেখা হয়েছে।
ইসলামপুর সরকারি নেকজাহান পাইলট মডেল হাইস্কুল কেন্দ্র সচিব রেজাউল করিম বাবু মোবাইল ফোনে বলেন, 'শিক্ষাবোর্ড থেকে আমাদের যেসব চিঠি দেওয়া হয়, তাতে 'পরিক্ষা' শব্দটি এভাবেই লেখা থাকে। তবে ব্যানারে কীভাবে লেখা হয়েছে, তা আমি দেখিনি।'
শহীদ মেজর জেনারেল খালেদ মোশারফ বীর উত্তম গালর্স স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রে সচিব অধ্যক্ষ আব্দুল খালেক আখন্দ বলেন, 'ব্যানারে লেখা ভুল হয়েছে কি-না, সেটা খতিয়ে দেখবো।'
উপজেলা মাধ্যমিক একাডেমিক সুপার ভাইজার মো. মামুনুর রশীদ মামুন বলেন, 'আমি পরীক্ষা কেন্দ্রেই আছি। তবে ভুলে ভরা লেখা সংবলিত ব্যানার সাঁটিয়ে দেওয়ার বিষয়টি নজরে পড়েনি।'
ইসলামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মু. তানভীর হাসান রুমান বলেন, 'পরীক্ষা কেন্দ্রের ব্যানার ভুল ভাবে লেখা হয়েছে কি-না, সেটা আমার জানা নেই। তবে মাতৃভাষার প্রতি দায়িত্ববোধ থেকেই শুদ্ধতার চর্চা করতে হবে। এ জন্য সবাইকে ভাষা ব্যবহারে যত্নবান হতে হবে।'
শিশু ও মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. হেফজুল বারী বলেন, শিশুরা অনেক কিছুই দেখে শিখে। বিশেষ করে বর্ণমালা শেখার পর যা দেখে তাই বানান করে পড়ার চেষ্টা করে। ফলে যাত্রাপথে কিংবা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দেখা ভুল বানানের ঘেরাটোপ থেকে অনেকেই বেরিয়ে আসতে পারে না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. সৌমিত্র শেখর বলেন, পৃথিবীতে যত দাপুটে ভাষা আছে তাদের বানানের সুনির্দিষ্ট কোনো নিয়ম নেই। বাংলা বানানের ক্ষেত্রে নিয়ম রয়েছে। বাংলা একাডেমির প্রমিত বাংলা বানানের নিয়ম মেনে এ ধরনের ভুল সহজেই এড়ানো যায়।'
সরকারি ইসলামপুর কলেজের বাংলা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান প্রভাষক মাহমুদা সুলতানা বলেন, 'বাংলা একাডেমি অনেক শব্দের বানান পরিবর্তন করেছে। 'পরীক্ষা' বানানটি কীভাবে লেখা হয়েছে, তা অভিধান দেখে বলছি। পরবর্তীতে তিনি মোবাইল ফোনে বলেন, 'পরীক্ষা' শব্দটি 'পরিক্ষা' লিখলে ভুল হবে।'
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মুহাম্মদ মানিক মিয়া বলেন, 'বিকৃত বানান ও ব্যাকরণগত ভুলের মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। যত্রতত্র বাংলা বানানের ভুল ভাষার জন্য অমর্যাদাকর। এ ধরনের ভুল ও বিকৃতি থেকে বেরিয়ে আসার ব্যাপারে উদ্যোগী হওয়ার জরুরি।'
৬ ঘন্টা ২৮ মিনিট আগে
১৩ ঘন্টা ৩৩ মিনিট আগে
১ দিন ৫ ঘন্টা ২৮ মিনিট আগে
৫ দিন ৭ ঘন্টা ৪২ মিনিট আগে
৫ দিন ১০ ঘন্টা ৩৫ মিনিট আগে
৮ দিন ৫ ঘন্টা ৫ মিনিট আগে
১২ দিন ১০ ঘন্টা ৪৬ মিনিট আগে