জামালপুরের ইসলামপুর উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. আলহাজ মিয়ার রোষাণল থেকে মুক্তি চেয়ে দুই শিক্ষার্থী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষ, জেলা ছাত্রলীগ ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক বরাবর পৃথক পৃথক আবেদন করেছেন। আবেদনকারী শিক্ষার্থীরা হলেন মো. দায়েমূল ইসলাম জীবন মিয়া এবং রিদোয়ান আল রাফি। তাঁরা দুজনই ইসলামপুরের শেখ হাসিনা ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজির (আইএইচটি) শিক্ষার্থী।
সোমবার (৫ জুন) দুপুরে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদের আবেদন করার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নাফিউল করিম রাব্বী।
গত রোববার (৪ জুন) রাতে আইএইচটির অধ্যক্ষ বরাবর আবেদন করেন ওই দুই শিক্ষার্থী। আবেদনের অনুলিপি দেওয়া হয়েছে ইসলামপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক এবং জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকে।
তবে আনীত অভিযোগ 'ষড়যন্ত্রের অংশ' বলে দাবি করেছেন ছাত্রলীগ নেতা অভিযুক্ত মো. আলহাজ মিয়া।
আইএইচটির তৃতীয় ব্যাচের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ভুক্তভোগী মো. দায়েমূল ইসলাম জীবন মিয়া তাঁর আবেদনে উল্লেখ করেন, আলহাজ মিয়া তাঁর রাজনৈতিক অবস্থান পাকাপোক্ত ও প্রভাব বিস্তার করতে মাঝে মধ্যে আইএইচটির ছাত্রাবাসে ঢুকে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালায়। প্রায়ই বহিরাগত লোকজন নিয়ে ক্যাম্পাসে ঢুকে দলীয় প্রভাব বিস্তার করেন তিনি। উদ্দেশ্য হাসিল করতে দলীয় সভা সেমিনারে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ করিয়ে তাঁর পক্ষে সমর্থন আদায় করে আসছে। এতে লেখাপড়ায় বিঘ্ন ঘটায় দলীয় সভা-সেমিনারে না যেতে চাইলে শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন ধরনের হুমকি ধামকি দেয় আলহাজ মিয়া। এছাড়া তিনি কতিপয় ছাত্রকে মাদকে আসক্তি করিয়েছে। উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক পদে আসীন থাকায় সাধারণ শিক্ষার্থীরা তাঁর বিরুদ্ধে কোনো ধরনের কর্ণপাত করার সাহস পায় না। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পড়তে আসা শিক্ষার্থীরা আলহাজ মিয়ার দাপটের ভয়ে সব সময় আতঙ্কে থাকে। গত ২ জুন সন্ধ্যায় ছাত্রাবাসের ২১৪, ২১৭ ও ৩২০ নম্বর কক্ষে ঢুকে আলহাজ মিয়ার অনুসারী পঞ্চম ব্যাচের প্রথম বর্ষের ছাত্র উপজেলা ছাত্রলীগের সদস্য রিফাত আহমেদ ফারাজি এবং তৃতীয় ব্যাচের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ইসলামপুর পৌর ছাত্রলীগের ৭ নম্বর ওয়ার্ড শাখার সভাপতি আহসান রায়হান মাদক সেবন করে। এতে বাঁধা দেওয়ায় তারা জীবন মিয়াকে বেধড়ক মারধোর করে। গুরুতর আহত অবস্থায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিতে গেলে জরুরি বিভাগে ঢুকে আলহাজ মিয়াকে সমর্থন দিতে রাজি না হলে চিকিৎসা নিতে দেওয়া হবে বলে হুশিয়ারি দিয়ে আবারও জীবন মিয়াকে মারধোর করার চেষ্টা করে তারা। ঘটনার বেগতিক দেখে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ থানায় ফোন দিলে একদল পুলিশ উপস্থিত হলে তাদের রোষাণল থেকে সাময়িক মুক্তি পায় জীবন মিয়া।
পরে রাত ১১টার দিকে থানা পুলিশ এবং মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের একদল সদস্য অভিযান চালিয়ে ছাত্রাবাসের ২১৪ নম্বর কক্ষে রিফাত ফারাজি ও রায়হানের টবে রোপনকৃত একটি গাঁজা গাছ, ইয়াবা সেবনের বিভিন্ন সরঞ্জামাদিসহ মদের বেশকিছু খালি বোতল উদ্ধার করে।
অপরদিকে, তৃতীয় ব্যাচের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ভুক্তভোগী রিদোয়ান আল রাফি তাঁর আবেদনে উল্লেখ করেন, ছাত্রাবাসের ২১৪ নম্বর কক্ষে তিনি থাকেন। আলহাজ মিয়ার মদদে রিফাত ফারাজি এবং রায়হান জোরপূর্বক টবে গাঁজার গাছ রোপণ করে। বিষয়টি কাউকে বললে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দেয় তারা। এ ঘটনার পর থেকে আলহাজ মিয়ার সাঙ্গপাঙ্গরা জীবন মিয়া এবং আল রাফিকে প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছে। এতে তাঁরা দুজনই জীবনের নিরাপত্তাহীনতায় ভোগছেন।'
ইসলামপুর উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. আলহাজ মিয়া বলেন, 'আমার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। যারা অভিযোগ করেছে, তাদেরকে চিনিও না। আনীত অভিযোগ মিথ্যা ও বানোয়াট। পুরো বিষয়টি আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অংশ।'
এবিষয়ে জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নাফিউল করিম রাব্বী বলেন, 'ছাত্রলীগ নেতা আলহাজ মিয়ার রোষাণলে পড়ে হয়রানির হওয়ার বিষয়ে ভুক্তভোগী দুই শিক্ষার্থীর লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। কমিটিকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন আমাদের নিকট জমা দিতে বলবো। তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর সাংগঠনিক বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নিবো।'
ইসলামপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক মাহমুদুল্লাহ বলেন, 'উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আলহাজ মিয়ার বিরুদ্ধে নানাবিধ অভিযোগ তোলে দুই শিক্ষার্থীর লিখিত আবেদন পেয়েছি। সিনিয়র নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আলোচনা করে দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী আনীত অভিযোগ খতিয়ে দেখা হবে।'
আইএইচটির অধ্যক্ষ ডা. প্রদীপ কুমার সাহা বলেন, 'ছাত্রাবাসের কক্ষ থেকে মাদক গ্রহণের সরঞ্জামসহ মদের খালি বোতল এবং টবের মধ্যে রোপনকৃত একটি ছোট্ট গাঁজা গাছ উদ্ধার করেছে মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। এ ঘটনায় ইতিমধ্যে আমরা একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছি। তদন্ত সাপেক্ষে ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে নেওয়া হবে আইনানুগ ব্যবস্থা।'
৬ ঘন্টা ৪৩ মিনিট আগে
১৩ ঘন্টা ৪৯ মিনিট আগে
১ দিন ৫ ঘন্টা ৪৩ মিনিট আগে
৫ দিন ৭ ঘন্টা ৫৭ মিনিট আগে
৫ দিন ১০ ঘন্টা ৫১ মিনিট আগে
৮ দিন ৫ ঘন্টা ২১ মিনিট আগে
১২ দিন ১১ ঘন্টা ১ মিনিট আগে