জামালপুরের ইসলামপুর উপজেলায় গরিব-মিসকিনদের মধ্যে বিতরণের জন্য সৌদি সরকারের দুম্বার গোস্ত ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ইউপি সচিবরা ভাগাভাগি করে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। তবে উপজেলা প্রশাসনের দাবি, দুম্বার গোস্ত যথাযথ ভাবে বিতরণ করা হয়েছে।
জানা গেছে, বিতরণ করা মাংস ২টি পৌর শহরের মাদ্রাসায় ২কার্টুন ছাড়া প্রকৃত গরিব, দুস্থর কারো ঘরে পৌছেনি। কেউ চোখেও দেখেনি। এতে জনমনে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। ইসলামপুর উপজেলায় ৩/৪দিন ধরে বিষয়টি 'টক অব দ্য টাউনে’ পরিণত হয়েছে।
উপজেলা দুর্যোগ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ইসলামপুর উপজেলার গরিব-মিসকিনদের জন্য ২৮ কার্টুন দুম্বার গোস্ত সৌদি সরকার পাঠায়। প্রতি কার্টুনে ৩ কেজি ওজনের ১০টি প্যাকেটে রাখা ছিলো ওই গোস্ত। এতে ৮৪০ কেজি গোস্ত ছিলো।
বরাদ্দকৃত ওই গোস্ত গত মঙ্গলবার (১৬ জানুয়ারি) অতি গোপনে দুম্বার গোস্তের কার্টুন উপজেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা (পিআই) কার্যালয় থেকে পৌর শহরস্থ আশরাফুল উলূম মাদ্রাসা ও শিশু সদন মাদ্রাসা, পৌরসভাসহ ১২টি ইউনিয়নের জনপ্রতিনিধিদের মাঝে ভাগ করে দেওয়া হয়। কিন্তু বিতরণ করা গোস্ত ২টি মাদ্রাসায় ২কার্টুন ছাড়া প্রকৃত গরিব ও মিসকিন মানুষের ঘরে পৌঁছেনি। এমনকি এবারের দুম্বার গোস্তগুলো সাধারণ মানুষ কেউ চোখেও দেখেনি। এতে জনমনে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
উপজেলার বেলগাছা মন্নিয়াচরের সবুজ হোসেন, পাথর্শীর ঢেংগারগড় গ্রামের আক্রাম হোসেন, কুলকান্দীর বেলাল মিয়া, চরগোয়ালিনীর মিজান মিয়া, গোয়ালেরচরের কুমিরদহ গ্রামের রাসেল মিয়া, চরপুটিমারী বেনুয়ারচর গ্রামের পারভীন আক্তার, নোয়ারপাড়ার উলিয়া গ্রামের আকবর হোসেন এবং পলবান্ধার সোহাগ হোসেনসহ অনেকেি বলেন, 'তাদের এলাকায় গরিব-মিসকিনদের মাঝে দুম্বার গোস্ত বিতরণ করতে চেয়ারম্যান-মেম্বারদের দেখা যায়নি
কেউ দুম্বার গোস্ত পাওয়ার খবরও শোনা যায়নি। তবে ইউপি চেয়ারম্যান-মেম্বারের দুম্বার গোস্ত ভাগাভাগি করে নেওয়ার খবর চারিদিকে চাউর হচ্ছে।'
এব্যাপারে কুলকান্দি ইউপি চেয়ারম্যান আনিছুর রহমান আনিছ বলেন, 'দুম্বার গোস্তের বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। তবে শোনেছি সৌদি আরব থেকে দুম্বার গোস্ত পাঠানো হয়েছে।'
গোয়ালেরচর ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রহিম বলেন, 'গোস্তের পরিমাণ কম পাওয়ায়, কাউকে দেওয়া হয়নি। গোস্ত পরিমাণে এতই কম, সেটা কাউকে দেওয়ার সম্ভব হয়নি। পরে অনেকটাই বাধ্য হয়েই ইউপি ১২ জন সদস্যের মাঝে দুম্বার গোস্ত ভাগ করে দিয়েছেন। এটা দোষের কিছু দেখছি না।'
নোয়ারপাড়া ইউপি সচিব মাসুম মিয়া বলেন, 'আমি অসুস্থ ছিলাম। শুনেছি এক কার্টুন দুম্বার গোস্ত পরিষদে দেওয়া হয়েছে। সেখান থেকে আমি এক কেজি গোস্ত পেয়েছি।'
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চরপুটিমারী ইউনিয়নের ইউপির এক সদস্য বলেন, 'পরিমাণে কম হওয়ায় গোস্ত কাউকে দিতে গেলে সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে, ভেবে আমরা ইউপি সচিবসহ সদস্যরা গোস্ত ভাগ করে নিয়েছি।'
সাপধরী ইউপি চেয়ারম্যান মো. শাহ আলম মণ্ডল বলেন, '১৮ পেটেক দুম্বার গোস্ত পেয়েছিলাম। কিছু গোস্ত গরিব মানুষকে দিয়েছি। বাকি গোস্ত ইউপির সদস্যরা ভাগাভাগি করে নিয়েছে।'
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইসালামপুর সদর ইউপির একজন সদস্য বলেন, আমরা পরিষদের সদস্যরা দুম্বার গোস্ত ভাগ করেছি। ভাগে কম করে পড়ায় এলাকার কাউকে গোস্ত দেওয়া হয়নি।'
এব্যাপারে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মেহেদী হাসান টিটু বলেন, 'আমরা ২৮ কার্টুন দুম্বার গোস্ত বরাদ্দ পেয়েছি। দুইটি হিফজ মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের মাঝে গোস্ত বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া স্থানীয় হাফিজিয়া মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের জন্য ও গরিবদের মাঝে বিতরণ করতে ১২টি ইউপি চেয়ারম্যানদের কাছে গোস্ত পাঠানো হয়েছে।'
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, 'যথাযথ ভাবে বিতরণ করতে ইউপি চেয়ারম্যানদের কাছে দুম্বার গোস্ত হস্তান্তর করা হয়েছে। গোস্ত বিতরণ নিয়ে সমস্যা হওয়ার কথা নয়। তবে কারোর কোনো অভিযোগ থাকলে, পিআরও অফিসে মাস্টারোল চেক করে দেখতে পারেন।'
৬ ঘন্টা ৪৩ মিনিট আগে
১৩ ঘন্টা ৪৯ মিনিট আগে
১ দিন ৫ ঘন্টা ৪৩ মিনিট আগে
৫ দিন ৭ ঘন্টা ৫৭ মিনিট আগে
৫ দিন ১০ ঘন্টা ৫১ মিনিট আগে
৮ দিন ৫ ঘন্টা ২১ মিনিট আগে
১২ দিন ১১ ঘন্টা ১ মিনিট আগে