সুচালো দুটি শিং, খাড়া কান আর লাল রঙের বিরল প্রজাতির একটি প্রাণীকে ২৬ ডিসেম্বর হঠাৎ দেখা যায় সুনামগঞ্জ জেলার শক্তিয়ারখলা বন বিটের ঢুলারা বিজিবি ক্যাম্প এলাকায়। পরে বিজিবি সদস্য, স্থানীয় এলাকাবাসী ও বন বিভাগের কর্মীরা প্রাণীটিকে আটক করেন।
এ প্রাণীটিকে দেখে প্রথমে সবাই ভেবেছিলেন হরিণ। পরে জানা গেলে এটি দেখতে অনেকটা হরিণের মতে মনে হলেও আসলে এটি হরিণ নয়; বাংলাদেশে দুর্লভ প্রজাতির প্রাণী হিসেবে তালিকাভুক্ত রেড সেরো বা বনছাগল।
প্রাণী সংশ্লিষ্টদের মতে উদ্ধার হওয়া এ বনছাগলটি আন্তর্জাতিক প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ সংঘ (আইইউসিএন)-এ বিশ্বে বিপন্ন প্রজাতির প্রাণী হিসেবে তালিকাভূক্ত। প্রকৃতি বিশারদদের মতে, এ প্রজাতির বনছাগল বাংলাদেশে বিরল।
মৌলভীবাজারের বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তা শহীদুল ইসলাম বলেন, উদ্ধার হওয়া বন ছাগল ছানার ইংরেজি নাম রেড সেরো। এটি দেশের বিরল প্রজাতির একটি বন্যপ্রাণী। বাসস্থান ক্ষতি এবং শিকারের জন্যে এ প্রজাতির বনছাগলের অস্তিত্ব পুরো পৃথিবীতে হুমকির সম্মুখীন। যার কারণে ‘আইইউসিএন’ তালিকায় বিপন্ন প্রজাতি প্রাণী হিসেবে এটি অন্তর্ভূক্ত। তিনি আরও বলেন একটা সময় বাংলাদেশের বিভিন্ন বন বা ঝরনা অধ্যুষিত পাহাড়ি এলাকায় দেখা মিলতো বনছাগলের। কিন্তু বর্তমানে সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও প্রাণীটি খুব একটা চোখে পড়ে না।
রেঞ্জ কর্মকর্তা শহীদুল ইসলাম জানান, দুর্লভ বনছাগল বা সেরোটি উদ্ধারের পর আমাদের তত্ত্বাবধানে নিয়ে আসা হয়। বুধবার রাতে প্রাণীটিকে কমলগঞ্জের রাজকান্দি সংরক্ষিত বনে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে মৌলভীবাজারের বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কর্মকর্তা মির্জা মেহেদী সরোয়ার বলেন, উদ্ধারের পর সেরো বা বনছাগলটিকে সবাই হরিণের বাচ্চা হিসেবে ধারণা করেছিলেন। পরে আমরা পরীক্ষা ও বিভিন্ন জায়গায় যোগাযোগ করে নিশ্চিত হই এটি ‘রেড সেরো’ বা ‘বনছাগল’। বাসস্থানের সংকট এবং শিকারের কারণে এ প্রজাতির বনছাগলের অস্তিত্ব বিশ্বজুড়েই হুমকির মুখে।
বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা ড. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, সুনামগঞ্জ থেকে উদ্ধার করা বনছাগলটি গত মঙ্গলবার রাতে কমলগঞ্জের লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের রেসকিউ সেন্টারে নিয়ে আসা হয়। বুধবার রাতে এটিকে জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার রাজকান্দি রিজার্ভ ফরেস্টে ছেড়ে দেওয়া হয়। এটি লম্বায় ৪ ফুট এবং উচ্চতা ৩.৫ ফুট। ২০১৫ সালে আইইউসিএনের মূল্যায়ন অনুযায়ী সেরো বাংলাদেশে বিপন্ন, বিশ্বব্যাপী সংকটাপন্ন।
প্রাণী গবেষকদের মতে, বাংলাদেশে খুবই স্বল্পসংখ্যায় দুই ধরনের সেরোর দেখা পাওয়া যায়। এর একটি লাল সেরো, অন্যটি ইন্দো-চায়নিজ সেরো। বনছাগল বা সেরো'র নিবাস বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চলের পাহাড়ি মিশ্র চিরসবুজ ও ঝরনাযুক্ত বনে। এ প্রাণীটি সারা দিন গর্তে লুকিয়ে থেকে খুব ভোরে ও সন্ধ্যাবেলা খাবারের সন্ধানে বের হয়। এরা সাধারণত ঝোপ-ঝাড়ে কিংবা পাথুরে ঢালে লুকিয়ে থাকে।
প্রসঙ্গত, ভারত সীমান্তঘেঁষা মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার গহীন অরণ্যে অবস্থিত রাজকান্দি চিরহরিৎ বনাঞ্চল।
১ দিন ৩ ঘন্টা ১৯ মিনিট আগে
২ দিন ১ ঘন্টা ১ মিনিট আগে
৪ দিন ৩ ঘন্টা ১৩ মিনিট আগে
৬ দিন ৯ মিনিট আগে
১৩ দিন ৮ ঘন্টা ৪১ মিনিট আগে
৩০ দিন ২ ঘন্টা ২ মিনিট আগে
৩২ দিন ৩ ঘন্টা ৩৩ মিনিট আগে
৪৭ দিন ১ ঘন্টা ১ মিনিট আগে