◾ মাসুম বিল্লাহ: নিজকে নিজের দ্বারা হনন করাকে আত্মহত্যা বলে।প্রতিটি প্রাণীর স্বাভাবিক মৃত্যু আছে মানুষ ও তার ব্যতিক্রম নয়। মৃত্যু একটি নিখাঁদ সত্য যা প্রত্যকটি বিবেকবান মানুষকে আতঙ্কিত করে।এমন মানুষ বিরল যে কিনা নিজের মৃত্যুর কথা শুনে বা মৃত্যুর কথা মনে আসলে ভয় পায় না। তাহলে হরহামেশাই মানুষ কেন আত্মহত্যার পথ বেঁচে নিচ্ছে। আত্মহত্যা সম্পর্কে ইসলাম বলে-
আত্মহত্যা নিষিদ্ধ করে কোরআনে আয়াত নাজিল হয়েছে, '(তোমরা তোমাদের জীবন, সময়, সম্পদ, মেধা, যোগ্যতা, সুযোগ ও সামর্থ্য) আল্লাহর পথে ব্যয় করো, 'তোমরা নিজেদের ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিয়ো না। ' আর উত্তম কর্ম ও দয়া করো; নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা সৎকর্মী ও দয়াশীলদের ভালোবাসেন। (সুরা: ২ বাকারা, আয়াত: ১৯৫)।
তোমরা নিজেদের হত্যা কোরো না, নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের প্রতি পরম দয়ালু। আর যে ব্যক্তি সীমা লঙ্ঘন করে আত্মহত্যা করবে তাকে অগ্নিতে দগ্ধ করব। এটা আল্লাহর পক্ষে সহজ।’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ২৯,৩০)।
এতো ভয়াবহতার কথা বলা হয়েছে তার পরও কিছু মানুষ এসবের তোয়াক্কাই করছে না।আত্মহত্যার চেষ্টাকারী ব্যক্তির উপস্থিত টের পেয়ে যদি কেউ এগিয়ে৷ আসে অর্থ্যাৎ মৃত্যুর সন্ধিক্ষণ থেকে বেঁচে আসা ব্যক্তির অভিজ্ঞতা বিশ্লেষণে করলে দেখা যায় তারা দ্বিতীয় বার আর এমন কাজ করতে চাবেই না। তারা অনেক চেষ্টা করে ফিরে আসতে। কিন্তু হাত-পায়ে সেই শক্তি আর থাকে না।সুন্দর পৃথিবী ছেড়ে কোনো ব্যক্তিই মরতে চায় না,পৃথিবী যে অনেক সুন্দর, যেখানে হাসী-কান্না,আনন্দ-বেদনা, ধনীর -গরীব,আপন-পর,ভালো-মন্দ যেন নিয়মিত ঘটনা। প্রত্যক ঘটনার ত সমাধান আছে,আত্মহত্যা কখনো সমান হতে পারে না।
বাংলাদেশে আত্মহত্যার একটি পরিসংখ্যান দেখা যাক-২০০২ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে ৭৩,৩৮৯ জন আত্মহত্যা করেছে। এই ৭৩,৩৮৯ জন ব্যক্তির মধ্যে, ৩১,৮৫৭ জন নিজেকে ফাঁসি দিয়ে এবং ৪১,৫৩২ জন বিষ খেয়ে আত্মহত্যা করেছিল(দ্যা ডেইলি স্টার)।
২০১০ সালে বাংলাদেশের প্রায় ৬,৫০০,০০ জন মানুষ আত্মহত্যা প্রবণ হয়েছিল,যেখানে নাড়ীই ৮৯% (হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ, ঢাকা)।২০১১ সালে বাংলাদেশের মানুষের আত্মহত্যার সংখ্যা ছিল ১৯,৬৯৭ জন, বিশ্বে অবস্থান দশম।(বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা)।২০১৩ সালে বাংলাদেশে ১১,০৯৯ জন আত্মহত্যা করেছে(পুলিশ দফতর)। দেশে আত্মহত্যায় মৃত্যুহার ১ লক্ষে ৭.৮ থেকে ৩৯.৬ জন।
২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ৩৬৪ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করে। ওই আট মাসে আত্মহত্যা করা শিক্ষার্থীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ১৯৪ শতাংশ স্কুলগামী শিক্ষার্থী।ল্যানসেটে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন অনুযায়ী বাংলাদেশের নারীদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা সবচেয়ে বেশি, কারণ তাদের সমাজে নিকৃষ্টতম অবস্থান। আরেকটি কারণ হলো নিরক্ষরতার উচ্চ হার এবং পুরুষদের উপর তাদের অর্থনৈতিক নির্ভরতা (বিবিসি)।
প্রত্যক সমস্যার সমাধান আছে,আত্মহত্যা কখনো কোনো বিষয়ের সমাধান দেয় না বরং সমাজে অশান্তি বাড়িয়ে দেয় সেই সাথে নিজেকে অপরাধী কে তুলে।আত্মহত্যার একটু কারণ খুজতে গেলে বরাবরই খুজে পাওয়া যায়-১.প্রেমে ব্যর্থতা। ২.পারিবারিক অশান্তি। ৩.দাম্পত্য জীবনে অসুখি। ৪.নিজের পছন্দের বাইরে বিয়ে। ৫.একাকিত্ব।৬.আশানুরূপ সম্পত্তি, পরীক্ষায় ফেল, রেজাল্ট কম। ৭.অধিক প্রত্যাশা করে নগন্য পাওয়া কিংবা মনে করা ইত্যাদি।
বেশি প্রত্যাশায় অভাবগ্রস্থ মানুষগুলো বেশি ডিপ্রেশনে ভুগছে।অথচো অন্যদের তুলনায় তারা অনেক দিক দিয়ে এগিয়ে আছে।সমাজের দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করলেই কত মানুষ দেখা মেলে যাদের নেই থাকার জায়গা,সকাল খাইলে দুপুর কি খাবে কিংবা কোথায় খাবে তার কুলকিনারা নেই,রেলস্টেশনে যাদের রাত কেটে যায়, মানুষের কাছে হাত পেতে চলতে হয় -যদিও বারংবার সেই হাত ফিরিয়ে আমাদের সমাজের ধনী ব্যক্তিরা।এতো কিছুর পরও তারা যদি অনায়সে জীবন কাটাতে পারে, পারেনা কেন শিক্ষিত, মধ্যবিত্ত ও সুস্থ স্বাভাবিক মানুষদেরগুলো।বেশি চাহিদা মানুষকে লোভী করে,পাপের দিকে ধাবিত করে,হেরফের হলে আত্মহত্যা বলে' ত তাদের বিরাট সম্ভাবণার সাফল্য আছে বলে তারা মনে করে।
মানুষের আবেগ নিয়ে খেলা বন্ধ করুন,প্রত্যকে নিজ নিজ স্থান থেকে সেক্রিভাইজ করার চেষ্টা করি,নিজের ক্ষমতার বল যেন অন্যের আত্মহত্যার কারন না হয়।আত্মহত্যা সাফল্য কিংবা সমস্যার সমাধান নয়।আসুন ধৈর্য্য,সাহস,সৎ,নিরহংকারী ও পরোপকারী মানুষ হয়ে পৃথিবীতে বিচরণ করি।
লেখক: মাসুম বিল্লাহ
শিক্ষার্থী ও সাংবাদিক
২ দিন ৭ ঘন্টা ৪৫ মিনিট আগে
৪ দিন ১৫ ঘন্টা ৪৭ মিনিট আগে
১১ দিন ৩ ঘন্টা ৪৩ মিনিট আগে
১১ দিন ২০ ঘন্টা ৪২ মিনিট আগে
১২ দিন ১৮ ঘন্টা ১৪ মিনিট আগে
১৩ দিন ১৯ ঘন্টা ২৬ মিনিট আগে
১৭ দিন ১ ঘন্টা ৪৪ মিনিট আগে
১৭ দিন ১৫ ঘন্টা ১৬ মিনিট আগে