◾ এহসান বিন মুজাহির
বাংলা নববর্ষ ১৪২৯ বিদায়, আগমন বাংলা নববর্ষ ১৪৩০। সবাইকে বাংলা নববর্ষের উষ্ণ শুভেচ্ছা। বাংলা সনের পহেলা মাস বৈশাখ। হিংস্রতা, পাশবিকতা, ক্ষুদ্রতা, তুচ্ছতা, নীচুতা, হীনতা ক্লেদ-গ্লানিতে আমাদের জীবন যখন বিষাক্ত তখনই বাংলা নববর্ষের আগমন। বাংলাদেশের নানা উৎসবের মধ্যে একটি উল্লেখযোগ্য উৎসব হচ্ছে নববর্ষ উদযাপন বা পহেলা বৈশাখ।
বৈশাখ মাসকে বাংলা নববর্ষের শুরু হিসাবে গণ্য করার ইতিহাস কোনো অজানা অতীত কালের নয়। বাংলা নববর্ষ আমাদের সামাজিক জীবনে বেশ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। নতুন বছরের আগমনে মানুষের মনে যে আনন্দ শিহরণ জাগে সে আনন্দ জাগরণের বহিঃপ্রকাশই পহেলা বৈশাখ।
তবে দুঃখজনক হলেও সত্য, পহেলা বৈশাখ তথা নববর্ষের উৎসব উদযাপনের নামে এই দিনে ইসলামী রীতি উপেক্ষা করে নামধারী কিছু মুসলিম বিজাতীয় অপসংস্কৃতির অনুসরণ করে যাচ্ছে। তারা মঙ্গল শুভ যাত্রা, শাখা-সিঁদুরের রঙে (সাদা ও লাল) পোশাক পরিধান, বিয়ের মিথ্যা সাজে দম্পত্তি সাজিয়ে বর-কনের শোভাযাত্রা, মূর্তির (কুমির, পেঁচা, বাঘ ইত্যাদিও মুখোশ) প্রদর্শনী, উল্কি আঁকা, মঙ্গল শোভাযাত্রার মাধ্যমে পয়লা বৈশাখ উদযাপন করছে। একশ্রেণির মানুষ বাঙালি সংস্কৃতির নামে বিজাতীয় অপসংস্কৃতি পালনে মগ্ন। ‘এসো হে বৈশাখ এসো' স্লোগানে উজ্জীবিত হয়ে সম্মিলিত কোরাস কন্ঠে বাঙালি তরুণ-তরুণীদের বিনোদন পার্কগুলোতে আড্ডা, হোটেল, রেস্তুরা ও দর্শনীয় স্পটগুলোতে অবাধ মেলামেশার মাধ্যমে নাচ-গান ও বেহায়াপনায় লিপ্ত হচ্ছেন। নববর্ষ উদযাপনে তাদের আনন্দ ফুর্তি ক্রমেই যেন সীমা অতিক্রম করে যাচ্ছে। যা ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে নিন্দনীয়।
এছাড়াও পহেলা বৈশাখে বাসা-বাড়ি এবং বিভিন্ন হোটেল-রেস্টুরেন্টে পান্ত-ইলিশের নামে আনুষ্ঠানিকভাবে বছরে একবার অনর্থক অর্থ অপচয় করে গরিবের সাথে উপহাস করছেন এক শ্রেণির বাঙালি।
আবার নববর্ষ উদযাপনকারী অনেকেই নতুন বর্ষকে কল্যাণ ও নতুন জীবনের প্রতীক বলে মনে করে থাকেন। তাদের ধারণা ‘নতুন বছর কল্যাণ বয়ে আনে, দূর করে যাবতীয় পুরনো কষ্ট ও ব্যর্থতার গ্লানি’- এ ধরনের কোনো বক্তব্য ইসলাম কখনো সমর্থন করে না। ইসলামে এ ধরনের কুসংস্কারের কোনো স্থান নেই।
কেউ যদি এই ধারণা পোষণ করেন যে, নববর্ষের প্রারম্ভের সাথে কল্যাণের কোনো সম্পর্ক রয়েছে, তবে সে শিরকে লিপ্ত হলো, অর্থাৎ আল্লাহর সাথে অংশীদার স্থাপন করল। কেননা কল্যাণ-অকল্যাণ মহান আল্লাহর পক্ষ থেকেই এসে থাকে। শিরককারীদের জন্য জান্নাত হারাম। আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে অংশীদার স্থির করে, আল্লাহ তার জন্য জান্নাত হারাম করে দেন, আর তার বাসস্থান হবে জাহান্নাম’ (সূরা মায়িদা : ৭২)।
মনে রাখতে হবে সংস্কৃতি ও বৈশাখী মেলাকেন্দ্রিক এসব গর্হিত বক্তব্য এবং কাজগুলো ইসলাম কখনো সমর্থন করে না। আনন্দ প্রমোদ করা ইসলাম নিষেধ করেনি। তবে একটা সীমারেখা দিয়েছে। গন্ডির ভেতরে থেকে আনন্দ উল্লাসে কোনো বাঁধা নেই। অপসংস্কৃতি পরিহার করে আমাদের নিজস্ব-সংস্কৃতি পালনে আমাদের আরও বেশি মনোযোগি হতে হবে।
বাংলা নববর্ষ বাঙালির জীবনে কেবল একটি মাত্র দিন নয়। শুধু একটি সকালে পান্তা-ইলিশ আর দিনভর মেলা-আনন্দই সব কথা নয়। বাংলা নববর্ষ উদযাপনে আমাদের স্বকীয় ও ইসলামী সংস্কৃতি-সভ্যতা ও কালচারের কথা স্মরণ রাখতে হবে অবশ্যই। অপসংস্কৃতির ফাঁদে পড়ে আমাদের সংস্কৃতি, স্বাতন্ত্র, বিশ্বাস, মুল্যবোধ ও পরিচ্ছন্ন রুচিকে যাতে হারিয়ে না ফেলি; এদিকে অবশ্যই দৃষ্টি রাখতে হবে। আসুন আমরা নতুন বছর শুরু করি পুণ্যময় কর্মে।
লেখক : সাংবাদিক, কলামিস্ট ও শিক্ষক
১ দিন ৯ ঘন্টা ৩৬ মিনিট আগে
২ দিন ৯ ঘন্টা ৩৬ মিনিট আগে
৬ দিন ১৯ ঘন্টা ১১ মিনিট আগে
৯ দিন ৩ ঘন্টা ১৩ মিনিট আগে
১৫ দিন ১৫ ঘন্টা ৯ মিনিট আগে
১৬ দিন ৮ ঘন্টা ৮ মিনিট আগে
১৭ দিন ৫ ঘন্টা ৪০ মিনিট আগে
১৮ দিন ৬ ঘন্টা ৫২ মিনিট আগে