ভারতের ৫০ সেনাকে হত্যার দাবি পাকিস্তানের আ.লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে যমুনার সামনে অবস্থান জুমার পরও চলবে: হাসনাত ছাত্রদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ ইলিয়াস কাঞ্চনের জেপিবির শার্শায় সাজাপ্রাপ্ত আসামী ও মাদক ব্যবসায়ীসহ আটক-৩ দুর্যোগ বিষয়ক মহড়া সাগর পাড়ের জীবন যুদ্ধ ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে ৪ টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ভয়াবহ আগুন সাবেক মেয়র আইভি গ্রেফতার সাতক্ষীরায় বিএসটিআই অনুমোদিত লাইসেন্স না থাকায় দুই ড্রিংকিং ওয়াটার মালিককে জরিমানা খুবিতে প্রফেসর দীপক কামাল মেমোরিয়াল স্কলারশিপ পেলন ১৬ শিক্ষার্থী মানবতার সেবায় রেড ক্রিসেন্টের ভূমিকা অতুলনীয় - চট্টগ্রাম সিটি মেয়র আ. লীগ নিষিদ্ধ না হওয়া পর্যন্ত প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনের সামনে অবস্থানের ঘোষণা ঝিনাইগাতীতে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের ১৬টি টাওয়ারসহ পাইপ ধ্বংস, ১টি ট্রাক ও ২টি মাহিন্দ্র জব্দ বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টার কাইয়ুমের বিরুদ্ধে অপপ্রচার করা হচ্ছে, অভিযোগ পদবঞ্চিত নেতাদের কৃষ্ণনগরে কালিকাপুর সিদ্দিকীয়া দাখিল মাদ্রাসায় এডহক কমিটির পরিচিতি সভা অনুষ্ঠিত নিয়মিত ক্রু মিটিং বাস্তবায়ন করায় পুরস্কার পেলেন বাকৃবির রোভার স্কাউট লিডার প্রথমবারের মতো ইন্টার্নশিপ পেল বাকৃবির মাৎস্যবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা আশাশুনিতে অঙ্কনের মাধ্যমে প্রতিবন্ধীদের সম্পদ ও ঝুঁকি চিহ্নিত করণ কর্মশালা পীরগাছায় ভাবীর হোটেলে ১৯৯টাকায় পাওয়া যাবে একটি মোটরসাইকেল ভারতের ১৫ শহরে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা পাকিস্তানের, দাবি দিল্লির লালপুরে তথ্য চাওয়ায় সাংবাদিককে হুমকি ও মিথ্যা মামলার ভয়।।

ঐতিহ্যের স্মৃতি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে চট্টগ্রামের সর্বপ্রথম উঁচু ভবন "পিকেসেন"

এ এম রিয়াজ কামাল হিরণ ( Contributor )

প্রকাশের সময়: 02-09-2023 03:50:41 am


ঐতিহ্যের স্মৃতি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে চট্টগ্রামের সর্বপ্রথম উঁচু ভবন "পিকেসেন"। একসময় চট্টগ্রামের সদরঘাট এলাকাটা জঙ্গলে পরিপূর্ণ ছিল। চারদিকে কোনো জনবসতি ছিল না। চট্টগ্রামের রাউজান নোয়াপাড়ার তৎকালীন প্রভাবশালী জমিদার প্রফুল্ল কুমার সেন ওরফে পি কে সেন এ জায়গায় এসে আবাদ করেন।

পি কে সেন সাততলা বন্দরনগরী চট্টগ্রামের অন্যতম ঐতিহ্য। একসময় দক্ষিণ চট্টগ্রামের মানুষ কর্ণফুলি নদীর দক্ষিণ পাড় থেকে সদরঘাটের পি কে সেন ভবনের চূড়া দেখে বুঝে নিতো চট্টগ্রাম শহরের কাছাকাছি চলে এসেছেন। কিন্তু বর্তমান নগরীর বড় বড় ইমারতের পাশে ঐতিহ্যবাহি এ ভবনটি ঢাকা পড়েছে, হারিয়েছে জৌলুস। এছাড়া দু’শত বছরের পুরানো এ ভবনটি রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে এখন প্রায় জীর্ণশীর্ণ।


পি কে সেন সাততলা চট্টগ্রামে ব্যক্তি পর্যায়ে নির্মিত প্রথম দৃষ্টিনন্দন ভবন। ১৮৯০ সালে কলকাতার ৫০-৬০ জন সুদক্ষ কারিগর দ্বারা ভবনটি নির্মাণ করা হয়। বাইরে থেকে দেখতে উঁচু গম্বুজের ভবনটি ভেতরে আরও চমৎকার। সাততলা ভবনটির প্রথম চারতলা আবাসিক। পঞ্চমতলায় মন্দির। এর উপরে খোলামেলা বৈঠকখানা ও চারিদিকে উন্মুক্ত বারান্দা। যেখান থেকে একসময় দেখা যেত কর্ণফুলি নদীর নয়নাভিরাম দৃশ্য। চারতলা পর্যন্ত ভবনের মাঝখান বরাবর দুইটি নান্দনিক সিঁড়ি দুইদিক থেকে নিচে নেমে এসেছে। ভবনের প্রতিটি কক্ষ নির্মাণ কৌশলের কারণে আলাদা আলাদা সুন্দর।


জানা গেছে, একসময় চট্টগ্রামের সদরঘাট এলাকাটা জঙ্গলে পরিপূর্ণ ছিল। চারদিকে কোনো জনবসতি ছিল না। চট্টগ্রামের রাউজান নোয়াপাড়ার তৎকালীন প্রভাবশালী জমিদার প্রফুল্ল কুমার সেন ওরফে পি কে সেন এ জায়গায় এসে আবাদ করেন। তৈরি করেন রাস্তাঘাট, গড়ে তোলেন দোকানঘর। এখানে তিনি নিজেই শুরু করেন তেলের ঘানি টানার ব্যবসাসহ নানা ব্যবসা। সে সময় তার বিভিন্ন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে প্রায় দুই শতাধিক কর্মচারী কাজ করত। জঙ্গল বেস্টিত এলাকাটি এক সময় ব্যবসায়িক জোনে পরিণত হয়। বিশেষ করে পূজা-পার্বণে পি কে সেন ভবনটি ঘিরে জমজমাট থাকত সদরঘাট এলাকাটি।


পি কে সেন পরবর্তী সদানন্দ ঘোষের বংশধর দীপু ঘোষ বর্তমানে বসবাস করেন এই ভবনে। তিনি বলেন, ভবনটির ঐতিহ্য আছে। কাজেই এটিকে রক্ষণাবেক্ষণ প্রয়োজন। কিন্তু নানা কারণে সেটি হয়ে উঠছে না।


তিনি আরো বলেন, ভবনটির নির্মাণশৈলী চোখে পড়ার মতো। একসময় ভবনে প্রবেশের মুখে বিশাল গেট থাকলেও এখন তা নেই। গলিটাও তস্যগলি হয়ে আছে। ভবনে ওপরে উঠার জন্য রয়েছে দুটি সিঁড়ি। ভবনটির প্রতি তলায় রয়েছে দুটি ফ্ল্যাট। নামে সাততলা হলেও মূল ভবন চারতলা। পঞ্চম তলায় মন্দির। মন্দিরটি এখন আর নেই। ষষ্ট ও সপ্তম তলায় রয়েছে সুদর্শন গম্বুজ। এ গম্বুজের কারণেই ভবনটির বিশেষত্ব। এটি যখন তৈরি হয় তখন চট্টগ্রামে এত বড় ভবন আর ছিল না বলে জানান তিনি।


ভবনটিতে প্রায় অর্ধশত বছর ধরে বাস করেন মিলন কান্তি নাথ। তার মতে, আগেকার দিনে তৈরি হলেও ভবনটি এখনো যথেষ্ট মজবুত।


ইতিহাস ঘেঁটে জানা যায়, উনিশ শতকে চট্টগ্রাম জেলার রাউজানের নোয়াপাড়ার প্রভাবশালী জমিদার ছিলেন প্রফুল্ল কুমার সেন। সংক্ষেপে পি কে সেন। নোয়াপাড়ায় মগদাই পি কে সেন হাটটিও তাঁর নামেই প্রতিষ্ঠিত। পি কে সেন চট্টগ্রামের সদরঘাটে ১৬ শতক জমি কেনেন ১৮৯০ সালে। এ জায়গার ওপর নির্মাণ করেন ভবনটি। এটি সাততলা ভবন হওয়ার কারণে জায়গাটির নাম হয় পি কে সেন সাততলা। জমিদারি প্রথা চলে যাওয়ার পর ১৯৫৫-৫৬ সালের দিকে সদানন্দ ঘোষ, সুশীল ঘোষ ও চিন্তাহরণ ঘোষ এ তিন ভাইয়ের কাছে বাড়িটি বিক্রি করে ভারতে পাড়ি জমান পি কে সেন। এরআগে তিনি পরিবার-পরিজনদের পাঠিয়ে দেন ভারতে। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় দুই ভাই চট্টগ্রাম শহর ছেড়ে গ্রামের বাড়িতে চলে গেলেও চিন্তাহরণ থেকে যান পি কে সেন ভবনে। যুদ্ধের মাঝামাঝি সময়ে রাজাকাররা তাঁকে ঘর থেকে ধরে নিয়ে হত্যা করে। একই সঙ্গে ভবনটিতে ব্যাপক লুটপাট চালানো হয়। সেসময় একটি দরজা-জানালাও আস্ত ছিল না। যুদ্ধের পর সেটি সংস্কার করে আবারও উপযোগী করে তোলা হয়। ভবনটি জৌলুস হারালেও নগরী কিংবা গ্রামের অনেক বয়োবৃদ্ধদের মুখে মুখে ফেরে পি কে সেন ভবনের কথা।


ঢাকাসহ সারাদেশে অনেক ভবন সরকার প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন হিসেবে রক্ষণাবক্ষেণের উদ্যোগ নিয়েছে। কিন্তু চট্টগ্রামের নান্দনিক পি কে সেন ভবন বরাবরই অবহেলিত। অচিরেই সরকার ভবনটি সংস্কার করে রক্ষণাবেক্ষণের উদ্যোগ না নিলে চট্টগ্রাম নগরীর অনেক ঐতিহ্যের মতোই হারিয়ে যাবে ঐতিহ্যবাহি পি কে সেন ভবন।

Tag
আরও খবর