◾হাসান মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ : সাহিত্য ভালোবাসে না— এমন লোক পাওয়া অনেকটা অসম্ভব। কম-বেশি সবাই-ই কোনো-না-কোনোভাবে সাহিত্যপ্রেমের সাথে জড়িত। সাহিত্যপঠন ও গড়ন চর্চায় যে নিয়মিত, সে নিজেকে সাহিত্যপ্রেমী দাবি করতে পারে। অনুরূপ যে অনিয়মিত, তবে সাহিত্যের প্রতি তার রয়েছে আলাদা মনোভাব, ভালোবাসা— সে-ও নিজেকে সাহিত্যপ্রেমী দাবি করতে পারে। তবে সাহিত্যসেবা'র বিষয়টি তেমন নয়। কেননা, এক্ষেত্রে স্রেফ মনে মনে ভালোবাসলে হয় না। বরং, সাহিত্যকে কাজে-কর্মে, চেষ্টা-প্রচেষ্টায় রূপ দেওয়ার পাশাপাশি সাহিত্যের স্বার্থে মেহনত করাই এক্ষেত্রে মুখ্য বিষয়। তখন কোনো ব্যক্তি আপনা-আপনিই সাহিত্যপ্রেমী হয়ে ওঠবে। আর সাহিত্যের সেবা করা মানে হলো, সাহিত্যের গায়ে কারো মন্দ আছর লাগতে না দেওয়া। মন্দ বাতাসের ছোঁয়াও যাতে না লাগে, তার পরিপূর্ণ ব্যবস্থা করা।
সাহিত্য একটি জাতীয় সম্পদ। এটা কারো ব্যক্তিগত সম্পদ নয়। এ সম্পদের যত্রতত্র ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। হুমায়ূনরা যেভাবে অনিসলামিকভাবে এই সাহিত্যের যত্রতত্র ব্যবহার করে গিয়েছে, যদি এই সাহিত্যের প্রতি সদয় দৃষ্টি দেওয়া না হয়, তাহলে সাহিত্য ও ভাষার প্রতি বড়ো জুলুম হবে। তারা এই সাহিত্যকে কেবলই-কেবল ভোগ করেছে। না করেছে সংস্কার, না এনেছে নতুনত্ব। যদিও সাহিত্যে তাদের পাণ্ডিত্য ছিল অনস্বীকার্য, তদুপরি সাহিত্য ছিল তাদের পুঁজি, যা দিয়ে তারা ব্যবসা-ই করতো। ফলশ্রুতিতে তাদের দেখানো লোভে প্রলুব্ধ হয়ে তাদের সমকক্ষ কিংবা অনুজরাও উক্ত কাজটি করেছে। সকলেই ছিল একই ফুটো নৌকার মাঝি; একই চিন্তাধারা লালন করতো সকলে। যা ছিল নজরুল-জসিমদের চিন্তাধারার সম্পূর্ণ বিপরীত।
সাহিত্য-বিপ্লবের চেয়ে বড় সাহিত্যসেবা এ মূহুর্তে আর আছে বলে মনে হয় না। বিপ্লব মানে হলো, একেবারে গোড়া থেকে কোনো কিছুর পরিবর্তন সাধন করা। বর্তমানে বাংলা সাহিত্যেও এমন এক আমূল পরিবর্তন প্রয়োজন। সাহিত্যের এই প্রয়োজন পূরণ করাকেই সাহিত্য-বিপ্লব বলা হয়। বর্তমানে বাংলা সাহিত্য বলে যে সাহিত্য চলমান আছে, তার বেশিরভাগই শহুরে সাহিত্য। একটা সময় এমন ছিল, যখন একজন মা তার সন্তানদের ঘুম পাড়াতেন পল্লিগীতির লাইন দু'একটা গেয়ে গেয়ে। যা ছিল সাহিত্যের কষ্টিপাথরে এক মহা-সফল সাহিত্য। কিন্তু, এখন সে দৃশ্য খুবই বিরল। ড. মুহাম্মদ শহিদুল্লাহ্ খুব উত্তম উপমা দিয়েছেন— “বাতাসের মধ্যে বাস করে যেমন আমরা ভুলে যাই বায়ু-সাগরে আমরা ডুবে আছি, তেমনি পাড়াগাঁয়ে থেকে আমাদের মনেই হয় না যে কত বড় সাহিত্য ও সাহিত্যের উপকরণ ছড়িয়ে আছে”। পল্লিসাহিত্য প্রতিটি জাতির ঐতিহ্য, সংস্কৃতি। গ্রামের অশিক্ষিত, স্বল্পশিক্ষিত মানুষের মনের আবেগ ও তাগিদে রচিত হয় এই পল্লিসাহিত্য।
পরিশেষে এটুকুই বলবো, সাহিত্যের শেষটুকু ধরে রাখার এবং তাকে পুনরায় পূর্বের আঙ্গিনায় ফিরিয়ে আনার নিমিত্তে যেটুকু-ই করা হয়, তা-ই সাহিত্যসেবা। যা সাহিত্যপ্রেমী হওয়া ছাড়া বাস্তবায়ন করা কারো পক্ষে সম্ভব নয়। তাই শুধু 'সাহিত্যপ্রেমী'র কোনো দাম নেই, যদি না সে সাহিত্যসেবী হয়। আর এই সাহিত্যসেবা বা সাহিত্য বিপ্লবের জন্য প্রয়োজন পূর্বেকার ইতিহাস সম্পর্কে অবগত হওয়া। এছাড়া এ পথ খুব একটা সহজ নয়।
১৯ ঘন্টা ২২ মিনিট আগে
২ দিন ১০ ঘন্টা ৫০ মিনিট আগে
২ দিন ১০ ঘন্টা ৫১ মিনিট আগে
৩ দিন ১৮ ঘন্টা ২৫ মিনিট আগে
১৭ দিন ২০ ঘন্টা ১৩ মিনিট আগে
১৮ দিন ১০ ঘন্টা ৩১ মিনিট আগে
২০ দিন ৯ ঘন্টা ৩৩ মিনিট আগে
২৩ দিন ১২ ঘন্টা ৪১ মিনিট আগে