১৩ ব্যাচের শিক্ষার্থীরা ওরিয়েন্টেশন-বঞ্চিত, আইডি কার্ডও অধরাই কুলিয়ারচর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত নাগেশ্বরীতে দলিল লেখক সমিতির নির্বাচনে সভাপতি রবিউল আলম রানু ও সাধারণ সম্পাদক মোঃ হাফিজুর রহমান ছাত্রদলের অপেশাদার বিবৃতি ও সাংবাদিককে হুমকির প্রতিবাদে জাবিসাসের নিন্দা শহীদ ধীরাজ-মিজান স্মৃতি পাঠাগার ও মিলনায়তনের ত্রিবার্ষিক কার্যনির্বাহী পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত আসল গাছপাকা আম চেনার উপায় তরুণ সমাজকে খেলাধুলায় এগিয়ে নিয়ে আসতে হবে: জেলা বিএনপি সভাপতি রুমানা মাহমুদ ঝিনাইগাতীতে সুশীল সমাজ ও সরকারি খাতের কর্মসূচিকে শক্তিশালী করার জন্য সমাজে দুর্নীতি প্রতিরোধ বিষয়ক প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত পীরগাছায় উদ্বোধন হলো জামিয়াতুস সুন্নাহ এমদাদুল উলুম মাদ্রাসার ‘দারে এমদাদ’ ভবন বানিয়াচংয়ে লন্ডনের মেয়রকে সংবর্ধনা শেরপুরে অভিযানে চুরি করা ২ ইজিবাইক ও ১ সিএনজি উদ্ধার, আন্তঃজেলা চোরাকারবারির নেটওয়ার্ক ভেঙে দিল পুলিশ সাবেক ছাত্রদল নেতার মৃত দেহ সেপটি ট্যাংকিতে বিপিএম-পিপিএম পদক পাচ্ছেন ৬২ পুলিশ সদস্য গণঅভ্যুত্থানে জামায়াতের ভূমিকা প্রশংসনীয়: আলী রিয়াজ জাবিতে ছাত্রদলের ভ্যাক্সিন কেলেঙ্কারি নিয়ে সংবাদ প্রকাশের জেরে সাংবাদিককে হুমকি গল্প: হেঁটে আসা বৈশাখ গাজায় ৫ বছরের যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে সম্মত হামাস পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার দাবি সৌরভ গাঙ্গুলির শ্রীমঙ্গলে ট্রেনের ধাক্কায় মৌলভীবাজারের পল্লী চিকিৎসকের মৃত্যু নেশার টাকা জোগাড়ে চুরির পথ বেছে নেন তারা

গল্প: হেঁটে আসা বৈশাখ

সাকিবুল হাসান - প্রতিনিধি

প্রকাশের সময়: 26-04-2025 06:54:18 pm

বৈশাখের দ্বিতীয় দিন। দুপুরের খরতাপে যেন পুরো শহরটা ঘুমিয়ে পড়েছে। চারদিকে নীরবতা, কিন্তু ঋদুর ভেতরটা যেন উল্টো আগুন হয়ে জ্বলছিল। ঈদের ছুটি ছিল—মন চেয়েছিল একটু নিঃশ্বাস নেওয়ার সময়, একটু নিজের মতো করে বাঁচা। কিন্তু তা আর হয়ে ওঠেনি। ব্যস্ততা, কাজের চাপ, মানুষের ভিড়ে সে কোথাও যেন হারিয়ে গিয়েছিল। ছুটি শেষ হওয়ার আগেই শহরে ফিরে আসতে হয়েছিল। শরীরটাও ভালো ছিল না। ভরদুপুরে বিছানায় শুয়ে থাকতেই হঠাৎ এক ফিসফিসে কণ্ঠ কানে আসে— “নিজের মন যা চায়, তাই কর।” অবাক হয়ে উঠে বসে, চারপাশে তাকায়—কেউ নেই। আবার শুয়ে পড়তেই কণ্ঠটা যেন আরও স্পষ্ট হয়। বুকের ভেতর কেমন যেন ভারী হয়ে আসে। শিক্ষার্থী, সজিব হোসেন হুট করে সিদ্ধান্ত নেয় ঋদু। আর কিছু না ভেবে ব্যাগ গুছিয়ে শেষ বিকেলের বাসে উঠে পড়ে। রাত গভীর হলে গ্রামের শেষ স্টপেজে নামে। চারপাশে নিস্তব্ধতা। কোনো রিকশা নেই, ভ্যানও না। হাঁটতে হাঁটতে ধানক্ষেতের গন্ধ, ব্যাঙ আর ঝিঁঝিপোকার ডাক, রাতজাগা পাখির সুর—সবকিছু মিলিয়ে একটা শান্তির চাদরে মুড়ে ফেলে ঋদুকে। রাত প্রায় সাড়ে বারোটা বাজে। বাড়িতে ঢুকতেই আম্মা দরজায়, মুচকি হেসে বলেন, “আসার আগে একটা ফোন তো করতে পারতি!” মামি জানায়, ভাত রাখা আছে। “মামা এলে খাব,” বলে ঋদু। ব্যাগ রেখে দৌড়ে যায় পুকুরপাড়ে—জামগাছের নিচে, তার প্রিয় জায়গায়। গাছের উপর থেকে এক পাখি উড়ে যায়। পুকুরের হাওয়ায় শরীর ঠান্ডা হয়ে আসে। আকাশে চাঁদ, মেঘের সাথে লুকোচুরি খেলছে। হঠাৎ বাঁশ ঝাড়ের দিকে চোখ যায়—একটা হুতোম প্যাঁচার ডাক, বাঁশ নড়ে ওঠে। শরীরটা শিউরে ওঠে। ঠিক তখন পকেট vibrate করে—মামার ফোন। “ঋদু, এত রাতে কোথায়?” “আসছি,” শুধু এটুকুই বলে ফোন রেখে দেয়। সকালে ঘুম ভাঙে শিশু-কিশোরদের কোলাহলে। বাইরে বের হতেই সবার চমক— “ঋদু ভাই! এত সকালে?” কারও টিপ্পনী, কারও হাসি—ঋদু শুধু হেসে যায়। মনে মনে ভাবে, “কখনো কখনো, সবকিছুর বাইরে চলে যাওয়াটাই দরকার—শুধু নিজের মনের কথা শোনার জন্য।” দুপুরে বিছানায় শুয়ে ছিল। আচমকাই যেন কেউ মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়, চুলগুলো ধীরে টেনে দেয়। হালকা ঠান্ডা বাতাসে শরীরটাও কেঁপে ওঠে। চোখের সামনে ফুটে ওঠে এক চেনা দৃষ্টি—বঙ্কিম হাসি, মৃদু ভঙ্গিমায় হেঁটে আসছে মেয়েটি। এসে বসে খাটের ডান পাশে। ঋদু তাকিয়ে দেখে—ডান কানের ঠিক দেড় ইঞ্চি নিচে সেই চিরচেনা তিলক। কখনো কোনো কথায় ধরা দেয়নি, অথচ এই তিলকে চোখ আটকে যেত বারবার। এই কি সেই? জীবনানন্দ হয়তো এমন একটি তিলকে ঘিরেই লিখতেন এক আশ্চর্য কবিতা। আর একজন ঔপন্যাসিক হয়তো সে তিলক বর্ণনায় লিখে ফেলতেন গোটা উপন্যাস। বিকট শব্দে হঠাৎ ঘুম ভেঙে যায়। টিনের চালায় আমগাছের ডাল ভেঙে পড়েছে। বারান্দায় গিয়ে দেখে বিচ্ছু বাহিনী বৃষ্টিতে ভিজে আম কুড়াচ্ছে। “এই তোরা বৃষ্টিতে ভিজতেছিস কেন? লাঠি কই? দাঁড়া আসতেছি... জ্বর হলে কি করবি?” বাচ্চারা দৌড়ে পালিয়ে যায়। আর ঋদুর মাথায় ঘুরতে থাকে সেই দৃষ্টি। বিকেলে বড় ভাতিজা এসে বলে, “চলেন চাচা, গ্রামটা একটু ঘুরে আসি।” চাচা-ভাতিজা মিলে গ্রামের পথে হাঁটে। পুরনো জায়গা, নতুন চেহারা। নতুন বিল্ডিং, কিন্তু পুরোনো মানসিকতা— অহংকারে ভরা কিছু মানুষ, তুচ্ছ বিষয়ে অশান্তি, ক্ষমতার দাপট। বুক ভারী হয়ে ওঠে। ভাবে, এই গ্রামটা কবে বদলাবে? পরের দিন বাজারে বৈশাখী মেলা বসে। বিচ্ছু বাহিনী খেলনায় খুশি। গ্রামের বিকেলগুলো ভরে ওঠে হাসিতে, আড্ডায়। ঋদু কিছুদিন থেকে যায়। শেষ বিকেলে হঠাৎ মনে হয়—ছুটি শেষ, ফিরতে হবে। বিকালের চায়ের আসরে আম ভর্তা দিয়ে শেষ হয় বৈশাখী আড্ডা। চোখ খুঁজে বেড়ায় ভাইয়ার মুখ—এবার আর এল না। ঋদু ফিরে আসে শহরের পথে—এক মহা শূন্যতা নিয়ে। চোখের সামনে ভাসে সেই মোহময়ী দৃষ্টি। কে ছিল সে? স্বপ্ন? স্মৃতি? বাস্তব? নাকি শুধুই এক আকাঙ্ক্ষার রূপ? বৈশাখ কেটে যায়, কিন্তু কিছু দৃষ্টি হৃদয়ে থেকে যায়। যেমন হেঁটে আসা সেই বৈশাখ, রয়ে যায় শুধু স্মৃতির ফ্রেমে।
Tag