বন্ধুরাতো জানোই যে, আমি একটু ঘুরতে ভালোবাসি।
সেটা হোক দেশে কিংবা বিদেশে। এভাবেই ঘুরতে ঘুরতে একদিন গিয়েছিলাম নতুন একটি দেশে। দেশটির
নাম শুনলে জিভে জল চলে আসতে পারে। হ্যা বন্ধুরা, দেশটির নাম ‘সন্দেশ’। সন্দেশে ভিসা
প্রাপ্তিতে খুব একটা জটিলতা পোহাতে হয় না। আন্তরিকতা নিয়ে ভিসা চাইলেই দিয়ে দেয়।
তো,
কিছুদিন আগে সন্দেশ গিয়ে দেখি সেখানকার এক বড় কমিউনিটির নির্বাচন মৌসুম চলছে। নির্বাচন
দেখার মধ্যে আলাদা একটা মজা আছে। কারন আমাদের দেশে জাতীয়, বিজাতীয়, নানান কমিউনিটির
নির্বাচন লেগেই থাকে। আজ বাস মালিক সমিতির নির্বাচন তো কাল শ্রমিক ইউনিয়নের, আজ সংসদ
তো কাল ইউনিয়ন পরিষদের, আজ মেথর সমিতির তো কাল ঝাড়ুদার ঐক্য পরিষদের নির্বাচন। প্রতিটি
নির্বাচনেই প্রচার প্রচারণার মধ্যে একটা উৎসবের মেজাজ বিরাজ করে। আমি যেহেতু সন্দেশে
ফরেইনার তাই আমাকে ঘুরতে একসেস পাওয়ার দিয়েছে। আমি ঘুরতে ঘুরতে দেখলাম, সেখানে প্রার্থীরা
ভোটারদের সাথে খুব কুশল বিনিময় করছে, গাল কেলিয়ে হেসে হেসে কথা বলছে, মাঝে মাঝে মডের
গ্রাম নামের এক হাইওয়ে রেস্তরায় খিচুরি খাওয়াচ্ছে। আমাদের দেশে অবশ্য লাল চা খাওয়ায়
তাও মিডাই দিয়া! কখনো আদা দেয়। আদার দাম বৃদ্ধি পেলে শুধুই গুর দিয়ে চা। সাথে থাকে
বিড়ি। লোভি ভোটাররা সেই লাল চা বড় জাম বাটি ভরে গিলে। আমাদের দেশে দেখেছি, ফাও পেলে
আলকাতরা টেট্রনের লুঙ্গিতে কোচর তৈরী করে ভরে নেয়। একশ টাকার আলকাতরা নিতে যদি তিনশ
টাকার লুঙ্গি নষ্ট হয় তাতেও তাদের কোন ভ্রুক্ষেপ হয় না। মাগনা আলকাতরা খাওয়াতে আমরা
বেশ পটু।
সন্দেশে একজন প্রার্থী দেখি বেশ আন্তরিক। ভোটারদের
দেখলেই গলা জড়িয়ে ধরছে। গলা জড়িয়ে ধরে প্রার্থীকে কানে কানে কথা বলছে, একটু সাহছে,
নানান সম্বোধনে ডাকছে। কেউ তার মামা, কেউ তার কাকা, কেউ তার শালা, আবার কেউবা দুলাভাই।
আমি প্রার্থীদের এমন আন্তরিকতা দেখে বেশ মুগ্ধ ও পুলকিত। সত্যিই দেখে খুব ভালো লাগলো
যে, প্রার্থী কত আন্তরিক। এমন প্রার্থী, এমন নেতাও আজকাল পৃথিবী নামক গ্রামে আছে?
সন্দেশে
আমি যেহেতু ফরেইনার। আমিতো আর সেই দেশের ভাষা জানি না। আর পিকে সিনেমার মত সুন্দরী
কোন মহিয়সী নারীও পাইনি যে তার হাত ধরে বসে থেকে ভাষা নিজের মধ্যে নিয়ে নিবো। তাই,
সন্দেশে যাওয়ার সাথে সাথে সেই দেশের রাজধানী থেকে আমার সাথে যুক্ত হয়েছে একজন গাইড।
তাকে অনেকটা আমাদের দেশের পপি গাইডের মত বলতে পারেন। সে সবই জানে তবে সংক্ষেপে। আমি
আর আমার গাইড ঘুরে ঘুরে দেখছি আর আমি পুলকিত হচ্ছি। কিন্তু আমার গাইড পুলকিত হচ্ছে
না। সেটা হতেই পারে, আমরা তাদের কৃষ্টি-কালচার দেখে পুলকিত হই। আবার আমাদের দেশে এসে
আমাদের নেতাদের বক্তৃতা-আশ্বাস-প্রলোভোন দেখে সন্দেশের মানুষজন পুলকিত হয়। আমার দেশের
পরিবেশ-প্রতিবেশ, স্থপনা সব দেখে তারা পুলকিত হয়ে বলে ‘ওয়াও’। এটাই স্বাভাবিক। ভিন্ন
দেশে যেটা চুল আমাদের দেশে সেটা গালি। ভাবা যায় বিষয়টা! সন্দেশে গিয়ে দেখি শুধু বাংলায়
আজান দেয়। আর সবই অপরিচিত ভাষায়!
আমি ভোটারের গলা প্রার্থীর জড়িয়ে ধরা দেখে পুলকিত
হয়ে পপি গাইডকে বললাম, আহা, কি মনোরম দৃশ্য। এমন প্রার্থী, এমন নেতাও এখনও পৃথিবী গ্রামে
আছে? কত সুন্দর করে গলা জড়িয়ে ধরেছে! কত হাসি মাখা মুখ নিয়ে কথা বলছে। হৃদয়টাও কত পরিস্কার।
ভিতরে জটিলতা নেই, কুটিলতা নেই।
এবার পপি গাইড পুলকিত হয়ে গেলো। প্রার্থীর গলা
জড়িয়ে ধরা দেখে নয়, আমার কথা শুনে। আমাকে সে বললো, ভাই, গলা জড়িয়ে ধরাটা দেখলেন, মনের
দুরভিসন্ধিটাতো দেখতে পেলেন না! সন্দেশের বিশিষ্ট চিন্তাবিদ ও দার্শনিক একটা কথা বলে
গেছেন যা হয়তো আপনি জানেন না। কথাটা হলো, ‘গলা জড়িয়ে ধরলেই তাকে ভালোবাসা ভাববেন না,
বাঘও হরিণের গলা জড়িয়ে ধরে, সেটা ভালোবাসা নয়, কেবলই ভিতরের ক্ষুধার জন্য। দার্শনিকের
নামটা অবশ্য বলেনি, আমিও জিজ্ঞাস করিনি। আবার গেলে জেনে আসবো।
পপি
গাইডের কথা শুনে আমি এবার ডাবল পুলকিত হলাম। আসলে দেশ বিদেশ না ঘুরলে বুঝাই যায় না,
কোনটা ভালোবাসার গলা জড়িয়ে ধরা আর কোনটা দুরভিসন্ধির গলা জড়িয়ে ধরা! ধরার মধ্যেও যে
পার্থক্য থাকতে পারে তা বুঝিনি। আমাদের দেশেতো হয় শক্ত করে ধরে নয় নরম করে। কিন্তু
এখানের ধরার মধ্যে যে এত রহস্য লুকিয়ে আছে সেটা কে জানতো?
সন্দেশের প্রার্থীদের আচরণ দেখে ও পপি গাইডের কথা
শুনে শিক্ষা হলো যে, ধরলেই হবে না। দেখতে হবে কেন ধরেছে, কিভাবে ধরেছে। মনের ভিতরটা
পড়তে হবে। কোন অভিসন্ধি আছে কিনা অথবা কোন দুরভিসন্ধি। প্রার্থীর ধরা প্রার্থী ধরবে,
সিদ্ধান্ত নিতে হলে আমাদের ভেবে চিন্তে নিতে হবে। মনে রাখতে হবে, একটি ভুল সিদ্ধান্ত
সারা জীবনের কান্না হয়ে যেন না দাড়ায়।
আসাদুজ্জামান জুয়েল, আইনজীবী, কলামিষ্ট।
৪ দিন ৮ ঘন্টা ২২ মিনিট আগে
৫ দিন ১ ঘন্টা ২১ মিনিট আগে
৫ দিন ২২ ঘন্টা ৫৩ মিনিট আগে
৭ দিন ৫ মিনিট আগে
১০ দিন ৬ ঘন্টা ২৩ মিনিট আগে
১০ দিন ১৯ ঘন্টা ৫৫ মিনিট আগে
১১ দিন ১১ ঘন্টা ২ মিনিট আগে
১৫ দিন ৪ ঘন্টা ২৬ মিনিট আগে