যে বিভাগে বইতে পারে ৮০ কিমি বেগের ঝড় ধর্মান্ধরা সমাজকে পিছিয়ে নিয়ে যাচ্ছে: ভূমিমন্ত্রী ৩ কোরাল বিক্রি হলো ৪০ হাজারে প্রোটিনের চাহিদা মেটাতে ডিম না মুরগির মাংস, কোনটি উপযোগী? ২০৫০ সালের মধ্যে মানুষের গড় আয়ু বাড়বে ৫ বছর: গবেষণা ঝিকিমিকি সাজে কানে ঐশ্বরিয়া, নেটপাড়ায় হাসির রোল ইসরায়েলকে সতর্ক করলেন ১৩ দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অবৈধ বাংলাদেশিদের দ্রুত ফেরত পাঠাবে যুক্তরাজ্য আমিরাতফেরত যাত্রীর কাছে মিলল সাড়ে চার কোটি টাকার সোনা ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে আওয়ামী লীগ দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে : প্রধানমন্ত্রী ডলারের প্রবাহ বাড়াতে ব্যাংকের এমডিরা যুক্তরাষ্ট্র যাচ্ছেন তীব্র তাপদাহের পর বড়লেখায় স্বস্তির বৃষ্টি যেদিন থেকে আবারও বৃষ্টি এআই জীবনধারা সহজ করলেও সভ্যতার জন্য ঝুঁকি: তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী আইপিএলে আবারও শাহরুখের দলে যোগ দিলেন সাকিব আবার ঢাকাসহ চার বিভাগে হিট অ্যালার্ট আদমদীঘিতে মোটরসাইকেল শোডাউন, দুই প্রার্থীর ২০ হাজার টাকা জরিমানা চিলমারীতে সচেতনতামূলক সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে গ্রামীণ ব্যাংকের মালিকানা একার কারো নয়, এর মালিক সরকার ও ঋণ গ্রহীতারা" সাইফুল মজিদ উখিয়ায় গ্লোবাল ট্রেনিং সেন্টারে রোহিঙ্গা নিয়ে সেমিনার, ৩২ জন আটক

জয়পুরহাটে দুই ছাত্রীকে বিয়ে, তৃতীয়জনকে কুপ্রভাব

জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার মোলামগাড়িহাট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ল্যাব এসিস্ট্যান্ট মো. রবিউল ইসলামের বিরুদ্ধে একই বিদ্যালয়ের দুই ছাত্রীকে বিয়ে করাসহ একাধিক ছাত্রীকে যৌন হয়রানির অভিযোগ উঠেছে।

অভিযুক্ত ল্যাব সহকারী রবিউল ইসলাম জিন্দারপুর ইউনিয়নের কাদিরপুর গ্রামের আব্দুস সামাদ মন্ডলের ছেলে। 

সরেজমিনে দেখা যায়, রবিউল তার প্রাইভেট কোচিং সেন্টারের নামে একটি চাতালের গরুর সেটে প্রাইভেট পড়ান এবং তার পূর্বপাশে আরেকটি গোপন কক্ষ রয়েছে যেখানে সরকারি নবম দশম শ্রেণিসহ বিভিন্ন শ্রেণির ২০২৪ সালের বোর্ড বই সারিবদ্ধভাবে সাজিয়ে রেখেছেন। এছাড়াও দীর্ঘদিন চাকরির সুবাদে ৮ম শ্রেণির এক ছাত্রীকে তথ্য গোপন করে বিয়ে করে। কিছুদিন পরে নবম শ্রেণির আরও এক ছাত্রীর সাথে অবৈধ সম্পর্ক স্থাপন করে দ্বিতীয় বিয়ে করেন। পরে প্রথম স্ত্রীকে তালাক দেন। সম্প্রতি আবারও ১০ম শ্রেণির আরেক ছাত্রীকে অনৈতিক প্রস্তাব দেওয়ার ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে৷  

গত বুধবার (২৫ এপ্রিল) এ নিয়ে রবিউলের প্রাইভেট কোচিংয়ে গিয়ে ওই ছাত্রীর অভিভাবক প্রতিবাদ করলে দুপক্ষের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। পরে এ ঘটনা ছড়িয়ে পড়লে এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে।

এরপর গত ২৯ এপ্রিল ও ১লা মে সরেজমিনে গিয়ে ওই ছাত্রী ও তার পরিবারের সঙ্গে কথা বলা হলে।

যৌন হয়রানির শিকার ছাত্রীর মা বলেন, বালিকা বিদ্যালয়ে ভর্তি করে দিয়েছি যাতে আমার মেয়ে নিরাপদে থাকে। কিন্তু সেই বিদ্যালয়ের শিক্ষকই আমার মেয়েকে অনৈতিক প্রস্তাব দেয়। শুধু আমার মেয়েকেই নয়, এরকম অনেক মেয়েকেই তিনি অনৈতিক প্রস্তাব দিয়েছেন। কিন্তু ভয়ে কেউ সঠিক কথা স্বীকার করে না। আমার মেয়ের ঘটনার কথা প্রথমে অন্য মেয়েরা বললেও সামনে পরীক্ষা হওয়ায় ভয়ে এখন আর কেউ স্বীকার করতে চাচ্ছে না। কারণ রবিউল তাদের ফোন দিয়ে ভয়-ভীতি দেখিয়েছে। সাক্ষীর অভাবে তো আমরা আর বিচার পাবো না। এজন্য আর কাউকে কোন অভিযোগ দিবো না। 

তিনি আরও বলেন, আমার মেয়েকে আর ওই স্কুলে পাঠাবো না। পরীক্ষাও দিতে দিবো না। স্কুল থেকে সব মেয়েদের বলেছে কেউ যেন আমার মেয়ের সাথে কথা না বলে। বললে তোমাদের পরীক্ষায় খবর আছে। এজন্য আমার মেয়ের সাথে কেউ কথাও বলে না। এসব ঘাটাঘাটি করে আমার মেয়ের জীবনই যদি না থাকে। ওই স্কুলের শিক্ষকরাও তারই পক্ষ নেয়। আমার মেয়েকে ওই স্কুলে দিবো যদি পরীক্ষার হলেও না থাকে। প্রধান শিক্ষকের কাছে অভিযোগ করলে তিনি আমারদেরকে বলে, পারলে তোমরা টিসি নিয়ে যাও। 

ভুক্তভোগী ছাত্রীর বাবা বলেন, গ্রামের পাশেই স্কুল হওয়ায় মেয়েকে ওই স্কুলে পড়াশোনা করাচ্ছি। আজকে আমার মেয়েকে হানি করেছে। কালকে অন্যের মেয়েকে শ্লীলতাহানি করবে। ওই স্কুলে আমার মেয়েকে আর পড়াবো না। আমার মেয়েকে অন্য স্কুলে ভর্তি করাবো। বিচার চাইতে গেলে তো সাক্ষীর প্রয়োজন হয়। প্রথমে অন্যান্যরা সাক্ষী দিতে চাইল পরে আর কেউ সাক্ষী দিতে চায় না। আমরা গরীব মানুষ যা হবার হয়ে গেছে মেয়েকে তো বিয়ে দিতে হবে। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন শিক্ষক বলেন, রবিউল একজন ল্যাব এসিস্ট্যান্ট। দীর্ঘদিন থেকে প্রতিষ্ঠানে চাকরি করে। ল্যাব এসিস্ট্যান্ট হওয়ার পরেও হেডমাস্টার তাকে দিয়ে নবম ও দশম শ্রেণির ক্লাস করে নেন। যা মোটেও ঠিক নয়। এদিকে মাঝে মধ্যেই তার বিরুদ্ধে ছাত্রীদের সাথে সম্পর্ক করার অভিযোগ উঠে। আবার এই প্রতিষ্ঠানেরই দু’জন ছাত্রীকে তিনি বিয়ে করেছেন। যা অত্যন্ত লজ্জাস্কর। এবার নাকি এক ছাত্রীকে অনৈতিক প্রস্তাব দিয়েছে। যখন এই বিষয়গুলো নিয়ে বাইরে সমালোচনা হয় তখন আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সুনাম ক্ষুণ্ণ হয়। প্রধান শিক্ষকের নিকটাত্মীয় হওয়ায় রবিউল বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। তদন্ত করে এর ব্যবস্থা নেওয়া দরকার, না হলে প্রতিষ্ঠানটি ধ্বংস হয়ে যাবে।

সান্তনা নামের একজন ছাত্রীর মা বলেন, আমার মেয়ে ওই স্কুলের সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী। রবিউল মাস্টার যেহেতু এক এক করে দুইজন ছাত্রীকে বিয়ে করেছে। আবার তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন ছাত্রীকে কু-প্রস্তাব দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। আমার মেয়ে এসব জেনে ভয়ে আর স্কুলে যাচ্ছে না। আমি চিন্তা ভাবনা করেছি মেয়েকে ওই স্কুলে পড়াশোনা করাবো না। আমি হেড মাস্টারকে বলেছি আমার মেয়েকে যেন তাড়াতাড়ি টিসি দেয়। 

অভিযুক্ত রবিউল ইসলাম অভিযোগ স্বীকার করে বলেন, আমার ভুল হয়েছে। প্রথমে আমি বাল্য বিয়ে করেছিলাম। এই স্কুলে আমার স্ত্রীকে ভর্তি করিয়েছি। ছাত্রীরা সকলে আমার ভাতিজি হয়। আমি ল্যাব এসিস্ট্যান্ট পদে চাকরি করি আমার ক্লাস নেওয়ার নিয়ম নাই। প্রধান শিক্ষকের অনুরোধে আমি ক্লাস নিয়েছি। আপনারা তদন্ত করে দেখতে পারেন। এবারের মত আমাকে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখেন স্যার। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নবম-দশম ব্যাচের ভুক্তভোগী দুই শিক্ষার্থী বলেন, তিনি আমাদের শিক্ষক না হয়েও নিয়মিত আমাদের ক্লাস নেন। আমাদের ক্লাসের কম বেশি সব মেয়েরাই স্যারের হেনস্তার শিকার। পরীক্ষার ফলাফলের ভয়ে কেউ কিছু বলতে পারেনা। আমরা এর সুষ্ঠু বিচার চাই। স্কুলের কোন ছাত্রী শিক্ষক দ্বারা হেনেস্তার শিকার হবে এটা কোনভাবেই কাম্য নয়। তিনি সবসময় আমাদের বলেন, তার বোর্ডে হাত আছে। তিনি চাইলেই যে কাউকে পাস বা ফেল করে দিতে পারেন। পরীক্ষার হলেও তিনি শিখে দিতে পারেন। নির্দিষ্ট কোনো কারণ ছাড়াই বিশেষ করে মেয়ে শিক্ষার্থীদেরকে কোচিংয়ে ছুটির পরে ভয়ভীতি (পরীক্ষার ফলাফলের) প্রদর্শনের মাধ্যমে তার নিজস্ব গোপন কক্ষে বসিয়ে রাখতে বাধ্য করা হয় বলেও অভিযোগ রয়েছে রবিউলের বিরুদ্ধে। 

তারা আরও জানান, নিজের পছন্দের শিক্ষার্থীকে দিয়ে একই ব্যাচের অন্যান্য শিক্ষার্থীদের ফলাফল রেজাল্ট শিটে লিপিবদ্ধ করা। শ্রেণি কক্ষে থাকার থেকে শিক্ষকদের রুমে থাকলে সিজিপিএ ভালো করা যায় এ ধরণের বিভিন্ন কথা বলা। মার্কস বাড়িয়ে দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে মেয়ে শিক্ষার্থীদেরকে বিভিন্নভাবে অশালীন ও অনৈতিক ইঙ্গিত প্রদান করা, পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে তার পছন্দের শিক্ষার্থীদের অনৈতিক সুযোগ-সুবিধা প্রদান করা, ক্লাস টেস্ট এবং ব্যবহারিক পরীক্ষাসহ একাডেমিক বিভিন্ন বিষয়ে পক্ষপাতিত্ব পূর্ণ আচরণ করার মাধ্যমে তার পছন্দের শিক্ষার্থীদের বেশি নম্বর প্রদান করেন। যা সর্বশেষ পরীক্ষার ফলাফলে সবচেয়ে বেশি পরিলক্ষিত হয়েছে।

নাম প্রকাশ না করে স্থানীয়রা জানান, বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় এসব ঘটনা যেন থামছেই না বিদ্যালয়টিতে। গুরুত্বপূর্ণ সরকারি নবম-১০ম শ্রেণির বোর্ড বইগুলো কিভাবে রবিউলের হতে গেল। সেই বইগুলো কিভাবে কোচিং সেন্টারে সাজিয়ে রাখা হয়েছে। রবিউল একজন ল্যাব এসিস্ট্যান্ট সে কি করে ক্লাস নিতে পারে। এটি সম্পূর্ণ প্রধান শিক্ষকের যোগসাজশে অনিয়মগুলো করা হয়েছে। সঠিক তদন্ত করলে এই প্রতিষ্ঠানের আরো অনিয়ম দুর্নীতি বেরিয়ে আসবে। 

এ বিষয়ে প্রধান শিক্ষক মোসাদ্দেক বলেন, ওই শিক্ষার্থীসহ তার বাবা-মা আমার কাছে মৌখিক অভিযোগ করেছিল। আমি উনাদেরকে লিখিত অভিযোগ করতে বলেছিলাম। আমার কাছে টিসি চেয়েছিল আমি উনাদেরকে বললাম যেহেতু ১০ম শ্রেণিতে পড়ে পরীক্ষার আর কয়েক মাস আছে। স্কুল বন্ধ থাকার কারণে শিক্ষার্থীর বাবা-মা আমার কাছে এসে তারা মীমাংসা করার চেষ্টা করেছে। ওই ছাত্রীর প্রেমের সম্পর্কের কারণেই দুর্ঘটনা ঘটেছে। এছাড়াও তারা যদি অভিযোগ করে তদন্ত করে দোষী প্রমাণিত হলে তাকে চাকরীচ্যুত করা হবে। 

কালাই উপজেলার নির্বাহী অফিসার আবুল হায়াত জানান, এই অভিযোগটি কোন এক মাধ্যমে আমাদের কাছে এসেছে। আমরা তদন্ত শুরু করেছি। তদন্ত শেষ আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।