তেল সাধারণত দুই ধরণের (উদ্ভিজ্জ ও প্রাণিজ) হলেও প্রকৃতপক্ষে কিছু দেশ ও তাদের সমাজব্যবস্থার প্রেক্ষিতে ভিন্ন আঙ্গিকে (প্রয়োগের ভিত্তিতে) তেল মূলত দুই প্রকার। যথা:
১. বস্তুগত তেল,
২. অবস্তুগত তেল।
প্রকারভেদটি সংস্কৃতির প্রকারভেদের সাথে মিলে গেলেও মূলত অবস্তুগত তেল কিছু দেশ ও সমাজের সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ। আসুন জানা যাক এই তেলের এতটা চাহিদা কেনো। ক্ষেত্র বিশেষে বস্তুগত তেল ছাড়া কারোর সংসার চললেও এই অবস্তুগত তেল আদান-প্রদান না করলে অনেকেরই অবস্থা নাজেহাল হয়ে পড়ে। যেন বাতাসে অক্সিজেনের পরিবর্তে এই অবস্তুগত তেল বইছে। আমার ক্ষুদ্র চিন্তার জগৎ থেকে কারণগুলো নিম্নে তুলে ধরলাম:
১. যোগ্যতার ঘাটতি থাকলে কর্তৃপক্ষকে এই তেল দিয়ে যোগ্যতার সমতুল্য অবস্থান তৈরি করা যায়।
২. উপরি অর্জন করতে হলে এই তেলের বিকল্প নেই।
৩. অন্যের থেকে আলাদা কিছু বিশেষ সুবিধা পেতে এই তেল অত্যন্ত কার্যকর।
৪. কর্তৃপক্ষের কিছু অংশ এই তেল দিয়ে নিজের অবস্থান শক্ত করেছেন বলে তাদের মনে এই তেলের চরম বাসনা যা অনুগত তেলবাজ সৃষ্টি করে প্রতিনিয়ত।
বলতেই হচ্ছে যে, এই তেলের প্রয়োগ ঘুষ আদান-প্রদানের পথ প্রশস্ত করে এবং এর ফলে উচ্চতর কর্তৃপক্ষ নিজ স্বার্থ অর্জনে বিভিন্নভাবে অধীনস্থদের ব্যবহার করে থাকে।
৫. এই অবস্তুগত তেল প্রয়োগ সমাজের একটি প্রচলিত ধারণায় পরিণত হয়েছে যেটি প্রয়োগ না করলে কিছু ক্ষেত্রে অর্জন প্রায় অসম্ভব। এজন্য এই স্রোতে তাল মিলিয়ে, অনেক সময় বাধ্য হয়েই অনেকে এই তেল ব্যবহারে অভ্যস্ত হয়ে পড়ে।
৬. এই তেল একটি পারস্পরিক সুবিধাজনক ব্যবস্থা যা ক্ষেত্র বিশেষে অর্থের চেয়েও অধিক মূল্যবান হিসেবে প্রতীয়মান হয়।
এই অবস্তুগত তেল প্রদানকারীর বিবেচনায় আবার দুই প্রকার। যথা:
১. ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে যা সত্য সেটাই তেল হিসেবে ব্যবহার করে,
২. অত্যধিক অর্জনের আশায় প্রকৃত সত্যের চেয়ে বাড়িয়ে বলে।
এই তেলের সাথে যারা ঘি যুক্ত করেন পরবর্তীতে তারা সমাজের জন্য ক্ষতিকর হিসেবে প্রমাণিত হন, এমনকি সেটা তেল গ্রহণে জড়িত প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তির জন্যেও হুমকিস্বরূপ। বস্তুগত তেলের অত্যধিক ব্যবহার যেমন ব্যক্তির স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর, তেমনি অবস্তুগত তেলের অনিয়ন্ত্রিত প্রচলনও সমাজ তথাপি রাষ্ট্রের জন্য প্রাণঘাতী কেননা যোগ্য ব্যক্তিরা এই তেল ব্যবহারে অভ্যস্ত না হওয়াই তাদের প্রকৃত ও প্রাপ্য জায়গা অবস্তুগত তেল প্রয়োগকারীরা দখল করে নিচ্ছে।
পরিশেষে, অবস্তুগত তেলনামায় এটি বলা যায় যে, এই তেল হলো এক প্রকার মাধ্যম যা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রয়োগের দ্বারা একজন ব্যক্তি অসৎ উপায়ে কিছু অর্জন করার চেষ্টা করে যা স্বজনপ্রীতি ও দুর্নীতির সমতুল্য। এই তেল আদান-প্রদান বৈষম্য সৃষ্টিকারী এক ধরণের কোটা ব্যবস্থা যা খালি চোখে দেখা যায় না এবং এটি দেশে প্রচলিত অপ্রয়োজনীয় কোটাগুলোর সমতুল্য যার প্রয়োগে যোগ্য ব্যক্তিরা সঠিক জায়গায় স্থান পাচ্ছেন না। এই তেল প্রয়োগ সব সমাজেই প্রতীয়মান, অনুন্নত দেশ থেকে শুরু করে উন্নত দেশেও। উন্নত বিশ্বে অবশ্য এর আরেক নাম রয়েছে। "Compliment" বা প্রশংসা। অন্যদিকে, অনুন্নত বা উন্নয়নশীল দেশে এর নাম "Flattery" বা তোষামোদ। স্থান, কাল, পাত্রভেদে যেখানেই এটি প্রয়োগ করা হোক না কেনো এর উদ্দেশ্য একটিই, "অন্যের থেকে আলাদা হয়ে বিশেষ কিছু অর্জন করা", যা একটি কর্তৃপক্ষ তাদের যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ থেকে সহজেই এটি নির্মূল করতে পারে। তবে মনে রাখতে হবে, শ্লীলতা ও ভদ্রতার সাথে এই অবস্তুগত তেল প্রয়োগের বিস্তর পার্থক্য রয়েছে কারণ এখানে কোনো অর্জনের প্রাধান্য থাকে না, থাকে শুধু ব্যক্তির অভ্যন্তরের প্রকৃত সম্মান ও শ্রদ্ধাবোধ।
লেখক:
মো: ইয়াসির আরাফাত
শিক্ষার্থী
রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।
৪ দিন ৪৯ মিনিট আগে
৬ দিন ২১ ঘন্টা ৩৬ মিনিট আগে
১৪ দিন ১৫ ঘন্টা ৩৩ মিনিট আগে
২০ দিন ২২ ঘন্টা ১ মিনিট আগে
২৫ দিন ২৩ ঘন্টা ১৩ মিনিট আগে
৩৮ দিন ১৬ ঘন্টা ৭ মিনিট আগে
৩৮ দিন ১৭ ঘন্টা ৫২ মিনিট আগে
৪২ দিন ৪ ঘন্টা ২৬ মিনিট আগে