হাফিজের চোখে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সেমিতে খেলবে যে ৪ দল মোদি ফের ক্ষমতায় গেলে দেশের সংবিধানই থাকবে না: মমতা ডিবি কার্যালয় থেকে বের হয়ে যা বললেন মামুনুল হক এবার এক লাফে যত বাড়ানো হলো স্বর্ণের দাম নওয়াপাড়া মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়, শতভাগ পাস, শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা বিচ্ছুর বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত। জামালপুর জেনারেল হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভা অনুষ্ঠিত নাফনদী থেকে দুই কাঁকড়া শিকারীকে অপহরণ করেছে আরসা আবহাওয়া অধিদপ্তর যা জানাল সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড় ‘রেমাল’ নিয়ে বিশ্বকাপে টাইগাররা কে কোথায় ব্যাটিং করবেন, জানিয়ে দিলেন পাপন কোম্পানীগঞ্জে আনারস প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থীর গণসংযোগ সাংবাদিক প্রবেশের বিষয় স্পষ্ট করলো বাংলাদেশ ব্যাংক কংগ্রেসম্যানদের সই জালকারী বিএনপি একটা জালিয়াত রাজনৈতিক দল : পররাষ্ট্রমন্ত্রী নতুন কারিকুলামে শিক্ষার মানোন্নয়নের লক্ষ্যে স্কুল কমিটি ও অভিভাবকদের মতবিনিময় কুড়িগ্রামে বিশ্ব উচ্চরক্তচাপ দিবস পালিত কক্সবাজার পিটিআইয়ে প্রশিক্ষণরত শিক্ষিকার মৃত্যু গলাচিপা উপজেলা নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে ১৫ জন ম্যাজিস্ট্রেট মোতায়েন করা হবে। পাঁচবিবি উপজেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি রুহুল আমিন সম্পাদক জুয়েল শেখ নির্বাচিত ঈশ্বরগঞ্জে বিশ্ব উচ্চ রক্তচাপ উপলক্ষে র‌্যালি ও আলোচনাসভা সিরাজগঞ্জ পৌরসভার কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি হান্নান খান, সম্পাদক আল আমিন

নাগরিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় ওমর (রা.)

ছবি: আনসপ্ল্যাশ



আবদুল আযীয কাসেমি :


ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা আমিরুল মুমিনিন হজরত ওমর ইবনুল খাত্তাব (রা)-এর শাসনামল ছিল মুসলিম ইতিহাসের সোনালি অধ্যায়। ন্যায় ও ইনসাফের মূর্ত প্রতীক এই মহান শাসককে আজও সমগ্র পৃথিবীর মানুষ গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করে। পৃথিবীর ইতিহাসে সফল শাসকদের তালিকায় ওমর (রা.)-এর স্থান অনেক ওপরে। জনগণের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠা তথা নাগরিকদের অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে তিনি অভূতপূর্ব সাফল্য দেখিয়েছেন। একটি সুখী-সমৃদ্ধ দেশ গড়ে তুলতে যত পদক্ষেপ নেওয়া উচিত, সব পদক্ষেপই নিয়েছেন। সেসবের দীর্ঘ আলোচনায় না গিয়ে আমরা এখানে সংক্ষেপে দু-একটি বিষয় তুলে ধরছি:

• খাদ্য 

ইসলামের নির্দেশনা অনুযায়ী কোনো দেশে একজন প্রজারও ক্ষুধার্ত অবস্থায় ঘুমানোর সুযোগ নেই। নাগরিকদের খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করা সরকারের প্রধানতম দায়িত্ব। হজরত ওমর (রা.) এ বিষয়টি পুরোপুরি নিশ্চিত করেছিলেন। এ লক্ষ্যে তিনি গড়ে তুলেছিলেন শক্তিশালী বায়তুল মালের ব্যবস্থা। বায়তুল মাল থেকে নারী, শিশু, বৃদ্ধ সব অভাবী নাগরিকের জন্য মাসিক ও বার্ষিক ভাতার ব্যবস্থা করেন। বিচারপতি, মুয়াজ্জিন, ইমাম, আলেম-উলামা, জ্ঞানী-বুদ্ধিজীবীদের জন্য নির্ধারিত ছিল মোটা অঙ্কের ভাতা। হজরত ওমর (রা.) বলেছিলেন, ‘আমার দেশে একটি কুকুরও যদি না খেয়ে মারা যায়, তবে সে জন্যও আমাকে জবাবদিহি করতে হবে।’


• অর্থ

বায়তুল মালের অর্থ জোগান দেওয়া হতো সাধারণত মানুষের ভূমিকর তথা খারাজ ও জিজিয়া থেকে। হজরত ওমরের শাসনামলে অনেক অঞ্চল ইসলামি শাসনের আওতায় আসে। সেসব অঞ্চল থেকে প্রচুর পরিমাণে গনিমতের মাল বায়তুল মালে জমা হতো। অর্থ ও খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করার পরও তিনি মানুষের সুখ-দুঃখের বিষয়গুলো যাচাই করার জন্য নিজেই বিভিন্ন স্থানে ছদ্মবেশে ঘুরে বেড়াতেন। একেক অঞ্চলে এক মাস-দুই মাস অবস্থান করে সেখানকার অবস্থা সরেজমিনে পর্যবেক্ষণ করতেন। ফলে নাগরিকদের মাঝে খাদ্য-বস্ত্র-অর্থ সরবরাহের সফল উদ্যোগ নিতে সক্ষম হয়েছিলেন।



• কৃষি


কৃষিকাজ সহজ করার জন্য যাবতীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেন হজরত ওমর (রা.)। তিনি ঘোষণা করেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো পরিত্যক্ত জমি আবাদ করবে, সেই জমির মালিকানা তার। তবে যদি সে তিন বছরের মধ্যে আবাদ করতে সক্ষম না হয়, তবে জমিটির মালিকানা তার কাছ থেকে ফিরিয়ে নেওয়া হবে।’ এ ঘোষণা জনগণের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ তৈরি করে। এ ছাড়া কৃষিকাজ সহজ করার জন্য তিনি ব্যাপক হারে নদী ও খাল খননের উদ্যোগ নেন। বসরার লোকজনের কৃষিকাজে অসুবিধা হওয়ায় তাদের জন্য বসরায় খনন করেন ‘নাহরে আবু মুসা’। আহওয়াজ, খুজিস্তানসহ ইরাক ও ইরানের বিভিন্ন জায়গায় তিনি অনেক নদী-খাল খনন করেন।


• নগরায়ণ


আরেকটি মৌলিক নাগরিক অধিকার বাসস্থান। গৃহহীন মানুষদের আবাসন নিশ্চিত করার জন্য নতুন নতুন শহর নির্মাণ করেন ওমর (রা.)। ইসলামি সভ্যতার অন্যতম প্রাণকেন্দ্র ইরাকের কুফা ও বসরা শহর হজরত ওমরের শাসনামলেই নির্মিত হয়। যেসব শহরে সড়ক নির্মাণের প্রয়োজন ছিল, সেখানে সড়ক নির্মাণের উদ্যোগ নেন তিনি।


• ন্যায় বিচার


ইসলামের প্রাথমিক সময়ে রাষ্ট্রপ্রধানই হতেন প্রধান বিচারপতি। পরে ইসলামি রাষ্ট্রের আয়তন বাড়লে বিচারব্যবস্থা একটি সুশৃঙ্খল নিয়মের আওতায় আনা হয়। প্রতিষ্ঠা করা হয় স্বাধীন বিচারব্যবস্থা। প্রতিটি নাগরিকের সমান অধিকার নিশ্চিত করা হয় সেখানে। এমনকি আদালতে বিচারপতি, রাষ্ট্রপ্রধান ও শাসকদের বিরুদ্ধেও অভিযোগ করার সুযোগ ছিল। হজরত ওমর প্রত্যেক গভর্নরের পূর্ণ জবাবদিহি নিশ্চিত করেছিলেন। তাঁদের সবার সম্পদের হিসাব আবশ্যিকভাবে স্বচ্ছ থাকতে হতো।


• নিরাপত্তা


গভর্নর, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী ও দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের পর্যবেক্ষণের জন্য এবং জনগণের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য তিনি গড়ে তুলেছিলেন শক্তিশালী গোয়েন্দা বিভাগ। মুসলিম সাম্রাজ্যের সীমান্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে তিনি ইসলামের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো একটি বেতনভুক্ত সুশৃঙ্খল সেনাবাহিনী গড়ে তুলেছিলেন।


• সাম্য


ওমর (রা.)-এর আমলে রাজা-প্রজার পার্থক্য ছিল না। সবার জন্য সমান শাস্তির বিধান ছিল। সরকারি সম্পদ সবার মাঝে সমানভাবে বণ্টন করা হতো। একবার গনিমতের মাল হিসেবে কিছু ইয়েমেনি কাপড় এসেছিল। সবাইকে এক টুকরো করে কাপড় বণ্টন করে দেওয়া হয়। ওমর (রা.)-এর ভাগেও এক টুকরো কাপড় আসে। কিন্তু তাঁর দৈহিক গড়ন বড় হওয়ায় ওই কাপড়ে জামা বানানো যাচ্ছিল না। তাই তিনি পুত্র আবদুল্লাহর অংশটিও নিয়ে একটি জামা বানালেন। ওই জামা পরে মিম্বারে খুতবা দিতে উঠলে এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে আপত্তি জানিয়ে বলল, ‘আপনার অংশ দিয়ে তো এই জামা বানানো সম্ভব নয়। বাকি কাপড় কোথায় পেলেন?’ তখন ওমর (রা.) বিষয়টি স্পষ্ট করলে তিনি সন্তুষ্ট হন।


• বাক্‌স্বাধীনতা


ওমর (রা.)-এর যুগে যেকোনো নাগরিকই দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের প্রশ্ন করতে পারত। ওপরের ঘটনাটি তার উৎকৃষ্ট প্রমাণ। এক নারী মসজিদে নববিতে দাঁড়িয়ে ওমর (রা.)-এর বক্তব্যে আপত্তি জানিয়েছিলেন। ওমর (রা.) খলিফা নির্বাচিত হওয়ার পর প্রথম ভাষণেই বলে দিয়েছিলেন, ‘যদি তোমরা আমার কোনো বক্রতা দেখো, তবে আমাকে সোজা করে দিয়ো।’


• অমুসলিমদের প্রতি


অমুসলিমদের সুযোগ-সুবিধাও নিশ্চিত করেছিলেন ওমর (রা.)। একবার এক বুড়ো ইহুদি ভিক্ষা করছিলেন। তিনি বায়তুল মাল থেকে যথাসম্ভব তাঁকে দান করলেন এবং তাঁর জিজিয়া কর মাফ করে দিলেন। এরপর বায়তুল মালের দায়িত্বশীল ব্যক্তিকে বলে দিলেন, ‘এই বৃদ্ধ অন্ধ ইহুদি ও এবং তার মতো অন্য আহলে কিতাবদের প্রতি যথেষ্ট খেয়াল রাখবে।’

আরও খবর