বেগম রোকেয়া ছিলেন নারী জাগরণের অগ্রদূত। তিনি একাধারে একজন বাঙালি চিন্তাবিদ , প্রাবন্ধিক, ঔপন্যাসিক ,সাহিত্যক ও সমাজ সংস্কারক। বাঙালি মুসলমান সমাজ যখন সামাজিক কুসংস্কার ও ধর্মীয় প্রতিবন্ধকতায় আবদ্ধ ছিল, তৎকালীন নারী সমাজের শিক্ষার আলো নিয়ে এসেছিলেন নারী জাগরণের অগ্রদূত বেগম রোকেয়া।
তার বিভিন্ন লেখায় তিনি নারীদের মানসিকভাবে নিজেদের মানুষ হিসেবে গড়ে উঠতে প্রেরণা দিয়েছে ,"ভাগিনীরা! চুল রগড়াইয়া জাগিয়া উঠুন, অগ্রসর হউন, মাথা ঠুকিয়া বলো মা! আমরা পশু নই; বলো ভাগিনী! আমরা আসবাব নই ; বলো কন্যে আমরা জড়োয়া অলঙ্কাররূপে লোহার সিন্দুকে আবদ্ধ থাকিবার বস্তু নই; সকলে সমস্বরে বলো আমরা মানুষ।" অধিকার আদায়ে সচেতন বেগম রোকেয়া বাংলার নারীদের পথপ্রদর্শক।
প্রতিবছর ৯ ডিসেম্বর বাংলাদেশে পালিত হয় বেগম রোকেয়া দিবস, নারী শিক্ষা, অধিকার এবং জাগরণের অগ্রদূত বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের জন্ম ও মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে। এই দিনটি আমাদের নারীশিক্ষার পথিকৃত এবং নারীর ক্ষমতায়নের অনুপ্রেরণা হিসেবে স্বীকৃত বেগম রোকেয়াকে স্মরণ করার এক অনন্য সুযোগ।
বেগম রোকেয়া ১৮৮০ সালের ৯ ডিসেম্বর রংপুর জেলার পায়রাবন্দ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন একজন সমাজ সংস্কারক, সাহিত্যিক এবং নারী শিক্ষার অগ্রণী। পিতৃতান্ত্রিক সমাজের কঠোর নিয়ম-বিধির মধ্যেও তিনি নারীশিক্ষার প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করেন এবং তা প্রচারে আত্মনিয়োগ করেন। রোকেয়া মূলত বাংলা ও উর্দু ভাষায় সাহিত্য রচনা করতেন। তার বিখ্যাত গ্রন্থ "সুলতানার স্বপ্ন" নারীর ক্ষমতায়নের প্রথম কল্পিত স্বপ্ন ছিল, যেখানে নারী পুরুষের তুলনায় শক্তিশালী এবং সমাজের নেতৃত্বে রয়েছেন। এছাড়া "অবরোধবাসিনী" গ্রন্থে তিনি নারীর বন্দিত্ব এবং সামাজিক অসঙ্গতির কঠোর সমালোচনা করেছেন।
বেগম রোকেয়া মনে করতেন, শিক্ষাই নারীদের দাসত্বের শৃঙ্খল ভাঙার একমাত্র হাতিয়ার। তিনি ১৯১১ সালে কলকাতায় সাখাওয়াত মেমোরিয়াল গার্লস স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। তার উদ্যোগে অনেক নারী শিক্ষার সুযোগ পেয়েছিল, যা তখনকার সমাজে অভূতপূর্ব ছিল।
বেগম রোকেয়া দিবস আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় নারীর ক্ষমতায়নের প্রয়োজনীয়তা এবং এই পথপ্রদর্শকের অবদান। এদিন নারী শিক্ষা, অধিকার এবং ক্ষমতায়নের প্রসারে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। এছাড়া, সরকারের উদ্যোগে প্রতিবছর এই দিনে "রোকেয়া পদক" প্রদান করা হয়। এ পদক দেশের নারীদের উন্নয়নে বিশেষ অবদান রাখা ব্যক্তিদের দেওয়া হয়।
বেগম রোকেয়ার সময়ে নারীরা অবরোধবাসিনী ছিল, আর আজকের সমাজেও অনেক নারী দারিদ্র্য, বৈষম্য এবং নির্যাতনের শিকার। রোকেয়ার শিক্ষা ও আদর্শ আমাদেরকে নারীর সমান অধিকার এবং ক্ষমতায়নের পথে এগিয়ে যেতে অনুপ্রাণিত করে। বেগম রোকেয়া কেবল একজন ব্যক্তি নন, তিনি একটি আদর্শ, একটি আন্দোলনের নাম। তার জীবন ও কর্ম আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যে, নারীর উন্নয়ন ছাড়া সমাজের প্রকৃত উন্নতি সম্ভব নয়। আসুন, বেগম রোকেয়ার দেখানো পথে এগিয়ে গিয়ে একটি সমান সুযোগ এবং অধিকারসম্পন্ন সমাজ গড়ে তুলি।
ইমরান ফয়সাল
ঢাকা কলেজ
৪ ঘন্টা ০ মিনিট আগে
৪ ঘন্টা ২০ মিনিট আগে
৪ ঘন্টা ২১ মিনিট আগে
৪ ঘন্টা ৫৭ মিনিট আগে
৬ ঘন্টা ১৫ মিনিট আগে
৭ ঘন্টা ১৩ মিনিট আগে
৮ ঘন্টা ৩৭ মিনিট আগে
১৪ ঘন্টা ৬ মিনিট আগে