বিজয় দিবস প্রসঙ্গে
বাংলাদেশ একটি কৃষি প্রধান দেশ। এই দেশকে বলা হয় নাতিশীতোষ্ণময় দেশ । প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এই লীলাভূমি বাংলাদেশ অনেক সময় পরাধীনতার শিকলে আবদ্ধ ছিল। যখনই তারা বৈষম্যের শিকার হচ্ছিল ঠিক তখনই তারা প্রতিবাদে মুখর হয়ে ওঠে ছিল । আমাদের এ ভূখন্ডের প্রথম দিকে ইংরেজরা শাসন করত । তাদের বিরুদ্ধে প্রথম প্রতিবাদের দৃষ্টান্ত রেখে গেলেন শহীদ তিতুমীর। এভাবে ঘাত প্রতিঘাতের মাধ্যমে আজকের সুন্দর সুজলা সুফলা শস্যের শ্যামলা প্রাকৃতিক এক সৌন্দর্যের মাতৃভূমি পেয়েছি।
আমাদের এই মাতৃভূমি ছিল ভারতীয় উপমহাদেশের অন্তর্ভুক্ত। ভারতীয় উপমহাদেশের মানুষ স্বাধীনতার দেখা পাই১৯৪৭সালে। দেশকে বিভক্ত করা হয় ধর্ম ভেদে। তবে আমাদের ৫৬মাইলের ভূখন্ডে সব ধরনের মানুষের বসবাস ছিল। কিন্তু আমাদের মাতৃভূমিতে মুসলমানদের সংখ্যা বেশি হওয়ায় পাকিস্তানের অংশে পড়ে যায়। আমাদের মাতৃভূমি পাকিস্তানের একটি প্রদেশে পরিণত হয়। তবে পাকিস্তানের শাসকদের কাছে বিভিন্ন বৈষম্যের শিকার হতে হয়।
আমাদের মাতৃভাষা বাংলা ভাষা। কিন্তু বাংলা ভাষার পরিবর্তে উর্দু ভাষা আমাদের ওপর চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। মায়ের ভাষা বাংলাকে রক্ষা করার জন্য শহীদ সালাম, রফিক, বরকত, জব্বারসহ অনেকে প্রাণ উৎসর্গ করে। শেষ পর্যন্ত পাকিস্তানের শাসকরা বাধ্য হয়েই বাংলা ভাষা কে স্বীকৃতি দেয় ১৯৫২ সালে।এরই সূত্রপাত ধরে আমাদের মাতৃভূমি স্বাধীনতা পাওয়ার একধাপ পথ এগিয়ে যায়।
পাকিস্তানের অর্ধেকের ও ঢের বেশি লোক সংখ্যা বসবাস করে পূর্ব পাকিস্তানে । তারপরও তাদের বিভিন্ন ক্ষেত্র বিশেষে বৈষম্যের শিকার হতে হয়।তারই প্রতিবাদের প্রতিচ্ছবি হলো ছয় দফা। ৭০এর নির্বাচনে জয় লাভ করে স্বাধীনতা পাওয়ার আরেকটা সিঁড়ি অতিক্রম করে।তারপরে দীর্ঘ নয় মাস সংগ্রামের মধ্য দিয়ে অসংখ্য শহীদের রক্তের বিনিময়ে বাংলাদেশ ১৯৭১সালে ১৬-ই ডিসেম্বর স্বাধীনতা অর্জন করে ।তাই বাংলাদেশের আপামর জনসাধারণ সকলেই ১৬-ই ডিসেম্বর কে স্বাধীনতা দিবস হিসেবে উদযাপন করে।
এবারের ১৬-ই ডিসেম্বরের প্রতিপাদ্য বিষয় হোক সাম্য ও ভ্রাতৃত্বপূর্ণ এবং দেশপ্রেমিক নাগরিক তৈরি হয় এমন উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন। দেশপ্রেমিক নাগরিক তৈরিতে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করার মাধ্যমে দেশের মানুষের মধ্যে দেশপ্রেম জাগ্রত করতে হবে।তাই এই অর্জনকে সুরক্ষিত রাখা এবং দেশের উন্নয়নে কাজ করা আমাদের প্রত্যেকের দায়িত্ব।
বিজয় দিবস বাংলাদেশের জাতীয় জীবনের একটি অত্যন্ত গৌরবোজ্জ্বল দিন। প্রতি বছর ১৬ ডিসেম্বর আমরা এই দিনটি উদযাপন করি। এটি বাংলাদেশের ইতিহাসে এক অনন্য দিন, কারণ এই দিনেই দীর্ঘ ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধ শেষে পাকিস্তানি দখলদার বাহিনী আত্মসমর্পণ করে এবং বাঙালির স্বাধীনতা অর্জিত হয।
১৯৭১ সালের মার্চ মাসে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহ্বানে বাঙালিরা স্বাধীনতার জন্য সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ে। ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি বাহিনী অপারেশন সার্চলাইট নামে যে নৃশংস অভিযান শুরু করেছিল, তা বাঙালি জাতিকে মুক্তির জন্য আরও ঐক্যবদ্ধ করে। ৯ মাসব্যাপী মুক্তিযুদ্ধে অসংখ্য জীবন উৎসর্গিত হয়, লক্ষাধিক নারী নির্যাতিত হন, এবং কোটি মানুষ উদ্বাস্তু হয়ে ভারতের শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নেয়।
১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর প্রায় ৯৩,০০০ সেনা ভারতীয় সেনাবাহিনী ও মুক্তিবাহিনীর যৌথ কমান্ডের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মসমর্পণ করে। এটি ছিল ইতিহাসে সবচেয়ে বড় আত্মসমর্পণের একটি ঘটনা। এই দিন থেকেই বাংলাদেশ পৃথিবীর বুকে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।
বিজয় দিবস উপলক্ষে পুরো দেশজুড়ে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। সকাল বেলায় ৩১ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে দিনের সূচনা হয়। জাতীয় স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়। বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, কুচকাওয়াজ, আলোচনা সভা, এবং প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনীর মাধ্যমে দিনটি উদযাপিত হয়।
বিজয় দিবস আমাদের জাতীয় গৌরবের প্রতীক। এটি নতুন প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এবং দেশের প্রতি দায়িত্বশীল হতে উদ্বুদ্ধ করে। আমরা আশা করি, এই দিনটি প্রতিটি বাঙালির হৃদয়ে দেশপ্রেম ও ঐক্যের বার্তা বহন করবে।
ইমরান ফয়সাল
ঢাকা কলেজ