ব্যক্তির অন্ধানুসরণ বাদ দিয়ে কুরআন ও সহীহ হাদিস অনুসরণের গুরুত্ব
কুরআন হচ্ছে ইসলামের সবচেয়ে পবিত্র ধর্মগ্রন্থ,যেখানে মহান আল্লাহর বাণী রয়েছে।সহীহ হাদিস হচ্ছে বিশুদ্ধ ও নির্ভুল হাদিস আর সিহাহ সিত্তা হচ্ছে ৬টি প্রসিদ্ধ হাদিস বই।হাদিস তিন ধরনেরঃসহীহ,হাসান ও জয়ীফ।হাসান হাদিস আংশিক সহীহ,এজন্য হাসান হাদিসকে অনেকে সহীহ বলে সাব্যস্ত করেন।কিন্তু,জয়ীফ হচ্ছে দূর্বল,যেটি একবারেই গ্রহণ করা যায়না আর জাল হচ্ছে মিথ্যা,বানোয়াট ও ভিত্তিহীন,এই ধরনের জাল-জয়িফ হাদিস যারা প্রচার করে মানুষকে সেদিকে আহ্বান করে তাদের ঠিকানা হচ্ছে জাহান্নাম।কুরআন ও সহীহ হাদিস অনুসরণের মাধ্যমে মানুষ রাসূল(সাঃ)এর দেখানো পথে চলতে পারবে এবং শিরক,কুফর ও বিদাতমুক্ত থাকতে পারবে।আমাদের পাক-ভারত উপমহাদেশের সাথে আরব উপমহাদেশের মানুষদের মধ্যে ইসলাম চর্চার দিক দিয়ে অনেক ভিন্নতা লক্ষ্য করা যায়। আমাদের উপমহাদেশের মানুষ কুরআন ও হাদিস বইসমূহ কম পড়ে থাকে এবং আলেম ও পীর-মাশায়েখদের কথা অন্ধের মতো বেশী অনুসরণ করে। কিন্তু, মক্কা-মদিনার দেশ তথা সৌদি আরবসহ আশে-পাশের অন্যান্য আরব উপমহাদেশের মানুষরা ছোটবেলা থেকেই কুরআন ও হাদিস বইসমূহ পড়ার চর্চা করে।
এসব আরব দেশের মানুষরা তাদের সন্তানদের ছোটবেলা থেকেই দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের চর্চা করায় ও রমজান মাসে সিয়াম পালান করার অভ্যাস গড়ে তোলে। এসব আরব দেশের মানুষরা কুরআন ও সহীহ হাদিস অনুযায়ী জীবনপদ্ধতি পরিচালনা করে। তারা কুরআন ও সহীহ হাদিসের বাহিরে অতিরিক্ত কোনো ইবাদত, আমল যেগুলো রাসূল (সাঃ) থেকে তাবে-তাবেঈনদের যুগের পরবর্তী সময়ে নতুন সৃষ্টি হয়েছে, সেগুলোকে তারা বিদাত বলে গণ্য করে।তারা রাসূল (সাঃ) থেকে শুরু করে তার বলা সুন্নাহ যে তিন যুগ এর পরে নতুন করে আবিষ্কৃত দ্ধীন-প্রচার পদ্ধতি ও অন্যান্য ধর্মীয় বিষয়াদী অনুসরণ করেনা। তাদের কাছে কুরআন ও সহীহ হাদিসের বাহিরে কোনো ব্যক্তি, ইমাম, আলেম এরা কেউই বড় বা বিশেষ সম্মানিত কেউনা। এসব দেশের মানুষ কুরআন ও সহীহ হাদিস- সমূহের রেফারেন্স বা দলিলভিত্তিক ইসলাম চর্চা ও আলোচনা পছন্দ করে।আরব দেশের আলেম বা ইসলামিক স্কেলাররা কুরআনের সূরা ও আয়াত নাম্বার এবং হাদিস বইয়ের নাম,পৃষ্ঠাসহ নাম্বার উল্লেখ করে মানুষদের মধ্যে ইসলাম চর্চা ও প্রচার করে থাকে। কেউ যদি কুরআন ও হাদিস থেকে কথা বলার সময় রেফারেন্স না দেয় সেক্ষেত্রে, শ্রোতারাই রেফারেন্স চেয়ে জিজ্ঞেস করে। কেউ কোনো হাদিস বলার সময় বই ও নাম্বার উল্লেখ করলেও হাদিসটা সহীহ কিনা কিংবা সিহাহ- সিত্তা বা ৬টি প্রসিদ্ধ হাদিস বই এর অর্ন্তভুক্ত হাদিস বই কিনা এসবও জিজ্ঞেস করে। পরবর্তীতে শ্রোতারা বাড়িতে গিয়ে বই খুলে মিলিয়ে দেখে রেফারেন্স ঠিক আছে কিনা!এবং পরবর্তীতে এগুলো তাদের বাস্তবিক জীবনে চর্চার মাধ্যমে প্রয়োগ করে।
পক্ষান্তরে, আমাদের পাক-ভারত উপমহাদেশের মানুষরা আলেম-ওলামা, পীর-মাশায়েখ ও মাজারকে অন্ধের মতো ভক্তি ও পূঁজা করে। তাদের অন্ধভক্তির সুযোগ নিয়ে অনেকেই ধর্মকে পুঁজি করে ব্যবসা করছে। মাজার ব্যবসায়ীরা মানুষকে মাজারে, পীর ব্যবসায়ীরা বায়াত ও মানত আর তাবিজ ব্যবসায়ীরা গলায় তাবিজ ঝুঁলিয়ে দিয়ে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। মানুষের মনে একবারও প্রশ্ন জাগছেনা, এসব কুরআন ও সহীহ হাদিসে আছে কিনা!তাবেয়ী আবুল হাইয়াজ আসাদী থেকে বর্ণিত, "হযরত আলী (রা.) আমাকে বলেন, আমি কি তোমাকে ঐ কাজে পাঠাব না? যে কাজে আমাকে প্রিয় রাসূল (সা.) পাঠিয়েছেন। তা হলো কোন মূর্তি পেলে নষ্ট না করে ছাড়বে না এবং কোন উঁচু কবর(মাজার)সমান না করে রাখবে না"(মিশকাত,সহীহ মুসলিম)। রাসূল(সাঃ)বলেছেন,‘যে ব্যক্তি তাবিজ লটকালো, আল্লাহ তাকে পূর্ণতা দেবেন না, আর যে কড়ি বহার করবে, আল্লাহ তাকে মঙ্গল দান করবেন না'(আহমদ, হাকেম)।ওয়াজ-মাহফিলে লক্ষ টাকা দিয়ে বক্তা আনার পর বক্তা নানা-ধরনের কিচ্ছা-কাহিনী, জাল ও জয়ীফ বা দূর্বল হাদিস এবং নিজের মতো ফতোয়াবাজি করে চলে যায়।রাসূল(সাঃ)বলেছেন,‘যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে আমার ওপর মিথ্যারোপ করে সে জাহান্নামকে তার ঠিকানা বানিয়ে নেয়' (বুখারি, মুসলিম)।মানুষ একবারও দলীল বা রেফারেন্স উল্লেখ করার জন্য জিজ্ঞেসও করেনা,শুধু অন্ধের মতো বলে যায়,ঠিক!ঠিক!মক্কা-মদিনার মানুষ যেখানে এক ওয়াক্ত সালাত ত্যাগ করলে কুফরী হয়ে যাবে ভাবছে,সেখানে আমাদের উপমহাদেশের মানুষ পুরো সপ্তাহ বিনা কারণে সালাত না আদায় করেই নিজেদের মহা ইমানদার ভাবছে! আর এসব কারণেই মক্কা-মদিনার ইসলাম আর আর আমাদের পাক-ভারত উপমহাদেশের ইসলামের মধ্যে আকাশ-পাতাল পার্থক্য বিদ্যমান।এই উপমহাদেশের মানুষ অন্য সবকিছু অনুসরণ বাদ দিয়ে শুধু কুরআন ও সহীহ হাদিসের অনুসরণ করে ইমান,আমল ও ইবাদত করতো এবং কুরআন ও সহীহ হাদিসে নেই এমন সকল আমল,ইবাদত ত্যাগ করতো,তাহলে তারা খাঁটি ইমানদার হতে পারতো!আলেম ও পূর্বপুরুষদের অন্ধ অনুসরণ মানুষকে দলীল-প্রমাণের অনুসরণ এবং সত্য জানার আগ্রহ ও তা কবূল করার পথে বিরাট অন্তরায় হয়ে দাড়িয়েছে। আল্লাহ্ তায়ালা বলেন,যখন তাদেরকে বলা হয় আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন, তার অনুসরণ কর, তখন তারা বলে থাকে আমরা বরং আমাদের পূর্ব পুরুষদেরকে যে বিষয়ের উপর পেয়েছি, তারই অনুসরণ করব। যদিও তাদের বাপ-দাদারা কিছুই জানতো না এবং সত্য পথপ্রাপ্তও ছিলনা। (সূরা বাক্বারাঃ ১৭০) বর্তমান যুগের কতক মাজহাবপন্থী, সুফী ও কবর পূজারী,পীর পূজারীদের একই অবস্থা। তাদেরকে কিতাব ও সুন্নাতের দিকে ডাকা হলে এবং কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী আমলসমূহ বর্জন করতে বলা হলে তারা তাদের মাজহাব, মাশায়েখ এবং বাপ-দাদার দোহাই দিয়ে থাকে।
মোঃমাহিন ভূইঁয়া
শিক্ষার্থী,সমাজবিজ্ঞান
ঢাকা কলেজ