সাত কলেজ নিয়ে বৈষম্য
ঢাকার ঐতিহ্যবাহী ও গুরুত্বপূর্ণ সাতটি কলেজকে ২০১৭সালের ফেব্রুয়ারিতে পুনরায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করা হয়, যেগুলো একত্রে সাত কলেজ নামে খ্যাতি পায়। সাত কলেজ ১৯৯০ সালের আগেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত ছিল। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ৯০এর দশকে প্রতিষ্ঠিত হলে সাত কলেজকে সেটির অধিভুক্ত করা হয়।সাত কলেজের মধ্যে ঢাকা কলেজের কথা বিশেষভাবে বলতেই হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠা ও প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দান করতে বড় ভূমিকা রাখে ঢাকা কলেজে। একসময় ঢাকা কলেজ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত থাকায়, কেউই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে চাইতোনা।সেই জন্যই অনার্স-মাস্টার্স বন্ধ করে দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য বিশাল আত্মত্যাগ শিকার করে ঢাকা কলেজ।কিন্তু, আজ সেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট ঢাকা কলেজসহ সাতটি কলেজ নিয়ে ব্যবসা ও বৈষম্য করছে।
ভর্তি কার্যক্রমে দীর্ঘসূত্রিতার ফলস্বরূপ শিক্ষার্থীদের চরম ভোগান্তি ও মানসিক যন্ত্রণায় ফেলে দেওয়া হয়। সাত কলেজের পরীক্ষা নেয়ার পর প্রায় সাত মাস পর রেজাল্ট দেয়া হয়। নবীণ যারা সাত কলেজে ভর্তি হয় তারা বৈষম্য সর্ম্পকে অজানা থাকে।সাত কলেজে ৭৫% উপস্থিত থাকার কথা বলা হলেও শিক্ষার্থীদের কোনোপ্রকার হাজিরা নেয়া হয়না। ১ম বর্ষে ক্লাশ কিছুটা হলেও বাকি বর্ষের শিক্ষার্থীদের কোনো ক্লাসই নেয়া হয়না। পর্যাপ্ত পরিমাণ ক্লাশরুম ও শিক্ষক নেই সাত কলেজে।শিক্ষার্থী অনুপাতে শিক্ষক সংকট। ১২/১৫ শত শিক্ষার্থীর বিপরীতে ৮/৯ জন শিক্ষক। কিছু কলেজে ডিপার্টমেন্ট চলে ২/৩ জন শিক্ষক দিয়ে। ভর্তি, রেজিষ্ট্রেশন, মানোন্নয়ন, নন-কলেজিয়েট সহ বিভিন্ন ভাবে কোটি কোটি টাকা নেওয়া হয় কিন্তু সাত কলেজের উন্নয়নে সেসব ব্যয় করা হয়না। মানুষের কষ্টার্জিত এতো টাকা কে বা কারা লোপাট করছে তাঁর কোনো জবাবদিহিতা নেই।সম্পূর্ণ সিলেবাস শেষ না করেই দায়সারাভাবে পরিক্ষা শেষ করা হয়।এক সেশনের পরিক্ষা শুরু হলে সব সেশনের ক্লাস বন্ধ থাকে। এতে পড়াশোনায় মারাত্মক ক্ষতি হয়।ক্লাস নেয় বিসিএস ক্যাডার শিক্ষক, প্রশ্ন করেন ঢাবির পিএইচডি ডিগ্রির শিক্ষক, খাতা দেখেন পিএইচডি ডিগ্রির শিক্ষক (যদিও নিজেরা না দেখে কিনা এটা নিয়ে বেশ বিতর্ক আছে) যার দরুন শিক্ষার্থীরা নিজেদের সেরাটা অর্জনে ব্যর্থ হচ্ছে। পাঠ্যবইয়ের বাইরে পড়াশোনার জন্য ভালো মানের লাইব্রেরির অপ্রতুলতা। সাত কলেজের বিজ্ঞান বিভাগের ল্যাবগুলোতে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নেই। শিক্ষার্থীরা কীভাবে ব্যবহারিক জ্ঞান অর্জন করা সুযোগও নেই।সাবজেক্ট ভিত্তিক পরিক্ষার সময় নিয়ে গত ৭ বছরেরও সুষ্ঠু সমাধান হয়নি। ৩/৪ ঘন্টা নিয়ে অনেক তর্ক আছে।সেমিস্টার সিস্টেম নেই এতে ফলাফল বিপর্যয় হচ্ছে।সক্ষমতার বাইরে মাত্রাতিরিক্ত শিক্ষার্থী ভর্তি। ১০০ জন পড়ানোর ক্যাপাসিটি না থাকলও ভর্তি করা হয় ৩৫০ এর উপর। মানোন্নয়ন ফি দিতে ৭ কলেজে লাগে ২০০০+ টাকা , আর ঢাবিতে মাত্র ৫০০/৭০০ টাকা।সার্টিফিকেটে affiliation শব্দ শিক্ষার্থীদের প্রতিনিয়ত চাকুরী বা বিদেশে উচ্চশিক্ষা ক্ষেত্রে ভোগান্তি হয়ে দাড়িয়েছে।রিটেক সাবজেক্টে পাশ করার পরও ফেইল দেখায়। রেজাল্ট সমন্বয়ে চরম গড়িমসি। পারিবারিকভাবে অস্বচ্ছল শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার চালিয়ে নেওয়ার জন্য গঠনমূলক সহযোগিতার উদ্যোগ নেই ।পৃথিবীর সবচেয়ে জঘন্য সমাবর্তন পদ্ধতি সাত কলেজে। অর্থাৎ অনলাইন সমাবর্তন।
সাত কলেজ প্রশাসন শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ। জাতীয় সংগ্রাম, সংকটে সাত কলেজ এগিয়ে এসেছে, আসবেও। কিন্তু পুলিশ গুলি করলেও প্রশাসন তৎক্ষনাৎ গঠনমূলক কোনো ব্যবস্থা নেয় না।স্বতন্ত্র প্রাতিষ্ঠানিক পরিচয়হীনতায় ভুগছে সাত কলেজ শিক্ষার্থীরা।তারা তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচয় দিতে পারছেনা।ঢাবির অধিভুক্ত পরিচয় দিলে নানাভাবে হেনস্তার শিকার হতে হয়,শুধু কলেজের পরিচয় দিলে অনেকে ভাবে ইন্টারে পড়ে হয়তো ছেলেটা।তাই যৌক্তিকভাবে বিশ্লেষণ করে বলা যায়,সাত কলেজ নিয়ে একটি আলাদা স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয় করা এখন সময়ের দাবি।ব্রক্ষ্মা স্কুল থেকে জগন্নাথ কলেজ হয়ে ওঠা প্রতিষ্ঠানটি যদি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় হতে পারে,তবে স্বানামধন্য ও গৌরবময় প্রাচীন সাত কলেজও একত্রে একটি স্বতন্ত্র স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ার দাবি রাখে।
মোঃমাহিন ভূঁইয়া
শিক্ষার্থী, সমাজবিজ্ঞান,ঢাকা কলেজ