বগুড়ার সারিয়াকান্দিতে যমুনাচরের প্রতিটি বাড়ীতেই প্রস্তুত করা হয়েছে কুরবানির দেশিগরু। বিশালাকার চরের ঘাস খেয়ে বেড়ে ওঠা এসব দেশিগরু একেবারেই জৈব পদ্ধতিতে পালিত। দেশি এসব পশুর শেষ পরিচর্যা করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন চরের গৃহকর্তা এবং গৃহবধুরা। উপজলা প্রাণিসম্পদ ও ভেটেরিনারি দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, এ উপজেলায় কোরবানির চাহিদার তুলনায় এবার ১ হাজার ১২০ টি পশু বেশি প্রস্তুত আছে ।
বগুড়ায় যমুনার বিভিন্ন চরাঞ্চলের প্রতিটি বাড়ীতেই প্রস্তুত হয়েছে ২ টি থেকে শুরু করে ১০ টি পর্যন্ত বা তার বেশি কুরবানির গরু। বাড়ীর উঠানের একচালা ঘরের নীচে বা গাছের সাথে বাঁধা রয়েছে সারি সারি দেশী গরু। চরে এখন শুধুই কুরবানির গরুর পরিচর্যা করার দৃশ্য চোখে পরে। কেউ গরু যমুনা নদীতে নিয়ে গোসল করাচ্ছেন, কেউ বাড়ীতেই বৈদ্যুতিক মটরের সাহায্যে গরু ধৈত করছেন, কেউ বিস্তীর্ণ মাঠে গরুর ঘাস সংগ্রহ করছেন, কেউবা আবার শ্যাম্পু দিয়ে গরু ধৌত করছেন। তাছাড়া বিশালাকার চারণভূমিতে গরুর ঘাস খাওয়ার মনোরম দৃশ্যও চোখে পরার মতো। গরুর দেখাশোনার সিংহভাগ বাড়ীর গৃহবধূরাই করে থাকেন। গৃহকর্তারা শুধু মাঠ থেকে ঘাস নিয়ে আসেন। চরের এসব দেশি গরুর প্রধান খাবার ঘাস। তবে ঘাসের সাথে সামান্য খুদ, কুঁড়া এবং ভূষি গরুকে খাওয়ানো হয়। সাধারণত চরাঞ্চলে গরু লালন পালনে তুলনামূলকভাবে খরচ কম হয়, তাই দেশিগরু লালনপালন করে প্রাচীনকাল থেকেই চরবাসি বেশ লাভবান হচ্ছেন।
সরেজমিন উপজেলার যমুনার কাজলা কুড়িপাড়া চরে গিয়ে দেখা যায়, এ গ্রামের মৃত সিরাজ বেপারির ছেলে সিদ্দিক বেপারির (৪৫) গরু এ চরের মধ্যে সবচেয়ে বড়। গত কয়েকদিন আগে পাইকাররা গরুটি ৩ লাখ টাকা দাম করে গেছে। সাড়ে ৩ লাখ টাকা হলে তিনি গরুটি বিক্রি করবেন। গত বছর কুরবানির ঈদের পর তিনি গরুটি দেড় লাখ টাকায় ক্রয় করেছেন। গরুকে তিনি তার সন্তানের মতোই লালন পালন করছেন। সবুজ ঘাসের সাথে তিনি তার গরুকে ক্ষুদ, কুঁড়া এবং ভূষি খাওয়ান। লাল রংয়ের এ গরুকে তিনি প্রতিদিন বৈদ্যুতিক মোটরের পানি দিয়ে গোসল করান। আসছে কুরবানি উপলক্ষে ক্রেতাদের আকর্ষণ করতে তিনি গরুকে শ্যাম্পু দিয়ে গোসল করাচ্ছেন। তার গোয়ালে এ গরু ছাড়া আরও ৪ টি কোরবানির দেশিগরু প্রস্তুত হয়েছে। সিদ্দিক বেপারির মতো এ চরের প্রতিটি বাড়ীতেই প্রস্তুত হয়েছে কোরবানির দেশিগরু।
এ চরের মৃত বায়েস আলী প্রামানিকের ছেলে সাইদুল প্রামানিক (৬৫) বলেন, সারিয়াকান্দির যমুনাচরের প্রায় প্রতিটি বাড়ীতেই কোরবানি উপলক্ষে দেশিগরু লালন পালন করা হয়েছে। এসব গরুগুলো শুধুমাত্র সবুজঘাস এবং কুঁড়া ভূষি দিয়েই পালন করা হয়, কোনরুপ ফিডের ব্যবহার হয়না। গত বছর আমি ৫ লাখ টাকা দিয়ে কয়েকটি গরু ক্রয় করে তা কোরবানির আগে ৯ লাখ টাকায় বিক্রি করেছি। অবশ্য খরচ হয়েছিল ২ লাখ টাকার কাছাকাছি। দাম ভালো পেলে আরও বেশি বিক্রি করা যেতো। এ বছর ৬ টি গরু কোরবানির জন্য প্রস্তুত করেছি।
সারিয়াকান্দি উপজেলা প্রানিসম্পদ অফিসের তথ্য অনুযায়ী, এ উপজেলায় এ বছর কোরবানির চাহিদা ধরা হয়েছে সাড়ে ৬ হাজার পশু। এর মধ্যে প্রস্তুত রয়েছে ৭ হাজার ৬২০ টি পশু। এগুলোর মধ্যে গরু ৪ হাজার ৩৮০ টি, মহিষ ৮৪০ টি, ছাগল ২ হাজার ১৫০ টি এবং ভেড়া ২৫০ টি। অর্থাৎ কোরবানির চাহিদার তুলনায় মোট ১ হাজার ১২০ টি পশু বেশি রয়েছে।
সারিয়াকান্দি উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা কাওসার হোসাইন বলেন, সারিয়াকান্দি উপজেলার যমুনা এবং বাঙালি নদীর বিশালাকার গো চারণভূমি থাকায় সেখানে প্রায় প্রতিটি বাড়ীতেই কোরবানির দেশিগরু প্রস্তুত করা হয়েছে। এ গরুগুলো একেবারেই জৈবিক পদ্ধতিতে লালন পালন করা হয়েছে। এ বিষয়ে তাদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেয়া হয়েছে। জৈবিক পদ্ধতিতে পালন করা এসব পশুর মাংস আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য তেমন একটা ক্ষতিকর হবেনা।
১ ঘন্টা ৪৬ মিনিট আগে
১ ঘন্টা ৫৮ মিনিট আগে
২ ঘন্টা ১০ মিনিট আগে
২ ঘন্টা ১৮ মিনিট আগে
২ ঘন্টা ২০ মিনিট আগে
২ ঘন্টা ৫১ মিনিট আগে