প্রকাশের সময়: 02-06-2025 02:36:38 pm
পবিত্র ঈদুল আযহা মুসলিমদের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব, যা ত্যাগ ও আত্মসমর্পণের মহান শিক্ষা দেয়। প্রতিবছর বিশ্বজুড়ে এই দিনটি আনন্দ ও উৎসাহের মধ্য দিয়ে পালিত হয়। তবে আজকের প্রজন্ম—বিশেষত বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা—এই উৎসবের প্রকৃত তাৎপর্য ও কোরবানির মূল দর্শন কতটা হৃদয়ে ধারণ করছে, সেই প্রশ্নটি গুরুত্বপূর্ণ। অনেকেই কেবল উৎসবের বাহ্যিক রীতিনীতি পালনেই সীমাবদ্ধ থাকে। ঈদুল আযহার মূল বার্তা হচ্ছে আত্মত্যাগ, নিঃস্বার্থতা ও সামাজিক সমতা প্রতিষ্ঠা। এসব বিষয় শিক্ষার্থীদের চিন্তাভাবনায় কতটা প্রতিফলিত হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের চোখে।
“ঈদুল আজহা শুধু আনন্দ ও উৎসবের দিন নয়, এটি ত্যাগ, আন্তরিকতা ও আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য নিবেদনের সময়। ইসলাম আমাদের শিখিয়েছে, কোরবানির পশুর মাংস বা রক্ত নয়, আল্লাহর কাছে পৌঁছে আমাদের তাকওয়া। এই শিক্ষা অনুযায়ী আমরা বুঝি, ঈদের অর্থনৈতিক দিকটিও গুরুত্বপূর্ণ—যেখানে হালাল উপার্জন, ন্যায্য লেনদেন ও সমাজের সব স্তরের মানুষকে উপকারে আনা জরুরি। এই সময়ে আমরা পশুর দামের উঠানামা, খামারিদের পরিশ্রম এবং দরিদ্রদের জন্য কোরবানির গুরুত্ব অনুভব করি। একজন মুসলিম হিসেবে আমি বিশ্বাস করি, ঈদুল আজহা কেবল আনুষ্ঠানিকতা নয়, বরং এটি আমাদের ভোগ না করে ত্যাগে উদ্বুদ্ধ করে। ইসলামের এই শিক্ষা আমাদের অর্থনৈতিক ও সামাজিকভাবে দায়িত্বশীল হতে শেখায়।"
---তামান্না মুন্নি
অর্থনীতি বিভাগ-২০২২-২৩ সেশন
শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়।
ঈদের আগের দিন ঘর ভরে ওঠে আনন্দ ও ব্যস্ততায়। বড়রা রান্নায়, ছোটরা খেলায়, মেয়েরা মেহেদি দেওয়ায় মগ্ন থাকে। ঈদুল আজহা শুধু উৎসব নয়, স্মৃতি ও মানবিকতার শিক্ষা, যেখানে ভোগ নয়, ত্যাগের মাধ্যমে পূর্ণতা পাওয়া যায়।
“ঈদুল আজহা আমার কাছে শুধুই একটি ধর্মীয় উৎসব নয়, বরং এটি ত্যাগ, মানবিকতা ও আত্মিক প্রশান্তির প্রতীক। কোরবানির মাধ্যমে আমরা আত্মত্যাগ, দান এবং দরিদ্রদের পাশে দাঁড়ানোর বাস্তব শিক্ষা পাই। এই উৎসব আমাদের মধ্যে সহানুভূতি ও সামাজিক দায়িত্ববোধ জাগিয়ে তোলে।”ঈদের সময় বাড়ি ফেরার অনুভূতি সত্যিই অসাধারণ। পরিবার, আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে সময় কাটানো, ঈদের নামাজ আদায়, কোরবানি ও মাংস বিতরণের আনন্দ—সব মিলিয়ে ঈদ এক বিশেষ অভিজ্ঞতা। গ্রামের বাড়িতে ঈদের সময় যে আন্তরিকতা ও পারিবারিক উচ্ছ্বাস দেখি, তা শহরের ব্যস্ত জীবনে পাওয়া যায় না। কোরবানির প্রকৃত শিক্ষা যদি আমরা হৃদয়ে ধারণ করি, তাহলে সমাজে বৈষম্য কমবে এবং মানুষের মাঝে ভালোবাসা ও সহানুভূতি বৃদ্ধি পাবে। ঈদ তাই আনন্দের পাশাপাশি এক গভীর মানবিক শিক্ষা নিয়ে আসে।"
---রাকিবুল ইসলাম রাব্বি
হিসাববিজ্ঞান ২০১৯-২০সেশন।
মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।
“আমার কাছে ঈদুল আজহা মানে শুধুই আনন্দ নয়, বরং ত্যাগ, ভালোবাসা আর দায়িত্ববোধের এক গভীর প্রকাশ। ছোটবেলায় বাবা-মায়ের সঙ্গে কোরবানির পশু কিনতে যেতাম—সেটা ছিল এক দারুণ রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা। ঈদের আগের দিন রাত জেগে প্রস্তুতি নেওয়া, আর সকালে একসঙ্গে ঈদের নামাজে যাওয়া—এই সবই এখন স্মৃতির অংশ হয়ে গেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে উঠার পর থেকে পরিবার থেকে দূরে থাকতে হচ্ছে, তাই ঈদের সময়টা কিছুটা ফাঁকা ফাঁকা লাগে। তবে হলে থাকা বন্ধুদের সঙ্গে মিলেমিশে আমরা নিজেরাই ঈদ উদযাপন করি। একসঙ্গে রান্না করি, খাই, গল্প করি—এই আনন্দটাও বিশেষভাবে মনে গেঁথে থাকে। ঈদুল আজহার সবচেয়ে বড় শিক্ষা হচ্ছে আত্মত্যাগ। এই শিক্ষাই আমাকে শেখায়—শুধু নিজের কথা না ভেবে, অন্যের দিকেও খেয়াল রাখতে। ছাত্রজীবনে আমি এই মূল্যবোধকে বাস্তবে প্রয়োগ করার চেষ্টা করি।”
-- মো: ইথারুল ইসলাম
ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) ২০২৪-২৫ সেশন
বুয়েট।
বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের কাছে ঈদুল আজহা কেবল একটি ধর্মীয় উৎসব নয়—এটি হয়ে ওঠে এক আত্মিক সংযোগের সময়। পরিবার থেকে দূরে থেকেও বন্ধুত্ব, সহানুভূতি আর ত্যাগের এই শিক্ষা তাদের মনে গেঁথে যায়। এই অনুভবগুলো শুধু ঈদের সময়েই নয়, বরং জীবনের প্রতিটি ধাপে তাদের আরো সংবেদনশীল, দায়িত্বশীল এবং সহানুভূতিশীল মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে সাহায্য করে।
এই উৎসবের মর্ম উপলব্ধি করতে পারলে একজন শিক্ষার্থী কেবল ভালো ছাত্রই নয়, বরং একজন ভালো মানুষ হিসেবেও গড়ে উঠতে পারে। আর সেটাই হয়তো ঈদুল আজহার সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি।
"ঈদ মানেই পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানো, কিন্তু হলে থাকি বলে অনেক সময় বাড়ি ফেরা কঠিন হয়ে পড়ে। তবুও চেষ্টা করি ঈদের কয়েকটা দিন যেন পরিবারের সঙ্গে কাটাতে পারি। ঈদুল আযহার একটা বিশেষ অনুভূতি আছে—কোরবানির সময়টা আমাদের আত্মত্যাগের শিক্ষা দেয়। কোরবানির মাংস বিতরণের মধ্যে যে সহমর্মিতা, ভ্রাতৃত্ববোধ আর শ্রেণিগত বৈষম্য হ্রাসের শিক্ষা লুকিয়ে আছে, তা তরুণ সমাজের মধ্যে জাগিয়ে তুলতে হবে। এই ঈদের মাধ্যমে আমরা যদি সমাজের সকল শ্রেণির মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে পারি, সেটিই হবে ঈদের প্রকৃত সফলতা।”
---মেহেরুন্নেসা জেরিন
পরিসংখ্যান বিভাগ-২০২০-২১সেশন
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।
এফটিএনএস বিভাগের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ধী-বুনিয়ানুম মারসুস বলেন, “ঈদুল আজহা কেবল উৎসব নয়, এটি হালাল উপার্জন, ন্যায্যতা ও দরিদ্রদের কল্যাণে কাজ করার শিক্ষা দেয়। কোরবানির মূল বার্তাই হলো ত্যাগ এবং সমাজে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন।” তিনি মনে করেন, ইসলাম শুধু ইবাদতের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং এর মাধ্যমে একজন মানুষকে আর্থিক ও সামাজিকভাবে সুশৃঙ্খল হওয়ার শিক্ষা দেওয়া হয়।
---ধী-বুনিয়ানুম মারসুস
এফটিএনএস বিভাগ -২০২২-২৩
মাভাবিপ্রবি।
সিপিএস বিভাগের ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী আরাবিয়া সুলতানা প্রীতি বলেন, “ঈদ আমাদের মানবিক মূল্যবোধে উদ্বুদ্ধ করে। গ্রামের ঈদের আমেজ, আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে আনন্দ ভাগাভাগি—এসব শহুরে জীবনে পাওয়া যায় না। তবে ঈদের প্রকৃত শিক্ষা যদি ধারণ করতে পারি, তাহলে সমাজে বৈষম্য অনেকটাই কমে আসবে।”
-- আরাবিয়া সুলতানা
সিপিএস বিভাগ-২০২৩-২৪
মাভাবিপ্রবি।
টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী আল হাসান বলেন, “ঈদুল আজহা হলো মুসলিমদের জন্য একটি বড় আনন্দ ও উৎসবের দিন। এই দিনে আমরা অনেকেই মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের সন্তুষ্টির জন্য বিভিন্ন কিছু কোরবানি করে থাকি। আমাদের মধ্যে কেউ কেউ গরু, কেউ ভেড়া ইত্যাদি কোরবানি করে থাকেন। তবে আমাদের সমাজে কিছু মানুষ আছেন, যারা কোরবানি দেন শুধু মাংস খাওয়ার উদ্দেশ্যে, আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য নয়। আবার কেউ কেউ কোরবানি করেন লোক দেখানোর জন্য। কেউ যদি কোরবানি করে শুধু লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে, তাহলে নিঃসন্দেহে তার সেই কোরবানি বৃথা যাবে।”
--ক্বারী আল হাসান
টিই বিভাগ ২০২০-২১
মাভাবিপ্রবি।
বিজিই বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ফজলে রাব্বি বলেন, “ঈদুল আজহা শুধুই একটি উৎসব নয়, এটি ত্যাগ, শিক্ষা এবং আত্মশুদ্ধির এক মহামিলন। ইসলামের মহান আদর্শ আমাদের শিখিয়েছে—আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য নিজের প্রিয় জিনিসও কোরবানি করতে পিছপা হওয়া যায় না। এই শিক্ষা আমাদের কেবল পশু কোরবানির মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখে না, বরং জীবনের প্রতিটি স্তরে—নিজের স্বার্থ, সময়, অহংকার কিংবা অন্যায় প্রবৃত্তির বিরুদ্ধে কোরবানির বার্তা দেয়।"
-ফযলে রাব্বি
বিজিই বিভাগ ২০২০-২১
মাভাবিপ্রবি।
শিক্ষার্থীদের এসব অনুভব ও মতামত থেকে স্পষ্ট—ঈদুল আজহা কেবল একটি ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা নয়, বরং আত্মিক সংযোগ, মানবিকতা ও সামাজিক দায়বদ্ধতার একটি অনন্য শিক্ষা। তরুণ প্রজন্ম যদি এই মূল্যবোধ নিজেদের জীবনে বাস্তবায়ন করতে পারে, তাহলে সমাজে গড়ে উঠবে একটি ইতিবাচক, সহানুভূতিশীল ও ন্যায়ভিত্তিক সমাজব্যবস্থা। ঈদের অন্তর্নিহিত শিক্ষা শুধু কোরবানির পশু পর্যন্ত সীমাবদ্ধ না রেখে যদি আমাদের আচার-আচরণ ও দৈনন্দিন জীবনে প্রতিফলিত হয়, তবেই তা হবে প্রকৃত কোরবানির বাস্তব রূপায়ণ।
সমাজে ইতিবাচক প্রভাব তৈরির সুযোগ
ঈদুল আজহা শুধুমাত্র একটি ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা নয়; এটি সমাজে নৈতিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠারও সুযোগ সৃষ্টি করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুণরা যদি ঈদের এই শিক্ষাকে হৃদয়ে ধারণ করে, তাহলে সমাজে একটি বড় ধরনের ইতিবাচক পরিবর্তন সম্ভব।
৩ ঘন্টা ৩২ মিনিট আগে
৩ ঘন্টা ৩৪ মিনিট আগে
৩ ঘন্টা ৩৬ মিনিট আগে
৩ ঘন্টা ৫৩ মিনিট আগে
৩ ঘন্টা ৫৫ মিনিট আগে
১২ ঘন্টা ২২ মিনিট আগে
১২ ঘন্টা ২৬ মিনিট আগে
১২ ঘন্টা ৩৩ মিনিট আগে