◾ ফারহানা সাত্তার
নিজেকে জীবিত প্রমাণ করতে ব্যার্থ প্রতিবন্ধী বিপ্লব’ এই শিরোনামে গত ২০ আগস্ট ২০২১ তারিখে 'দৈনিক ভোরের কাগজ' পত্রিকায় একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। সংবাদে উল্লেখ করা হয় কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার থানা বাজার এলাকার পঞ্চাশ উর্ধ্ব প্রতিবন্ধী বিপ্লব আজাদকে ২০১৮ সালে ভোটার তালিকা হালনাগাদ করার সময় মৃত হিসেবে উল্লেখ করা হয়। যার ফলে তিনি প্রতিবন্ধী ভাতাসহ সরকারি সকল সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছেন।
তিনি নিজ বাড়ির মিউটেশন, ভোটাধিকার প্রয়োগ, এমনকি করোনার টিকাও নিতে পারছেন না। বিষয়টি জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের নজরে আসে। মানবাধিকার কমিশনের পক্ষ থেকে চারটি পর্যবেক্ষণের আলোকে সরেজমিনে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ পূর্বক বিষয়টি কমিশনকে জানানোর জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দৌলতপুর, কুষ্টিয়াকে অনুরোধ করা হয়। মানবাধিকার কমিশনের পর্যবেক্ষণগুলো হলো প্রতিবন্ধী বিপ্লব আজাদ নিজেকে জীবিত প্রমাণ করার জন্য দ্বারে দ্বারে ঘুরেও কেন প্রমাণ করতে পারছেন না সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সশরীরে প্রতিবন্ধী বিপ্লবকে দেখেছেন কিনা? তার জাতীয় পরিচয়পত্র এবং প্রতিবন্ধী সনদের ছবির সাথে মিল আছে কি না? অথবা প্রতিবন্ধীতার ধরণের সাথে মিলিয়ে দেখেছেন কি না?
ইউনিয়ন পরিষদের জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন রেজিস্ট্রারে অভিযোগকারী বিপ্লবকে মৃত্যু দেখানো হয়েছে কি না? মৃত্যু দেখানো হয়ে থাকলে কিসের ভিত্তিতে মৃত্যু দেখানো হয়েছে? ভোটার তালিকা হালনাগাদকালে প্রতিবন্ধী বিপ্লবকে মৃত্যু হিসেবে দেখানোর ভিত্তি কি?এ পর্যবেক্ষণের আলোকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সরেজমিনে বিষয়টি তদন্ত করে মানবাধিকার কমিশনের নিকট প্রতিবেদন জমা দেন।প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয় প্রতিবন্ধী বিপ্লব আজাদকে ভোটার তালিকা হালনাগাদের সময় ভুলক্রমে মৃত্যু দেখানো হয়েছিল যা পরবর্তীতে সংশোধন করা হয়েছে।
ভোটার তালিকা হালনাগাদের সময় তথ্য সংগ্রহকারী ও সুপারভাইজার মৃত খাদেমুল ইসলামের কর্তন ফরম পূরণ করে। কর্তন ফরমে খাদেমুল ইসলামের নাম থাকলেও এনআইডি নম্বরের স্হলে ভুলক্রমে তার ছেলে বিপ্লব আজাদের এনআইডি নম্বর লেখা হয়।সেজন্য মৃত্যু খাদেমুল ইসলামের পরিবর্তে তার ছেলে বিপ্লব আজাদ মৃত্যু হিসেবে কর্তন হয়।ভুক্তভোগী বিপ্লব আজাদের জাতীয় পরিচয়পত্র ও প্রতিবন্ধী সনদের ছবির মিল রয়েছে এবং প্রতিবন্ধীতার ধরণ সঠিক আছে। এছাড়াও, ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত পরিশোধ বইয়ের মাধ্যমে ব্যাংক থেকে বিপ্লব আজাদ প্রতিবন্ধীভাতা গ্রহণ করেছেন।
অক্টোবর, ২০২০ থেকে মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে ভাতা প্রদান কার্যক্রম শুরু হলে এমআইএস সফটওয়্যারে ভুক্তভোগীর তথ্য এন্ট্রি দেওয়ার সময় নির্বাচন কমিশনের এনআইডি সার্ভার থেকে স্বয়ক্রিয়ভাবে তাকে মৃত দেখানো হওয়ায় ভাতা প্রদান সম্ভব হয়নি।পরবর্তিতে বিপ্লব আজাদের আবেদনের প্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাচন কর্মকর্তা এনআইডি সংশোধন করে দেন এবং সমাজসেবা অফিসার এমআইএস এর সফটওয়্যারে তথ্য এন্ট্রি দিয়ে নিয়মিত ভাতা প্রদানের ব্যবস্হা করে দিয়েছেন।
ভিকটিম বিপ্লব আজাদ মানবাধিকার কমিশনের হস্তক্ষেপে ভাতার কার্ডটি এবং ভাতা পেয়ে খুশি হয়েছেন। এরকম অসংখ্য ঘটনায় মানবাধিকার কমিশন অন্যায়ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত সাধারণ নাগরিকদের পাশে এসে তাদের অধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য রাষ্ট্রকে বাধ্য করেছে।রাষ্ট্র সব সময় মানবিক হবে এটা আমাদের সংবিধানের মূল সুর।বর্তমান সরকারও সর্বক্ষেত্রে নাগরিকদের সাথে মানবিক আচারণের মাধ্যমে কল্যাণকর রাষ্ট্র প্রতিষ্টায় নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। তবে এটাও ঠিক কিছু কিছু ক্ষেত্রে ব্যক্তির বিচ্যুত্তির কারণে অনেক সময় নাগরিকদের মানবাধিকার লঙ্ঘনের মতো ঘটনা ঘটছে। দেশের মানবাধিকার কমিশন এ ব্যাপারে সজাগ। যখনি কোন মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা তাঁদের নজরে আসে সঙ্গে সঙ্গে কমিশন স্ব- উদ্যোগে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করে থাকে। আমাদের মানবাধিকার কমিশন সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
জাতিসংঘ ঘোষিত সর্বজনীন মানবাধিকারের মূল সুর হলো প্রতিটি মানুষের সম্মানজনকভাবে বেঁচে থাকা তাঁর জন্মগত অধিকার। মানুষ হিসেবে এ অধিকার প্রত্যেকটি মানুষের প্রাপ্য যা কেউ কেড়ে নিতে পারবে না। এ অধিকার শাশ্বত যা কোন দেশের সীমারেখা দ্বারা সীমাবদ্ধ নয়।সার্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণাপত্রের ৩০ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী ধর্ম,বর্ণ,নারী-পুরুষ, যুবক,বৃদ্ধ, শিশু, ক্ষুদ্র জাতিসত্তা ও নৃগোষ্ঠী, তৃতীয় লিঙ্গ, প্রতিবন্ধী যাই হউক না কেন,তিনি গ্রামে বা শহরে বা বিশ্বের যে প্রান্তেই বসবাস করেন না কেন সকলের সমান অধিকারের নিশ্চয়তা রয়েছে। আমাদের সংবিধানের প্রস্তাবনায় সকল নাগরিকের জন্য আইনের শাসন, মৌলিক মানবাধিকার এবং রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক সাম্য স্বাধীনতা ও সুবিচার নিশ্চিতকরণের অঙ্গীকার করা হয়েছে।
বাংলাদেশ একটি ঘনবসতিপূর্ণ দেশ।এখানে বহু ধর্মের, বহু ভাষা, সংস্কৃতি এবং নৃ-গোষ্ঠীর মানুষেরা সহাবস্থানে রয়েছে। এখানে মানুষের জীবনমান এখনো কাঙ্ক্ষিতমাত্রায় উন্নয়ন করা সম্ভব হয়নি।উন্নত দেশের নাগরিক সুযোগ সুবিধা আমাদের দেশের নাগরিকদের কাছে মাত্রই পৌঁছানো শুরু হয়েছে। এসব সুবিধা সকল নাগরিকদের কাছে পোঁছাতে সময় লাগবে।এমন একটি অবস্থায় দেশের সম্মানীত নাগরিকদের মানবাধিকার সুরক্ষা করা অত্যান্ত দুরূহ কাজ।তদুপরি মানবাধিকার কমিশনের সীমিত জনবল, আইনি সীমাবদ্ধতাসহ নানারকম সীমাবদ্ধতার মধ্যেও কমিশন নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
মানবাধিকার কমিশন দেশের যুবসমাজকে মানবাধিকার কর্মী হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে। ইতিমধ্যে বিপুলসংখ্যক মানবাধিকার কর্মী তৈরি হয়েছে এবং হচ্ছে। এটি একটি চলমান কার্যক্রম। আর এর মাধ্যমেই ভবিষ্যতে মানবাধিকার সংরক্ষণ এবং লঙ্ঘন প্রতিরোধে জোরদার ভূমিকা রাখা সম্ভব হবে। মানবাধিকার কমিশন দেশের জনসাধারণকে সচেতন করতে নানারকম প্রচার কার্যক্রম পরিচালনা করছে। মানবাধিকার কমিশন ২০২১ সাল পর্যন্ত পূর্ববর্তী সময়ের অভিযোগসহ মোট ১ হাজার ২৭১ টি অভিযোগের মধ্যে ৯৭২ টি অভিযোগ নিষ্পত্তি করছে।
মানবাধিকার কমিশন দরিদ্র, দুর্বল, প্রান্তিক, নারী ও শিশু, প্রতিবন্ধী,ঝুঁকিগ্রস্ত জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠায় সবসময়ই সচেষ্ট। ধর্মীয় সংখ্যালঘু,তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠী, পার্বত্য চট্টগ্রাম ও সমতলের নৃ-তাত্বিক জনগোষ্ঠীর অধিকার নিশ্চিত করা বৈষম্য দূরীকরণে কাজ করে যাচ্ছে। মোটকথা দেশের কোন মানুষের মানবাধিকার লঙ্ঘনের কোন ঘটনা ঘটলে তা মানবাধিকার কমিশনের নজরে আনতে হবে। এটা সচেতন নাগরিক হিসেবে সকলেরই দায়িত্ব। এসব মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ পেলে কমিশন দ্রুতই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করে এবং ভিকটিম প্রতিকার পেয়ে থাকে।
মানবাধিকার কমিশন তাদের নিজস্ব কর্মীদের মাধ্যমেও মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়গুলো নিয়মিত মনিটরিং করে থাকে। গণমাধ্যমে প্রকাশিত মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাও কমিশন আমলে নিয়ে থাকে। দেশে প্রত্যান্ত অঞ্চলে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলো ঐসব এলাকার সচেতন নাগরিকরা মানবাধিকার কমিশনের নজরে আনতে পারেন। এতে অপরাধীদের বিচারের মুখোমুখি করা সম্ভব হবে এবং ভিকটিমকে আইনি সহায়তা দেওয়ার মাধ্যমে অপরাধ কমানো সম্ভব হবে।
২ দিন ৭ ঘন্টা ২৮ মিনিট আগে
৪ দিন ১৫ ঘন্টা ৩০ মিনিট আগে
১১ দিন ৩ ঘন্টা ২৬ মিনিট আগে
১১ দিন ২০ ঘন্টা ২৪ মিনিট আগে
১২ দিন ১৭ ঘন্টা ৫৬ মিনিট আগে
১৩ দিন ১৯ ঘন্টা ৯ মিনিট আগে
১৭ দিন ১ ঘন্টা ২৭ মিনিট আগে
১৭ দিন ১৪ ঘন্টা ৫৯ মিনিট আগে