◾ মো. হাসিবুল হাসান হিমেল
একটা সময় সন্ধ্যার পর থেকেই গ্রামগঞ্জে জোনাকির অবাধ বিচরণ চোখে পড়ত। বাঁশবাগানে, ঝোপঝাড়ে অসংখ্য জোনাকির দেখা মিলত, এমনকি শহরের উদ্যানগুলোতেও জোনাকিদের মেলা বসত। বর্তমানে শহরে তো দূরের কথা গ্রামগঞ্জেও জোনাকিদের দেখা পাওয়া অনেকটা ভাগ্যের ব্যাপার। তবে কি জোনাকিরা আস্তে আস্তে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে? এমন চলতে থাকলে আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম হয়তো জানতেও পারবে না যে জোনাকি পোকা কী! শুধু যে জোনাকি পোকারাই বিলুপ্তির দিকে যাচ্ছে এমন না। আজকাল সকাল-সন্ধ্যায় পাখিদের কলরবও তেমন একটা শোনা যায় না। পাখিদের সঙ্গে সঙ্গে কমে আসছে পশু ও উপকারী পোকামাকড়দের সংখ্যাও। ফলে প্রকৃতি তার রূপ হারাতে চলছে।
আর এসব কিছুর জন্যই ব্যাপক অর্থে দায়ী মনুষ্য-সৃষ্ট কর্মকাণ্ড। বর্তমানে ব্যাপক হারে বৃক্ষ নিধনের ফলে পাখি ও পোকামাকড় হারাচ্ছে তাদের বাসস্থান এবং প্রকৃতিতে বৃদ্ধি পাচ্ছে কার্বন-ডাই অক্সাইডের মাত্রা। এর ফলে আবার বৃদ্ধি পাচ্ছে পৃথিবীর তাপমাত্রাও, যা ওজোনস্তর ক্ষতিগ্রস্তের অন্যতম কারণ। সাম্প্রতিককালে পৃথিবীতে বেড়েই চলেছে কলকারখানা ও যানবাহনের সংখ্যা। এগুলো থেকে নির্গত কালো ধোঁয়া বায়ুকে করে তুলছে বিষাক্ত যা অন্যান্য প্রাণীসহ মানুষের জীবনকেও ফেলছে ঝুঁকির মধ্যে। অতিরিক্ত কলকারখানা নির্মাণের জন্য আবার ভরাট করা হচ্ছে অসংখ্য নদী। নদীরা মারা যাচ্ছে এবং সেইসঙ্গে প্রকৃতিও হারাচ্ছে তার ভারসাম্য। কলকারখানার বিষাক্ত বর্জ্যগুলো ফেলা হচ্ছে আবার সেই নদীতেই। এতে একদিকে যেমন পানি হচ্ছে দূষিত অন্যদিকে মাছগুলোর জীবন হচ্ছে বিপন্ন এবং ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে মানুষও।
আজ প্রকৃতির ওপর মানুষের এমন বর্বর আচরণ অর্থাৎ বৃক্ষ নিধন, মাত্রাতিরিক্ত কলকারখানা ও যানবাহন বৃদ্ধি, নদী ভরাট ইত্যাদির জন্য একটি জোনাকি পোকা থেকে শুরু করে পশুপাখি ও মানুষের জীবনও পড়ছে হুমকির সম্মুখে। এমন চলতে থাকলে শিগগিরই পৃথিবী হয়ে উঠবে প্রাণীর বসবাসের অযোগ্য। মানুষ সচেতন না হয়ে প্রকৃতির ওপর এমন নির্মম আচরণ করতে থাকলে মানুষের এই আচরণই একসময় মানুষের ধ্বংসের কারণ হয়ে দাঁড়াবে। তাই আসুন আমরা নিজেরাই নিজেদের জীবনকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে না দিয়ে প্রকৃতির সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলি। বেশি বেশি বৃক্ষরোপণ করি, মাত্রাতিরিক্ত নদী-ভরাট ও কলকারখানা নির্মাণ বন্ধ করি সেই সঙ্গে কলকারখানার বিষাক্ত বর্জ্য ও কালো ধোঁয়া যাতে প্রকৃতির ক্ষতি করতে না পারে তার যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করি। আমরা প্রত্যেকে যদি নিজেদের জায়গা থেকে নিজেরা সচেতন হই এবং অন্যদের সচেতন করে তুলতে পারি তাহলেই আমরা পৃথিবীকে প্রাণীর বসবাসের উপযোগী করে রাখতে পারব। আর রক্ষা পাবে হাজারো জোনাকি পোকা ও পশুপাখি এবং সেইসঙ্গে প্রকৃতি ফিরে পাবে তার আপন সৌন্দর্য। সকাল-সন্ধ্যায় আবার পাখির কিচিরমিচির শব্দ শুনতে পাব, সন্ধ্যায় আবার বসবে জোনাকিদের মেলা। এই সুন্দর পৃথিবীটাকে রক্ষা করার দায়িত্ব তো আমাদেরই। আমরা কি পারি না প্রকৃতির সেই হারানো রূপটাকে আবার ফিরিয়ে আনতে? আসুন আমরা আমাদের এই সুন্দর ধরণীকে রক্ষা করতে সবাই একতাবদ্ধ হয়ে কাজ করি।
২ ঘন্টা ৩৮ মিনিট আগে
৪ ঘন্টা ২২ মিনিট আগে
৫ ঘন্টা ৪২ মিনিট আগে
৬ ঘন্টা ১৪ মিনিট আগে
১৬ ঘন্টা ৪৮ মিনিট আগে
১৮ ঘন্টা ৫২ মিনিট আগে
১৮ ঘন্টা ৫৬ মিনিট আগে
২২ ঘন্টা ৪৪ মিনিট আগে