জন্ম থেকে মরণোত্তর দু:খ যন্ত্রণা ও বঞ্চনার এক করুণ ইতিহাস স্বামী বিবেকানন্দ।
স্বামী বিবেকানন্দ তাঁর স্বল্প জীবনে অপমান, অবহেলা বহু পেয়েছেন,উপেক্ষিত হয়েছেন বার বার। পিতার মৃত্যূর পর স্বজ্ঞাতির সঙ্গে কোর্ট কাছারী করতে হয়েছে তাঁকে ।বহু বার হাজিরা দিয়েছেন কাঠগড়ায় l
নিদারুণ দরিদ্রের সংসারে সকালে উঠে অফিস পাড়া ঘুরে ঘুরে চাকরির খোঁজে বেরুতেন । দিনের পর দিন মা কে বলতেন মা আজ রাতে বন্ধুর বাড়িতে খেতে যাবো। প্রায় দিন দেখতেন সংসারে চাল,ডাল,নুন ,তেল কিছুই নেই কিন্তু ভাই ও বোন নিয়ে ৫টা পেটের খাবার কি ভাবে জুটবে ? মুদির দোকানে ধার করে মাকে এক- দুই দিনের চাল ডাল দিয়ে ... মা কে বলতেন আমার রান্না কোরো না... মা ! দিন দুই বন্ধুর বাড়িতে নিমন্ত্রণ আছে কিন্তু..কোথায় নিমন্ত্রণ ? .. আনাহার আর অর্ধপেটে থাকতেন তৎ কালীন নরেন্দ্র। বিদ্যাসাগরের জামাতা পছন্দ করতেন না নরেন্দ্রনাথ দত্তকে .. শ্বশুরকে বলে..." *খারাপ পড়ানোর অপরাধে"* বিদ্যালয় থেকে তাড়িয়ে দিলেন বিবেকানন্দকে । বিদেশেও তাঁর নামে এক বাঙ্গালি গুরু প্রচার করেন .. বিবেকানন্দ বেশ কয়েকটি বৌ ও দশ -বারো ছেলে পুলের পিতা ও এক আস্ত ভন্ড ও জুয়াখোর।
দেশে ও বিদেশে অর্ধপেটে বা অভুক্ত থেকেছেন দিন থেকে দিনান্ত....
অসুস্থ বিবেকানন্দ বিশ্ব জয় করে কলকাতায় এলে তাঁর সংবর্ধনা দিতে বা সংবর্ধনা সভা তে আসতে রাজি হয় নি অনেক বিখ্যাত বাঙ্গালী শেষে প্যারিচাঁদ মিত্র রাজি হলেও ... তিনি বলেছিলেন .. ব্রাহ্মণ নয় বিবেকানন্দ । ও কায়েত... তাই সন্ন্যাসী হতে পারে না , আমি ওকে brother বিবেকানন্দ বলে মঞ্চে সম্বোধন করবো ।
বিবিধ রোগে আক্রান্ত বিশ্বজয়ী দরিদ্র সন্ন্যাসীর চিকিৎসার টাকাও জোগাড় করা যায়নি কারো কাছ থেকে।
৪জুলাই ১৯০২ খ্রিস্টাব্দ বিবেকানন্দ ভোরে ঘুম থেকে ওঠেন, বেলুড় মঠের চ্যাপেলে তিন ঘন্টা ধরে ধ্যান করেন। এরপর তিনি ছাত্রদের শুক্লা-যজুর্বেদশেখান, যা একটি সংস্কৃত ব্যাকরণ এবং যোগ দর্শন। পরে সহকর্মীদের সঙ্গে রামকৃষ্ণ মঠের বৈদিক কলেজে একটি পরিকল্পনার আলোচনা করেন। তিনি ভ্রাতা-শিষ্য স্বামী প্রেমানন্দের সঙ্গে হাঁটেন এবং তাকে রামকৃষ্ণ মঠের ভবিষ্যৎ সম্পর্কেও নির্দেশনা দেন। সন্ধ্যা ৭:০০ টায় বিবেকানন্দ তাঁর ঘরে ফেরেন এবং তাকে বিরক্ত করতে নিষেধ করেন; ঘরে গিয়ে ধ্যানে বসেন তিনি। ধ্যান করতে করতেই রাত ৯টা ১০ মিনিটে মহা আনন্দলোকে যাত্রা করেন এই বীর সন্ন্যাসী। বিবেকানন্দের মৃত্যূর কোন ফটো নেই । কিন্তু সেই সময়ে টেলিফোন থাকা সত্ত্বেও কোন সংবাদমাধ্যম আসেনি এবং কোন কাগজেই বিবেকানন্দের মৃত্যূ সংবাদ প্রকাশিত হয়নি,এমন কি কোন রাষ্ট্রনেতা বা কোন বিখ্যাত বাঙ্গালী কোন শোকজ্ঞাপনও করেননি।
শেষ সময়ে বিবেকানন্দের আক্ষেপ..
"একমাত্র আর একজন বিবেকানন্দই বুঝেতে পারবে যে এই বিবেকানন্দ কি করে গেল।"*
তিনি বলেছিলেন- "one infinite pure and holy – beyond thought beyond qualities I bow down to thee" অর্থাৎ "প্রণাম করি সেই একক, অনন্ত, শুদ্ধ ও পবিত্র –চিন্তা ও গুণের অগম্য ঈশ্বরকে। "
ব্রিটিশ ভারতের ভারতীয় জাতীয়তাবাদের প্রবক্তা, বেদান্ত ও যোগদর্শনের পুরোধা ব্যক্তিত্ব স্বামী বিবেকানন্দের ১২১ তম তিরোধন দিবসে রইলো বিনম্র শ্রদ্ধা ও সশ্রদ্ধ প্রণাম।
লেখক: প্রণব মন্ডল, কবি এবং শিক্ষার্থী ; খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়।
৩ দিন ২০ ঘন্টা ৫৯ মিনিট আগে
৪ দিন ২১ ঘন্টা ৩৮ মিনিট আগে
৮ দিন ২০ ঘন্টা ২৫ মিনিট আগে
৩৯ দিন ২৩ ঘন্টা ৩১ মিনিট আগে
৪১ দিন ২০ ঘন্টা ১ মিনিট আগে
৪৩ দিন ২০ ঘন্টা ২৬ মিনিট আগে
৪৩ দিন ২০ ঘন্টা ২৮ মিনিট আগে
৪৬ দিন ১৮ ঘন্টা ৫৪ মিনিট আগে