গ্রামবাংলার নিম্ন আয়ের মানুষদের রান্নার কাজে জ্বালানি খড়ির সংকটের কারনে গোবরের লাকড়ির কদর বাড়ছে গ্রামীণ গৃহিণীদের কাছে।তাই গৃহবধূরা গোবর দিয়ে তৈরি লাকড়ির দিকে ঝুঁকছেন।
এক সময়ে গ্রামবাংলার বন-জঙ্গলের লতা-পাতা কুড়িয়ে জ্বালানি হিসেবে রান্নার কাজে ব্যবহৃত হতো। সময়ের আবর্তনে এখন বাড়ির পাশে গড়ে উঠা প্রাকৃতিক বন-জঙ্গল কেটে ফেলার কারনে জ্বালানী সংকট তৈরি হয়েছে।এর ফলে নিম্ন আয়ের মানুষদের রান্না কাজে দেখা দেয় জ্বালানি খড়ির সংকট। তাই গৃহবধূরা গোবর দিয়ে তৈরি লাকড়ির দিকে ঝুঁকছেন।
ধনী ও বড় গৃহস্থ পরিবারের গৃহবধূরা ক্রয় করা খড়ি বা গ্যাস দিয়ে রান্না করতে পারলেও চরম বেকায়দায় পড়েছেন গরীব ও নিম্ন আয়ের পরিবারের বধূরা। তারা গ্যাস বা গাছের কাঠ-খড়ি ক্রয় করতে না পেরে গৃহপালিত গরুর গোবর দিয়ে লাকড়ি তৈরি করেন।আর তাদের তৈরি সেই লাকড়ি দিয়ে চলে সারাবছরের রান্নার কাজ।
ময়মনসিংহের নান্দাইলের গ্রামাঞ্চলের গরীব গৃহবধূদের কাছে রান্নার কাজে সাশ্রয়ী জ্বালানী হিসেবে গরুর গোবরের তৈরি লাকড়ি দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।আর এই গোবর দিয়ে তৈরি হচ্ছে লাকড়ি,খড়ি।(স্থানীয়দের কাছে এটি মুইঠ্যা বা আটি হিসেবে পরিচিত।উপজেলার সর্বত্রই এটি চোখে পড়ে।প্রতিটি গ্রামীণ জনপদে গরুর গোবর দিয়ে লাকড়ি তৈরির ধুম পড়েছে।
সরেজমিন উপজেলার বিভিন্ন গ্রামাঞ্চল ঘুরে দেখা যায়,বধূরা গৃহপালিত গরুর গোবর দিয়ে লাকড়ি তৈরি করছেন।বাড়িব উঠানে,বাড়ির বাইরে খোলা জায়গায় বসে ঘোমটা টেনে পরম আনন্দে তৈরি করছেন গোবরের লাকড়ি। পিড়িতে বসে মনোযোগ দিয়ে তৈরি করছেন রান্নার এই জ্বালানী। সামনে রয়েছে খাদি বা ডালি ভর্তি গোবর,বালতি ভর্তি পানি, পাটখড়ি, ধানের তোষ বা কুড়া।
সকালে ঘুম থেকে জেগে গোয়াল ঘরে প্রবেশ করেন গ্রামীণ এই বধূরা। ডালি ভর্তি বের করেন গোবর।গোবরের সাথে মিশ্রিত করা হয় আংশিক পরিমাণের ধানের তুষ বা কুড়া।এরপর ২/৩ফুট লম্বা পাটের শলা দিয়ে বধূরা তৈরি করেন লাকড়ি।
গোবরের এসব তৈরি কাঁচা লাকড়িগুলো শুকানোর জন্য বাড়ির উঠানে আড় বেঁধে রোদে দাঁড় করে রাখা হয়। ২ থেকে ত দিন দিন পরই শুকিয়ে যায় লাকড়িগুলো। এভাবেই প্রতিদিনের তৈরি শুকনো লাকড়ি মজুদ রাখা হয় ঘরে।
বীরকামট খালী গ্রামের গৃহবধূ রোমেলা খাতুন, খড়িয়া গ্রামের জরিনা আক্তার, লোহিতপুর গ্রামের আম্বিয়া জানান,গোবরের লাকড়িই আমাদের ভরসা।সারাবছরই আমরা গোবর দিয়ে লাকড়ি বানাই। গোবরের লাকড়ি অনেক ভালা জ্বলে।ছবি তুলতে চাইলে ঘোমটা টেনে সরে যান।
আব্দুল্লাহপুর গ্রামের মেঘমালা বলেন, গোবরের লাকড়ি দিয়ে মাটির চুলাতে রান্না করতে অনেক ভালা লাগে।' গোবরের লাকড়িই আমরার ভরসা।এতে আমরার বাড়তি লাকড়ি কিনার খরচও অনেক কম লাগে। গোবরের লাকড়ি আমরা বেশী কইরা বানাই, যাতে কইরা বর্ষা মৌসুমে ব্যবহার করতারি।
নান্দাইল উপজেলা অতিরিক্ত কৃষি অফিসার নাদিয়া ফেরদৌসি বলেন, গোবর দিয়ে তৈরি লাকড়ি এমন এক প্রকার জ্বালানি যা তৈরি করা খুবই সহজ। খরচ কম। উপকরণ হিসেবে প্রয়োজন গরু বা মহিষের গোবর, পাটখড়ি, ধানের তুষ (কুড়া)।এইজন্য গ্রামীণ বধুরা গোবর দিয়ে তৈরি লাকড়ির দিকে ঝুঁকছেন।
নান্দাইল উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মোহাম্মদ আনিসুজ্জামান বলেন,দরিদ্র জনগোষ্ঠীর নারীরা বিকল্প জ্বালানি হিসেবে গোবর ব্যবহার করছেন।জ্বালানি সংকট থেকে বাঁচতে মধ্যবিত্ত ও নিম্ন আয়ের পরিবারের বধুরাও এখন গোবর দিয়ে লাকড়ি তৈরি করছেন।
১৫ দিন ১৮ ঘন্টা ১৮ মিনিট আগে
১৬ দিন ৯ ঘন্টা ২ মিনিট আগে
১৬ দিন ৯ ঘন্টা ৫ মিনিট আগে
১৯ দিন ১০ ঘন্টা ৪০ মিনিট আগে
২১ দিন ১০ ঘন্টা ২৩ মিনিট আগে
২২ দিন ১০ ঘন্টা ৩৪ মিনিট আগে
২৪ দিন ১১ ঘন্টা ৫০ মিনিট আগে
২৪ দিন ১২ ঘন্টা ২৭ মিনিট আগে