◾ ধর্মীয় ডেস্ক : বনি ইসরাইলের এক যুবক চাচাতো বোনকে বিয়ে করে চাচার বিপুল সম্পদের মালিক হওয়ার ফন্দি এঁটেছিল। তবে মেয়ে বিয়ে দিতে রাজি না হওয়ায় চাচাকে গোপনে হত্যা করে। পরের দিন চাচার হিতাকাঙ্ক্ষী সেজে সমাজের মানুষের কাছে খুনির বিচার দাবি করে। তবে যথেষ্ট সাক্ষ্য-প্রমাণের অভাবে প্রকৃত অপরাধীকে শনাক্ত করা যাচ্ছিল না। তখন তারা বিচার নিয়ে হজরত মুসা (আ.)-এর কাছে গেল।
এ বিষয়ের করণীয় জানিয়ে আল্লাহ তাআলা মুসা (আ.)-এর কাছে অহি পাঠালেন। মুসা (আ.) তাদের বললেন, ‘আল্লাহ তোমাদের একটি গাভি জবাই করতে বলেছেন।’
তারা বলল, ‘আপনি কি আমাদের সঙ্গে উপহাস করছেন?’
মুসা বললেন, ‘জাহিলদের অন্তর্ভুক্ত হওয়া থেকে আমি আল্লাহর আশ্রয় চাচ্ছি।’
তারা বলল, ‘তাহলে আপনি আপনার পালনকর্তার কাছে আমাদের জন্য প্রার্থনা করুন, যেন তিনি গাভিটি কেমন হবে বলে দেন?’
তিনি বললেন, ‘আল্লাহ বলেছেন, গাভিটি না বুড়ি হবে, না বকনা, বরং দুইয়ের মাঝামাঝি বয়সের। এখন তোমাদের যা আদেশ করা হয়েছে, তা সেরে ফেলো।’
তারা বলল, ‘আপনার প্রভুর কাছে আমাদের পক্ষ থেকে প্রার্থনা করুন, গাভিটির রং কেমন হবে।’
তিনি বললেন, ‘আল্লাহ বলেছেন, গাভিটি হবে চকচকে গাঢ় পীত বর্ণের, যা দর্শকদের চোখ শীতল করবে।’
তারা আবার বলল, ‘আপনি আপনার প্রভুর কাছে আমাদের পক্ষে প্রার্থনা করুন, যাতে তিনি বলে দেন, গাভিটি কেমন হবে। কেননা একই রঙের সাদৃশ্যপূর্ণ অনেক গাভিই আছে। আল্লাহ চান তো এবার আমরা অবশ্যই সঠিক দিশা পেয়ে যাব।’
মুসা বললেন, ‘আল্লাহ বলেছেন, সেই গাভিটি কখনো ভূমি কর্ষণ বা পানি সেচের শ্রমে অভ্যস্ত নয়, সুঠামদেহী ও খুঁতহীন।’
তারা বলল, ‘এতক্ষণে আপনি সঠিক তথ্য এনেছেন।’
এরপর তারা সেটি জবাই করল। অথচ তারা তা জবাই করতে চাচ্ছিল না। (সুরা বাকারা: ৬৭-৭১)
গাভি জবাইয়ের পরের করণীয় সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘জবাইকৃত গরুর মাংসের একটি টুকরা দিয়ে মৃত ব্যক্তির গায়ে আঘাত করো। এভাবে আল্লাহ মৃতকে জীবিত করেন এবং তোমাদের তাঁর নিদর্শনসমূহ প্রদর্শন করেন। যাতে তোমরা চিন্তা করো।’ (সুরা বাকারা: ৭৩)
বিভিন্ন বর্ণনা থেকে জানা যায়, সেই গাভির মাংসের টুকরা দিয়ে আঘাত করার সঙ্গে সঙ্গে মৃত লোকটি জীবিত হয়ে যায় এবং খুনি ভাতিজার নাম বলে দিয়ে ফের মারা যায়। ধারণা করা হয়, এরপর মুসা (আ.) অপরাধীর শাস্তি বিধান করেন।
এখানে অপরাধী নিজের অপরাধ লুকাতে চেয়েছিল। কিন্তু আল্লাহ একটি জবাইকৃত গাভির মাধ্যমে তার কুকর্ম ফাঁস করে দেন। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘যখন তোমরা একজনকে হত্যা করে পরে সে সম্পর্কে একে অপরকে দায়ী করছিলে, অথচ আল্লাহ তা প্রকাশ করে দিলেন, যা তোমরা গোপন করতে চাচ্ছিলে।’ (সুরা বাকারা: ৭২)
ঘটনা থেকে শিক্ষা
আল্লাহর ওপর ভরসা করলে আল্লাহ তাআলা গায়েবিভাবে সমস্যার সমাধান করে দেন। সমস্যার সমাধান সব সময় যৌক্তিক উপায়েই হয়, তা সত্য নয়। যেমন এখানে প্রথমে বনি ইসরাইল বিশ্বাসই করতে পারেনি, গাভির মাধ্যমে হত্যার রহস্য উন্মোচিত হবে। তাই আল্লাহর সিদ্ধান্ত বিনা বাক্যে মেনে নেওয়াই কল্যাণকর।
অতিরিক্ত প্রশ্ন না করে নবী-রাসুলদের নির্বিবাদে আনুগত্য করার মধ্যেই কল্যাণ নিহিত। কারণ তাঁরা অহির আলোকেই কথা বলেন। তাঁদের সঙ্গে অযথা বিতর্কে লিপ্ত হওয়া বা অতিরিক্ত প্রশ্ন করা অনুচিত। যেমন এই ঘটনায় বনি ইসরাইল যত বেশি প্রশ্ন করেছে, তত বেশি তাদের জন্য গাভি খুঁজে পাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে।
এই ঘটনাকে স্মরণীয় করে রাখতে আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে তা উল্লেখ করেছেন এবং কোরআনের সবচেয়ে বড় সুরাটির নাম রেখেছেন ‘বাকারা’ তথা ‘গাভি’। এই সুরার অনেক ফজিলতের কথা হাদিসে এসেছে।
৭ ঘন্টা ২৪ মিনিট আগে
৫ দিন ৫ ঘন্টা ৪ মিনিট আগে
১০ দিন ২২ ঘন্টা ৪৯ মিনিট আগে
১১ দিন ১৫ ঘন্টা ৪৯ মিনিট আগে
১১ দিন ১৭ ঘন্টা ৫০ মিনিট আগে
১২ দিন ৩ ঘন্টা ২৫ মিনিট আগে
১৩ দিন ১ ঘন্টা ১২ মিনিট আগে
১৩ দিন ১৫ ঘন্টা ৪৫ মিনিট আগে