ব্যাংক থেকে নগদ টাকা তোলার বেঁধে দেওয়া সীমা প্রত্যাহার মধুপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ও বন্যায় নিহতদের স্মরণে বিএনপির দোয়া মাহফিল অভয়নগর প্রাইভেট স্কুল এসোসিয়েশনের কমিটি গঠন গাজী লাশের রাজনীতি করেছে, আমরা উন্নয়নের রাজনীতি করবো- দিপু ভুঁইয়া খাগড়াছড়িতে বিএনপির সম্প্রীতির সমাবেশ জনসমুদ্রে পরিণত শান্তিগঞ্জে উচ্চ বিদ্যালয়ের অনিয়ম দূর্নীতির বিরুদ্ধে ফেইসবুকে পোস্ট করায় শিক্ষকের উপর হামলার ঘটনায় থানায় অভিযোগ ডোমারে সঙ্গীত ও নৃত্য বিষয়ক প্রশিক্ষণ কর্মশালার সমাপনী পীরগাছায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের নামে মিথ্যা মামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশ হরিণাকুন্ডুতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ১৪ লাখ টাকার গাছ বিক্রি শ্রীপুরে তাফসিরুল কোরআন ও দোয়া মাহফিল নন্দীগ্রামে জামায়াতে ইসলামীর রুকন সম্মেলন অনুষ্ঠিত মৌলভীবাজার জেলার পুলিশ সুপারের দায়িত্ব গ্রহণ করলেন এম কে এইচ জাহাঙ্গীর হোসেন বঙ্গোপসাগরে লঘুচাপ, কক্সবাজার সহ সমুদ্রবন্দরে ৩ নম্বর সতর্ক সংকেত চৌদ্দগ্রামে বরৈয়া মানব কল্যান সংস্থার উদ্যোগে উপহার সামগ্রী বিতরণ সাতক্ষীরার পাটকেলঘাটায় হাবিবুল ইসলাম হাবিবের সংবর্ধনা ও জনসভা অনুষ্টিত লোহাগাড়া বটতলীতে তীব্র যানজট। আমরা গণভবনকে জনগণের জন্য উন্মুক্ত করছি: উপদেষ্টা আদিলুর ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আহতদের খোঁজখবর নিলেন প্রধান উপদেষ্টা "দেশ ও জনকল্যাণে স্বাধীন, বস্তুনিষ্ঠু সাংবাদিকতার বিকল্প নেই" - রামু প্রেস ক্লাবের ৩৬ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আলোচনা সভায় ইউএনও রাশেদুল ইসলাম সীমান্তে পিঠ না দেখিয়ে অর্পিত দায়িত্ব পালন করুন: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

বাংলাদেশ কী পেল কী পেতে পারত

ফাইল ছবি


◾ রাশেদ মেহেদী


প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এবারের ভারত সফরে বাংলাদেশের অর্জন উল্লেখযোগ্য। বিশেষজ্ঞদের মত হচ্ছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে যে সাতটি সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে, সেখানে একেবারে নতুন একটি বিষয় আছে। সেটি হচ্ছে কুশিয়ারা নদীর ১৩৫ কিউসেক পানিবণ্টন নিয়ে সমঝোতা স্মারক।


এর মধ্য দিয়ে প্রমাণ হয়েছে, তিস্তাসহ পর্যায়ক্রমে আরও ৫৪টি অভিন্ন নদীর পানিবণ্টন নিয়েই ভারতের সঙ্গে সমঝোতা হবে। এ ছাড়া এবারের শীর্ষ বৈঠক শেষে দুই দেশের যৌথ বিবৃতিতে বাংলাদেশকে বিনা শুল্কে ট্রানজিট দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে ভারত। এটি অবশ্যই বড় একটি অর্জন। বিশেষ করে এ সফরের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ-ভারত অটুট বন্ধুত্বের সম্পর্কটি আবারও সবার সামনে প্রমাণিত হয়েছে। 


বাংলাদেশ-ভারতের সম্পর্ক প্রতিবেশী দুটি দেশের মধ্যে সম্প্রীতি ও বন্ধুত্বের ক্ষেত্রে সব সময়ই একটি আদর্শ উদাহরণ। দুই দেশের মধ্যে নিয়মিত বিরতিতেই শীর্ষ পর্যায়ের সফর বিনিময় হয়ে থাকে। এসব শীর্ষ বৈঠকে অমীমাংসিত সমস্যাগুলোর সমাধান গতি পায়। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি প্রথমবার নির্বাচিত হওয়ার পর ঢাকা সফরে এলে দুই দেশের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে থাকা সীমান্ত সমস্যার সমাধান হয়। সীমান্তে সীমানা নির্ধারণ নিয়ে জটিলতার কারণে ভারত ও বাংলাদেশের অংশে থাকা ছিটমহলগুলোর বাসিন্দারা বছরের পর বছর ধরে কার্যত সব ধরনের নাগরিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত ছিল। ছিটমহল বিনিময়ের মধ্য দিয়ে এর বাসিন্দারা নতুন জীবন পেয়েছে। এভাবে দুই প্রতিবেশীর মধ্যে সীমান্তবিরোধ নিষ্পত্তির বিষয়টি বিশ্বের সামনেই একটি অভাবনীয় দৃষ্টান্ত। বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী বাংলাদেশ ও ভারত একসঙ্গে উদযাপন করেছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি অনুষ্ঠানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং বিজয়ের ৫০ বছর পূর্তির আয়োজনে ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ এসেছেন। একই বছরে বাংলাদেশে ভারতের রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর সফরের বিষয়টিও ঐতিহাসিক মাইলফলক হয়ে থাকবে। 


এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৯ সালের অক্টোবর মাসে ভারত সফর করেন। সে সময় ভারতীয় ঋণ সহায়তায় একাধিক বড় প্রকল্প বাস্তবায়নের বিষয়ে সমঝোতা স্মারক হয়েছিল, যা ছিল দুই দেশের সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় পৌঁছে যাওয়ার অনন্য দৃষ্টান্ত। তবে গতবারের তুলনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এবারের সফরের তাৎপর্য ছিল আরও বেশি। কারণ এবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশে ভারতীয় বিনিয়োগ আকর্ষণের লক্ষ্য নিয়ে গিয়েছিলেন। যে কারণে সফরের প্রথম দিনেই ভারতের শীর্ষ শিল্প উদ্যোক্তা আদানির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন প্রধানমন্ত্রী। এরপর সফরের তৃতীয় দিনে ভারতের শীর্ষ ব্যবসায়ী ফোরামের সঙ্গে একটি আলোচনা অনুষ্ঠানে অংশ নেন। সেখানে তিনি ভারতীয় ব্যবসায়ীদের প্রতি বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানান। গত কয়েক বছরের অর্থনৈতিক অগ্রগতির বাস্তবতায় বাংলাদেশ এখন বিনিয়োগের জন্য অত্যন্ত আকর্ষণীয় স্থান--এ অবস্থা বিবেচনায় রেখে প্রতিবেশী ভারতের শিল্প উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীদের বিনিয়োগ বাড়লে সেটা অবশ্যই বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ককে অন্য এক উচ্চতায় নিয়ে যাবে। সফরের দ্বিতীয় দিনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদির মধ্যে অনুষ্ঠিত বৈঠকে বিশেষভাবে গুরুত্ব পায় জলবায়ু পরিবর্তন, সাইবার নিরাপত্তা, তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তি, মহাকাশপ্রযুক্তি এবং সমুদ্র অর্থনীতি। এর বাইরে নিরাপত্তা, প্রতিরক্ষা, সীমান্ত ব্যবস্থাপনা, বাণিজ্য, সংযুক্তি, পানিসম্পদ, সাংস্কৃতিক ও উন্নয়ন সহযোগিতাসহ দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতার সব বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। একই সঙ্গে তারা বিদ্যমান বৈশ্বিক পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে এ অঞ্চলের সমৃদ্ধি ও উন্নয়নের স্বার্থে বন্ধুত্ব ও অংশীদারত্বভিত্তিক সহযোগিতার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং নরেন্দ্র মোদি দ্বিপক্ষীয় ও উপ-আঞ্চলিক রেল, সড়কসহ কানেক্টিভিটির ক্ষেত্রে আরও নতুন উদ্যোগ বাস্তবায়নের ওপরও গুরুত্বারোপ করেন।


এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ভারতের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক যত বেশি উন্নত হবে, সেটা বাংলাদেশের জন্য তত বেশি লাভজনক হবে। ফলে ভারতের ব্যবসায়ীদের বিনিয়োগের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আহ্বান অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এবারের সফরে বড় একটি অর্জন হচ্ছে ভারতের ভূখণ্ড দিয়ে বাংলাদেশি পণ্য পরিবহনে বিনা শুল্কে ট্রানজিট। এর আগে বিষয়টা অস্পষ্ট ছিল। কিন্তু এবার ভারত স্পষ্ট করে বলেছে, বাংলাদেশ ভারতের ভেতর দিয়ে তৃতীয় যেকোনো দেশে বাণিজ্য এবং পণ্য পরিবহনে বিনা শুল্কে ট্রানজিট পাবে। এটি নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের বাণিজ্য ও অর্থনীতির জন্য বড় সুখবর। 


ড. দেলোয়ার আরও বলেন, অনেকে এবারের দুই প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকে সেপা (কমপ্রিহেনসিভ ইকোনমিক কো-অপারেশন অ্যান্ড পার্টনারশিপ) চুক্তি নিয়ে আলোচনা না হওয়ার বিষয়টি তুলতে পারেন। তবে বাস্তবতা হচ্ছে, এখনই তাড়াহুড়ো করে সেপা চুক্তি করা ঠিক নয়। আরও ভেবেচিন্তে সবদিক বিবেচনা করেই এ ধরনের বাণিজ্যিক অংশীদারত্ব চুক্তি হওয়া দরকার। বরং এবারের শীর্ষ বৈঠকে জ্বালানি সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা এবং সমঝোতা হয়েছে, সেটা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ বাংলাদেশের জন্য। কুশিয়ারা নদীর পানিবণ্টন নিয়ে যে সমঝোতা হয়েছে, সেটাও একেবারে নতুন। এই সমঝোতা আশা জাগাচ্ছে যে ভবিষ্যতে তিস্তাসহ অন্যান্য নদীর পানিবণ্টন নিয়েও অদূর ভবিষ্যতে সমঝোতা হবে।


এই আন্তর্জাতিক বিশ্লেষক আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রীর এবারের সফরের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দিক হচ্ছে অত্যন্ত হৃদ্যতা ও সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে দুই প্রধামন্ত্রীর বৈঠক। এই হৃদ্যতাপূর্ণ আলোচনায় দুই দেশের সম্পর্কের বড় সৌন্দর্য এবং এই সম্পর্ক অবশ্যই সামনের দিনগুলোতে নতুন উচ্চতায় পৌঁছে যাবে। 


এবার দুই প্রধানমন্ত্রীর শীর্ষ বৈঠকের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল--বিদ্যমান বিশ্ববাস্তবতায় আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা। কোভিড-১৯ মহামারির অভিঘাত শেষ না হতেই ইউক্রেন সংকট বিশ্বকে বড় চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে। এর ফলে আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও সহযোগিতার বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যথার্থই বলেছেন, বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে সহযোগিতার সম্পর্ক শুধু দুই দেশের জনগণের জন্যই কল্যাণ বয়ে আনবে না, বরং এ অঞ্চলের আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা এবং অর্থনৈতিক অগ্রগতির জন্যও তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও বলেছেন, আঞ্চলিক নিরাপত্তার জন্য ভারত ও বাংলাদেশ যৌথ সহযোগিতার ভিত্তিতে কাজ করে যাচ্ছে এবং যাবে। তিনি আশা করেছেন, আগামী ২৫ বছরের মধ্যে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক অনন্য উচ্চতায় পৌঁছে যাবে। 


বাংলাদেশ ও ভারতের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের মধ্যে বিব্রতকর বিষয় হচ্ছে সীমান্ত হত্যা। এবারের শীর্ষ বৈঠকের পর বাংলাদেশ-ভারত যৌথ বিবৃতিতে সীমান্ত হত্যা শূন্যে নামিয়ে আনার ব্যাপারে উভয়পক্ষ সম্মত হওয়ার কথা বলা হয়েছে। এর আগের শীর্ষ বৈঠকগুলোতেও সীমান্ত হত্যা শূন্যে নামিয়ে আনার কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু বাস্তবে সীমান্ত হত্যা বন্ধ হয়নি। এমনকি শীর্ষ বৈঠকের এক দিন পরই গতকাল বৃহস্পতিবার দিনাজপুরের দাইনুর সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) গুলিতে একজন বাংলাদেশি নাগরিক নিহত হয়েছেন। এর ফলে সীমান্ত হত্যা নিয়ে বিব্রতকর অবস্থাটির নিরসন হওয়ার আশা কিংবা সীমান্ত হত্যা শূন্যে নেমে আসার প্রত্যাশা আবারও ম্লান হয়ে গেল। তারপরও বাংলাদেশ-ভারত দৃঢ় বন্ধুত্বের সম্পর্কের মধ্য দিয়েই সীমান্ত হত্যা বন্ধ হবে, সেই আস্থা এখনও আছে দুই দেশের মানুষের। 


এদিকে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীকে কেন ডাকা হয়নি, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে কিছু বলতে চাই না। হাসিনার সঙ্গে আমার সম্পর্ক খুব ভালো। এই প্রথম দেখলাম বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী এলেন কিন্তু বাংলা বাদ।’ মমতা বলেন, ‘এত রাগটা কিসের? এত গুস্সা কিঁউ? বড়া বড়া বাবু লোগো কো ইতনা গুস্সা কিউ হ্যায়!’

আরও খবর