◾ স্বাস্থ্য কথা ডেস্ক
কয়েক দশক ধরে আবহাওয়ার নানামাত্রিক পরিবর্তনে বিভিন্ন রোগব্যাধি দেখা দিচ্ছে। আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ, পশুপাখি সব। বেশি গরমে যেমন ভাইরাস-ব্যাকটেরিয়ার বংশবৃদ্ধিতে সংক্রামক রোগ বাড়ছে, তেমনি হঠাৎ বৃষ্টিতে তাপমাত্রা পড়ে যাওয়ায় ভারসাম্য রক্ষা করতে পারছে না প্রাণিদেহ। তাপমাত্রার এই ওঠানামায় বাড়ছে স্বাস্থ্য জটিলতা।
আইইডিসিআরের উপদেষ্টা ডা. এম মুশতাক হোসেন প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘তাপমাত্রা বাড়লে এবং বৃষ্টি কম হলে স্বাভাবিকভাবেই কিছু রোগের প্রকোপ বেড়ে যায়। দুই-তিন দিন পরপর বৃষ্টি হলে ডেঙ্গুর প্রকোপও বাড়ে।’
গত ৫ সেপ্টেম্বর সকাল থেকে পরদিন সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে পাঁচজন মারা যান। ৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চলতি বছর এ রোগে মোট মারা গেছেন ৩১ জন।
তাপমাত্রার ঘনঘন ওঠানামা ডেঙ্গুর জন্য কতটা দায়ী তা সুনির্দিষ্ট না হলেও, ২০১৯ সালে ডেঙ্গুর প্রকোপ আর তার পরের বছর করোনাভাইরাস মহামারির জন্য অনেক বিজ্ঞানী বৈশ্বিক তাপমাত্রাকে দায়ী করেন। ২০১৯ সালে ডেঙ্গুর প্রকোপ ভয়াবহ আকারে ছড়িয়ে পড়ে, মারা যায় দেড় শতাধিক মানুষ। তা ছাড়া আক্রান্ত হয় লক্ষাধিক। রোগটি সে সময় মহামারির দিকে না গেলেও সারা দেশে বিশেষ করে শহরগুলোয় যথেষ্ট আতঙ্ক সৃষ্টি করে।
জুলাই ও আগস্ট বর্ষাকাল হলেও এ বছর গরম পড়ে অত্যধিক। গরম বেশি হওয়ায় সারা দেশে টাইফয়েড, সর্দি-কাশি, চর্মরোগ, বদহজমসহ কয়েকটি রোগের সংক্রমণ বেশি হয়। সেপ্টেম্বর তাপমাত্রা কমার সঙ্গে সঙ্গে এসব রোগের প্রকোপ কমে আসে। আবার থেমে থেমে বৃষ্টি হওয়ার পর দুই-তিন দিন রোদ থাকলে এডিস মশা বংশবৃদ্ধি করতে পারে। ফলে ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ বেড়ে যায়।
এদিকে গলা ফোলা এবং হিটস্ট্রোকসহ গবাদিপশুর রোগও বেড়েছে দেশে। পশু হাসপাতালগুলোয় রোগাক্রান্ত পশুপাখির সংখ্যাও বেড়েছে সম্প্রতি। গাজীপুর জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. এসএম উকিল উদ্দিন বলেন, ‘জুলাই-আগস্টে পশুপাখির রোগ বেড়েছে। বাণিজ্যিক খামারেও হিটস্ট্রোকসহ অন্যান্য রোগের সংক্রমণ বেশি হয়েছে। তবে সেপ্টেম্বরে বৃষ্টি হওয়ায় আশা করছি তা কমে যাবে।’
◾শিশু ও গর্ভবতী নারীরা বেশি ঝুঁকিতে
হার্ভার্ডের বিশেষজ্ঞ বার্নস্টাইন এ বছর জানুয়ারিতে একটি গবেষণাপত্র প্রকাশ করেন। এর প্রধান লেখক ফ্রেডেরিকা পেরেরা বলেন, হঠাৎ হঠাৎ তাপমাত্রা বেড়ে বা কমে গেলে বড়রা কিছুটা সমস্যায় পড়েন। কিন্তু বাচ্চাদের ভুগতে হয়। শিশুদের তখন পর্যাপ্ত তরল গ্রহণ করা দরকার। তখন তাদের বড়দের ওপর নির্ভর করতে হয়। সমস্যা হচ্ছে শিশুর ঠিক কী দরকার তা বুঝতে পারা সহজসাধ্য নয়।
বার্নস্টাইনের গবেষণায় বলা হয়েছে, ‘গর্ভবতীরা তীব্র তাপে থাকলে তাদের সন্তানদের ওপর তার প্রভাব পড়ে। সেই শিশুরা শিক্ষা বা পরীক্ষায় ভালো করতে পারে না এমন দেখা গেছে গবেষণায়।’
ইউনিসেফ বাংলাদেশের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গরম ও অন্যান্য জলবায়ু সংক্রান্ত সমস্যার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়ার সক্ষমতা বড়দের তুলনায় শিশুদের কম। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম হওয়ায় তাদের ডায়রিয়া ও অন্যান্য প্রাণঘাতী রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে। পুষ্টিহীনতায় ভোগারও ঝুঁকি থাকে এসব শিশুর। দুর্যোগে স্কুল, সামাজিক প্রতিষ্ঠান ও জীবিকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
আবহাওয়ার ঘনঘন পরিবর্তনে রোগজীবাণুর দাপট বাড়ে। এ পরিবর্তন স্বাস্থ্যের ওপর কেমন প্রভাব ফেলে তা পর্যবেক্ষণ করেছেন আমেরিকার অরল্যান্ডো হেলথ ডিপার্টমেন্টে কর্মরত ডা. বেঞ্জামিন ক্যাপলান।
বেঞ্জামিন বলেন, আবহাওয়া ও জলবায়ু পরিবর্তিত হলে তাপমাত্রারও পরিবর্তন হয়। এতে খুব সহজেই বিভিন্ন ভাইরাসসহ রোগজীবাণুতে আক্রান্ত হয় প্রাণিদেহ। বেশি তাপে অতিরিক্ত ঘামে নানা রকম জীবাণুর সংক্রমণ হয়। রোগ বাসা বাঁধে। অ্যালার্জির সমস্যা বাড়ে। চোখ জ্বালাপোড়া করে। চোখে ভাইরাসের কারণে রোগ সংক্রমণ হয়। ফসল তোলার মৌসুমে জ্বর বাড়ে। ফসলের অ্যালারজেনের সংস্পর্শে অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়ায় এমন হয়ে থাকে। অতিরিক্ত গরমে পেটেও সমস্যা দেখা দেয়। একইভাবে তাপমাত্র বেশি কমে গেলেও অ্যালার্জি দেখা দেয়। ঋতুর পরিবর্তনে ভাইরাসজাতীয় ছোঁয়াচে রোগের সংক্রমণের ইতিহাস পুরনো। আবহাওয়ার ঘনঘন পরিবর্তনে ভাইরাসজাতীয় ছোঁয়াচে রোগে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। ঠান্ডা বা কোল্ড অ্যালার্জির জন্য দায়ী রাইনোভাইরাস, যা একটু ঠান্ডা আবহাওয়া পেলেই দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। অবস্থা এমন দাঁড়ায় যে, গরমের রোগজীবাণু দূর হওয়ার আগেই ঠান্ডার রোগজীবাণু আক্রমণ করে।
১০ দিন ৬ ঘন্টা ৫৯ মিনিট আগে
১৩ দিন ২০ ঘন্টা ১১ মিনিট আগে
১৬ দিন ১৮ ঘন্টা ২৯ মিনিট আগে
১৯ দিন ১৯ ঘন্টা ৩৯ মিনিট আগে
৩২ দিন ৮ ঘন্টা ৯ মিনিট আগে
৪১ দিন ২২ ঘন্টা ৪৩ মিনিট আগে
৪৬ দিন ১০ ঘন্টা ১৯ মিনিট আগে
৫৮ দিন ৪ ঘন্টা ১ মিনিট আগে