একা চলতে শিখো
নাজমুন নাহার
পারিবারিক ছত্রছায়াতে সাধারণত মানুষের জন্ম হয়,বড় হয় আবার সেই পরিমণ্ডলেই তার চির বিদায়। তবে কিছু জন্ম কিছু মৃত্যু পরিবারের গণ্ডির বাহিরেও হয় যা অনাকাঙ্খিত অনভিপ্রেত।
পরিবারের বাহিরে জন্ম নেওয়া এরা প্রকৃতির কোলের সন্তান প্রকৃতিই এদের রক্ষণাবেক্ষণের সরাসরি দায়িত্ব নেয়। এদের একা চলতে শিখতে হয় না এরা জন্ম থেকেই একা চলা শিখে যায়।
যত যন্ত্রণা পরিবারের আদর সোহাগে বেড়ে ওঠা মানুষগুলোর,, তার মধ্যে মেয়েদের যন্ত্রনার কথা বলার অপেক্ষা রাখে না।
যে পরিবারের যেই মেয়েটা শান্ত প্রকৃতির তার কদর পরিবারের সবার কাছে বেশি, কিন্তু যে মেয়েটা চঞ্চল রাগী সরাসরি কথা বলে
তার তেমন আদর থাকে না। যদিও বাহিরের জগতে এদের নিয়ে তেমন চিন্তা করতে হয় না,এরা যা বলে যা করে আগাম বার্তা এদের চালচলনেই পাওয়া যায়।
বাহিরের প্রতিকূল পরিস্থিতি কাটিয়ে ওঠার ক্ষমতা এরা রাখে। মানুষ এদের মুখরা বা ড্যাম কেয়ার স্বভাবের মেয়ে বলে ঠিক,
আসলে এরা মনের দিক থেকে ভীতু সহজ সরল এবং প্রচণ্ড আবেগী।
মানুষের বিপদ আপদে এরাই সর্বপ্রথম নিঃস্বার্থভাবে এগিয়ে যায় এরা মনে ভীতু হলেও মুখে প্রকাশ করে না এটাই এদের প্লাস পয়েন্ট নিজেকে বাঁচানোর ।
কিন্তু পরিবারের মুখচোরা মেয়েটিকে নিয়ে যত যন্ত্রণা, এরা নিজেকে সবার কাছে ভালো রাখতে যেয়ে দিনশেষে বিপদে পড়ে।
দরকার কী নিজে কে এত ভালো রাখার? যে ভালোতে নিজের চলার পথটা অন্ধকার থেকে যায়, একটা মানুষ সব দিক দিয়ে পারফেক্ট নয়।
সবার মন জোগানো একজনের দ্বারা কখনো সম্ভব নয়, সবার আগে নিজের মনটাকে সুস্থ স্বাভাবিক রাখতে হবে।
এরা না পারে চলতে, না পারে বলতে না পারে নিজকে রক্ষা করতে। শেষে দেখা যায় এরা এমন সব কাণ্ড করে যা পরিবারের মান সম্মান নিয়ে টানাপোড়ন শুরু হয়ে যায়।
কোথায় যেন পড়েছি পৃথিবীতে সবচাইতে ভয়ংকর কাজগুলো ঠাণ্ডা স্বভাবের মানুষ দ্বারাই সংঘটিত হয়।
কথাটা পুরোপুরি সঠিক না হলেও একেবারেই মিথ্যে ও নয়।
কারণ এরা চুপচাপ হওয়াতে এদের মন-মানসিকতা কোন দিকে বা কোন খাতে প্রবাহিত হয় বুঝা দুষ্কর।
কারো সাথে মনের কথা শেয়ার না করাতে
এরা ভালো করলো কী মন্দ করলো নিজেরাই অজান্তে থেকে যায়।এক্ষেত্রে ছেলে-মেয়ে উভয় হতে পারে, এরা সাধারণত অন্যের ওপর নির্ভরশীল হয়,
হতাশায় ভোগে, নিজের উপর নিজের আস্থা থাকে না,পরিবারের আদরের হলেও এরাই একসময় পরিবারের দুঃখের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
জীবনের ক্ষেত্রে সবাই এক সময় একা হয়ে যায় তখনকার অবস্থা বিবেচনা করে শুরু থেকে নিজের উপর নির্ভরশীল হতে শেখা,
নিজেকে ভালবাসতে শেখা, নিজেকে সঠিক সুন্দরভাবে গড়ে তোলাই তাকে দিন শেষে একা পথ চলতে শেখাবে,যে কোন সমস্যায় উত্তরণে তেমন কোনো অসুবিধা হবে না বা চলার পথে নিজেই কখনো নিজের অন্তরায় হবে না।
লেখক - কবি, প্রাবন্ধিক ও সিনিয়র শিক্ষক।