টুকু আর ফিরে আসেনি
রুমি রহমান
টুকুকে এভাবে পরে থাকতে দেখব। কখনো ভাবি নি। কারণ টাকা পয়সা ক্ষমতা সব কিছু ছিল তার। এদেশে উঁচু তালার মানুষের সাথে তার উঠা বসা ছিল।সময় তাকে অনেক কিছুই দিয়েছে।কিন্তু আজ কোনো কিছু তাকে ধরে রাখতে পারে নি। এটাই বাস্তব যে,সময় আপনাকে অনেক কিছু দিবে আবার প্রয়োজনে নিয়ে নিবে। অসত্য পথে আয় উপার্জন খুব বেশি দিন থাকে না।
সকাল আটায় ট্রেনে বাড়ির যাওয়া
জন্য তড়িঘড়ি করে স্টেশনে
আসলাম।স্টেশনে ভিতরে ঢুকে,রেস্ট রুমে বসে আছি। কারণ ট্রেন লেট,কি আর করার
তাই বসে আছি।এদেশে কোনো কিছু সময় মত হয় না।কি আর করার?যখন আপনি দেরি করে আসবেন।দেখবেন ট্রেন চলে গেছে।তখন দায়ভার কিন্তু আপনার। আবার ট্রেন দেরি করে আসলে সেই দায়ভারটাও আপনাকে নিতে হবে।কয়েকদিন আগের কথা ট্রেনের টিকেট নিয়ে
লঙ্কাকান্ড হল।এসব ভাবতে ভাবতে হঠাৎ একটা শব্দ শুনতে পেলাম।বাসের চাকা পামচার হয়েছে এমন শব্দ।কিন্তু সাথে সাথে আবার ভাবলাম। স্টেশনে ভিতরে তো শব্দ আসার কথা না। হবে হয় তো কোনো শব্দ।স্বাভাবিক ভাবে নিলাম। মিনিট দশেক পর ঘোষণা করলে যে, ট্রেন এক নাম্বার লাইনে একটু পরে দাঁড়াবে,যাত্রীদের নিজ আসন গ্রহনের জন্য বলা হচ্ছে।রেস্ট রুম থেকে বের হয়ে এক নাম্বার লাইনে দিকে যাচ্ছি।যেতে যেতে দেখি স্টেশনে উত্তর দিকে, যেখানে পুরোনো ট্রেনের
বগি পরে থাকে।অনেক গুলো মানুষ ভীর করছে সেখানে।চারপাশে পুলিশ দাঁড়িয়ে।কৌতূহল বসে এগিয়ে গেলাম।এটা বাঙ্গালি চিরচেনা রুপ।আমিও বাঙ্গালি সহজে কি আর অভ্যাস যায়।ভীরে পাশে এসে দাঁড়ালাম।দেখি একটা নিথর দেহ পরে আছে।গামছা দিয়ে শরীল ঢাকা।মুখ দেখা যাচ্ছে না। হঠাৎ হালকা বাতাসে মুখের গামছা সরে গেল।আমি অবাক হলাম। এতো আলেয়া বেগমের ছেলে টুকু।আমি ওকে চিনি। টুকুকে তো এভাবে দেখবো
ভাবতে পারি নি।কারণ টুকু বর্তমান সময়ে অনেক বড় নাম তার।এই সমাজে অনেক নেতা মন্ত্রীর সাথে টুকুর
ভালো সম্পর্ক।চাইলে টুকুকে পুলিশ
ক্রাশফায়ার করার কথা না।কতটা দূর্ধর্ষ ছিল টুকু।কয়েক বার দেখা করার চেষ্টা করে জেনেছি।কিন্তু লাভ হয়নি।যে জন্য দেখা করেছিলাম। তার অতীত জীবন জানার জন্য। টুকুর নিথর পরে থাকা দেখে আমার খুব আগ্রহ হল টুকুর জীবনে রহস্য জানতে।কারণ টুকু বেঁচে থাকতে অনেকেই মুখ খুলতে সাহস পেত না।দেখি এবার কি হয়।
সময় সাথে বাস্তবতা মানিয়ে নেওয়া নামেই জীবন।টুকু আজ অনেক বড়। শুনেছি মাঝে মাঝে টুকু নাকি ফিরে আসে রেল গাড়িতে।তবে সেটা স্টেশনের কুলি ভাইদের কাছে শুনেছি কিন্তু সত্যতা পাইনি।অভিমান টা বুকে জমতে জমতে হিমালয়ের মত হয়েছে।টুকু আমাদের সমাজে প্রযুক্তি ব্যববহার ফসল। কেউ টুকু মত হতে চায় না কিন্তু টুকু আামদের সমাজে বেদনাদায়ক যন্ত্রনার উপহার। এক সময় অর্থের অভাবে টুকুরা সমাজে তৈরি হত। কিন্তু এখন প্রযুক্তি অপব্যবহারে কারণে আজকের টুকুরা সমাজে ঘুরে বেড়ায়। তার মানে এই নয় যে অর্থ কারণ নয়।অর্থ আমাদের সমাজে অপরাধে অন্যতম কারণ।দারিদ্র্য আমাদের সমাজে প্রধান সমস্যা হলেও,সময়ে সাথে সাথে প্রযুক্তি দিয়েছে এর নিত্যতা।কারণ আমরা এখন মোটামুটি বিলাসিতা জীবন যাপন করতে চাই। আজ অর্থের কথা না বলি। যে কারণে আজ খুঁজতে বের হলাম।টুকু কে?টুকু আর ফিরেনি কেনো?আজকে এই টুকুকে আমরা সবাই জানি। বিশেষ করে পত্রিকা যারা নিয়মত পড়ে কিংবা টেলিভিশন দেখে। তারা কমবেশি সবাই চেনে টুকুকে।ফেসবুকে তো টুকু ভাইয়াল হয়েছে গত কয়েক বছর।এই ফেসবুকেই, আজকের মানবতাহীন টুকুকে জন্ম দিয়েছে।টুকুকে আমি ছোট থেকে জানতাম। তখন অবশ্য দেখিনি ছোট বেলার টুকু কেমন ছিল।তবে ওর মায়ে কাছে শুনেছি।একদিন টুকুর মা আমার গলায় ক্যামেরা দেখ মনে করে আমি সাংবাদিক। তাই আমাকে বলে,আমার একটা উপকার করবেন। আপনি তো সংবাদিক অনেক সাংবাদিক ভাইকে বলতে চেয়েছি কিন্তু কেউ শুনতে চায় না । আমি বললাম, আমি সাংবাদিক না। না বললাম কারণ আমি নুতুন এই পেশায় তাই অস্বীকার করলাম।তাছাড়া স্টেশন নিয়ে নানা রকমন কথা শুনেছি তাই ভয় পেলাম।অনেক অনুরোধ করলো বাধ্য হয়ে শুনতে রাজি হলাম।আলেয়া বেগম আমার হাতে একটা ছোট বাচ্চার ছবি দিয়ে বলল।এটা আমার ছেলে ওর নাম টুকু। এই ট্রেশন থেকে রাগ করে চলে গেছে।আমি বললাম-কেনো রাগ করে চলে গেলো এত ছোট বাচ্চা।খুব বেশি বয়স না তো সাত আট হবে।সে অনেক কথা জীবনে উচ্চ আঙ্ক্ষাকা আর এই ফেসবুকের মোহ আমাকে শেষ করেছে। আর বেশি কিছু বলতে চাইছে না।শুধু বলে সতেরো হল। আমার টুকুকে একবার দেখতে পারতাম যদি মরে শান্তি পেতাম। দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে বলছে। কিন্তু আমি চেনবো কি করে আপনার ছেলেকে আর সে আমার কথা শুনবেই বা কেনো।তার মুখের দিকে তাকিয়ে দেখলাম,সন্তানের কাছে ফিরে যাওয়া যে ইচ্ছা। তা সন্তান হারিয়ে যাওয়া যন্ত্রণা কেবল, মা জানে শুধু।
আমি টুকুর মাকে সান্তনা দিলাম। এই বলে যে, আমি চেষ্টা করব।খুঁজে বের করতে। টুকুর মা বলে,খুঁজতে হবে না।আপনার হাতে কাগজে ওর ছবি।এটাই আমার ছেলে।বড় হয়েছে তো কি হয়েছে,আমি তো চেনব।এই হাতে কোলেপিঠে
বড় করেছি। কাগজের দিকে তাকাতেই চোখ কপালে উঠে। আর বললাম, এই টুকু,এটা টুকুর ছবি।দূর্ধর্ষ আপনার ছেলে তো। এ তো অনেক বড় লোক, বড় নেতাদের সাথে ওঠা বসা।কয়েকটা খুনের আসামি।টুকুর মা বলে আমার জন্য এমন হয়েছে টুকু।ওর কাছে ক্ষমা চাওয়া জন্য আজও বসে থাকে
এই স্টেশনে।কিন্তু আসেনি।আমি বললাম আপনি ছেলের বাড়ি যান। টুকুর মা বলে, সেই সাহস আমার নেই।
আমার জানার আগ্রহ দ্বিগুন বেরে যায়। কেনো টুকুর মা এমন করে বলে।আর কিছু না বলতে চায় না। এতকুটু বলে চলে যায়। আরো একবার টুকুর
মায়ে সাথে দেখা হয়ে ছিল। তারপর আর টুকুর মায়ের সাথে দেখা হয় নি। তবে পাশে একটা বস্তি থাকে। আমার মনে রহস্য কাজ করছে। আমার কেনো জানি মনে হল টুকুর মা কি এমন
করেছে, যে সন্তানের কাছে যেতে
পারে না।রহস্য খোঁজার চেষ্টা করেছি কয়েক বার কিন্তু খুব বেশি দুর যেতে পারিনি। রহস্য মা আর ছেলের মাঝে বন্দি হয়ে আছে। টুকুর সাথে বেশ কয়েক বার দেখা করি।প্রথমে দিকে তো আমার সাথে দেখা করতে
চাইতো না।পরে কেনো জানি, আমার সাথে দেখা করে এবং অনেক কথাই বলে কিন্তু আমি যে আশা যেতেতাম।তা পুরুন হয় না।।কারণ টুকুকে অনেক বার তার ছোট বেলার ছবি দেখে
বলেছিলাম,এটা তুমি কিন্তু টুকু
কোনো দিনও শিকার করে নি।তবে টুকু যখন ছবির দিকে তাকায় কেনো জানি নিবর হয়ে যায়। আর শান্ত ভাবে বলে আমি না। তখন অবশ্য আজকের এই দুর্ধর্ষ টুকু ছিল না।যে টুকু ধীরে ধীরে দুর্ধর্ষ হয়েছে।যে আজ স্টেশনে পরে থাকা নিথর দেহ। টুকুকে আজ কেউ ভয় করে না।টুকুর এই দুর্ধর্ষ হয়ে ওঠার গল্প আমার
জানার খুব আগ্রহ হল।কিভাবে আজকের দুর্ধর্ষ টুকু হল।তার কর্মকান্ড আমরা সবাই জানি।বর্তমান সময়ে দুর্ধর্ষ মাস্তান।
আমার জানতে ইচ্ছা হয়-টুকুর ছোট বেলার কেমন ছিল।টুকুর মা কেনো, আমাকে বলেছিল -টুকু আমার কলিজার ধন ছিল। এই স্টেশনে টুকুর মা আমাকে টুকুর ছবি দেখিয়ে বলেছিল।টুকু আমার ছেলে,ওকে একটু বলিও যেনো আমাকে ক্ষমা করে।মা কেনো তার সন্তানে কাছে অপরাধী?
অবশেষে বাড়িতে আর গেললাম না, কারণ টুকু বিষয় আমাকে জানতে হবে কারণ টুকুর মা স্টেশনে আর ছেলে থাকত রাজ প্রসাদে।
তারপর টুকুর মায়ের সাথে আর দেখা হয়নি আমার।এই স্টেশনের পাশে একটা বস্তিতে থাকত। এতটুকু জানি। তারপর বের হলাম সেই বস্তিতে যাওয়ার উদ্দেশে।কারণ আজ আর কেউ টুকুকে ভয় করবে না। এক সময় কেউ তার বিষয় কথা বলার সাহস ছিল না। কিন্তু আজ বিভিন্ন বিষয়,কেউ না কেউ কিছু জানে। টুকুর নিথর দেহ নিয়ে যাওয়া হল লাশের গাড়িতে। আর আমি চললাম টুকুর অতীত খু্ঁজতে-অনেক খুঁজা খুঁজির পর পেলাম টুকুর মায়ের বান্ধবীকে।এক সাথে কাজ করত।টুকুর মায়ের সব কিছু জানত সে। নাম আমেনা। অনেক কষ্টে তাকে রাজি করাই।আমেনা বেগম-
টুকুর বাবা মা এক সাথে গ্রামে থাকত। ভালোই নাকি চলছি।অভাব ছিল কিন্তু শান্তিও ছিল। টুকুর জন্মের সাত বছরে পর নাকি শুরু
হয় মনোমালিন্য।সুত্রপাত স্থানীয় এক বান্ধবীর কারণে। সেই বান্ধবী নাকি প্রথমে একটা ফোন ব্যবহার করতে
দিয়ে ছিল।সেই বান্ধবী ফেসবুক ব্যবহার করে কিভাবে,কাকে কিভাবে মেছেজ করতে হয়।কার সাথে কি মেছেজ করতে হয়।সব কিছু শিখায়।
এই ফেসবুকের মাধ্যমে এক প্রবাসির সাথে ব্ন্ধুত্ব হয়। সব সময় মেছেজ আদান প্রদান করত।দুজনার মাঝে সম্পর্ক গড়ে ওঠে।এক সময় দুজনের মাঝে ছবি দেয়া নেয়া হয়।প্রবাসি সেই ছেলের বাড়ি ছিল পাশের গ্রামে। টুকুর মা যে বিয়ে বিবাহিতা সেটা কিন্তু
প্রবাসিক প্রেমিক জানতেন না। কিন্তু যখন জানতে পারেন।সমস্যা সুত্র পাত শুরু তখন থেকে। প্রবাসি প্রেমিক ছবি সোচাল মিডিয়ার ছড়িয়ে দেয়। ফলে টুকুর বাবার সাথে শুরু হয় তুলকামাল কান্ড। কারণ টুকুর বাবা আসলে লেখা পড়া জানত না। সমাজের মানুষ অনেক কিছু বলত।সেটা মানতে পারতেন না।এসব নিয়ে প্রায় মারতো টুকুর মাকে। সংসারে অশান্তি মেঘ জমা হয়েছে দিনে দিনে। মোহ দুনিয়াটা টুকুর মা আর ছাড়তে পারে না। ফোন নিয়ে রাখে টুকুর বাবার।নানান ভাবে টুকুর বাবা টুকুর মাকে বাধা দেয়।কিন্তু টুকুর মা ছাড়তে পারে না ফেসবুক। অবশেষে ঝড় শু্রু, টুকুর মা রাগ করে টুকুকে নিয়ে শহরে আসে।শুরু হয় অজানা শহরের,জীবন যুদ্ধে নুতুন নাটক।টুকুর মা এখন ফেসবুক আষাক্ত নারী।শহরে এসে বান্ধবি বান্ধবির(আমেনা বেগমের)কাছে আশ্রয় পায়। আর কাজ খুঁজে।এদেখি ঘরে বসে বসে সুন্দর সুন্দর ছবি ফেসবুকে দিয়ে,,,,,
আমেনা বেগম অনেক কিছু বলতে চাইলেন না।তবে ফেসবুকে কয়কটা ছেলের সাথে নাকি তারপর সম্পর্ক হয়। তারা মাঝে মাঝে কিছু টাকা দিত নাকি। আমেনা বেগম বলেন-এভাবে বেশকিছু দিন চলে যায়।কয়েক দিন পর কাজ পেলো একটা গার্মেন্টসে।সকালে বেলা গার্মেন্টস যায় টুকু রেখে।সন্ধার ফিরে আসে।আর আমেনা বেগমে ছেলের সাথে টুকু সারাদিন খেলত।এবার বেস কিছুদিন চলে।তবে মাঝে মাঝে টুকুর মা বলত,এটা নাকি ভালো লাগত না।
ফেসবুকের রঙ্গিল দুনিয়ার স্বপ্ন জেঁকে বসেছে মনে আর এই সব ভালো লাগে না।এভাবে অস্থিরতা মাঝে চলে যায় টুকুর মায়ে জীবন।আমেনা বেগম বুঝাত,কাজ না করলে চলবে কিভাবে।তবে টুকুর মা আমেনা বেগম ভালো বান্ধবি ছিল।নাতে, এই শহরে কেউ কি এমনি এমনি থাকতে দেয়।
একদিন গার্মেন্টস এক ছেলে সাথে নাকি
ছবি দেখতে গিয়ে ছিল। এলাকার এক লোক দেখে।পরে নাকি বাড়িতে বিষয়টা বলে।এ নিয়ে অনেক কিছু হয়।তারপর থেকে আর বাড়ির সাথে যোগাযোগ করে নি।টুকুর মা কিছু অনলাইন হলুদ সংবাদিকের সাথে সম্পর্কে
জড়িয়ে যায়।ফলেই টুকুর মা অনেক সাহস দেখাত।মাঝে মাঝে গার্মেন্টসের সুপারভাইজারকেও ভয় দেখাত।এভাবে কাজের ফাঁকেও অনলাইনে তাদের সাথে যোগাযোগ
রাখত।
কাজে মনোযোগ কমে যাওয়ার কারণে কাজটাও হারায়।তখন শুরু হয়ে যায় টুকুর মায়ের অন্য জগত।আজ এ ফেসবুক ফ্রেন্ডের সাথে ঘুরতে যায় আবার কাল আরেক ফেসবুক ফ্রেন্ডের সাথে।কখন রাত ১০টায় আবার কখন ১ টায় বাড়ি ফিরত। টুকুর মা ভুলে গেছে,টুকু নামে তার একটা ছেলে আছে।আমেনা বেগমে ছেলের সাথে সারাদিন খেয়ে
না খেয়ে সময় কাটাত। কিন্তু তার মায়ের সময় হত না খোঁজ রাখার। তবে আমেনা বেগম টুকুকে খেতে দিত।আর টুকুর মা তাদের কিছু টাকা দিত। টুকুর মা হয়ে ওঠে রঙ্গিল দুনিয়ার মানুষ।যায় নাই কোন বর্তমান বা ভবিষ্যৎ।মিথ্যের মায়া স্বপনে বিভোর থাকা টুকুর মায়ের সবচেয়ে বড় বাধা হয়ে যায় টুকু।কলিজারধন টুকু। কারণ টুকু প্রায় যেতে চাইতো মায়ের সাথে কান্নাকাটি করতো কিন্তু
নিয়ে যেত না।তখন মারত খুব টুকুকে।এই মুহুতে টুকুর মা,মানে আলেয়া বেগম হয়ে থাকতে চায়। একটা সময় নাকি
খুব বেপরোয়া হয়ে যায়। টুকুকে সহ করতে পারে না। সব সময় বাবার কাছে যেতে বলত। কিন্তু এতটুকু ছেলে মাকে ছাড়া থাকে কি করে।
টুকু নাকি মাকে ছাড়া থাকতে চাইতো না।টুকু নাকি বলত তুমি সারাদিন বাহিয়ে থেকো।আমি যেতে চাইবো না।কিন্তু রাতে তো একসাথে থাকব। টুকুর কথা গুলো নাকি আজও আমেনা বেগমের
মনে পরে।(চোখে পানি এসে যায়। ছোট ছেলেটা মাকে ছাড়া কিভাবে থাকবে?দিনটা না হয় কেটে যায় খেলা করে কিন্তু
রাতটা কি করে কাটবে)অনেক শান্ত ছিল টুকু। খেলার সময় কোনো ছেলে নাকি মারলে,সে মারত না। বেশি ব্যথা পেলে কেঁদে আবার ঠিক হয়ে যেত। মায়ে কাছে সন্তান এখন বাধা হয়ে যায়।আলেয়ার জীবনে যে এখন টুকুই বাধা।
কোন সাংবাদিক নাকি বলেছে যে ম্যাগাজিনে
আলেয়ার ছবি বের করবে।দেখতে সুন্দর ছিল
টুকুর মা। তাই রঙ্গিল স্বপ্ন জেঁকে বসে মনে। সাংবাদিক ভাইকে সময় দিতে হবে।আলেয়া বেগম টুকুকে আর রাখতে চায় না। বাড়িতে পাঠিয়ে দিবে।কারণ টুকু থাকলে সে আলেয়া বেগম হতে পারবে না। তাই সে সিদ্ধান্ত নিলে যে,বাড়িতে টুকুর বাপের সাথে কথা বলে।টুকুর বাড়িতে পাঠাবে।সমস্যা হলো আলেয় বেগম কথা বলবে না।
আমেনাকে দিয়ে কথা বলে যাতে টুকু বাবা
টুকুকে নিয়ে যায়।কিন্তু টুকুর বাবা বলে আমার ছেলেকে নিয়ে গেছে
যেনো দিয়ে যায়।
কথা গুলো স্বাভাবিক নিতে পারে না টুকুর
মা।টুকুর মা আমিনার মাধ্যমে জানিয়ে কাল ট্রেনে তুলে দিবে। স্টেশন থেকে যেনো এসে নিয়ে যায়।যে কথা সেই কাজ।কারণ টুকুকে সে অন্যের ছেলে মনে করে।স্বামি বাড়ির থেকে আসার সময় আলেয়া বেগম কিছুই সাথে নিয়ে আসেনি কিন্তু টুকুকে এনেছে।আর টুকুও বাবার কথা কখন বলিনি কারণ মা সাথে ছিল বলে।মা থাকলে সন্তানের আর কি লাগে।সন্তানের কাছে মায়ে চেয়ে আপন আর কে আছে। মাঝে মাঝে বাস্তবতা বড় অসহায় হয়ে যায়। লোভে পিষ্ট মনের কাছে।
কিন্তু সকাল হতে না হতেই। টুকুকে নিয়ে রেলগাড়ি নিজেও উঠে যায়।টুকুকে রেখে আসবে বলে।এই ট্রেনের শেষ গন্তবে টুকুর বাবার বাড়ির ঠিকানা ছিল।ঘন্টা পাঁচেক লাগত। শেষ গন্তব আসার আগের স্টেশনে আলেয়া বেগম নেমে যায়।টুকু তখন ঘুমিয়ে ছিল।আলেয়া বেগম ফিরে যায় আবার ঢাকায়।টুকু বাড়িতে যেতে পারবে কারণ টুকু মোটামুটি
সবে চেনে।
টুকুর মা স্বপ্নের মায়া জালে বন্দি।আর কিছু ভাবতে চায় না। নিজেকে ছাড়া।কিন্তু সমস্যা অন্যথায় টুকু যে আবার ফিরে আসে।
টুকু নাকি বাড়িতে যায়নি সেই ট্রেন আবার
ঢাকায় চলে আসে। যে বস্তিতে থাকে
সেখানে। আমেনা বেগম দেখে অবাক হল। কিরে টুকু এখানে কি ভাবে আসলি।টুকুর মুখ শুকনো কিছুই খায়নি মনে হয়। আমেনা বেগম খেতে দেয়।রাতে এসে যখন টুকুর মা টুকুকে দেখে। আকাশ থেকে যেনো বজ্রপাত পরে আলেয়া বেগমের মাথায়। আবার রেগে দিয়ে মারে টুকুকে।আমেনা বেগম বুঝায় যে মাকে ছাড়া কি সন্তান থাকে।এভাবে নাকি কয়েক বার রেখে এসেছে কিন্তু টুকু আবার ফিরে এসেছে।একদিন ফিরে এসে দেখে টুকুকে।সেদিন টুকুর মা আরেক জনকে নিয়ে এসেছে, মানে ব্ন্ধু হবে হয় তো।টুকু যখন আলেয়া বেগমকে মা বলে ডাকে।তখন আলেয়ার কথিত বন্ধু বলে,তুমি না বলতে তোমার বিয়ে হয়নি। এত বড় ছেলে কোথায় থেকে এলো।এই বলে রাগে খোপে চলে যায় আলেয়া বেগমের বন্ধু। আর আলেয়া বেগম রাগে খোপে টুকু যেমন তেমন ভাবে
মারলো।খুন করার মত অবস্থা ছিল।কতটা লোভে মগজ পঁচে গেলে এমন হয়।
আমেনা বেগম বাঁচিয়ে। ঘর থেকে বের করে নিজের ঘরে নিয়ে আসে।কিন্তু আমেনা বেগমে ঘরে থাকে নি। টুকু নাকি অনেক কেঁদেছে।যে ছেলেটা স্টেশনে দিকে যেতে চাইতো না, মা রেখে আসবে বলে।কিন্তু আজ ছোট ছেলেটা বুকভরা কষ্ট নিয়ে
স্টেশনের দিকে চলে গেছে।যে মা জোর করে কয়েক বার রেখে এসেও। আবার ফিরে আসে। সেই টুকু নাকি আজ হেঁটে হেঁটে স্টেশনে দিকে গেছে।আর ফিরে আসেনি টুকু।তারপর আর টুকুর খোঁজ পাওয়া যায় নি।টুকুর মা আলেয়া বেগম নাকি এই বস্তিতে ছিল।এক বছর হল নাকি থাকে না। কোথায় থাকে তাও কেউ জানে না।কোথায় গেছে কেউ জানে না।বয়সের ভারে আলেয়া বেগম মানে টুকুর মা হয় তো বুঝেছে সন্তানে জন্য কেঁদেছে।যে সন্তানকে কোলে পিঠে বড় করল।আজ তার কাছেই যে পারেনা,নিজে কর্মের কারণে। সেই সুযোগ আর পায়নি।
কারণ টুকু তখন অনেক বড় হয়েছে।যখন বুঝেছে।তখন নিজের মায়ে কৃতকর্মের জন্য হয় তো ফিরতে পারেনি।টুকু আর ফেরে নি। কোথায় গেছে কেউ জানত না। হঠাৎ একদিন খবরে আসে টুকু নাকি এলাকায়
ডন।
টুকুর নিথর দেহ আজ পড়ে আছে।এই দায়ভার কার। দোষ যারেই হোক, টুকু কিন্তু নির্দোষ ছিল। বলছি ঔ টুকুর কথা, যে ছেলেটা মাকে ছাড়া থাকত না।একটু খেতে পারলেই হত।সারাদিন কেটে যেতে। আজকের এই টুকু কিভাবে তৈরি হল। তা অজানা থেকে গেলো।
টুকুর মায়ের ফেসবুকের রঙ্গিল দুনিয়ার আসা মুলত প্রধান কারণ। টুকির বাবার দায়িত্বহীন পিতা পরিচয় দেওয়া। আজ টুকুর এই করুণ পরিণতি। আমরা ফেসবুক বা সোচাল মিডিয়া ব্যবহার করে নিজেকে সোচাল ভাবছি।অথেচ অপব্যবহারে বেশি করি আমরা।
টুকুর মত ছেলেরা তৈরি হয় সমাজে কোনো কোনো কারণে। আট বছরে টুকু যেমন
নিঃস্ব পাপ ছিল।আবার পঁচিশ বছরে টুকু মহাপাপী হয়ে সমাজে
ফিরে আসে।
কে টুকু তৈরি করল।আবার কার ছায়ার টুকু তার এই সাম্রাজ্য
তৈরি করল।সেই কারণ আমরা খুঁজার আগেই টুকু পাতাটা ঢেকে দিলাম।
এই টুকু একদিন তৈরি হয়নি। সমাজে কোট টাই পরা মানুষের ছায়ার এই
রাজ্য তৈরি করেছে।আমাদের সমাজে বাস করা কিছু মুখোশে ঢেকে থাকা ভদ্র মানুষ।পত্রিকায় খবরে পাই। ক্রাশফায়ার পরে থাকে
নিথর দেহ টুকুর মত ছেলেরা।যারা অবহেলা বেড়ে আমাদের সমাজে।আর ঢেকে যায় সমাজের উঁচু শ্রেণির মানুষ। যারা টুকুর কারিগর।
বলছি না টুকু ভালো কিংবা আমার আইকন। এটা আমার উদ্দেশ্য না। তবে যে সমাজ চরিত্র হীন ব্যক্তি আইকন বানাতে উঠে পড়ে লাগে।সে সমাজে টুকুর কিন্তু কারো না কারো আইকন। সেই সমাজে টুকু আইকন হলে খুব কি ক্ষতি হবে? চরিত্রহীন আর টুকু
পাথক্য কি?বলে শেষ হবে না।
আমাদের রাষ্ট্র উচিত এই টুকুর কারিগরদের খুঁজে বের করা।তাদের শাস্তি দেওয়া। অন্যথায় এক টুকু চলে গেছে তাতে কি হয়েছে। আবার আরেক টুকু ফিরে আসবে।অন্য রুপে আমাদের সমাজে।
১৪ ঘন্টা ১৫ মিনিট আগে
১৪ ঘন্টা ১৬ মিনিট আগে
১ দিন ২১ ঘন্টা ৪৯ মিনিট আগে
১৫ দিন ২৩ ঘন্টা ৩৮ মিনিট আগে
১৬ দিন ১৩ ঘন্টা ৫৬ মিনিট আগে
১৮ দিন ১২ ঘন্টা ৫৮ মিনিট আগে
২১ দিন ১৬ ঘন্টা ৬ মিনিট আগে
২৭ দিন ২ ঘন্টা ৩০ মিনিট আগে