মোঃ আজগার আলী, সদর উপজেলা প্রতিনিধি সাতক্ষীরা:
সাতক্ষীরা সদরের সম্প্রতি নিম্নচাপের প্রভাবে অতি বৃষ্টিতে সাতক্ষীরা জেলায় রোপা আমন, আউশ ও বিভিন্ন ধরণের শাক-সবজির ক্ষেত পানিতে তলিয়ে যায়। একই সঙ্গে ভেসে গেছে ছয় হাজার মৎস্যঘের ও দেড় হাজার পুকুর। ফলে মৎস্য ও কৃষি খাতে প্রায় ৭০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কার্যালয় ও জেলা মৎস্য অধিদপ্তর।
সাতক্ষীরার আবহাওয়া অফিস জানায়, গত সপ্তাহের শনি থেকে মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত চার দিনে ৯৬ ঘণ্টায় ২৫৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে ।
স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তিন দিনের ভারী বর্ষণের কারণে সদর উপজেলার বিনেরপোতা এলাকার শ্মশানঘাটের পাশের বেতনা নদীর পাউবোর রিংবাঁধ গত রোববার সন্ধ্যায় ভেঙে গিয়ে লোকালয়ে পানি ঢুকতে থাকে। বুধবার (২৫ সেপ্টেম্বর) বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত পানি উন্নয়ন বোর্ড বাঁধ সংস্কার করতে ব্যর্থ হয়েছে।
বাঁধ ভেঙে বিনেরপোতা, খেজুরডাঙ্গা, গোপীনাথপুর, তালতলা, আহসাননগর, হরিণখোলা, গোয়ালপোতা, গাছা, দক্ষিণ নগরঘাটা, হাজরাতলা, পালপাড়া, গাবতলা, দোলুয়া, নগরঘাটা, রথখোলা, কাপাসডাঙ্গা, নিমতলাসহ কমপক্ষে ৫০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এ ছাড়া সাতক্ষীরা সদর উপজেলার পুরাতন সাতক্ষীরা এলাকার ঘুটেরডাঙ্গী, রামচন্দ্রপুর, লবণগোলা, পাথরঘাটা, দামারপোতা, জিয়ালা, ধুলিহর, বালুইগাছা, ফিংড়ি, ফয়জুল্লাহপুর, দরবাস্তিয়া, কোমরপুর, তেঁতুলডাঙ্গী, মাছখোলা, শ্যালেসহ ৩০টি গ্রাম ও পৌর এলাকার অর্ধেক এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। এতে ২০-২৫ হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। ওই এলাকাসহ সাতক্ষীরার বিভিন্ন এলাকার মাছ ও কাঁকড়ার ঘের তলিয়ে গেছে। তলিয়ে গেছে পুকুর, আমন ধান ও শাক-সবজির খেত।
সদর উপজেলার তালতলা গ্রামের ঘের ব্যবসায়ী কামরুজ্জামান বলেন, আমার ৩টি ঘের রয়েছে ১২০ বিঘা জমির ওপর। সবকটায় চাষ করা হয়েছিল সাদামাছ। বৃষ্টিতে সবগুলো ঘের তলিয়ে রয়েছে। সবমিলিয়ে আমার প্রায় দেড় কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।
উপজেলার আগরদাড়ি ইউনিয়নের কৃষক মোঃ আজহারুল ইসলাম বলেন, আমি ৮ বিঘা জমিতে ধান রোপণ করেছি, তার মধ্যে ৬বিঘা পানিতে তলিয়ে গেছে, ৮ বিঘা জমিতে আমার প্রায় লক্ষাধিক টাকা খরচ হয়েছে। বৃষ্টির পানি বেড়ে পুরো ক্ষেত তলিয়ে গেছে। ধান গাছগুলো পানির নিচে পঁচে গেছে। এভাবে বৃষ্টি হতে থাকলে গাছগুলো সব মারা যাবে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি আমন মৌসুমে গত কয়েকদিনের বৃষ্টিতে ৫ হাজার ৪৫২ হেক্টর জমি আক্রান্ত হয়েছে। এরমধ্যে ১৪৯ হেক্টর জমির ফসল সম্পূর্ণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
সাতক্ষীরা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মোঃ সাইফুল ইসলাম বলেন, চলতি আমন মৌসুমে মাঠের শাকসবজিসহ ৯৮ হাজার ৭৮৩ হেক্টর জমির ধান লাগানো, তার মধ্যে হঠাৎ অতিরিক্ত বৃষ্টিতে আমাদের ৫ হাজার ৪৫২ হেক্টর জমি আক্রান্ত হয়েছে। এরমধ্যে ১৪৯ হেক্টর জমির ফসল সম্পূর্ণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যার বাজার মূল্য ৯ কোটির উর্ধে। এখানে কৃষক সংখ্যা রয়েছে প্রায় ৫ হাজার ৩৫০ জন।
তিনি আরও বলেন, এখন আমরা এই বৃষ্টির পানিতে সৃষ্টি হওয়া জলবদ্ধতা যদি নিরসন করতে পারি, তাহলে সেসব যায়গায় আবার কৃষকদের পুনর্বাসিত করে এবং আমাদের পরামর্শ দিয়ে তাদেরকে আবার শাকসবজি ও আগাম খাদ্যশস্য আবাদের দিকে অগ্রসর হতে পারবো। আশা করছি আবার সাতক্ষীরা জেলা ফসল উৎপাদনে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী এগিয়ে যেতে পারবো। যদিও প্রাকৃতিক দুর্যোগ আমাদের কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।
সাতক্ষীরা জেলা মৎস্য অফিসার মোঃ আনিছুর রহমান বলেন, সাতক্ষীরা জেলায় গত কয়েন দিন যাবত অতিবৃষ্টি জনিত কারণে জেলার যে সাতটি উপজেলা রয়েছে, বিশেষ করে শ্যামনগর উপজেলা ও সাতক্ষীরা সদরের বেতনা নদীর একটা অংশ ভেঙে যাওয়ার কারণে তার আশপাশের ঘেরগুলো একেবারে পানির সাথে মিশে গেছে। এখানে আমাদের মোট ৫ হাজার ২৩০ হেক্টর এরিয়া ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে ভেসে গেছে অধিকাংশ মাছই, এবং এতে মৎস্য চাষীদের ৬০০ কোটি টাকার অধিক আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। অবকাঠামোগত ক্ষতি হয়েছে সেটিও ৪ কোটি টাকার অধিক। এ ক্ষতির হাত থেকে চাষীদের রক্ষা করতে সহজ শর্তে যদি ঋণের ব্যবস্থা করা যেত, অথবা তাদের প্রণোদনের আওতায় আনা গেলে চাষিরা আবার ঘুরে দাঁড়াতে পারবে।
৪ ঘন্টা ৪৪ মিনিট আগে
৪ ঘন্টা ৪৫ মিনিট আগে
৫ ঘন্টা ৭ মিনিট আগে
৫ ঘন্টা ৮ মিনিট আগে
৫ ঘন্টা ১৯ মিনিট আগে
৫ ঘন্টা ৪৪ মিনিট আগে