মোঃ আজগার আলী, সদর উপজেলা প্রতিনিধি সাতক্ষীরা:
সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ৮নং ধুলিহর ইউনিয়নের বালুইগাছা, গোবিন্দপুর, বড়দল, দামারপোতা, কোমরপুর, সুপারিঘাটা, ধুলিহর সানাপাড়া, তেতুলডাঙা গ্রামগুলো বেতনা নদীর অববাহিকায় অবস্থিত। আকাশ বন্যায় এসব গ্রামগুলো দাঁড়িয়ে আছে ধ্বংসস্তূপের উপর। গোটা এলাকা এখন লন্ডভন্ড। রাস্তায় পানি, বাড়ির উঠোনে পানি, রান্নাঘরে পানি, টয়লেটে পানি, গোয়ালে পানি, শোবার ঘরে পানি, কবরস্থানে পানি, স্কুলে পানি, মসজিদে পানি, মাঠে পানি, ক্ষেতে-খামারে পানি। চারিদিকে শুধু পানি আর পানি। এভাবে পানিতে ভাসছে বেতনা পাড়ের শতাধিক গ্রাম। রোদে শোকানো পানি নিষ্কাশনের আপাতত কোন পথ নেই। বেতনা নদী বিল ছাড়া উঁচু হওয়ায় নদীর পানি বিলে আসে কিন্তু বিলের পানি নদীতে যায় না। তারপরও কোটি টাকা খরচ করে এখানে কয়েক বছর আগে অকেজো জলকপাট নির্মাণ করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। যা বিগত কয়েক বছরে এক ফোটা পানি নিষ্কাশন করতে পারেনি। সম্প্রতি কয়েকদিনের বর্ষণে তলিয়ে গেছে গ্রামের পর গ্রাম। তাতেই ভেসে গেছে ফসলের ক্ষেত ও পুকুরের মাছ। ফসল হারা কৃষক সন্তান হারা পিতার ন্যায় আর্তনাদ করে। কৃষকের বোবা কান্নায় ভারি হয়ে উঠেছে এলাকার আকাশ। বেতনা এখন সাতক্ষীরাবাসির দুঃখ। এমনই এক বেদনাবিধূর পরিবেশে মঙ্গলবার গিয়েছিলাম গোবিন্দপুর গ্রামে। সেখানে যেতে যেতে দেখি রাস্তায় পানি, বাড়িঘরে পানি। রাস্তার পাশের ফসলের ক্ষেত ডুবে আছে পানির নিচে। সংবাদকর্মী দেখে দৌঁড়ে কাছে এলো এখার কয়েকজন। বললেন তাদের দুঃখের কথা। ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে ম্লান মুখে তারা বললেন, আমাদের গ্রাম পানির নিচে তলিয়ে গেছে। মানুষের বসতবাড়ি, রান্না ঘর, টয়লেট, গোয়াল ঘর, কবরস্থানসহ সব জায়গা পানির নিচে। অনেকেই বাড়িঘর ছেড়ে গরু, ছাগল, হাঁস, মুরগী নিয়ে নিরাপদ আশ্রয় চলে যাচ্ছে।
গোবিন্দপুর গ্রামের আহাদ আলী জানান-গত ৩দিন আমার বাড়িতে কোন রান্না হয়নি, কোন রকম চিড়ামুড়ি খেয়ে দিন পার করছি। ঘরে চাল থাকলেও রান্না করার কোন উপায় নেই। ঘরবাড়িসহ সবকিছু পানির নিচে। গত সপ্তাহখানিক ধরে রান্নাবান্না বন্ধ থাকলেও সরকারি বা বেসরকারীভাবে এখনো পর্যন্ত কোনো ত্রাণ সামগ্রী পায়নি। একই এলাকার সংবাদকর্মী মেহেদী হাসান শিমুল জানান-গত ২দশক আগে থেকে বেতনা নদীর নাব্যতা হারিয়ে তলদেশ উঁচু হওয়ার কারণে আমরা প্রতি বছর বেতনাপাড়ের শতাধিক গ্রামের মানুষ পানিবন্ধি হয়ে থাকি। কিন্তু এবছর অতি বৃষ্টিতে গ্রামের পর গ্রাম পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ায় সবকিছু হারিয়ে মানুষ নিঃস্ব হয়ে গেছে। ভেঙে পড়েছে স্যানিটেশন ব্যবস্থা।
এরপর বড়দল গ্রামের আব্দুস সামাদ জানান-সবকিছু শেষ হয়ে গেছে। কোথাও একটু উঁচু জায়গা নেই। বাজার থেকে ভ্রাম্যমাণ চুলা এনে ছাদের উপর নিয়ে রান্না করা হচ্ছে। কিন্তু অধিকাংশ মানুষ রয়েছে না খেয়ে অথবা আধাপেটা অবস্থায়। এখনো পর্যন্ত আমাদের দুঃখ কষ্ট দেখতে কেউ আসেনি। আমরা পাইনি কোন ত্রাণ সামগ্রী। বলেন আব্দুস সামাদ। তিনি আরও বলেন, পানিবন্দি মানুষের মধ্যে হাহাকার পড়ে গেছে। এত মানুষ না খেয়ে আছে যা অতীতে কখনো দেখিনি। ত্রাণের জন্য তিনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
বালুইগাছা গ্রামে গেলে হাফেজ মোঃ মহিদুল ইসলাম, হামজার আলী ও গণমাধ্যম কর্মী ইমরান হোসেনসহ একাধিক ব্যক্তি তাদের তলিয়ে যাওয়া ঘরবাড়ি দেখিয়ে জানান, তাদের অবর্ণনীয় কষ্টের কথা। শুকনা খাবারসহ বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। গোখাদ্যের তীব্র সংকটে গরু ছাগল নিয়ে মহাবিপাকে পড়েছি আমরা। স্যানিটেশন ব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় এসব পানিতেই মল-মুত্র ত্যাগ করতে বাধ্য হচ্ছে অনেকে। ফলে নোংরা হচ্ছে পানি। এসব এলাকায় পানিবাহিত রোগ মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়েছে। এসময় সাংবাদিক দেখে ছুটে আসেন ষাটোর্ধ বৃদ্ধা মাজেদা খাতুন বলেন-বাবা, বেশ কদিন রান্তি পারিনি তাই ভাত খাইনি। আমাগির একটু খাবারের ব্যবস্থা কুরি দেও। এসময় তিনি তার শরীরের বিভিন্ন জায়গায় হওয়া চুলকানি দেখিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন। উল্লেখ্য সাতক্ষীরা শহরের অধিকাংশ নিম্ন এলাকাসহ ধুলিহর, ব্রহ্মরাজপুর, ফিংড়ী ইউনিয়নের হয়ে আশাশুনি পর্যন্ত শতাধিক গ্রামের মানুষ বর্তমানে পানিবন্ধি। এসব এলাকার রাস্তাঘাট পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় যোগাযোগ ব্যবস্থাও ভেঙে পড়েছে। এসব পানিবন্ধি মানুষেরা সরকারি ও বেসরকারিভাবে যাতে অবিলম্বে এাণ সামগ্রী পায় সেজন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
৪ ঘন্টা ৪৪ মিনিট আগে
৪ ঘন্টা ৪৫ মিনিট আগে
৫ ঘন্টা ৮ মিনিট আগে
৫ ঘন্টা ৮ মিনিট আগে
৫ ঘন্টা ১৯ মিনিট আগে
৫ ঘন্টা ৪৪ মিনিট আগে