◾ মোঃ ইলিয়াস কামাল || মানব সভ্যতা গড়ার ইতিহাসে আমাদের কত অবদান। আবার আমরাই সেই মানব সভ্যতাকে গলা টিপে হত্যার চেষ্টায় মাতোয়ারা হয়ে ছুটে চলছি । স্বাধীনতা বলতে বর্তমানে সমাজে মানুষ যেটা বুঝে থাকে। তা মানব সভ্যতাকে একটি খাদের দিকে ধাবিত করছে। যা থেকে উত্তোরনের পদ ক্রমান্বয়ে রুদ্ধ হয়ে যাচ্ছে। ১৫-২০ বছরের ব্যাবধানে সমাজ কতো বদলে গিয়েছে! আজকাল মনে যে এ এক অচেনা পৃথিবীতে বসবাস করছি আমরা।
এই পৃথিবীতে বসবাস করা হাজারো লোকের ভীরে আমি স্রেফ এক বোকা মানুষ মাত্র। গর্ভপাত,ডাস্টবিনে কুকুরের মুখে নবজাতক লাশের সংখ্যা দিনের পর দিন হু হু করে বেরে চলেছে।২০১৪ সালেই বাংলাদেশে প্রায় ১২ লাখ অনিরাপদ গর্ভপাত করানো হয়। আর এর বেশির ভাগ অবিবাহিতদের। আমাদের দেশে বিবাহিতদের চেয়ে অবিবাহিতদের কিশোরীর গর্ভপাত কারানো হয় পঁয়ত্রিশ শতাংশর বেশি। তবে গ্রামের চেয়ে শহরের হার অনেকটা বেশি বলে মনে করি। এই গা শিউরে উঠা পরিসংখ্যানগুলোর সতত্যা নিশ্চিত করে রয়েছে একাধিক মনোরোগবিদ আর চিকিৎসকের বক্তব্য।
সবচেয়ে প্রেমের সম্পর্কগুলো আজ অবিচ্ছেদ্যভাবে জড়িত হয়ে আছে যৌনতায়। সবকিছু যেভাবে চলছে এভাবেই যদি চলতে থাকে তাহলে একদিন আমাদের গ্রাস করে নিবে পুরোপুরি আলো বিছিন্ন অন্ধকার আলোর দিশারী হয়ে ঘুরেও আমরা আলোর দেখা পাবো না। রাস্তার পাশে গুমরে কাঁদে কুকুরের মুখে নিষ্পাপ নবজাতকের দেহ, আধুনিকতার অসুখ যতো!এই পরিণতি থেকে বাঁচতে হলে বের হয়ে আসতে হবে কল্পরাজ্য থেকে। তা না হলে গভীর অন্ধকারের ঐ লিলাশিকা ঘুম থেকে কোন দিন আর জেগে ওঠা হবে না আমাদের। এক দুঃস্বপ্ন থেকে আরো গভীর, গভীরতর দুঃস্বপ্নে অন্তহীন অন্ধকারে তলিয়ে যেতে থাকবো নিরন্তর। সমাজের চিন্তাধারা আর মানুষগুলোকে বদলানো যেমন কঠিন আবার তেমন সহজও।
আবারো বলতে হয় ডাস্টবিনের কুকুরের মুখে খুবলে খুবলে খাওয়া অথবা জলজ্যান্ত একটা নিষ্পাপ শিশুর নিথোর দেহ। মানবসভ্যতার কী করুন এক পরিণতি! এই বিশ্বকাঠামো রঙচঙ মেখে কাছে আমার গল্প শেখায়।কিন্ত কাছে আসার গল্পের পরের দৃশ্য আর দেখায় না।বুলেট ট্রেনের মতো ধেয়ে চলা পাপিষ্ঠ বিশ্বসভ্যতা দেখে আমরা উৎফুল্ল হয়ে যাচ্ছি। রাস্তায় ডাস্টবিনে নবজাতককে ছুড়ে ফেলাল দৃশ্য যেমন চোখে লাগে। তেমনি অন্তরের ভিতরে একটা অহেতুক পাথর চাপা কষ্ট ফেঁটে পরে। এই সমাজ আমরা দেখবো কেনো। আমাদের সমাজ আমেরিকার মতো চাই না।
যেখানে ২০২০ সালে ৯ লক্ষ ৩০ হাজার ১৬০ টি গর্ভপাত হয়েছে এর মধ্যে ৯%করেছে ১৩-১৯ বছর বয়সী তরুণী। তাহলে ৮৪ হাজারের মতো শিশু খুন করেছে তারা। শিশু মানবাধিকারকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে রক্তের আদিম নেশায় হাততালি দেওয়া সভ্যতা। আইনওয়ালা চোখ বুজে ঘাড় ঘুরিয়ে থাকে। কেউ কেউ বলেই দেয় - "গর্ভ যার, সিদ্ধান্ত তার।" আর এই যুক্তিতাকে বৈধতা দিয়ে আমরা মানব ইতিহাসের সবচেয়ে জঘন্য গনহত্যাগুলোর একটি দেখতে পাই ডাস্টবিনে নবজাতকের দেহ। চতুর ঘুণপোকা কুরে কুরে খেলো সব। নষ্ট হলো মানুষের মৌলিকত্ব মুখ থুবড়ে পড়লো সমাজ।অস্তিত্ব আর উদ্দশ্যের অদ্ভুত এক সংকটে পড়লো মানবসভ্যতা। আমাদেরই আত্মঘাতী অবহেলায়!আইয়ামে জাহিলিয়াতের চাইতেও নির্দয় আকারে ফিরে এসেছে মানবশিশু খুনের মহাউৎসব। অপরাধ বিজ্ঞানী ফারজানা রহমান,ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমজাকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের শিক্ষক ড:আতিকুল রহমান সহ অনন্য বিশেষজনের মতে সামাজিক অবক্ষয়ের কারণেই বিয়েবহির্ভূত অনেক ধরনের সম্পর্কে জড়িয়ে যাচ্ছে নারী পুরুষ। এর ফলে এমন বেওয়ারিশ নবজাতকের জন্ম যেমন বেড়েছে, তেমনি বেড়ে গেছে জীবন্ত নবজাতককে ফেলে দিয়ে সব দায় থেকে নিজেকে নিষ্কৃতি চাওয়ার মতো ঘটনা গুলো। ছুটছে শহর, ব্যাস্ত জীবন, আধুনিকতার দর্পণ, রাস্তার পাশে গুমরে কাঁদে সভ্যতার বিবর্তন।
সদ্য ভূমিষ্ট শিশুর জন্য বাসযোগ্য করে গোড়ে তোলার শপথ নিতে হবে। বিশ্বব্যাবস্থার ধারা কিছুটা পরিবর্তন নিয়ে এসে সবাই এক কণ্ঠে কবিতার সূর ভাসিয়ে দিতে হবে।
লেখক : মো: ইলিয়াস কামাল
বাংলা বিভাগ
শিক্ষার্থী, ঢাকা কলেজ