বিগত বছরের আগস্টে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ভয়াবহ বন্যায় ফসলহানির প্রেক্ষাপটে অন্তর্বর্তী সরকার ব্যবসায়ীদের চাল আমদানির অনুমতি দেয়। কিন্তু, অনুমোদন ও বেশ কয়েকবার সময় বাড়ানোর পাঁচ মাস পরও দেখা যাচ্ছে—ব্যবসায়ীরা যে পরিমাণ চাল আমদানির অনুমতি পেয়েছিলেন তারা সেই পরিমাণ চাল আমদানি করেননি।
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, চলতি মার্চের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত ব্যবসায়ীরা অনুমোদিত ১৬ লাখ ৭৫ হাজার টন চালের বিপরীতে আমদানি করেছে দুই লাখ ৬৩ হাজার টন। যা অনুমোদিত পরিমাণের মাত্র ১৭ শতাংশ।
আমদানিকারকদের ভাষ্য, ডলারের বাড়তি দাম, আমনের ভালো ফলন ও বাজারে আমদানি করা চালের চাহিদা কম থাকায় বর্তমানে চাল আমদানি লাভজনক নয়।
সরকারি কর্মকর্তাদের দাবি, আমনের ভালো ফলন, সরকারি ক্রয় ও আমদানি দেশে খাদ্য মজুদকে জোরদার করেছে। এটি বাজার স্থিতিশীল রাখার পাশাপাশি কম আয়ের মানুষদের জন্য খাদ্য বিতরণ কর্মসূচি চালাতে সহায়তা করছে।
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের নথি অনুসারে, আমদানির জন্য অনুমোদিত ১৬ লাখ ৭৫ হাজার টনের মধ্যে ১২ লাখ ১৯ হাজার টন সেদ্ধ চাল; বাকিটা আতপ।
চলতি অর্থবছরে চালের খুচরা দাম গত বছরের আগস্ট থেকে ঊর্ধ্বমুখী। তখন দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বন্যায় আমন চাষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল।
ফলন কমে যাওয়ায় চালের দাম যেন আরও না বেড়ে যায় তা রোধ করতে, সরকার মজুদ বাড়াতে ও দাম কমাতে আমদানিকে উত্সাহিত করে। কারণ ঐতিহাসিকভাবে চালের দামের ওপর মূল্যস্ফীতি নির্ভর করে।
২০২৩ সালের মার্চ থেকে সামগ্রিক মূল্যস্ফীতি নয় শতাংশের বেশি। ফলে কম-মধ্যম আয়ের মানুষ চাপে পড়েছে।
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মাসুদুল হাসান মনে করেন, 'পরিমিত' পরিমাণে আমন সংগ্রহ, সরকারিভাবে চাল আমদানি ও জিটুজি আমদানি চুক্তি খাদ্য মজুদকে শক্তিশালী করেছে।
তার মতে, 'এর ফলে ওএমএস ও টিসিবির কম দামে খাদ্যপণ্য বিক্রির উদ্যোগের মাধ্যমে বাজারে চাল সরবরাহ স্থিতিশীল করা হয়েছে। ফলে লাখো দরিদ্র পরিবার উপকৃত হয়েছে ও চালের দাম স্থিতিশীল আছে।'
চাল আমদানিকারক আলমগীর হোসেন জানান, ৩৫ হাজার টন চাল আমদানির অনুমতি থাকলেও আমদানি হয়েছে মাত্র নয় হাজার টন।
'ডলারের বাড়তি দাম ও এলসি খোলায় ডলার সংকট বড় বাধা। আমদানি করা চাল স্থানীয় বাজারে লাভজনক নয়। এ কারণে পুরো পরিমাণ চাল আমদানি করিনি।'
তিনি বলেন, 'এলসি খোলার সময় ডলারের দাম হয় ১২২ টাকা। সব ঠিক হওয়ার পর তা বেড়ে হয় ১২২ টাকা ৫০ পয়সা। কেজিতে মাত্র ২৫ থেকে ৫০ পয়সা মুনাফা নিয়ে ব্যবসা করা খুবই কঠিন।'
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি ব্যবসা ও বিপণন বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, 'রাজনৈতিক অস্থিরতা অনিশ্চিত পরিবেশ তৈরি করেছে। ব্যবসায়ীরা বাজার বুঝতে পারছেন না।'
তার মতে, বর্তমানে বেশি পরিমাণে চাল আমদানি নিয়ে জিটুজির উদ্যোগ চলছে। এতে ব্যবসায়ীরা আরও নিরুৎসাহিত হচ্ছেন।
রাষ্ট্রায়ত্ত বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য বলছে—গত এক সপ্তাহ ধরে ঢাকায় চালের দাম অপরিবর্তিত আছে।
গতকাল সোমবার চিকন চাল ৭২ থেকে ৮৫ টাকা, মাঝারি মানের চাল ৫৮ থেকে ৬৫ টাকা ও মোটা চাল ৫০ থেকে ৫৫ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছে।
গত এক মাসের ব্যবধানে চিকন চালের দাম এক দশমিক ২৯ শতাংশ, মাঝারি মানের চালের দাম শূন্য দশমিক ৮২ শতাংশ ও মোটা চালের দাম এক দশমিক ৮৭ শতাংশ বেড়েছে।
গত বছরের একই সময়ের তুলনায় চিকন চালের দাম বেড়েছে ১৪ দশমিক ৬০ শতাংশ, মাঝারি মানের চালের দাম বেড়েছে ১৩ দশমিক ৮৯ শতাংশ ও মোটা চালের দাম বেড়েছে পাঁচ শতাংশ।
দেশে বছরে তিন কোটি ৭০ লাখ টন থেকে তিন কোটি ৯০ লাখ টন চালের প্রয়োজন। এর বেশিরভাগ দেশীয় উৎপাদনের মাধ্যমে পূরণ করা হয়। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে দেশে চাল আমদানি হয়নি।
৬ ঘন্টা ৩১ মিনিট আগে
১ দিন ২ ঘন্টা ৫৭ মিনিট আগে
১ দিন ৫ ঘন্টা ৪৫ মিনিট আগে
১ দিন ১৫ ঘন্টা ৩০ মিনিট আগে
১ দিন ১৫ ঘন্টা ৩৩ মিনিট আগে
১ দিন ১৫ ঘন্টা ৩৪ মিনিট আগে
২ দিন ৪ ঘন্টা ২৩ মিনিট আগে
৩ দিন ৯ ঘন্টা ৩৩ মিনিট আগে