আওয়ামী লীগের মনোনয়নে নৌকা প্রতীকে দুইবারসহ টানা তিন মেয়াদে জামালপুরের ইসলামপুর পৌরসভার মেয়র হয়েছেন মো. আব্দুল কাদের সেখ। ভোটের মাঠে পরাজয়ের গ্লানি তাঁর রাজনৈতিক জীবনে কখনো দাগ কাটেনি। তৃতীয় বারের মতো মেয়র হয়ে পৌরবাসীর খেদমত করে যাচ্ছেন তিনি। এছাড়া আব্দুল কাদের সেখ উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের পদেও আসীন। এর আগে সাংগঠনিক সম্পাদক পদেও দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। এছাড়া ৮ বছর আসীন ছিলেন উপজেলা যুবলীগের সভাপতি পদে। কিন্তু এসব রাজনৈতিক পদ-পদবি তাঁর ধোপে টিকছে না। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বিএনপি-জামায়াত তথা অন্য কোনো দলের প্রপাগান্ডা কিংবা রাজনৈতিক কোনো কূটকৌশলের চালে নয়। বরং দীর্ঘদিন ধরেই সদলীয় নেতা-কর্মীদের রাজনৈতিক চালে বিপাকে পড়েছেন তিনি। করোনা যোদ্ধা খ্যাত মেয়র আব্দুল কাদের সেখের বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারি আচরণ, সরকারি গুদামে মালামাল লুট, অর্থ আত্মসাৎ এবং দুর্নীতির অভিযোগ করে মেয়র পদ থেকে তাঁকে অপসারণ চেয়ে ১১ কাউন্সিলর সংশ্লিষ্ট দপ্তরে আবেদন করেছেন।
আবেদনকারী অন্যান্যের মধ্যে হলেন, পৌর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ফজলুর রহমান, উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর দেলোয়ার হোসেন, ৫ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি একই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর খাজা, উপজেলা যুবলীগের সাবেক ত্রাণ বিষয়ক সম্পাদক ও ২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. মোহন মিয়া, উপজেলা কৃষক লীগের অর্থ বিষয়ক সম্পাদক ৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ছামিউল।কাউন্সিলরদের আবেদনের প্রেক্ষিতে মেয়র আব্দুল কাদের সেখের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের তদন্তও হয়েছে।গত বুধবার (৯ আগষ্ট) স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রাণালয়ের পৌর-১ শাখার উপসচিব ফারজানা মান্নান স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে মেয়র মো. আব্দুল কাদের সেখের বিরুদ্ধে কাউন্সিলর কর্তৃক অনাস্থা প্রস্তাব দাখিল করার বিষয়ে পরবর্তী প্রয়োজনীয় কার্যধারা গ্রহণের জন্য জামালপুর জেলা প্রশাসকে (ডিসি) নিয়োগ করা হয়েছে। এছাড়া স্থানীয় সরকার (পৌরসভা) আইন- ২০০৯ এর ধারা ৩৮ অনুযায়ী প্রয়োজনীয় সকল কার্যধারা সম্পন্ন সংশ্লিষ্ট বিভাগে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
এনিয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে অনেকেই বলেন, আব্দুল কাদের সেখ নিজের কর্মফল ভোগ করছেন। অন্যদিকে রাজনৈতিক বিশ্লেষককদের মতে, ঘরের আগুনেই জ্বলছেন তিনি। সদলীয় নেতাকর্মী তাঁর রাজনৈতিক ইমেজ ও বলয় ভাঙতে ওঠে পরে লেগেছেন। উদ্দেশ্য হাসিল করতে গতবার মেয়র পদে আওয়ামী লীগের ভেতর থেকে ১০ জন দলীয় মনোনয়ন পেতে লবিং চালান। শেষমেশ নৌকার টিকেট পান আব্দুল কাদের সেখ। বিদ্রোহী প্রার্থীকে পরাজিত করে মেয়রও হন। মেয়র হওয়ার পর থেকে স্বস্তিতে নেই আব্দুল কাদের সেখ। একদিকে সদলীয় নেতারা তাঁকে পাশকাটিয়ে চলেন। অন্যদিকে, কাউন্সিলররা নানাবিধ অভিযোগ তোলে মেয়র পদ থেকে তাঁর অপসারণ করতে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে অনাস্থা প্রস্তাব দেওয়াসহ সংবাদ সম্মেলন ও আন্দোলন করে আসছেন। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ২০২২ সালের ১৭ নভেম্বর মেয়র পদ থেকে অনাস্থার দাবিতে আব্দুল কাদের সেখকে ময়মনসিংহ বিভাগীয় কমিশনার বরাবর আবেদন করেন ১১ জন কাউন্সিলর। পরে ২৭ নভেম্বর জেলা প্রশাসক এবং ১৪ ডিসেম্বর স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ে আব্দুল কাদের সেখের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব দাখিল করেন তাঁরা। গত ৮ জানুয়ারি ইসলামপুর পৌর শহরের বটতলা মোড়ে মেয়র আব্দুল কাদের সেখের বিরুদ্ধে সরকারি সম্পত্তি আত্মসাৎ, স্বজনপ্রীতি, দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগে সংবাদ সম্মেলন করেন পৌরসভার ১০ কাউন্সিলর। ৭ জুন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রাণালয়ের পৌর-১ শাখার উপসচিব মো. আব্দুর রহমান স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে মেয়র পদ থেকে কেনো অপসারণ করা হবে মর্মে কারণ দর্শাতে নোটিশ দেওয়া হয়েছে মেয়র মো. আব্দুল কাদের সেখকে।
উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক সম্পাদক ও পৌর মেয়র অভিযুক্ত আব্দুল কাদের সেখ বলেন, 'কাউন্সিলরদের অভিযোগগুলো সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। আমি স্থানীয় আওয়ামী লীগের কতিপয় নেতার অপরাজনীতির শিকার হয়েছি। সামনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন। আমি দলের মনোনয়ন প্রত্যাশী। আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে কাউন্সিলরদের দিয়ে দলের ভিতর থেকেই একটি পক্ষ ওঠে পরে লেগেছে। আমার রাজনৈতিক ক্যারিয়ার ধ্বংস করার হীনউদ্দেশ্যে নানাবিধ অভিযোগ তোলে মেয়র পদ থেকে অপসারণের চক্রান্ত চলছে। ষড়যন্ত্রকারীরা সফল হতে পারবে না। আমি বঙ্গবন্ধুর সৈনিক। আমার সঙ্গে জনগণ আছে।' পৌর কার্যালয় সূত্র জানা গেছে, ১৯৯৮ গঠিত হয় ইসলামপুর পৌরসভা। ২০১১ সালে মেয়র হন আব্দুল কাদের সেখ। ২০১৬ সালে প্রথম বারের মতো স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় প্রতীকে নির্বাচন দেয় সরকার। এ নির্বাচনে নৌকা প্রতীকেও মেয়র হন তিনি। ২০২০ সালে অনেক জলপনা-কল্পনা শেষে ১০ জন মনোনয়ন প্রত্যাশিকে তিনি টপকে নৌকা প্রতীকে মনোনয়ন ভাগিয়ে নিয়ে তৃতীয় বারের মতো মেয়র হন। এ বিষয়ে ডিসি মো. ইমরান আহমেদ বলেন, 'মেয়র আব্দুল কাদের সেখের বিষয়ে চিঠি পেয়েছি। আমাকে প্রথম শ্রেণির কর্মকতা হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন স্থানীয় সরকার বিভাগ। আইনগত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।'
২০ ঘন্টা ৩ মিনিট আগে
৪ দিন ১৯ ঘন্টা ৪ মিনিট আগে
৫ দিন ৪ ঘন্টা ৩২ মিনিট আগে
৫ দিন ১৬ ঘন্টা ৫২ মিনিট আগে
৫ দিন ২০ ঘন্টা ২৬ মিনিট আগে
৮ দিন ১৫ ঘন্টা ২১ মিনিট আগে
৮ দিন ২২ ঘন্টা ২৭ মিনিট আগে
৯ দিন ১৪ ঘন্টা ২১ মিনিট আগে