ডিবি কার্যালয় থেকে বের হয়ে যা বললেন মামুনুল হক এবার এক লাফে যত বাড়ানো হলো স্বর্ণের দাম নওয়াপাড়া মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়, শতভাগ পাস, শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা বিচ্ছুর বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত। জামালপুর জেনারেল হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভা অনুষ্ঠিত নাফনদী থেকে দুই কাঁকড়া শিকারীকে অপহরণ করেছে আরসা আবহাওয়া অধিদপ্তর যা জানাল সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড় ‘রেমাল’ নিয়ে বিশ্বকাপে টাইগাররা কে কোথায় ব্যাটিং করবেন, জানিয়ে দিলেন পাপন কোম্পানীগঞ্জে আনারস প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থীর গণসংযোগ সাংবাদিক প্রবেশের বিষয় স্পষ্ট করলো বাংলাদেশ ব্যাংক কংগ্রেসম্যানদের সই জালকারী বিএনপি একটা জালিয়াত রাজনৈতিক দল : পররাষ্ট্রমন্ত্রী নতুন কারিকুলামে শিক্ষার মানোন্নয়নের লক্ষ্যে স্কুল কমিটি ও অভিভাবকদের মতবিনিময় কুড়িগ্রামে বিশ্ব উচ্চরক্তচাপ দিবস পালিত কক্সবাজার পিটিআইয়ে প্রশিক্ষণরত শিক্ষিকার মৃত্যু গলাচিপা উপজেলা নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে ১৫ জন ম্যাজিস্ট্রেট মোতায়েন করা হবে। পাঁচবিবি উপজেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি রুহুল আমিন সম্পাদক জুয়েল শেখ নির্বাচিত ঈশ্বরগঞ্জে বিশ্ব উচ্চ রক্তচাপ উপলক্ষে র‌্যালি ও আলোচনাসভা সিরাজগঞ্জ পৌরসভার কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি হান্নান খান, সম্পাদক আল আমিন বরিশাল স্টেডিয়ামকে একটি আন্তর্জাতিক মানের স্টেডিয়ামে পরিণত করা হবে-- প্রতিন্ত্রী জাহিদ ফারুক শামীম (এমপি) বরিশাল নগরী বিভিন্ন পেট্রোল পাম্পে ট্রাফিক পুলিশের সচেতনমূলক অভিযান।

আজ ১১ ডিসেম্বর, মুন্সিগঞ্জ হানাদার মুক্ত দিবস

আজ ঐতিহাসিক ১১ ডিসেম্বর, মুন্সিগঞ্জ হানাদার মুক্ত দিবস । ১৯৭১ সালের এই দিনে মুন্সিগঞ্জ জেলা হানাদার মুক্ত হয় । ১৯৭১ সালের ৯ মে হানাদার বাহিনী ইতিহাসের অন্যতম জঘন্যতম হত্যা হত্যাযজ্ঞ চালায় গজারিয়া উপজেলার দশটি গ্রামে । সেদিন হানাদারেরা ৩৬০ জন নিরীহ গ্রামবাসীকে নির্মমভাবে হত্যা করে ।

দীর্ঘ নয় মাস মুন্সিগঞ্জের বিশাল ক্যানভাস ছিল রক্তমাখা । মুক্তিযুদ্ধ আর বিভীষিকাময় অবরুদ্ধ জীবনের পর ১৯৭১ সালের ১১ ডিসেম্বর হানাদার মুক্ত হয় মুন্সিগঞ্জ । জেলার বিভিন্ন স্থানে সম্মুখ যুদ্ধ আর মুক্তিযোদ্ধাদের একের পর এক সফল অপারেশনের ফলে সরকারি হরগঙ্গা কলেজ ক্যাম্প থেকে ১১ ডিসেম্বর ভোরে হানাদার বাহিনী লেজ গুটিয়ে মুন্সিগঞ্জ শহর ছেড়ে পালায় । সেই সাথে গা ঢাকা দেয় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর দোসর রাজাকাররাও । নয় মাসের নিস্তব্ধতা ভেঙে মুন্সিগঞ্জের আকাশে উড়ে বিজয়কেতন । মুক্তিবাহিনী ও জনতার আনন্দ মিছিলে মুখরিত হয় মুন্সিগঞ্জের পথ প্রান্তর ।

১৪ নভেম্বর মুন্সিগঞ্জ জেলার মধ্যে প্রথম শত্রু মুক্ত হয় টঙ্গীবাড়ী উপজেলা । ১৫ নভেম্বর বিবিসি তে এ সংবাদ প্রচারিত হয়, তাদের তথ্য মতে টঙ্গীবাড়ী উপজেলা বাংলাদেশের সর্বপ্রথম হানাদার মুক্ত হয়।  ১৫ নভেম্বর হানাদার মুক্ত হয় লৌহজং উপজেলা, এই সংবাদ বিবিসি ও আকাশবাণী থেকে প্রচার করা হয় । ১৭ নভেম্বর শ্রীনগর, ২০ নভেম্বর সিরাজদিখান এবং ৯ ডিসেম্বর গজারিয়া শত্রু মুক্ত হয় । 

৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণে বঙ্গবন্ধু সংগ্রাম পরিষদ গঠনের নির্দেশ দিলে ১০ মার্চ মরহুম ডাক্তার এম এ কাদেরকে আহ্বায়ক করে সংগ্রাম পরিষদ গঠন করা হয় । বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে ২৫ মার্চ রাত দশটার মধ্যে গজারিয়ার বাউশিয়া ও মেঘনা ঘাটের ফেরিগুলো রামচন্দ্রপুরে পাঠিয়ে দিয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের যোগাযোগ বন্ধ করে দেন স্থানীয় এমএনএ অধ্যাপক এ কে এম শামসুল হুদা ।

২৬ শে মার্চ সকালে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণার সংবাদ পান মুন্সিগঞ্জের মুক্তিকামি জনতা । শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত মুন্সিগঞ্জ টেলিফোনের এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর পাঠানো এ নির্দেশ গ্রহণ করেন তৎকালীন মহকুমা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের নেতা মো. হোসেন বাবুল । সকাল ৯ টার দিকে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা প্রয়াত আবুল কাশেম তারামিয়া শহর জুড়ে মাইকিং করে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র প্রচার করতে থাকেন ।

এই সংবাদ পেয়ে মুন্সিগঞ্জের আপামর জনতা দিনভর শহরে বিক্ষোভ করতে থাকেন, অন্যদিকে বিক্ষুব্ধ জনতা মুন্সিগঞ্জ থানার সামনে বিক্ষোভ মিছিল করেন । স্থানীয় কয়েকজন যুবক মুন্সীগঞ্জ পুলিশ স্টেশনের স্টান্ডে বাধা পাকিস্তানি পতাকা নামিয়ে পুড়িয়ে দেন । সম্ভাব্য শত্রুর মোকাবেলার জন্য ওই দিন দুপুরেই মহকুমার সংগ্রাম পরিষদের নেতারা এবং মুক্তিকামী ছাত্র যুবক সম্মিলিতভাবে অস্ত্রের ট্রেজারি লুট করেন । এতে তৎকালীন এসডিও জিয়াউদ্দিন এম চৌধুরী সমর্থন ছিল তাই অস্ত্রাগার লুন্ঠনের সময় পুলিশের পক্ষ থেকে কোন ধরনের বাধা আসেনি । সংগ্রাম পরিষদের নেতারা চারটি তালা ভেঙে ১৬০ টি রাইফেল আর বিপুল সংখ্যক অস্ত্র লুট করে স্থানীয় ছাত্র যুবকদের মধ্যে বিতরণ করেন ।

এটিই ছিল মুন্সিগঞ্জের মুক্তি পাগল যুবকদের প্রথম বিদ্রোহ । যা পাকিস্তানি হানাদারদের টনক নাড়িয়ে দিয়েছিল । সমবেত ছাত্র-জনতা শ্রীনগর, লৌহজং ও টঙ্গীবাড়ী থানার রাইফেল ও গুলি লুট করে । মুক্তি সংগ্রামের চেতনায় সিরাজদিখান থানার ওসি মুজিবুর রহমান ও গজারিয়া থানার ওসি সৈয়দ আমির আলী নিজে থেকেই মুক্তিকামী বিদ্রোহী যুবকদের হাতে অস্ত্র তুলে দেন । যুবকরা মুন্সিগঞ্জ লঞ্চঘাট, সৈয়দপুর লঞ্চঘাট,আব্দুল্লাহপুর লঞ্চঘাট, তালতলা লঞ্চঘাট, গজারিয়া লঞ্চঘাট ও লৌহজং নৌবন্দরে প্রতিরোধ গড়ে তোলে ।

২৮ মার্চ বেলা ১১ টায় মুন্সিগঞ্জ স্টেডিয়ামে পাকিস্তানী পতাকা উড়িয়ে মুক্তি পাগল ছাত্র জনতার সামনে বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করা হয় । দৈনিক দেশ রূপান্তরের আলোকচিত্র সম্পাদক এবং স্টেট ইউনিভার্সিটি অফ বাংলাদেশ জার্নালিজম কমিউনিকেশন ও মিডিয়া স্টাডিজের শিক্ষক শাহাদাত পারভেজ মুন্সীগঞ্জ জেলার মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কাজ করতে গিয়ে গবেষণা করে বলেন, ২৬ শে মার্চ সকাল থেকেই ঢাকা ও  নারায়ণগঞ্জ থেকে হাজার হাজার মানুষ স্রোতের মতো মুন্সীগঞ্জের দিকে আসতে থাকেন । মুন্সিগঞ্জের প্রায় প্রতিটা বাড়ি স্কুল আর নদীর পাড়ের গ্রামগুলো হয়ে ওঠে শরণার্থী শিবির ।

তিনি আরো বলেন, ৩১ মার্চ নারায়ণগঞ্জ শহরে হানাদারদের আক্রমণের খবর পেয়ে মুন্সিগঞ্জের এক ঝাঁক বিপ্লবী তরুণ নারায়ণগঞ্জে গিয়ে সম্মিলিতভাবে সেই আক্রমণ প্রতিহতের চেষ্টা করেন । পাক হানাদার বাহিনী যেন মুন্সিগঞ্জে প্রবেশ করতে না পারে, সেজন্য মুক্তি পাগল বিদ্রোহী যুবকরা নদীর পাড়ে অসংখ্য বাঙ্কার তৈরি করে পাহারায় থাকেন । এসব খবরের ভিত্তিতে মে মাসে হানাদার বাহিনী মুন্সিগঞ্জে এসে দানবের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়, মুক্তিযুদ্ধের পুরো সময় গণহত্যা চালিয়ে রক্তের বন্যা বইয়ে দেয় ।

১০ ডিসেম্বর মুন্সিগঞ্জের মুক্তিযোদ্ধাদের একযোগে শহর আক্রমণের খবর হায়না বাহিনী জানতে পেরে তাদের সমস্ত আস্তানা গুটিয়ে রাতের আধারেই পালিয়ে যায়, আর শত্রুমুক্ত হয় মুন্সিগঞ্জ জেলা ।  ১১ ডিসেম্বর ভোর থেকে দুপুর ২ টার মধ্যে মুক্তিযোদ্ধারা শহরে এসে অবস্থান নেয় । বিজয় মিছিল আর জয় বাংলা স্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে পুরো মুন্সিগঞ্জ । 

আরও খবর