নিরাপদ আবাসনের অভাবে ঝুঁকিতে দৌলতদিয়া যৌনপল্লীর ৫ শতাধিক শিশু।
দেশের সর্ববৃহৎ রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলাধীন দৌলতদিয়া যৌনপল্লীর ৫ শতাধিক শিশু নিরাপদ আবাসন সংকটের কারনে ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশের মধ্যে বেড়ে উঠছে।
অপ্রাপ্ত বয়সে যৌনপেশায় লিপ্ত হওয়া, মাদকাসক্ত হওয়া, শারিরীক ও মানসিক নির্যাতন ছাড়াও তারা সর্বদা নানা ধরণের প্রতিকূলতার মধ্যে বেড়ে উঠছে।
এ অবস্হা থেকে তাদের সুরক্ষা,শিক্ষা ও স্বাভাবিক বিকাশের জন্য নিরাপদ আবাসন ব্যবস্হা গড়ে তোলা খুবই জরুরি।
বুধবার (৮ নভেম্বর) বেলা ১২ টায় রাজবাড়ী জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে এ বিষয় নিয়ে আয়োজিত এডভোকেসি ইস্যু শেয়ারিং ওয়ার্কশপে বক্তারা তাদের দাবি ও প্রস্তাবনা তুলে ধরেন।
যৌনপল্লীর নারী ও শিশুদের উন্নয়নে কর্মরত বেসরকারী উন্নয়ন সংগঠন মুক্তি মহিলা সমিতি (এমএমএস) এ ওয়ার্কশপের আয়োজন করে। এতে সহযোগীতা করে দাতা সংস্হা মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন।
এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্হিত ছিলেন জেলা প্রশাসক আবু কায়সার খান। সভাপতিত্ব করেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) সুবর্ণা রাণী সাহা।
শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন এমএমএস এর নির্বাহী পরিচালক মর্জিনা বেগম।
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্হিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ রেজাউল করিম,সিভিল সার্জন মোহাম্মদ ইব্রাহিম টিটন,গোয়ালন্দ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোঃ মোস্তফা মুন্সি।
অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ জাকির হোসেন, কর্মজীবি কল্যান কল্যান সংস্হার নির্বাহী পরিচালক মুক্তিযোদ্ধা ফকির আঃ জব্বার, জেলা সমাজ সেবা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক রুবাইয়াত মোঃ ফেরদৌস, মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের উপ পরিচালক আজমীর হোসেন, গোয়ালন্দ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ ফারসিম তারান্নুম হক, উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা তোফায়েল আহমেদ, রাজবাড়ী প্রেসক্লাবের সভাপতি এ্যাডঃ খান মোঃ জহুরুল হক, দৌলতদিয়া মডেল হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক মুহম্মদ সহিদুল ইসলাম, গোয়ালন্দ প্রেসক্লাবের সাধারন সম্পাদক শামীম শেখ, যৌনপল্লীর নারী নেত্রী শেফালী বেগম প্রমূখ।
সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্হাপন করেন মুক্তি মহিলা সমিতির প্রোগ্রাম ডিরেক্টর আতাউর রহমান মন্জু।
সেমিনারে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের বিভিন্ন সরকারী দপ্তর প্রধান,সাংবাদিক,এনজিও প্রতিনিধি, আইনজীবিসহ বিশিষ্টজনেরা উপস্হিত ছিলেন।
মুক্তি মহিলা সমিতির নির্বাহী পরিচালক মর্জিনা বেগম তার বক্তব্যে আবেগ জড়িত কন্ঠে বলেন, আমি এই পল্লীরই একজন সাধারন বাসিন্দা ছিলাম। সেখান থেকে সংগ্রাম করে আলোকিত জীবনে ফিরে এসেছি। অর্জন করেছি জাতীয় জয়িতা পুরস্কার। আমি চাই এখানকার আর একটি শিশুও যেন পল্লীর অন্ধগলিতে হারিয়ে না যায়। সে জন্য কয়েকটি দাতা সংস্হার মাধ্যমে নানা ধরনের কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছি। কিন্তু সেগুলো সবই সাময়িক। তাছাড়া দিনশেষে শিশুদেরকে পল্লীর ভেতরে তাদের মায়েদের কাছেই খারাপ ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশে ফিরে যেতে হয়। কিছুটা আবাসন ব্যাবস্হা থাকলেও তা খুবই সীমিত। সেজন্য তাদের জন্য অনেক ভালো ভালো পদক্ষেপ নেয়া হলেও কাঙ্খিত ফলাফল মিলছে না। তাই সরকারী অথবা বেসরকারী যেভাবেই হোক এ সকল শিশুদের জন্য নিরাপদ আবাসন ব্যাবস্হা নিশ্চিত করতে আমি সরকারের কাছে জোর দাবি জানাই।
জেলা প্রশাসক আবু কায়সার খান বলেন, মাননীয় প্রধান মন্ত্রীর ঘোষনা অনুযায়ী স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনে আমরা কাউকেই পিছনে ফেলে আগাতে চাই না। হোক সেটা পূর্বপাড়ার (যৌনপল্লীর) কোন অসহায় নারী বা শিশু। ইতিমধ্যে জেলা ও উপজেলা প্রশাসন সেখানকার নারী ও শিশুদের কল্যানার্থে বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহন করেছে ।যার সুফল তারা পাচ্ছে। শিশুদের নিরাপদ আবাসন, উপার্জনে অক্ষম বয়স্ক নারীদের নানামুখী সেবা,বিকল্প কর্মসংস্থান সহ অন্যান্য বিষয় নিয়ে তারা দ্রুতই কার্যকর পদক্ষেপ নিতে চান। এরজন্য করনীয় ঠিক করতে উপজেলা পর্যায়ে শীঘ্রই সংশ্লিষ্ট সব বিভাগকে নিয়ে বসে কর্ম পরিকল্পনা ঠিক করা হবে।
তিনি বলেন,আজকের এই সেমিনারটি অনেক বেশি জরুরি ও প্রাসঙ্গিক ছিল। এ জন্য মুক্তি মহিলা সমিতি ও মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।