ইতিমধ্যেই কক্সবাজার উপকূলজুড়ে চলছে বর্ষার ঘনঘটা। আর বর্ষা আসা মানেই ভোজনরসিক বাঙালিদের জন্য যেটি অপেক্ষা করে থাকে তা হল ইলিশ । প্রত্যেক বছরই এই সময়টাতে বাজারের প্রধান আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে মাছের রাজা ইলিশ। এই বছরেও ইতিমধ্যে ইলিশের অপেক্ষা শুরু হয়ে গিয়েছে। কিন্তু বর্ষার ভরা মৌসমেও মুষলধারে বৃষ্টি নেই। কারণ বৃষ্টির সাথে কিন্তু ইলিশের গভীর সম্পর্ক রয়েছে। সমুদ্রপৃষ্ঠে যত বেশি বৃষ্টি হবে তত বৃদ্ধি পাবে তাজা জলের পরিমাণ। যার ফলে ইলিশের ওজন এবং স্বাদ উভয়েই বৃদ্ধি পায়।
প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী জানা গিয়েছে যে, সাগরে ৬৫দিন মাছ ধরার উপর নিষেধাজ্ঞা শেষ হচ্ছে ২৩ জুলাই রবিবার রাত ১২টায়। নিষেধাজ্ঞা শেষ হওয়ার সাথে সাথে সাগরে মাছ শিকারের জন্য সর্বাত্মক প্রস্তুতি গ্রহণ করছেন কক্সবাজার উপকূলের লক্ষাধিক জেলে। সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক দুরবস্থা ও ৬৫ দিনের সমুদ্রে মৎস্য অবরোধের কারণে বেকার বসে থেকে ধার-দেনা করে চলতে হয়েছে কক্সবাজারের সমুদ্র উপকূলীয় জেলেদের।যদিওবা নিবন্ধিত জেলেরা সরকারী ত্রাণ পেলেও অধিকাংশ জেলে বঞ্চিত রয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গভীর সমুদ্রে মাছ শিকার ছাড়া এসব জেলেদের আর কোনো পেশার অভিজ্ঞতা নেই। আর এসব দু:খ বেদনা ভুলে জেলেরা নতুন করে বিনিয়োগ করে সমুদ্রে যাওয়ার প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছেন। এর মাধ্যমে কক্সবাজার উপকূলজুড়ে আবারও চলে এসেছে ইলিশ ধরার ভরা মৌসুম।
জেলা মৎস্য বিভাগের তথ্যমতে, জেলার বিভিন্ন স্থানে লাখো জেলে শ্রমিক থাকলেও তাঁদের নিবন্ধিত জেলের সংখ্যা ৬৩ হাজার ১৯৩ জন এবং ট্রলারের সংখ্যা ৫ হাজার। রবিবার রাতে নিষেধজ্ঞা প্রত্যাহারের সাথে সাথে তারা আবারও সাগরে মাছ শিকারে নেমে পড়বে।
কক্সবাজার মৎস্য ব্যবসায়ী ঐক্য সমবায় সমিতির সভাপতি ওসমান গণি জানান,রবিবার মধ্যরাত ও সোমবার ভোর থেকে জেলার প্রধান মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ফিশারিঘাট,কস্তুরাঘাট, কলাতলী ও দরিয়ানগর,সদরের খুরুস্কুল, চৌফলদন্ডী ,টেকনাফ, মহেশখালী, কুতুবদিয়া,উখিয়া ও পেকুয়ার তিন হাজারের বেশি ট্রলার গভীর সাগরে মাছ ধরতে নেমে পড়বে। বর্ষাকাল ও পূর্ণিমার প্রভাবে উপকূলের সাগরের পানি বৃদ্ধি পায়। এ কারণে সাগরে বেশি ইলিশ পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে ।গত ৬৫ দিন সাগরে মাছ ধরা বন্ধ থাকার পর মাছের বংশ বৃদ্ধি পাওয়ায় আশা করছি এবারও বিপুল মাছ পাওয়া যাবে।
তিনি আরও জানান,গত ৬৫দিন মাছ ধরা বন্ধ থাকায় কক্সবাজারের অন্তত ৫ থেকে ১০ হাজার মৎস্য ব্যবসায়ী বেকার হয়ে পড়েন। জেলার বাজারগুলোতেও মাছের সংকট দেখা দেয়। আর নিষেধাজ্ঞা শেষ হলে মাছের সংকটও দ্রুত দুর হয়ে যাবে।
কক্সবাজার শহরের ফিশারিঘাটের জেলেরা জানান, মাঝারী কিংবা বড় সাইজের ট্রলার নিয়ে সাগরে নামতে খরচ হয়ে থাকে দেড় থেকে দু লাখ টাকা। এবার ৬৫ দিন বেকার থাকায় পুঁজি শেষ করে ধার-দেনায় জর্জরিত তারা। সাগর থেকে বিপুল পরিমান মাছ শিকার করে সে দেনা থেকে মুক্ত হওয়ার আশা করছেন তারা।
ফিশারিঘাট কেন্দ্রিক বরফকল মালিকরাও জানিয়েছেন বছরের পুরোটাই তাদের টেকনিশিয়ান সহ শ্রমিকদের বেকার বসিয়ে টাকা গুণতে হয়।তবে সাগরে আবার মাছ ধরা শুরু হওয়ায় সংকট অনেকটা কেটে যাবে।
কক্সবাজার শহরের প্রধান মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র ফিশারিঘাটস্থ মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান,বর্ষায় দুর্যাগপূর্ণ আবাহাওয়ায় সাগর কিছুটা উত্তাল হলেও জীবিকার তাগিদে রবিবার ভোরে ফিসারীঘাট থেকে শত শত ট্রলার গভীর সাগরে মাছ শিকারে নেমে পড়বে। ট্রলারগুলো মাছ ধরে কয়েকদিন পর ঘাটে ফিরতে শুরু করলেই মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরতে শুরু করবে।
কক্সবাজার জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. বদরুজ্জামান কক্সবাংলাকে জানান, গত বছর(২০২২ সালে) কক্সবাজার উপকূল থেকে ইলিশ আহরণ করা হয়েছিল ৪০ হাজার ৩৫৪ মেট্রিক টন। এবার ইলিশ আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫০ হাজার মেট্রিক টন। তিনি বলেন, বর্ষা মৌসুমে সাগরে পানি বৃদ্ধি পেলে তখন বেশি ইলিশ ধরা পড়ে জেলেদের জালে। এবার দুই মাস বন্ধ থাকায় মাছের প্রজননও বৃদ্ধি পেয়েছে।আশা করছি মৌসুমের শুরুতেই প্রচুর ইলিশ মিলবে।
তিনি আরও জানান,গত ৬৫দিন সাগরে মাছ ধরা বন্ধ থাকলেও নিবন্ধিত ৬৩ হাজার ১৯৩ জন জেলের জন্য ৩ হাজার ৫৩৮ মেট্রেক টন চাল বরাদ্ধ করেছে সরকার। নিবন্ধিত প্রত্যেক জেলেকে প্রথম পর্য়ায়ে ৫৬ কেজি এবংদ্বিতীয় পর্য়ায়ে আরও ৩০ কেজি চাল বিতরণ করা হয়েছে।
জানা গেছে, ২০১৫ সালে মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রণালয় সামুদ্রিক মৎস্য সম্পদ বৃদ্ধি করার লক্ষে ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত মাছ আহরণে নিষেধাজ্ঞা আরো করলেও তা কেবল মাত্র চট্টগ্রামের ২৫৫টি ফিশিং বোডের জন্য বলবৎ ছিলো। গত বছর থেকে সাগরে মাছ আহরণের জন্য ব্যবহৃত যান্ত্রিক ও অযান্ত্রিক নৌযান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়।এর প্রতিবাদে জেলেরা আন্দোলন করলেও নিষেধাজ্ঞা বলবৎ থাকে। এতে চরম বিপাকে পড়েন এ পেশার সাথে জড়িত জেলে পরিবার, ট্রলার মালিক-শ্রমিক, আড়তদার, দাদনদার, বরফকলের সাথে সম্পৃক্ত সহ জাল প্রস্তুতকারী, তেল সরবরাহকারী, খাবার সরবরাহকারী লাখ লাখ পরিবার।
৩ দিন ৩ ঘন্টা ৫৩ মিনিট আগে
১২ দিন ৬ ঘন্টা ৩০ মিনিট আগে
১৪ দিন ৬ ঘন্টা ১১ মিনিট আগে
১৮ দিন ৮ ঘন্টা ৩১ মিনিট আগে
১৮ দিন ৮ ঘন্টা ৩৪ মিনিট আগে
৩৩ দিন ১৯ ঘন্টা ৪১ মিনিট আগে
৩৬ দিন ৭ ঘন্টা ১১ মিনিট আগে
৩৬ দিন ৮ ঘন্টা ২৮ মিনিট আগে