সাতক্ষীরায় মাটি ও আবহাওয়া সূর্যমুখী ফুল চাষের উপযোগী হওয়ায় সুর্যমুখি চাষে ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। ফলনও ভাল হচ্ছে। এতে অন্যান্য রবি ফসলের চেয়ে তুলনামূলক ব্যাপক লাভের সম্ভাবনা দেখছেন কৃষকরা। পাশাপাশি হুলুদের রূপ দেখতে সূর্যমুখী ক্ষেতে ভিড় করছেন দর্শনার্থীরা।স্বল্প সময়ের তেলজাতীয় ফসল সূর্যমুখী উৎপাদন করে কৃষক লাভবান হতে পারে। আর এ লক্ষে ক্লাইমেট স্মার্ট প্রযুক্তির মাধ্যমে এ অঞ্চলে জলাবায়ু পরিবর্তন অভিযোজন প্রকল্প গ্রহণ করেছে কৃষি বিভাগ। এই প্রকল্পের অধিনে জেলার প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষকদের দেয়া হচ্ছে বিনামূল্যে সুর্যমুখি বীজ ও সার।
সাতক্ষীরা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে জানা গেছে, চলতি রবি মৌসুমে সাতক্ষীরার সাতটি উপজেলায় ১৩৮ হেক্টর জমিতে সূর্যমুখী চাষ করা হয়েছে। এরমধ্যে সাতক্ষীরা সদর উপজেলায় ১২ হেক্টর, কলারোয়া উপজেলায় ৪৫ হেক্টর, তালা উপজেলায় ২০ হেক্টর, দেবহাটা উপজেলায় ১১ হেক্টর, কালিগঞ্জ উপজেলায় ১৬ হেক্টর, আশাশুনি উপজেলায় ১৭ হেক্টর ও শ্যামনগর উপজেলায় ১৭ হেক্টর। তবে গেল বছর জেলায় এ ফসলটি চাষ হয়েছিলো ১৪৯ হেক্টর জমিতে।সাতক্ষীরা সদর উপজেলার নলকুড়া গ্রামের প্রান্তিক কৃষক ওলিউর রহমান জানান, চলতি রবি মৌসুমে এক বিঘা জমিতে হাইসান জাতের সূর্যমুখী চাষ করেছেন। ক্ষেতের অধিকাংশ গাছেই ফুল খুবই বড় বড় হয়েছে। কিছু দিনের মধ্যে সুর্যমুখি ভাঙ্গতে পারবে বলে জানান। এর আগে প্রণোদনা হিসেবে সাতক্ষীরা সদর উপজেলা কৃষি অফিস থেকে বিনা মুল্যে বীজ ও সার সংগ্রহ করেন।তিনি বলেন, গত মৌসুমে একই পরিমান জমিতে সূর্যমুখী চাষ করে ১৮ হাজার টাকা লাভ হয় তার। তিনি বলেন, আগামীতে প্রণোদনার পাশাপাশি নিজে আরো বেশি পরিমান জমিতে সূর্যমুখী চাষ করবেন। পাশ্ববর্তী লাবসা এলাকার শহিদুল ইসলাম জানান, পরিক্ষামুলক ভাবে দেড় বিঘা পরিমান জমিতে সূর্যমুখী চাষ করেছেন। তিনি বলেন, গাছে সূর্যমুখী ফুলের যে ধরন দেখা যাচ্ছে তাতে ৮ থেকে ১০ মণ পর্যন্ত উৎপাদন হতে পারে বলে ধারনা করছেন।
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউট (বারি) সাতক্ষীরা বিনেরপোতাস্থ কার্যালয়ের দায়িত্বরত উর্ধতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. শিমুল মন্ডল জানান, উপকূলীয় অঞ্চলের জন্য সূর্যমুখী খুবই লাভজনক ও সম্ভাবনাময় একটি ফসল। কারণ এটি মাটির লবণাক্তা সহ্য করতে পারে। বারি বা হাইসান জাতের সূর্যমুখী চাষ করে সাতক্ষীরা অঞ্চলের কৃষক লাভবান হতে পারে। লবণাক্ত এলাকাতে সূর্যমুখী হেক্টর প্রতি সাড়ে ৩ থেকে ৪টন পর্যন্ত উৎপাদন করা সম্ভব। তবে কিছু সমস্যাও রয়েছে। যেমন সূর্যমুখী ফুল বড় হলে টিয়া পাখির উৎপাত বেড়ে যায়। কিন্তু নেট দিয়ে চাষ করতে পারলে পাখির উৎপাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। তিনি আরও বলেন, তাছাড়া সূর্যমুখী ভাঙ্গানো বা তেল তৈরীতেও কিছু প্রযুক্তিগত জটিলতা রয়েছে। সূর্যমুখী থেকে বিশুদ্ধ তেল উৎপাদন করতে যে প্রযুক্তির দরকার তা সাতক্ষীরায় নেই। যে কারণে কৃষকরা ফল ভেঙ্গেই বিক্রি করে দেয়। এতে তাদের লাভের পরিমানটা কমে যায়।সাতক্ষীরা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. সাইফুল ইসলাম জানান, সূর্যমুখী চাষে ব্যাপক সম্ভবনা সাতক্ষীরা জেলা। স্বল্প সময়ে বেশি লাভজনক ফসল এটি। ইতোমধ্যে সরকারের পক্ষ থেকে তেলজাতীয় ফসল সূর্যমুখী উৎপাদন বাড়াতে কৃষককে প্রণোদনা দেয়া হচ্ছে। বিশেষ করে উপকুলীয় এলাকার পতিত জমিতে এটি চাষ করে লাভবান হতে পারবে কষৃক। তাছাড়া আমাদের দেশে ভোজ্য তেলের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।তিনি আরও বলেন, ক্লাইমেট স্মার্ট প্রযুক্তির মাধ্যমে সাতক্ষীরা অঞ্চলে জলাবায়ু পরিবর্তন অভিযোজন প্রকল্পের অধিনে জেলায় ১ হাজার ৫০জন প্রান্তিক কৃষককে প্রণোদনা হিসেবে বিনামূল্যে সূর্যমুখী বীজ ও সার দেয়া হয়েছে। জনপ্রতি কৃষক এক বিঘা পরিমান জমিতে সূর্যমুখী চাষ করতে পারবে।
৪ ঘন্টা ২৮ মিনিট আগে
৪ ঘন্টা ৪৪ মিনিট আগে
১ দিন ৬ ঘন্টা ১ মিনিট আগে
৩ দিন ১৪ ঘন্টা ৫২ মিনিট আগে
৩ দিন ১৪ ঘন্টা ৫৭ মিনিট আগে
৩ দিন ১৫ ঘন্টা ১ মিনিট আগে
৩ দিন ১৫ ঘন্টা ৭ মিনিট আগে
৪ দিন ১ ঘন্টা ৩২ মিনিট আগে