রাজধানীর ধানমন্ডির ২ নম্বর সড়কের ২৯ (তৎকালীন ১৩৯/এ) নম্বর বাড়িটি পরিত্যক্ত সম্পত্তির তালিকা থেকে বাদ দিতে প্রথম কোর্ট অব সেটেলমেন্টের দেয়া রায় বাতিল করে হাইকোর্টের দেয়া রায় বহাল রেখেছেন সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগ। প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বে আপিল বিভাগ বেঞ্চ আজ এ আদেশ দেন।
হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে এস নেহাল আহমেদ নামের এক ব্যক্তির আনা লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) খারিজ করে দিয়েছেন সর্বোচ্চ আদালত। একই সঙ্গে বাড়িটি নিয়ে হাইকোর্টে সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সরকারপক্ষের আনা লিভ টু আপিল ও রিভিউ আবেদনও নিষ্পত্তি করে দেয়া হয়েছে।
ডেপুটি এটর্নি জেনারেল কাজী মাঈনুল হাসান বাসসকে আদালতের বিষয়টি জানান।
বাড়িটি নিয়ে পৃথক দুটি রিটের চূড়ান্ত শুনানি শেষে গত বছরের ২১ নভেম্বর কোর্ট অব সেটেলমেন্টের রায় বাতিল করে হাইকোর্ট রায় দেন। এই রায়ের বিরুদ্ধে এস নেহাল চলতি বছর লিভ টু আপিল করেন।
গত সপ্তাহে এ-সংক্রান্ত শুনানিতে আপিল বিভাগ বাড়ি নিয়ে কোর্ট অব সেটেলমেন্টে করা দুটি মামলার নথি রাষ্ট্রপক্ষকে দাখিল করতে বলেন। এরই ধারাবাহিকতায় রাষ্ট্রপক্ষ গতকাল রোববার নথি দাখিল করে। শুনানি নিয়ে আদালত আজ আদেশের জন্য দিন রাখেন।
আদালতে নেহাল আহমেদের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী কামরুল হক সিদ্দিকী। সঙ্গে ছিলেন নকিব সাইফুল ইসলাম। রাষ্ট্রপক্ষে এটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন ও ডেপুটি এটর্নি জেনারেল কাজী মাঈনুল হাসান শুনানিতে ছিলেন।
ডেপুটি এটর্নি জেনারেল কাজী মাঈনুল হাসান বলেন, নেহাল আহমেদের লিভ টু আপিল খারিজ করে দিয়েছেন আপিল বিভাগ। ফলে বাড়িটি পরিত্যক্ত সম্পত্তির তালিকা থেকে বাদ দিতে প্রথম কোর্ট অব সেটেলমেন্টের দেয়া রায় বাতিল করে হাইকোর্টের দেয়া রায় বহাল রইল। পরিত্যক্ত সম্পত্তি হিসেবে বাড়িটি সরকারের মালিকানায় থাকল। বাড়িসহ ধানমন্ডির ওই জায়গার আয়তন এক বিঘা। পরিত্যক্ত সম্পত্তি হিসেবে বাড়িটি এখন সরকারের দখলে আছে।
১৯৭২ সালে বাড়িটির তৎকালীন মালিক ছেড়ে যাওয়ার পর সরকার ওই সম্পত্তি পরিত্যক্ত সম্পত্তি ঘোষণা করে। এই সম্পত্তির উত্তরাধিকার হিসেবে মালিকানা দাবি করে আবেদ খানসহ তাঁর পরিবারের ৯ সদস্য ১৯৮৯ সালে কোর্ট অব সেটেলমেন্টে মামলা করেন। এই মামলায় ১৯৯২ সালে কোর্ট অব সেটেলমেন্টের দেয়া রায়ে বাড়িটির পরিত্যক্ত সম্পত্তি হিসেবে তালিকাভুক্তিকে সঠিক বলা হয়। এরপর বাড়িটিকে পরিত্যক্ত সম্পত্তির তালিকাভুক্ত করার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে আবেদ খান ২০১৫ সালে হাইকোর্টে রিট করেন। রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ২০১৫ সালের ৬ জুলাই হাইকোর্ট রুল দেন।
অন্যদিকে ১৯৮৭ সালের এক আবেদন দেখিয়ে নেহাল আহমেদ একই সম্পত্তির মালিকানা দাবি করে ১৯৯৬ সালে কোর্ট অব সেটেলমেন্টে আরেকটি মামলা করেন। এ মামলায় ১৯৯৭ সালের ১৬ জুলাই এক রায়ে বাড়িটি পরিত্যক্ত সম্পত্তির তালিকা থেকে অবমুক্ত করতে এবং নেহাল আহমেদ বাড়ির দখল পেতে পারেন বলে উল্লেখ করা হয়। এই রায়ের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে সরকারের পক্ষে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় ২০১৮ সালে একটি রিট করে। এর প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ২০১৮ সালের ৩১ জুলাই হাইকোর্ট রুল দেন। আবেদ খান ও সরকার পক্ষের পৃথক রিটের ওপর একসঙ্গে শুনানি শেষে গত বছরের ২১ নভেম্বর রায় দেন হাইকোর্ট। এই রায়ে নেহালের পক্ষে সেটেলমেন্ট কোর্টের দেয়া রায় বাতিল এবং আবেদ খানের রিট খারিজ (রুল ডিসচার্জ) হয়।
ডেপুটি এটর্নি জেনারেল কাজী মাঈনুল হাসান বলেন, ধানমন্ডি ২নং রোডের আলোচিত ২৯নং বাড়ি ১৯৭২ সালে তৎকালীন মালিক পরিত্যাগ করে চলে যাওয়ায় সরকার পরিত্যক্ত সম্পত্তি হিসেবে দখল ও নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করে। পরে ওই সম্পত্তির উত্তরাধিকার হিসেবে মালিকানা দাবি করে তোয়াব খান, আবেদ খানসহ ৯ জন ১৯৮৯ সালে কোর্ট অব সেটেলমেন্টে মামলা করেন। সাক্ষ্য ও পক্ষদ্বয়ের কাগজপত্র ও সরকারি নিবন্ধক দপ্তরের নথি পর্যালোচনা করে কোর্ট অব সেটেলমেন্ট বর্ণিত সম্পত্তি সরকার আইনসঙ্গতভাবেই পরিত্যক্ত সম্পত্তি হিসেবে দখল ও নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করেছে বলে রায় দেন।
ডেপুটি এটর্নি জেনারেল কাজী মাঈনুল বলেন, বাড়িটিকে পরিত্যক্ত বাড়ির তালিকাভুক্তির বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রিট করেন আবেদ খান। ওই বছরের ৬ জুলাই প্রাথমিক শুনানি নিয়ে রুল জারি করেন হাইকোর্ট।
ডেপুটি এটর্নি জেনারেল বলেন, একই সম্পত্তির বিষয়ে প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্ত ও সমর্থনীয় কাগজপত্র ছাড়াই আবেদ খান তাদের বিরুদ্ধে সেটেলমেন্টের কোর্টের রায় গোপন করে ২০১৫ সালে হাইকোর্টে রিটটি করেন। ডেপুটি এটর্নি জেনারেল জানান, এস. নেহাল আহমেদ নামে এক ব্যক্তি ১৯৮৭ সালের আবেদন দেখিয়ে কোর্ট অব সেটেলমেন্টে ১৯৯৬ সালে মামলা করেন। ১৯৯৭ সালের ১৬ জুলাই রায় হয়। রায়ে বাড়িত পরিত্যক্ত সম্পত্তির তালিকা থেকে অবমুক্ত করতে এবং নেহাল আহমেদ বাড়িটির দখল পেতে পারেন বলে উল্লেখ করা হয়। এই মামলায় সরকারের পক্ষে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা হয়নি।
ডেপুটি এটর্নি জেনারেল বলেন, কোর্ট অব সেটেলমেন্টে কোনো সাক্ষী না দিলেও বা সমর্থনীয় এবং আবশ্যকীয় কাগজপত্র দাখিল করা না হলেও এস. নেহাল আহমেদ দাবিকারী ব্যক্তি পক্ষে রায় পান। এই রায় বাস্তবায়নে এস. নেহাল আহমেদ হাইকোর্টে দুটি রিট করেন। এই মামলাগুলোতে সরকারের পক্ষে প্রতিদ্বন্দ্বিতা পূর্বক প্রকৃত তথ্য উপাত্ত দাখিল না করায় হাইকোর্ট পুনরায় এস. নেহাল আহমেদের পক্ষে রায় দেন। রায়ের বিরুদ্ধে দেরিতে আপিল করায় আদালত আপিল তামাদি ঘোষণা করে খারিজ করে দেন।
পরে বিষয়টি সরকারের যথাযথ কর্তৃপক্ষের দৃষ্টিতে এলে ২০১৮ সালে প্রথম সেটেলমেন্ট কোর্টের ১৯৯৭ সালের রায় চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করা হয়। রিটের শুনানি নিয়ে আদালত সরকারের পক্ষে রুল দেন। রুলের শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষ থেকে বলা হয়, কোর্ট অব সেটেলমেন্টে ১৯৯৭ সালের রায়টি প্রতারণামূলকভাবে ১৯৯৬ সালে তামাদির মেয়াদকে পাশ কাটানোর জন্য ১৯৮৭ সালে দায়ের দেখিয়ে লাভ করেছেন। এমন প্রতারণার কারণে ও মালিকানার স্বপক্ষে উপযুক্ত তথ্য-প্রমাণ না থাকায় ওই রায়টি বাতিলযোগ্য। আদালতকে আরও বলা হয়, এস. নেহাল আহমেদ দাবিকারী ব্যক্তি ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের নাগরিক ছিলেন বা বাংলাদেশে অবস্থান করেছেন এমন কোনো দালিলিক প্রমাণ দাখিল করতে পারেননি। আবার বর্তমানে দাখিল করা এস. নেহাল আহমেদ নামের জাতীয় পরিচয়পত্রে বর্ণিত নামের বানান, বাবার নামের বানান ও বয়স বর্ণিত সম্পত্তি পরিত্যাগকারী এস. নেহাল আহমেদের নামের সঙ্গে যথেষ্ট অসঙ্গতি রয়েছে। এ কারণে এস. নেহাল আহমেদের পক্ষের রায় বাতিলযোগ্য। নেহাল আহমেদের আইনজীবীরা আদালতকে বলেন, সরকারের পক্ষে ২২ বছর বিলম্বে রিট দায়ের করা হয়েছে। রাষ্ট্রপক্ষ থেকে বলা হয়, রিট পিটিশন দায়েরে কোনো সময়সীমা নেই। তবে যৌক্তিক সময়সীমার মধ্যে দায়ের করা সমীচীন।
ডেপুটি এটর্নি জেনারেল কাজী মাঈনুল বলেন, একই সম্পত্তির বিষয়ে প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্ত ও সমর্থনীয় কাগজপত্র ছাড়াই আবেদ খান তাদের বিরুদ্ধে সেটেলমেন্টের কোর্টের রায় গোপন করে ২০১৫ সালে হাইকোর্টে রিট করেন। ওই সম্পত্তির মালিকানা দাবি করে রিটটি করা হয়। রিট বিষয়ে গত ১৭ নভেম্বর রায় দেয় হাইকোর্ট। রায়ে ওই বাড়ি সরকারের বলে উল্লেখ করা হয়। এর বিরুদ্ধে আনা লিভ টু আপিল খারিজ করে আজ আপিল বিভাগও ওই সম্পত্তি সরকারের থাকবে বলে আদেশ দেয়।
• সূত্র: বাসস
১ দিন ৭ ঘন্টা ২৪ মিনিট আগে
২ দিন ২ ঘন্টা ৪৫ মিনিট আগে
২ দিন ১৩ ঘন্টা ৫৪ মিনিট আগে
৩ দিন ১০ ঘন্টা ২৪ মিনিট আগে
৪ দিন ১ ঘন্টা ৫৬ মিনিট আগে
৪ দিন ১০ ঘন্টা ৫৫ মিনিট আগে
৮ দিন ৬ ঘন্টা ৩৪ মিনিট আগে