◾মুফতি আবু আবদুল্লাহ আহমদ
বসবাসের জন্য বাড়ি ভাড়া নেওয়া যুগ যুগ ধরে চলমান একটি ব্যবস্থা। হাল আমলের নগর-সভ্যতায় জীবিকার তাগিদে বিশাল এক জনগোষ্ঠী শহরমুখী হওয়ার ফলে এটি স্বাভাবিক একটি বিষয়ে পরিণত হয়েছে। ভাড়া-প্রক্রিয়ার ব্যাপারে ইসলামের দিকনির্দেশনা ও বিধিবিধান কী—তা জানা মুসলমানদের জন্য অত্যন্ত জরুরি। তাই আলেমরা কোরআন ও হাদিসের আলোকে ঘর ভাড়া দেওয়ার বৈধ-অবৈধ পন্থা, বৈধতার শর্তাবলি, অবৈধতার ক্ষেত্র এবং এ ক্ষেত্রে করণীয়-বর্জনীয় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। এখানে এ-সংক্রান্ত মৌলিক কয়েকটি বিধান তুলে ধরা হলো।
¶ বাড়িওয়ালা-সম্পর্কিত মাসায়েল
শুরুতেই ভাড়ার পরিমাণ স্পষ্ট করে জানিয়ে দিতে হবে। প্রতিটি ফ্ল্যাটে গ্যাস, পানি ও বিদ্যুৎ বিলের পৃথক পৃথক মিটার থাকা উচিত, যেন প্রত্যেক ভাড়াটে নিজ নিজ খরচ অনুযায়ী বিল পরিশোধ করতে পারেন। আলাদা মিটার না থাকলে বিল বাসা ভাড়ার অন্তর্ভুক্ত করে নিতে হবে। বিলের নামে আলাদা কোনো টাকা নেওয়া যাবে না। প্রতি মাসের ভাড়া কত তারিখের মধ্যে দিতে হবে, চুক্তির সময়ই তা বলে দিতে হবে। বাড়ির সুবিধা-অসুবিধা সম্পর্কে ভাড়াটেকে আগেই অবহিত করা আবশ্যক; বিশেষ করে, বাড়ির মধ্যে এমন কোনো ত্রুটি বা সমস্যা যদি থাকে, যা জানতে পারলে ভাড়াটে হয়তো ভাড়াই নেবেন না, অথবা ভাড়ার পরিমাণ কমাতে চাইবেন, সেটা চুক্তির সময় জানিয়ে দেওয়া জরুরি। বাড়ি ছেড়ে দিতে চাইলে কত দিন আগে অবহিত করতে হবে, তা-ও চুক্তির সময় জানিয়ে দিতে হবে।
¶ ভাড়াটে-সম্পর্কিত মাসায়েল
ভাড়া নেওয়া বাড়ি ভাড়াটের হাতে আমানত। তাঁর সীমা লঙ্ঘন বা অবহেলার কারণে বাড়ির জিনিসপত্র নষ্ট হলে বা বাড়িতে অন্য ধরনের কোনো ক্ষতি হলে এর ক্ষতিপূরণ ভাড়াটেকে বহন করতে হবে। অবশ্য ভাড়াটের সীমা লঙ্ঘন ব্যতীত বাড়ির কোনো বস্তু, যেমন পানির কল, দরজা-জানালা ইত্যাদি নষ্ট হলে বা গ্যাস, পানি ও বিদ্যুতের লাইনে কোনো সমস্যা হলে তা মেরামত করা বাড়িওয়ালার দায়িত্ব। এগুলোর ভার ভাড়াটের ওপর চাপানো যাবে না। নিজের জন্য ভাড়া নিয়ে মালিকের অনুমতি ছাড়া অন্যকে ভাড়া দেওয়া বা সাবলেট নেওয়া ভাড়াটের জন্য বৈধ নয়। অবশ্য মালিক অনুমতি দিলে অসুবিধা নেই। তবে পুরো বাসা বা ফ্ল্যাট বেশি দামে অন্যকে ভাড়া দিতে চাইলে বাড়িওয়ালার অনুমতির পাশাপাশি আরেকটি শর্ত আছে—তা হচ্ছে, ওই বাড়িতে নিজের টাকায় উল্লেখযোগ্য কিছু উন্নয়নমূলক কাজ করতে হবে।
¶ অগ্রিম ভাড়া প্রসঙ্গ
বাড়ির মালিক ভাড়াটের কাছ থেকে অগ্রিম কিছু টাকা সিকিউরিটির জন্য নিয়ে থাকেন। এই টাকা আদায়ের বিভিন্ন নিয়ম থাকে। নিয়মের ভিন্নতার কারণে এর হুকুমও ভিন্ন হয়ে থাকে। কারও এমন নিয়ম থাকে যে এক বা দুই মাসের ভাড়া অগ্রিম দিতে হবে, যা বাড়ি ছেড়ে দেওয়ার সময় শেষ এক বা দুই মাসের ভাড়া হিসেবে ধরা হবে। এ ক্ষেত্রে অগ্রিম যা নেওয়া হয়, সেই টাকার মালিক বাড়িওয়ালা হবেন। সুতরাং এ টাকা তিনি নিজ প্রয়োজনে খরচ করতে পারবেন।
আর যদি অগ্রিম নেওয়া এ টাকা ভাড়া হিসেবে নয়; বরং ভাড়াটে বাড়ি ছাড়ার সময় তাঁকে এ টাকা ফেরত দেওয়ার শর্ত করা হয়, তাহলে এই টাকা রাহান বা সিকিউরিটি মানি বলে গণ্য হবে। বাড়িওয়ালার জন্য এই টাকা দিয়ে উপকৃত হওয়া জায়েজ নেই। কোনো কোনো আলিম এই টাকাকে ঋণ আখ্যা দিয়ে বাড়িওয়ালার জন্য তা দ্বারা উপকৃত হওয়ার বৈধতা দিয়েছেন, তবে দলিলের আলোকে প্রথমোক্ত মতটিই অধিক বিশুদ্ধ। তাই অগ্রিম যা নেওয়া হয়, তা সিকিউরিটি মানি হিসেবে না নিয়ে অগ্রিম ভাড়া হিসেবে নেওয়া চাই।
৮ ঘন্টা ৩৬ মিনিট আগে
৮ ঘন্টা ৪৪ মিনিট আগে
৮ ঘন্টা ৪৬ মিনিট আগে
৮ ঘন্টা ৪৮ মিনিট আগে
৮ ঘন্টা ৫১ মিনিট আগে
৮ ঘন্টা ৫২ মিনিট আগে
৮ ঘন্টা ৫৫ মিনিট আগে
৮ ঘন্টা ৫৮ মিনিট আগে