নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে অটোরিকশা চার্জে থেকে আগুনে পূর্ণ ৬টি দোকান পাংশায় দুর্যোগ প্রস্তুতি দিবস পালিত পাংশায় দেড়শ পিস ইয়াবাসহ আটক ১ পাংশায় মোটরসাইকেল ও মাদকসহ গ্রেফতার ২ ঝিনাইদহে জামায়াত ও বিএনপির দুই গ্রুপ সংঘর্ষে আহত ৬ সাধারণ সম্পাদক পদে ভোট গ্রহণের মধ্য দিয়ে দিনাজপুর প্রেসক্লাবের দ্বি-বার্ষিক নির্বাচন সম্পন্ন কুবিতে লক্ষ্মীপুর স্টুডেন্ট’স ক্লাব'র ইফতার ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত দেওপাড়া ইউনিয়ন বিএনপির ইফতার ও দোয়া মাহফিল বড়লেখায় কোয়াবের উদ্যোগে খেলোয়াড়দের সংবর্ধনা ও ইফতার মাহফিল বড়লেখায় হঠাৎ ভয়াবহ শিলাবৃষ্টি,ঘরবাড়ি ও ফসলের ব্যপক ক্ষয়ক্ষতি দরিদ্র অসহায় মানুষের মাঝে ইফতার সামগ্রী বিতরণ করল সাতকানিয়া - লোহাগাড়া মানবিক ফাউন্ডেশন। কোম্পানীগঞ্জে খালেদা জিয়ার রোগ মুক্তি ও ব্যারিস্টার মওদুদের মৃত্যুবার্ষিকীতে দোয়া ও ইফতার মাহফিল ‘গালি’ নিয়ে দেশের আইনে কী আছে? আমেরিকান কনক্রিট ইন্সটিটিউটের পক্ষ থেকে শতাধিক পথশিশু ও দুস্থদের মাঝে ইফতার বিতরণ প্রশাসনের ঢিলেঢালা আচরণে দুষ্কৃতকারীরা আশকারা পাচ্ছে : রিজভী জবিসাসের ইফতারে এক ছাতার নিছে সব ছাত্র সংগঠন ডাঃ মকবুল হোসেন এতিমখানা ও নূরানী হাফিজিয়া মাদ্রাসায় ইফতার ও দোয়া মাহফিল লোহাগড়ায় নিহত বিএনপি,যুবদল,ছাত্রদল নেতাদের স্মরণে স্মরণসভা ও ইফতার মাহফিল অনিষ্ঠত কালিগঞ্জ নলতা যুবককে গলা কেটে হত্যাচেষ্টার মূল আসামিসহ দু’জন গ্রেফতার কোম্পানীগঞ্জ সিরাজপুর ইউনিয়নে জামায়াতে ইসলামী’র উদ্যোগে ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত

বাসকপাতায় স্বনির্ভর সাতক্ষীরার ৫ শতাধিক পরিবার

বাসকপাতায় স্বনির্ভর সাতক্ষীরার ৫ শতাধিক পরিবার





মোঃ আজগার আলী, সদর উপজেলা প্রতিনিধি সাতক্ষীরা:  

ঔষধি গাছ বাসক পাতা স্বনির্ভর করছে সাতক্ষীরার অনেক দরিদ্র পরিবারকে। রাস্তার পাশে প্রাকৃতিকগতভাবে জন্ম নেয়া বাসক পাতা বিক্রি করে জেলার অন্তত ৫ শতাধিক দরিদ্র পরিবার আর্থিকভাবে স্বচ্ছল হয়েছে।

দেশের বৃহৎ ঔষধ প্রস্তুতকারী কোম্পানী স্কয়ার ও একমি উপকুলীয় সাতক্ষীরা জেলা থেকে কিনে নিয়ে যাচ্ছে প্রচুর পরিমান বাসক পাতা। এছাড়া বিভিন্ন আয়ুর্বেদী কোম্পানীতেও যাচ্ছে বাসক পাতা।

সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ফিংড়ি গ্রামের হতদরিদ্র ও শারীরিক প্রতিবন্ধি আব্দুল কাদের জানান, গত তিন বছর যাবত তার নিজের গ্রাম ছাড়াও জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে বাসক পাতা সংগ্রহ করার পর তা রোদ্রে শুকিয়ে বিক্রি করেন। প্রথমে স্কয়ার কোম্পানীতে বিক্রি করলেও এখন বিক্রি করছেন একমি কোম্পানীর নিকট। প্রতি মণ শুকনো বাসক পাতা এক হাজার ৬৮০টাকা দরে বিক্রি করছেন। প্রতি মাসে ১৪ থেকে ১৫ মণ বাসক পাতা বিক্রি হচ্ছে। এসব বাসক পাতার ৬০ শতাংশ সংগ্রহ করেন প্রাকৃতিক ভাবে জন্মানো গাছ থেকে। এছাড়া অন্যান্য এলাকা থেকেও কিনে এনে বিক্রি করেন। এতে তার সংসার চালিয়েও বছরে দেড় থেকে দুই লাখ টাকা সঞ্চয় হচ্ছে বলে জানান তিনি। এর আগে অত্যন্ত অভাবের মধ্যে দিন কাটতো তার। আব্দুল কাদের জানান, তার বা হাতের কব্জি জন্মগত ভাবেই বেকা বা অচল। যে কারনে এলাকায় কাজ কর্মে মানুষ তাকে তেমন একটা ডাকতো না। খুবই কষ্টের মধ্যে দিন কাটছিলো ৪ সদস্যের পরিবার নিয়ে। বাসক পাতা বিক্রির বিষয় স্থানীয় এক জনপ্রতিনিধির মাধ্যমে জানতে পেরে ২০২১ সালের দিকে শুরু করেন। এখন তার সংসারে কোনো অভাব নেই। বাড়িতে গরু ছাগল পালন করার পাশাপাশি মাছের ঘের করার চিন্তা ভাবনাও করছেন তিনি।

পার্শ্ববর্তী গাভা গ্রামের গৃহবধু বিউটি আকতার জানান, রাস্তার পাশে বা পতিত জায়গায় প্রাকৃতিক ভাবে জন্ম নেয়া বাসক পাতা বিক্রি করে মাসে ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা আয় হচ্ছে। এতে তার সংসারকে বেশ স্বচ্ছল করে তুলছে বলে জানান। বিউটি আকতার আরো বলেন, সংসারের কাজ কর্মের পাশাপাশি তার গ্রামের বিভিন্ন এলাকা থেকে বাসক পাতা সংগ্রহ করেন। এর পর তা শুকিয়ে স্কয়ার কোম্পানীতে বিক্রি করেন। তিনি বলেন, কোম্পানীর লোকজন ১৪ /১৫ দিন পর পর তার বাড়িতে এসে বাসক পাতা কিনে নিয়ে যায়। বর্তমান প্রতি কেজি বাসক ৪০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে বলেন জানান তিনি। গৃহবধু বিউটি আকতার আরো বলেন, তিন থেকে চার বছর আগেও কৃষি শ্রমিক স্বামীর আয় দিয়ে সংসার ঠিকমত চলতো না। তিন ছেলে-মেয়েসহ ৫ সদস্যের সংসার কাটতো খুব কষ্টে। নিজে কিছু করার চিন্তা করতাম। একপর্যায়ে তার গ্রামের রেহেনা খাতুন নামে এক গৃহবধু তাকে বিনা পুজি বা মুলধন ছাড়াই বাসক পাতা বিক্রি ব্যবসার পরামর্শ দেন। সেখান থেকে নিজ বাড়িতেই বাসক পাতা শুকানো বা বিক্রি শুরু করি।

শুধু আব্দুল কাদের আর বিউটি আকতার নয় সদর উপজেলার ফিংড়ি ও গাভা গ্রামে অন্তত ৩০০ থেকে ৩৫০ জন নারী পুরুষ বাসক পাতা বিক্রি করে তারা সংসার নির্বাহ করছেন। এছাড়াও কালিগঞ্জ, দেবহাটা ও তালা উপজেলাতে ২০০ থেকে ৩০০ জন বাসক পাতা বিক্রি করছে। চাষ হচ্ছে বাণিজ্যিকভাবে বাসক গাছ।

ঔষধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান একমি কোম্পানীর প্রতিনিধি ও বাসক পাতা সংগ্রহকারী রফিকুল ইসলাম রফি জানান, গত ৪ বছর যাবত উপকুলীয় জেলা সাতক্ষীরার ৫টি উপজেলা থেকে বাসক পাতা সংগ্রহ করেন। এর মধ্যে সাতক্ষীরা সদর, দেবহাটা, আশাশুনি, কালিগঞ্জ ও তালা। এই ৫টি উপজেলা থেকে প্রতি মৌসুমে ২০ থেকে ২২ টন শুকনো বাসক পাতা ক্রয় করেন বলেন। প্রতি টন পাতার মুল্য দেয়া হয় ৪২ হাজার টাকা। এর আগে অন্তত ৩০০ জন নারী ও পুরুষকে প্রশিক্ষন দেয়া হয় কি ভাবে বাসক পাতা উত্তোলন শুকানো যায়। এখন অন্তত ৫ শতাধিক ব্যক্তির নিকট থেকে বাসক পাতা ক্রয় করছেন। তাছাড়া সাতক্ষীরা জেলার বিভিন্ন এলাকাতে বাণিজ্যিকভাবে বাসক গাছ চাষও করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।

তিনি বলেন, সংগ্রহ করা এসব বাসক পাতা দিয়ে তার কোম্পানী কাশির সিরাপ তৈরী দেশব্যাপী সরবরাহ করে। তিনি বলেন, সর্দি বা কাশির জন্য অত্যন্ত কার্যকরি এই বাসক সিরাপ।

শুধু একমি নয় স্কয়ার ও অন্যান্য আয়ুর্বেদী কোম্পানীও সাতক্ষীরা থেকে প্রচুর পরিমান বাসক পাতা সংগ্রহ করছে বলে জানা গেছে।

সাতক্ষীরা সরকারি কলেজের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগীয় প্রধান ড: নাসরিন আক্তার জানান, বাসক পাতায় রয়েছে ব্যাপক ঔষধি গুন। এই পাতার রসে থাকে প্রচুর পরিমান এ্যালক্লোয়াইড। যা মানবদেহে রোগ প্রতিরোধ করে। তাছাড়া সর্দি বা কাশির জন্য খুবই ভালো কাজ করে বাসক পাতার রস। তবে আশার বিষয় হচ্ছে সাতক্ষীরা জেলার বিভিন্ন এলাকাতে বানিজ্যিক ভাবে চাষ করা হচ্ছে বাসক গাছ। তাছাড়া অনেকে সীমানার বেড়া হিসেবেও ব্যবহার করে বাসক গাছ। তবে এই গাছ কিন্ত গরু বা ছাগলে খায় না। এর আরও একটি গুন হচ্ছে পাতায় বা গাছে কখনো ছত্রাক দেখা দেয় না। তিনি বলেন, বাসক ছাড়াও প্রাকৃতিক ভাবে জন্মানো অন্যান্য ঔষধি গাছ সংরক্ষণ করার জন্য সামাজিক বনায়নসহ সরকারের অন্যান্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহবান জানান।

সামাজিক বনায়ন সাতক্ষীরা রেঞ্জের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জি.এম মারুফ বিল্লাহ জানান, অন্যসব ঔষধি গাছের পাশাপাশি খুবই উপকারী উদ্ভিদ হচ্ছে বাসক। যদিও এটি সরকারী উদ্যোগে এখনো সংরক্ষণ বা উৎপাদন করা যায়নি। তবে সাতক্ষীরা জেলার বিভিন্ন এলাকায় সাধারণ মানুষ পারিবারিকভাবে বসতবাড়িতে বাসক লাগাচ্ছে লাগাচ্ছেন। এছাড়া গত চার পাঁচ বছর যাবত সাতক্ষীরায় বাসক পাতা বিক্রি হচ্ছে। বিভিন্ন ঔষধ কোম্পানী এ জেলা থেকে বাসক পাতা কিনে নিচ্ছে। তবে অনেক এলাকাতে বাণিজ্যিকভাবেও চাষ হচ্ছে বাসক গাছ। আগামীতে সামাজিক বনায়ন কর্মসুচির অধিনে বাসক গাছ উৎপাদন বা সংরক্ষণের জন্য উদ্যোগ গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট সুপারিশ করবেন বলে জানান তিনি।

সাতক্ষীরা হর্টিকালচারের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ আমজাদ হোসেন জানান, অত্যন্ত ঔষধি গুন সম্পন্ন উদ্ভিদ বাসক গাছ। এ জেলা থেকে প্রচুর পরিমান বাসক পাতা কিনছে ঔষধ কোম্পানীগুলো। শুনেছি জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে বাণিজ্যিকভাবে চাষ করাও হচ্ছে বাসক গাছ। যা এ জেলার জন্য খুবই ভালো খবর এটি। আমাদের দেশে নানা প্রকার ঔষধি গাছ প্রাকৃতিকভাবে জন্মায়। যা সংরক্ষণ করার পাশাপাশি ঔষধ হিসেবে ব্যবহারের উদ্যোগ নেয়া দরকার।


Tag
আরও খবর


deshchitro-67d4b4825736e-150325045810.webp
পাংশায় দেড়শ পিস ইয়াবাসহ আটক ১

৯ ঘন্টা ৩৪ মিনিট আগে