বিখ্যাত সংগীতশিল্পী ভূপেন হাজারিকার কালজয়ী গান ‘মানুষ মানুষের জন্যে’। যেটা আজও মানুষের হৃদয়ে নাড়া দেয়, চেতনাকে শাণিত করে। আজ ভূপেন হাজারিকা আমাদের মাঝে নেই। তবে তার গানের এই কথাটির মর্মার্থ বুঝতে হলে মিশতে হবে সাতক্ষীরার ছেলে আশিকুজ্জামানের সাথে। যিনি গুলিবিদ্ধ শরীর নিয়ে বন্যার্তদের সেবায় নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছেন।
আশিকুজ্জামানের বাড়ি সাতক্ষীরা পৌর এলাকার রইচপুর গ্রামে। পড়াশোনা করেন সাতক্ষীরা সরকারি কলেজে৷ একই সঙ্গে সেচ্ছাসেবী সংগঠন অনির্বাণ ব্লাডব্যাংক সাতক্ষীরার প্রতিষ্ঠাতাও তিনি।
আশিকুজ্জামান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শুরু থেকেই ছিলেন সক্রিয়। গত ৫ আগস্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগের পর সাতক্ষীরা সদর উপজেলার নিউমার্কেট মোড়ে শত শত শিক্ষার্থী আনন্দ মিছিলে অংশ নেন। তাতে তিনিও অংশ নেন। আর এ আন্দোলনে অংশ নেওয়াই কাল হয়ে দাঁড়ায় তার জীবনে। মাথা থেকে শুরু করে হাত, পা, পেট ও পিঠসহ শরীরের বিভিন্ন অংশে শতাধিক ছররা গুলি লাগে তার। দুই সপ্তাহের মত চিকিৎসাধীন ছিলেন হাসপাতালে। এসময়ে শরীর থেকে কিছু গুলি বের করলেও হাতে, পিঠে এবং মাথায় এখনও অর্ধশতাধিক গুলি আটকে রয়েছে।
এসবের ভিতরে আগস্টের শেষভাগে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বন্যা দেখা দিলে নিজের অসুস্থতার মাঝেও নিজ সংগঠনের মাধ্যমে ফান্ড সংগ্রহ শুরু করেন আশিকুজ্জামান। একপর্যায়ে দেশি-বিদেশি দাতা, সংস্থাসহ নিজের ব্যক্তিগত অর্থায়নে বন্যায় বিপর্যস্থ ১২ জেলার ভিতরে ফেনি, কুমিল্লা ও নোয়াখালীর হাজারও পরিবারের মাঝে ত্রাণ সামগ্রী দিয়ে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন তিনি। যেটা এখনও অব্যাহত আছে।
বন্যার্ত এলাকার মানুষের কষ্টের কাছে নিজ অসুস্থতা কিছুই নয় দাবি করে আশিকুজ্জামান বলেন, আগে দেশের জন্য লড়েছি। গুলিবিদ্ধ হয়েছি। কিছু গুলি বের করা সম্ভব হলেও যে গুলিগুলো চামড়া ভেদ করে মাংসপেশির ভেতরে ঢুকে গেছে। সেগুলো বের করা সম্ভব হয়নি। তাই তো শরীরজুড়ে অসংখ্য গুলি আর ক্ষত নিয়ে কখনো হাসপাতাল আবার কখনো বাড়িতে থাকতে হচ্ছে। আমার শরীরজুড়ে ছররা গুলির আঘাতের ক্ষতচিহ্ন ভরা। আমার গুলিবিদ্ধ শরীর দেখলে নিশ্চিত যে কেউ ভয় পেয়ে যাবে। যদিও দগদগে ঘাগুলো এখন অনেকটাই শুকিয়েছে। কিন্তু ব্যথা কিছুতেই কমছে না। তবে পরিবারের সামর্থ্য রয়েছে আমার চিকিৎসা করানোর। কিন্তু, বন্যার্ত এলাকার মানুষের সামর্থ্য (অর্থনৈতিক অবস্থা) নষ্ট হয়েছে। আগামী কয়েক বছরেও তারা ঘুরে দাঁড়াতে পারবেনা যদিনা দেশের জনগণ এগিয়ে না আসে। আর এই চিন্তাধারায় গুলিবিদ্ধ শরীর নিয়ে বন্যার্তদের পাশে থেকে কাজ করে যাচ্ছেন বলে জানান তিনি।
ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ প্রসঙ্গে আশিকুজ্জামান বলেন, আমাদের কার্যক্রমটা সবার চেয়ে একটু আলাদা। সেচ্ছাসেবী সংগঠন করার সুবাদে বিভিন্ন জেলার সেচ্ছাসেবীদের সাথে আমাদের পরিচয় রয়েছে। তাদের মাধ্যমে আমরা প্রতিনিয়ত তথ্য নিয়েছি কোন কোন অঞ্চলে ত্রাণ যাচ্ছে আর কোন অঞ্চলে যাচ্ছেনা। আবার সব অঞ্চলে ত্রাণ পেলে তাদের অন্য কোন জিনিস প্রয়োজন কিনা সেটা জেনে তারপর আমরা একটা বাজেট তৈরি করে সেই মোতাবেক প্রয়োজনীয় সামগ্রী ক্রয় করে তাদের কাছে পৌঁছে দিচ্ছি।
৯ ঘন্টা ১৪ মিনিট আগে
১৬ ঘন্টা ২২ মিনিট আগে
১৬ ঘন্টা ৫৩ মিনিট আগে
১৬ ঘন্টা ৫৯ মিনিট আগে
১৭ ঘন্টা ৪৮ মিনিট আগে
১৮ ঘন্টা ১৩ মিনিট আগে
১৮ ঘন্টা ১৪ মিনিট আগে