◾ মাহমুদুল হক হাসান
সম্প্রতি বৈশ্বিক সংকটের মুখে কাগজের মূল্য বৃদ্ধি লাগামহীন হয়ে পড়ছে। বাজারে কাগজের মূল্যবৃদ্ধিকে অস্বাভাবিক বলে মন্তব্য করছেন পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতারা। কাগজ সংকট দেশের শিক্ষার্থীদের কাছে মরার উপর খাঁড়ার ঘা রুপে দেখা দিয়েছে। বাজারে শিক্ষা উপকরণ যথা কাগজ,কলম,পেন্সিল,ব্যবহারিক খাতা মার্কার, ফাইল, বোর্ড,ক্যালকুলেটর,স্কেল, কালিসহ সকল পণ্যের দাম আকাশ ছোঁয়া। কাগজের মূল্য বৃদ্ধির ফলে ছাপাখানা,প্রকাশনী, বিপণিকেন্দ্র আর ফটোকপির দোকানগুলোতে চলছে হাহাকার।
কাগজের অতিরিক্ত মূল্যবৃদ্ধির ফলে বিপাকে পড়ছেন শিক্ষার্থী,সৃজনশীল বই প্রকাশক ও পত্রিকা শিল্পসহ বিভিন্ন কার্টন প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো। পুস্তক প্রকাশনার সাথে সংশ্লিষ্টদের থেকে জানা যায় ৮০ /৯০ ও ১০০ গ্রামের ডিডি অফসেট গতবছর যেখানে ১৬০০ থেকে ১৮০০ টাকায় প্রতি রিম বিক্রি হতো সেই কাগজ এখন ৩৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সর্বত্র ডলার ও জ্বালানীর তীব্র সংকটে দেশে অস্থিরতা বিরাজ করছে। বিভিন্ন পুস্তক প্রকাশনা,মুদ্রণ,পত্রিকাশিল্প, ছাপাখানা, পত্রিকা শিল্প ও প্যাকেজিং এর সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী ও কর্মীদের কর্মসংস্থান পড়ছে মারাত্মক ঝুঁকিতে। প্রত্যেকটি শিল্প প্রতিষ্ঠান বা পণ্যের সাথে জড়িয়ে থাকে হাজারো মানুষের জীবিকা। পুস্তক প্রকাশনার সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের থেকে জানা যায় একটি বই পাঠকের কাছে পৌঁছাতে ১৬ টি পেশাদারের হাত স্পর্শ করে থাকে। মিল মালিকদের থেকে জানা যায় ইতোমধ্যে অনেক কাগজ কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম। আমদানি খরচ বৃদ্ধি পাওয়া ও কাঁচামাল সংকটে পড়ছে কাগজের মিলগুলো। দেশের সর্বত্র ডলার ও জ্বালানির তীব্র সংকটে অস্থিরতা বিরাজ করছে। চলমান নানামুখী সংকটের মধ্যে উপদ্রবের নতুন মাত্রা যুক্ত করেছে বাজারে উর্ধ্বমুখী শিক্ষা উপকরণ।
নিত্য প্রয়োজনীয় খরচের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে শিক্ষা উপকরণ তথা খাতা,কালি ও কলমের দামও। শিক্ষা উপকরণের মূল্যবৃদ্ধিতে মধ্যবিত্ত ও নিম্ন আয়ের অভিভাবকদের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে। করোনার অভিঘাতে ও রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে লাগামহীন দ্রব্যমূল্যের বাজারে যেখানে সংসার চালাতে টালমাটাল অবস্থা সেখানে সন্তানদের লেখাপড়া তো কাঁটা হয়ে বিধঁছে। সংবাদপত্রের তথ্য অনুযায়ী দেশে প্রায় "শ" খানেক কাগজ কল রয়েছে। বহু আগ থেকেই বাংলাদেশ কাগজ উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে। দেশের কাগজ কলগুলোতে অফসেট,নিউজ প্রিন্ট, লেখা ও ছাপার কাগজ, প্যাকেজিং পেপার, ডুপ্লেক্স বোর্ড মিডিয়া পেপার লাইনার স্টিকার পেপার সিকিউরিটি পেপার ও বিভিন্ন গ্রেডের টিস্যু পেপার উৎপন্ন হয়। শুধু তাই নয় বাংলাদেশ থেকে ৪০ টিরও বেশি দেশে কাগজের রপ্তানি হওয়ার ঘটনা রয়েছে। দেশীয় কাগজ কল গুলোর উৎপাদন সক্ষমতা ১৬ লাখ টন হলেও দেশের অভ্যন্তরে বিভিন্ন ধরনের কাগজের চাহিদা মাত্র ৯ লাখ টন। কাগজের অতিরিক্ত মূল্যবৃদ্ধির ফলে বিপাকে পড়েছেন সৃজনশীল বই প্রকাশক ও পত্রিকাশিল্পসহ বিভিন্ন কার্টন প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো।
এছাড়াও নতুন শিক্ষাবর্ষে শিক্ষার্থীদের হাতে বিনামুল্যে ৩৫ কোটি বই তুলে দিবে সরকার। সামনে অমর একুশে বইমেলা এবং ২০২৪ সালের জাতীয় নির্বাচনে কাগজের ব্যাপক চাহিদা ও যোগানের প্রয়োজন। দেশে ডলার ও জ্বালানির তীব্র সংকটে কাগজ কারখানা গুলো বিরাজ করছে হাহাকার। দেশীয় কাগজ কলগুলোর উৎপাদনে সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও কাগজের দাম লাগামছাড়া হওয়ায় একদিকে কাগজের পাইকাররা দোষ চাপাচ্ছেন মিল মালিকদের অপরদিকে মিল মালিকরা বলছেন বিশ্ব বাজারে কাগজ তৈরীর মন্ড বা ভার্জিন পাল্বের দর অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যাওয়াসহ দেশে জ্বালানি সংকট ও কাঁচামাল আমদানিতে উচ্চমূল্য বৃদ্ধি তো আছেই। ফলে বাজারে কমেছে কাগজের সরবরাহ এবং বেড়েছে কাগজের মূল্যবৃদ্ধি।
এমতাবস্থায় কাগজের অনিয়ন্ত্রিত মূল্যবৃদ্ধি ও দুষ্প্রাপ্যতা নিরসনে ও কাগজের অকেজো কারখানাগুলো চালু,কারখানায় নিরবিচ্ছিন্ন গ্যাস-বিদ্যুতের সরবরাহ, কাগজের অপচয় রোধে, সিন্ডিকেট কারসাজি ছিন্ন করে, স্বল্পশুল্কে কাগজের কাঁচামাল আমদানি ও কাগজের রিসাইক্লিংসহ কার্যকরি পদক্ষেপ নিতে সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলের সুদৃষ্টি একান্ত কাম্য।
মাহমুদুল হক হাসান
লেখক ও সংগঠক
১ দিন ৯ ঘন্টা ১৭ মিনিট আগে
২ দিন ৯ ঘন্টা ১৭ মিনিট আগে
৬ দিন ১৮ ঘন্টা ৫২ মিনিট আগে
৯ দিন ২ ঘন্টা ৫৪ মিনিট আগে
১৫ দিন ১৪ ঘন্টা ৫০ মিনিট আগে
১৬ দিন ৭ ঘন্টা ৪৯ মিনিট আগে
১৭ দিন ৫ ঘন্টা ২১ মিনিট আগে
১৮ দিন ৬ ঘন্টা ৩৩ মিনিট আগে