প্রকাশের সময়: 24-08-2023 03:32:02 am
চট্টগ্রামের সবচেয়ে পুরোনো ও
ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর একটি হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজ। এই কলেজের রসায়ন
বিভাগে স্নাতক-স্নাতকোত্তর মিলিয়ে শিক্ষার্থী প্রায় সাড়ে ৫০০। তাঁদের জন্য
শ্রেণিকক্ষ মাত্র একটি। শ্রেণিকক্ষ সংকটের কারণে প্রতিদিন সবার শ্রেণি কার্যক্রম
হয় না।
বিভাগটির শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা
জানান, প্রথম বর্ষের ক্লাস চললে দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীরা দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে
থাকেন। একইভাবে তৃতীয় ও চতুর্থ বর্ষ বা স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থীদের বাইরে দাঁড়িয়ে
থাকতে হয়। এ অবস্থায় তাড়াহুড়া করে প্রতিটি ক্লাস শেষ করতে হয়। এভাবে জোড়াতালি দিয়ে
শ্রেণি কার্যক্রম চলছে। এতে শিক্ষার্থীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। তাছাড়া বিভাগে মাত্র
একটি পরীক্ষাগার রয়েছে। পরীক্ষাগারটি খুবই সাধারণ মানের। পরীক্ষাগারে ভালো মানের
কোনো যন্ত্রপাতি নেই।
বিভাগটির সভাপতি সৈয়দ মুহম্মদ
মনজুরুল করিম বলেন ‘মাত্র একটি কক্ষে ক্লাস হচ্ছে। কক্ষের
অভাবে শ্রেণি কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। আমাদের ভালো মানের পরীক্ষাগারও নেই। এসব
কারণে শিক্ষার্থীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।’
শুধু যে কলেজটির রসায়ন বিভাগের
এমন সংকট, তা নয়; কলেজটিতে বর্তমানে ১৪টি বিভাগ রয়েছে। বিভাগগুলোর জন্য রয়েছে
মাত্র ১৪টি শ্রেণিকক্ষ। অর্থাৎ, স্নাতক (পাস), স্নাতক (সম্মান) থেকে স্নাতকোত্তর
পর্যন্ত প্রতিটি বিভাগের জন্য মাত্র একটি করে শ্রেণিকক্ষ আছে। আবার সব শিক্ষার্থী
এসব শ্রেণিকক্ষে একসঙ্গে বসতে পারেন না। এক বেঞ্চ-টেবিলে গাদাগাদি করে চার থেকে
পাঁচজন শিক্ষার্থীকে বসতে হয়।
চট্টগ্রামের সেরা
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে কলেজটির সুনাম রয়েছে। সাহিত্যিক-শিক্ষাবিদ আবুল ফজল,
ইতিহাসবিদ আবদুল করিম, কবি অহিদুল আলমসহ অনেক কৃতী শিক্ষার্থী এখানে পড়াশোনা
করেছেন। আলো ছড়িয়েছেন।
কলেজটির শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ১৮৭৪
সালে দানবীর হাজী মুহাম্মদ মহসিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি প্রতিষ্ঠা করেন। তখন অবশ্য
নাম ছিল চট্টগ্রাম সরকারি মাদ্রাসা। ১৯২৭ সালের দিকে চট্টগ্রাম ইসলামিক
ইন্টারমিডিয়েট কলেজ নামে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির নামকরণ করা হয়। পাশাপাশি শিক্ষা
কার্যক্রম উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত উন্নীত হয়।
স্বাধীনতার পর ১৯৭৯ সালের ২০ জুলাই
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি নতুনভাবে যাত্রা শুরু করে। সে সময় হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজ
নামে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির নামকরণ হয়। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটিতে ১৯৭৯-৮০ শিক্ষাবর্ষে
স্নাতক (পাস) কোর্স, ১৯৯৬-৯৭ শিক্ষাবর্ষে স্নাতক (সম্মান) কোর্স, ১৯৯৩-৯৪
শিক্ষাবর্ষে স্নাতকোত্তর প্রথম পর্ব, ১৯৯৬-৯৭ শিক্ষাবর্ষে স্নাতকোত্তর শেষ পর্বের
কার্যক্রম শুরু হয়।
বর্তমানে কলেজটিতে একাদশ থেকে স্নাতকোত্তর
পর্যন্ত মোট ১৪ হাজার ৮০৭ জন শিক্ষার্থীকে পাঠদান করা হয়। উচ্চমাধ্যমিকের
শিক্ষার্থী ৩ হাজার ৪৩৮ জন। স্নাতক ও স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী ১১ হাজার ৩৬৯ জন।
কলেজটিতে মোট শ্রেণিকক্ষ আছে ৩২টি। এর মধ্যে
১৪টি স্নাতক-স্নাতকোত্তর পর্যায়ের। বাকিগুলো উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের।
কলেজে মোট শিক্ষক আছেন ৮৩ জন। এই শিক্ষকদের বসার
জন্যও পর্যাপ্ত কক্ষ নেই।
তাছাড়া শিক্ষার্থীদের জন্য নেই পর্যাপ্ত
ল্যাবরেটরি, গ্রন্থাগার, শৌচাগার। এত বছরেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটিতে কোনো মিলনায়তন
তৈরি হয়নি।
জানতে চাইলে কলেজের শিক্ষক পরিষদের সম্পাদক
সুবীর দাশ বলেন, কলেজের শ্রেণিকক্ষ সংকট চরমে। একটি বিভাগের জন্য মাত্র একটি করে
শ্রেণিকক্ষ আছে। এতে পাঠদান মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।
জানা গেছে, গত বছরের সেপ্টেম্বরে চট্টগ্রাম নগরে
অবস্থিত সরকারি কলেজগুলোয় ভবন নির্মাণ ও সম্প্রসারণের জন্য একটি তথ্য জরিপ
পরিচালনা করে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর চট্টগ্রাম কার্যালয়।
জরিপে বলা হয়, কলেজটিতে শিক্ষার্থীর তুলনায়
শ্রেণিকক্ষের সংখ্যা খুবই অপ্রতুল। বিজ্ঞান ভবন-১ ও ২-এর অবস্থা ভঙ্গুর। ছাদের অংশ
জরাজীর্ণ। স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে অন্তত ৪৫টি শ্রেণিকক্ষ প্রয়োজন। অর্থাৎ
প্রতিটি বিভাগের জন্য ৩টি করে শ্রেণিকক্ষ দরকার। এ ছাড়া কলেজে নেই কোনো কমন রুম।
নেই ক্যানটিন। এ কারণে শিক্ষার্থীদের বাইরে গিয়ে বেশি টাকায় খাবার খেতে হচ্ছে।
বিভিন্ন বিভাগের ১০ শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলে
জানা যায়, দিনের পর দিন ভোগান্তি নিয়ে ক্লাস করতে হচ্ছে। তা ছাড়া শ্রেণিকক্ষ না
থাকায় নিয়মিত ক্লাসও হয় না। দিন ভাগ করে বিভিন্ন বর্ষের ক্লাস নেওয়া হয়। এতে
পড়াশোনার ব্যাঘাত ঘটছে। কিন্তু কোনো সমাধান দেখা যাচ্ছে না।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে বেশ কয়েকবার চিঠি লিখে সংকটের কথা
জানিয়েছেন কলেজের অধ্যক্ষ মোহাম্মদ কামরুল ইসলাম। তিনি বলেন, কলেজে শ্রেণিকক্ষের
চরম সংকট রয়েছে। নিয়মিত ক্লাস নেওয়া যাচ্ছে না। শিক্ষকের সংকটও আছে। এসব সংকটের
সমাধানে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরে (মাউশি) জানানো
হয়েছে। নতুন ভবন চাওয়া হয়েছে। ছয়তলাবিশিষ্ট একটি নতুন ভবন হয়তো শিগগির পাওয়া যাবে।
৭ বছর ধরে ছাত্রাবাস বন্ধ
কলেজটির দুটি ছাত্রাবাস ২০১৫ সালের ২০ ডিসেম্বর বন্ধ করে
দেওয়া হয়। ছাত্রশিবিরের নেতা-কর্মীরা দখল করে নিতে পারেন, ক্যাম্পাস অস্থিতিশীল
হয়ে উঠতে পারো—এ
আশঙ্কায় এমন পদক্ষেপ নেওয়া হয়। তার পর থেকে তা আর চালু হয়নি। ছাত্রাবাস দুটি
শিগগির খুলে দেওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই বলে জানিয়েছে কলেজ কর্তৃপক্ষ।
ছাত্রাবাস
দুটিতে মোট আসন রয়েছে ১৬০টি। ছাত্রাবাস বন্ধ থাকায় দূরদূরান্তের শিক্ষার্থীরা এখন
বাড়তি টাকা খরচ করে বাইরে থাকছেন।
৩৪২ দিন ৩২ মিনিট আগে
৩৭২ দিন ৩ ঘন্টা ৩০ মিনিট আগে
৫৪২ দিন ৩ ঘন্টা ৪২ মিনিট আগে
৫৭৬ দিন ২৩ ঘন্টা ১৫ মিনিট আগে
৫৮৭ দিন ১০ ঘন্টা ৫৪ মিনিট আগে
৫৯৬ দিন ৪ ঘন্টা ৪৭ মিনিট আগে
৫৯৯ দিন ১০ ঘন্টা ৫৪ মিনিট আগে
৬০০ দিন ৮ ঘন্টা ১৮ মিনিট আগে